somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মায়া

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্যুট পড়ে বসে থাকাটা আমার কাছে একধরনের শাস্তি মনে হয়। যদিও স্যুট পরার অভ্যাস বাধ্য হয়ে করতে হয়েছে। নিজেকে ফুলবাবু বানিয়ে রাখাটাকে খুবই বিরক্ত লাগে। টাইয়ের নটটাকে একটু ঢিলে করতে ইচ্ছা করছে। গলার কাছে হাত নিতেই আব্বা খুক করে কেশে উঠলেন। আব্বার চেহারার দিকে তাকিয়ে চিন্তাটা বাদ দিতে বাধ্য হলাম। আব্বা চোখ গরম করে তাকিয়ে আছেন। অন্য কোথাও থাকলে নিশ্চিত বলতেন "বেয়াদপ থাপড়ায়ে পিঠের ছাল তুলে ফেলবো একদম"। আব্বা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। এটা তার প্রিয় উক্তিগুলোর একটা। আমার ঘাড় বেয়ে ঘাম এর ধারা পিঠে এসে জমছে। খুবই বিরক্ত লাগছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে। হাতে রাখা টিস্যুটা থেকে অলরেডি টিস্যুর ক্লোন বের হয়া শুরু করেছে। আমি আব্বার বন্ধু হাসান চাচার বাসায় বসে আছি। উপলক্ষ হলো হাসান চাচার মেয়ের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করা। আমি এখনো বিয়ের জন্য প্রস্তুত না। আব্বা যখন বললেন ব্যাপারটা আমি বেশ ধাক্কা খেয়েছি। কারন মাত্র ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া শেষ করলাম। ভেবেছিলাম ক্যারিয়ারটাকে একটু গুছিয়ে চিন্তা ভাবনা করবো এ ব্যাপারে। কিন্তু আব্বা আম্মা কিছুতেই বুঝতে চাইলো না। অবশেষে আমি কোন একদিন নিজেকে হাসান চাচার বাসায় আবিস্কার করলাম। আমি এখনো ঠিক নিজেকে বুঝে উঠতে পারিনি। আরেকজনকে কিভাবে বুঝবো!!! যাই হোক হাসান চাচার মেয়েকে আগে কখনো দেখিনি আমি। বলা যায় চাচাকেই আগে কখনো দেখেছি কিনা মনে পরে না। চাচা অনেকদিন বিদেশে ছিলেন। সে কারনে পারিবারিক অথবা সামাজিক অনুষ্ঠানেও কখনো তাদের পরিবারের সাথে দেখা হয়নি আমার। আমার কেমন যেনো হাসফাস লাগছে। অতিরিক্ত টেনশনে এমন হয়। আব্বা, আমি আর আম্মা বসে আছি এক্টা শোফায়, পাশে একটা চেয়ারে আমার বড় চাচা বসে আছেন। প্রায় ৫ মিনিট হলো হাসান চাচা ভিতরের রুমে গিয়েছেন। আমি আসলে এ ধরনের পরিবেশের সাথে পরিচিতো নই। ছোটবেলা থেকেই একটু অসামাজিক ছিলাম। বন্ধুও তেমন ছিলো না। ভার্সিটিতে কখনোই কালচারাল অনুষ্ঠানে আমাকে দেখা যায়নি। মাঝখানে জার্মানিতে গিয়েছিলাম স্কলারশিপ নিয়ে। সেখান থেকে এসে চাকরিতে ঢুকতে না ঢুকতেই আব্বা প্রায় জোর করেই বিয়ে দিতে চলেছেন। আমি চিন্তা করছি একটা অঘটন ঘটানোর। এই চিন্তা করতে গিয়ে আরো ঘেমে যাচ্ছি। হাসান চাচা বের হয়ে এলেন ওপাশের রুম থেকে, তার পিছনে স্তত পায়ে একটা মেয়ে বের হলো। মেয়েটাকে দুপাশ থেকে দুজন মহিলা রিতিমতো গার্ড দিয়ে নিয়ে আসছেন। আমি বুঝি না এমন কেনো করা হয়। সব মেয়েই বোধহয় মহারানি ভিক্টোরিয়ার মতোবাদে বিশ্বাসী। অন্তত বিয়ের ক্ষেত্রে তো অবশ্যই। না হয় দুপাশে রয়্যাল গার্ড নিয়ে এন্ট্রি দেয় কেনো? যাই হোক মেয়েটার নাম ইনকা। অদ্ভুত নাম! তো ইনকা এসে আমাদের সামনে দাড়ালো। চাচি, মানে ইনকার মা ইশারা করতেই আব্বাকে সালাম করলো। তারপর চাচাকে। সে উবু হয়ে সালাম করেই যাচ্ছে, আমি ভয় পেয়ে গেলাম। মোটামুটি লাফ দেয়ার জন্য প্রস্তুতও ছিলাম, যদি আমাকে সালাম করতে আসে!! কিন্তু আমাকে পাত্তা না দিয়ে আম্মাকে সালাম করলো। আম্মা খুশি হয়ে ওকে নিজের পাশে বসালেন। যা হোক এর মাঝে কি হলো বুঝে উঠার আগেই দেখলাম আব্বা আমাকে গুতো দিচ্ছেন। দেখলাম ইতিমধ্যে ইনকা উঠে দাড়িয়েছে। বুঝলাম আমাকে তার সাথে যেতে হবে। আত্মা মোটামুটি খাচা ছেড়ে বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলো। কিন্তু না গেলে আবার আব্বা সবার সামনেই আমার সাথে গাধা নামক প্রাণীটির মিল খুজতে পারেন ভেবে তাড়াতাড়ি উঠে ইনকার পিছনে হাটা ধরলাম। ইনকা আমাকে ওর রুমে নিয়ে গেলো। আমি প্রথম একটু খুশি হয়েছিলাম এই ভেবে যে টাইয়ের নটটাকে একটু ঢিলে করা যাবে ভেবে। কিন্তু এই মেয়ে নিজের রুমের ভিতর নিয়ে আসাতে আরো ঘামতে লাগলাম। রিতিমতো আতংকিতো বোধ করলাম। "আপনি অনেক ঘামছেন। আপনার কি প্রেশার আছে??? নাকি ওয়াশরুমে যাবেন? " ইনকা বলে উঠলো। প্রশ্ন শুনে মুখ লাল হয়ে গেলো আমার। কিছু বলার আগেই ইনকা হেসে উঠলো। মাথা থেকে ওড়না খসে পড়লো তার, এই প্রথম ইনকাকে ভালো ভাবে দেখার সুযোগ হলো। আহামরি চেহারা বলা যাবে না তবে চেহারায় এক ধরনের মায়া আছে। আমি কিছু বলতে পারলাম না। ইনকা হাসি থামিয়ে বলল "আপনার চেপে রাখার দরকার নেই। আপনি আমার ওয়াশরুম ব্যাবহার করতে পারেন"। বলে সে আবার হাসতে লাগলো। আমি কিছু না বলে সোজা ওয়াশরুমে এসে ঢুকলাম। মুখ ধুয়ে বের হয়ে দেখি ইনকা টাওয়াল হাতে দাড়িয়ে আছে। টাওয়ালটা ওর হাত থেকে নিতেই সে বলল "দেখুন সরাসরি কথা বলাই ভালো। আমার একটা রিলেশন আছে। আর আমি ছেলেটাকে অনেক ভালোবাসি। কিন্তু বাবা আপনাকে পছন্দ করেন। আপনি সোজা গিয়ে বলবেন যে আমাকে আপনার পছন্দ হয়নি। ঠিক আছে?? " । আমি কি বলবো বুঝে উঠতে পারলাম না। ইনকা অনেক ব্যাগ্র হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। এই প্রথম মনে হলো মেয়েটা আসলে প্রচন্ড মায়া ধারন করে আছে। সবচেয়ে সুন্দর হলো মেয়েটার চোখজোড়া। "কি হলো?? চুপ করে আছেন কেনো?? দেখুন আপনি আমাকে বিয়ে করলে আল্টিমেটলি আমরা কেউই খুশি থাকবো না। সেটা বোধহয় ভালো হবে না রাইট?? আপনি কি বলবেন?? " ইনকা আবার বলে উঠলো। আমি চুপ করে আছি। কি বলবো!! মেয়েটাকে আমার ভালো লেগেছে। একটু বেশিই ভালো লেগেছে। তাছাড়া আব্বা আম্মাও ওকে পছন্দ করেছে। স্পেশালি আব্বা তো পারেনি আমার বিয়েই করিয়ে দেন আজকেই। আব্বা খুব কষ্ট পাবেন। আমার এখন কি বলা উচিত বুঝে উঠতে পারলাম না। অনেক জটিল জটিল প্রোগ্রামিং এর সমাধান বের করার চেয়েও যে কঠিন কিছু থাকতে পারে তা আমার জানা ছিলো না। "কি হলো কিছু বলেন?? " তাড়া দিলো ইনকা। "আ....ইনকা দেখো আমার তো আসলে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু আব্বা আর হাসান চাচা খুব কষ্ট পাবেন। আমি আসলে আব্বাকে ডিসহার্ট করতে পারবো না। বলতে পারো আমি সেলফিস। কিন্তু আব্বাকে অনেক দিন পর খুব খুশি দেখেছি। খুশিটাকে ম্লান করে দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। অন্তত এখনি না। " আমি বললাম। ইনকার দিকে তাকিয়ে মনে হলো তার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরেছে। মায়া লাগলো খুব। কিছুক্ষনের জন্য মনে হলো আচ্ছা আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে, কেন এতো মায়াবি একজনকে অন্যের জন্য ছেড়ে যাব?? চিন্তাটা দূর করে দিলাম। বললাম "আচ্ছা। চিন্তা করো না। আমার নিজেরও একটু সময় লাগবে গুছিয়ে উঠার জন্য। এই সময়টাতে তুমি তোমার ফ্যামিলিকে বুঝিয়ো আর আমি আমার ফ্যামিলিকে। ঠিক আছে? "। এই প্রথম ইনকা হাসলো মিষ্টি করে।
আমি একটা ধাক্কা খেলাম বোধহয়। এতো সুন্দর করে কেউ হাসতে পারে আমার জানাই ছিলো না। যাই হোক আমাদের বিয়েটাকে এক বছর পিছিয়ে দেয়া হলো। আব্বা লাফিয়ে উঠেছিলেন প্রায় কিন্তু হাসান চাচা বলেছেন "আরে দোস্ত থাক না। সমস্যা কি? আমাদেরই তো ছেলে মেয়ে। মিশুক কয়েকদিন। "


(২)

প্রায় ৩ মাস পেরিয়ে গিয়েছে। যে চাকরিটা পেয়েছি সেটা বেশ ভালোই। ইনকার সাথে আমার তেমন যোগাযোগ হয় না। সারাদিন অফিস করি। কাজ নিয়ে ব্যাস্ত থাকি। ইনকার কথা খুব মনে পরে। তাই হয়তো নিজেকে আরো বেশি কাজে ডুবে থাকতে বাধ্য করি। বাসায় আব্বা প্রেসার দিয়েই যাচ্ছেন। আমি চুপচাপ থাকি। আম্মার সাথে আমার বোন ইনকার ব্যাপারে কথা বলে মাঝে মাঝে। আব্বা খুব খুশি এই সম্পর্কটা নিয়ে। কিভাবে বলবো যে ইনকা কে আমার ভালো লাগে না!! হাসান চাচা প্রায়ই বাসায় ফোন দেন। চাচা চান তাড়াতাড়ি আমাদের বিয়েটা হয়ে যাক। এতোগুলো মানুষকে কিভাবে কষ্ট দিবো!! ইনকাকে মাঝে মাঝে ফোন দিই। মেয়েটা কেমন যেন শীতল আচরন করে। তাই কথা বাড়াই না আমি। মেয়েটাকে নিজের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেছি আসলে। ছোটবেলা থেকেই আকা আকির শখ আমার। বাসায় আমার বেড রুমের পাশে ছোট একটা রুমে আমার সব পেইন্টিং রাখা। রুমটাতে কেউ ঢোকাটা আমি পছন্দ করি না
। সব সময় তালা দিয়ে রাখি। ইনকার একটা ছবি এঁকেছিলাম। যখন ছবিটা এঁকেছিলাম তখন কেন যেন মনে হয়েছিলো ইনকাকে জোর করার দরকার নেই আমার। আমি বিয়েতে না আপত্তি করলেই হলো। ব্লাইন্ড লাভ বোধহয় এটাকেই বলে। ভেবেছিলাম বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে। ওকে নিয়ে একদিন ঘুরতেও বের হয়েছিলাম। কিন্তু সে একবারও নিজ থেকে কথা বলেনি। আমার মনে হয়েছে আমি বোধহয় ওকে বিরক্ত করছি। আমার সব দ্বিধা উবে গিয়েছিলো যেদিন তাকে ফোন দেয়ার ১০ সেকেন্ডের মাথায় সে আমাকে বললো "আচ্ছা আপনার সাথে পরে কথা বলি হ্যা?? আসিফ ফোন দিয়েছে"। সেদিন কেমন যেন একটা অব্যাক্ত কষ্ট হয়েছিলো। এর আগে আমার কখনো এমন অনুভূতি হয়নি। কারন এর আগে এভাবে কাউকে ভালোই লাগেনি। যা হোক নিজেকে বোঝাতে ভীষন কষ্ট হচ্ছিলো। আমি শেষ পর্যন্ত আব্বাকে বলার সিদ্ধান্ত নিলাম যে ইনকাকে আমার ভালো লাগে না। কিন্তু তার আগেই একদিন ইনকা নিজেই ফোন দিলো। সে জানালো যে সে দ্রুত বিয়ে করতে চায়। আমার জানার ইচ্ছা ছিলো অনেক কিছুই কিন্তু সে ততক্ষনে ফোন রেখে দিয়েছে। আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই খুব দ্রুত আমাদের বিয়েটা হয়ে গেলো। এর মাঝখানে ইনকা একবারো আমার সাথে যোগাযোগ করেনি। আমি করতে চেয়েছিলাম কিন্তু সে সেই সুযোগ রাখেনি। যাই হোক আজকে বিয়ের প্রথম রাত। আমি আবারো ঘেমে যাচ্ছি। অবশেষে ইনকাকে আমি আমার করে পেয়েছি। রুমের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলাম আমি। আমার রুম বলাটা বোধহয় ঠিক না। এখন থেকে বিশেষনটা বোধহয় আমাদের হবে। ইনকা চুপচাপ খাটে বসে আছে। আমি কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না। খাটের কাছে গিয়ে দাড়ালাম। ইনকা ঘোমটা টেনে মুখ নিচু করে বসে আছে। আমি খাটের এক কোনায় বসলাম। ইনকা মাথা তুলে তাকালো আমার দিকে। আমি অবাক হয়ে দেখলাম মেয়েটা কাদছে। চোখের কাজল চোখের পানির সাথে মিশে গাল বেয়ে নামছে তার। আমি বুঝলাম না কেন যেন মনে হলো ওর চোখের পানি মুছে দিই। কিন্তু অত সাহস হলো না আমার। "আপনাকে কিছু কথা বলবো। আপনি রাখবেন কথা?? " কান্না জড়ানো গলায় বললো ইনকা। আমি কি বলবো বুঝে উঠতে পারলাম না। শুধু ঘার কাত করলাম। "আব্বা অসুস্থ। আমাকে অনেক প্রেসারে বিয়েটা করতে হয়েছে। আমি আসিফকে ভুলতে পারবো না। আসিফ কয়েক মাস আগে স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে গিয়েছে। আমাদের মধ্যে শারিরিক সম্পর্কও হয়েছে। আমি জানি আমি আপনাকে ঠকিয়েছি। কিন্তু আমার কোন উপায় ছিল না। আপনি চাইলে আমাকে ডিভোর্স দিতে পারেন। "
আমি বুঝে উঠতে পারলাম না কি বলবো। চুপচাপ উঠে বারান্দায় চলে এলাম। সিগারেট ধরালাম একটা। বাসার সামনে একটা পুকুর আছে। চাঁদের আলো সে পুকুরের পানিতে প্রতিফলিতো হচ্ছে। সুন্দর দৃশ্য। কিন্তু আমাকে সে দৃশ্য কোন ভাবেই প্রভাবিত করতে পারছে না। কেমন যেন একটা চাপা কষ্ট হচ্ছে। সিগারেট বোধহয় অনেক জোড়ে টান দিয়েছি। ফিল্টার গরম হয়ে ঠোট পুড়িয়ে দিচ্ছে আমার। কিন্তু কিছু বুঝতে পারলাম না। সিগারেট শেষে মুখ ধুয়ে যখন রুমে গেলাম। ইনকা তখনো কেদে চলেছে। নাহ মেয়েটাকে আমি একা ছেড়ে দিতে পারবো না। বললাম "দেখো, আমি তোমাকে ডিভোর্স দিতে পারবো না। তুমি তোমার মতো থাকো। কিন্তু আব্বা আম্মা যেন না বুঝে কিছু। তুমি আমার ফ্যামিলিকে খুশি রাখলেই আমি খুশি। " ইনকা কিছু বললো না। ইনফ্যাক্ট আমাদের মাঝে আর কখনোই কোন কথা হতো না। আমি চেষ্টা করলাম কাজ নিয়ে ব্যাস্ত হতে। অবশেষে অফিস থেকে একটা অকেশনে জাপান যেতে বলা হলো ১০ দিনের জন্য। আমি ইনকার সাথে কোন কথা না বলেই একরকম চলে এসেছি। শুধু আগেরদিন রাতে খাওয়ার সময় সবাইকে বললাম জাপান যাওয়ার কথা। চলে আসার সময় সবার সাথে ইনকাও দাড়িয়ে ছিলো। খুব ইচ্ছে হয়েছিলো ওকে বলি ওকে কতোটা ভালবাসি। পারিনি। অবাক পৃথিবির অনেক সহজ এর মাঝে কঠিনতম কিছু কাজ থাকে। খুবি সোজা, কিন্তু তবুও কোথায় যেন একটা বাধা থেকে যায়। কোথায় যেন কাঠিনত্যের শিকল মোড়ানো একটা কিন্তু থেকেই যায়। আমি সেই কিন্তুর উত্তর খোজ করার সাহস খুজে উঠতে পারিনি।



(৩)

ইনকার জীবনটাই পাল্টে গিয়েছে। কিভাবে কি হয়ে গেলো বুঝে উঠতে পারে না সে। আসিফ এমনটা করতে। পারে স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি সে। হয়তো বিয়ের জন্য বাসা থেকে প্রেসার না দিলে কখনো জানাই হতো না চরম সত্যটা। শুভ্রকে মিথ্যা বলেছে সে। আসিফ মোটেও বিদেশ যায়নি। বরং দেশেই আছে, এবং ক্রমাগত ব্ল্যাকমেইল করেই যাচ্ছে তাকে। আসিফ বিবাহিতো, তারপরও ইনকার সাথে রিলেশ্ন ছিলো তার। আসিফ হয়তো কখনো বলতোও না। কিন্তু বিয়ের জন্য প্রেসার দিতেই সত্যটা বের হয়ে এসেছে। ইনকার সেদিন নিজেকে খুব ছোট মনে হয়েছিলো। মনে হয়েছিলো মাটিতে মিশে যায়। চলে এসেছিলো সে। কিন্তু আসিফ পিছু ছাড়েনি। বলেছে সব বলে দিবে শুভ্রকে। ইনকা অনেকটা ভয়েই শুভ্রকে বলেছে তাই। আসলে সে আসিফকে ভালবাসে না, ঘৃণা করে। যে ধাক্কা সে খেয়েছে, তার কারনে পুরো ছেলেজাতির প্রতি একধরনের অবিশ্বাস চলে এসেছে তার। মাঝে মাঝে শুভ্রকে দেখে খারাপ লাগে তার। কিন্তু পরক্ষনেই সামলে নেয় সে। কি অদ্ভুত জীবন। একসাথে থেকেও কতো দূরের মানুষগুলো!!! ইনকা প্রায় রোবটের মতো হয়ে গিয়েছে। শুভ্র ফোন দিয়েছে এর মাঝে। বাবা মায়ের সাথে কথা বলার পর ইনকার হাতে ফোন আসলেই ইনকা সোজা নিজের রুমে চলে আসে। শুভ্র চুপচাপ থাকে তখন। ইনকা শুধু বলে যে সে ভাল আছে। নাহ আর কোন কথা হয় না। ইদানিং ইনকা খেয়াল করে যে শুভ্রর প্রতি তার আলাদা এক ধরনের মায়া কাজ করে। কিন্তু আবার নিজের কথা ভাবে। নাহ সে আর কাউকেই বিশ্বাস করতে পারবে না।ইনকার আজ অনেক কাজ। বাসায় তার বাবা মা আসবেন। সকাল থেকেই ব্যাস্ত সে। নাস্তা রেডি করে ঘর ঝাড়ু দিচ্ছে এখন। শুভ্রর স্টাডিরুম তালা দেওয়া। এর আগে কখনো ঢোকেনি সে এই রুমটাতে। চাবি খুজতে খুজতে শুভ্রর ডাইরির ভিতরে পেলো সেটা। তালা খুলে রুমটাতে ঢুকলো সে। অবাক হয়ে দেখলো রুমটাতে অসংক্ষ্য পোট্রেট পেপার ছড়ানো। নানা জায়গায় ইজেল রং তুলির অভাব নেই। সবচেয়ে অবাক হলো তার নিজের একটা পোট্রেট দেখে। পোট্রেট টা একটা বন্ধ জানালার দিকে মুখ করা। কি মনে হতে হাতের ডাইরিটা খুলল সে। কিছু পৃষ্ঠা উল্টানোর পর একটা পৃষ্ঠায় আটকে গেলো চোখ। সেখানে লেখা "মেয়েটাকে অসম্ভব ভালো লাগে আমার। ঠিক বোঝাতে পারবো না। আমি তো চাই ওকে আপন করে পেতে। কিন্তু সে যদি অন্য কাওকে ভালোবাসে??? "
পৃষ্ঠা উল্টালো ইনকা। "খোজ নিয়ে জেনেছি ইনকার সাথে আসিফ নামের একটা ছেলের সম্পর্ক আছে। এমনকি শারিরিক সম্পর্কও আছে। আমার বোধহয় অনেক কষ্ট হচ্ছে। কারন আমি আকতে পারছি না ঠিকমতো। মনে হচ্ছে প্রচন্ড জোড়ে কেউ আমার বুকের ভিতরটাকে গুড়িয়ে দিচ্ছে। ইনকার জন্য আকা ছবিটা কি তাহলে কখনই দেওয়া হবে না??? "। পরের পৃষ্ঠা উল্টালো ইনকা। "ইনকার সাথে আমার বিয়েটা হয়েই গেলো। সে বলেছে আমাকে সে ভালবাসে না। আসিফের সাথে রিলেশনের কথাটাও বলেছে। আমি বুঝতে পারছি ও অনেক কষ্টে আছে। কয়েকদিন ঘুমের মাঝে তার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকেছি। কয়েকদিন সে ঘুমের মধ্যেই আমার হাত চেপে ধরেছে। খুব ইচ্ছে করেছিলো তাকে জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু পারিনি। মাঝে মাঝে ভাবি একটা মেয়ে এতো মায়া নিয়ে থাকে কিভাবে!!! "
তারপর আর কোন লেখা নেই। ইনকা বিভ্রান্তের মতো পাতা উল্টায়। প্রায় শেষ দিকে একটা পাতায় আবার লেখা " আচ্ছা ইনকা তুমি কি বুঝো আমার মনে কি চলছে?? তুমি কি জানো?? ঘুমালে তোমাকে ছোট্ট একটা পুতুলের মতো দেখায়? আমার মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে হয় তোমাকে জরিয়ে ধরে রাখি। আমি সবই জানি। তবুও তোমাকে ভালোবাসি। জানো আমি না তোমার একটা ছবি একেছি। ছবিটা জানালার দিকে মুখ করানো। জানো জানালা খুলে দিলে যখন রোদ এসে পরে ছবিটার উপর তখন আমার মন ভালো হয়ে যায়। আচ্ছা তুমি কি একটুও ভালোবাসো না আমাকে?? আমাকে কি একটুও ভালোবাসা যায় না?? "
ডাইরিটা সেখানেই শেষ। ইনকা অবাক হয় নিজের চোখে পানি দেখে। নিজেকে খুব অপরাধি মনে হয় তার। সে এগিয়ে যায় জানালার দিকে। খুলে দেয় সেটা। সকালের মিষ্টি রোদ সরাসরি গিয়ে পরে পোট্রেট এর উপর। স্নিগ্ধ হাসিতে দেখা যাচ্ছে শুভ্রর আকা ইনকাকে। হটাৎ করেই শুভ্রর উপর ভীষন অভিমান হয় তার। পাশের রুমে গিয়ে সেলফোনটা নিয়ে শুভ্রর নাম্বারে কল দেয়। কিছুক্ষন কল হবার পর শুভ্রর গলা ভেসে আসে "হ্যালো"। ইনকা কিছু বলতে পারে না। চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পরতে থাকে তার। ওপাশে শুভ্র কিছু বলে না। ইনকার অসহ্য মনে হয়। কাদতে কাদতেই বলে "আপনি এতো ভালোবাসেন। বলেননি কেনো?? "। ওপাশে শুভ্র কিছু বলে না। শুধু তার ঠোটে একটু হাসি ফুটে উঠে। ঘামতে থাকে সে। শুভ্র ভাবে ইনকা থাকলে নিশ্চিত বলতো প্রেশার আছে কিনা!!! কখনো কখনো নিরবতার মাঝে অনেক অব্যাক্ত কথার প্রকাশ ঘটে। ইনকা কাদছে। শুভ্র শুনতে পায়। তার মনে হয় পৃথিবির সমস্ত মায়া এসে মেয়েটাকে জরিয়ে রেখেছে। মায়াবতির কখনো সেটা জানা হলো না।





~ কিছু কথা~
আসলে লিখতে ভুলে গিয়েছি। আর ইচ্ছে করে না। এতো কঠিন শৃঙ্খলার মাঝে থাকতে গিয়ে অনেক কিছুর সাথে শখটাকেও বলি দিয়ে দিয়েছি। কেনো যেন উপভোগ করছি না আর ব্যাপারটাকে। মাঝে মাঝে রাতে ডিউটি করার সময় কুয়াশাস্নাতো নদিটার দিকে তাকিয়ে থাকি। মাঝে মাঝে শুভর কথা খুব মনে পরে। আমার বন্ধুটা আমাদের সবাইকে হুট করেই ছেড়ে চলে গেলো। কিছু বুঝে উঠার আগেই। কত প্ল্যান ছিলো!! অথচ ঢাকা যাওয়ার আগেই চলে গেলো সে। অনেক অনেক দূরে। না ফেরার দেশে। মাঝে মাঝে ওর সাথে কাটানো সময়গুলোর কথা এই ফেসবুকের কল্যানে মনে পরে। আসলেই বোধ হয় রোবট হয়ে গিয়েছি। কারন খারাপ লাগা প্রকাশ করতে পারি না। কাদতে ভুলে গিয়েছি অনেক আগে। সৈনিকদের অনেক চাপা কষ্টের মতো শুভর চলে যাওয়ার কষ্টটাও বোধ হয় হজম করে ফেলেছি। মাফ করে দিস দোস্ত। আর যেখানেই থাকিস অনেক ভালো থাকিস।

আর লেখায় অনেক ভুল আছে, নিজ গুনে মাফ করে দিবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৪৮
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×