somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধারাবাহিক স্রোত

১৯ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হাতের ব্যবহৃত টিস্যুটি ফেলতে গিয়ে মুষ্ঠির ভিতরের আইফোনটি পড়ে গেল। দু’পাশে তাকিয়ে নিজের অবস্থান বুঝে নিল। তার পাশ দিয়ে মানুষ রিক্সা টোকাই আর ভিখারীর স্রোত আপনমনে চলে যাচ্ছে।
ঘুম থেকে জেগেই যেমন আড়মোড়া দিতে দিতে আকাশের দিকে সূর্যের অবস্থান দেখে নেয়, পথে চলতে থাকা মানুষরা তূর্ণাকে দেখছে। তবে পায়ের কাছে পড়ে থাকা দামী আইফোনের দিকে না তাকিয়ে ওড়নাবিহীন বড়গলাঅলা টি-শার্ট শিরোনাম দেখার মত বারবার চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে। ফোনটি এইমাত্র কাত হয়ে তুলবে বলে যারা অনুমান করেছে, একটু সামনে গিয়ে পেছনের পথ আর গাড়ি দেখার অজুহাতে দেখে নিচ্ছে শেষবারের মত। কিন্তু হা করে নিঃশ^াস নিতে গিয়ে কাক পায়খানা করে দিয়েছে ভঙ্গি করে সামনের পথে সাবধানে হাঁটতে শুরু করছে।
তূর্ণা ফোনটা কেন তুলছে না- নিজেও বুঝতে পারছে না। রাস্তার মাঝে হাতের ফোন জীবনের প্রথম পড়ে গেল। এভাবে হেঁটে রাস্তা পার হওয়াও খুব বেশি হয়ে ওঠেনি। ফেব্রুয়ারির চৌদ্দ তারিখে নিজের পাজেরো ছেড়ে শাহেদের বিএমডব্লিউতে ওঠার জন্য নুরুজ্জামান রোড পার হয়েছিল। আজকে অথুনের জন্যে গাড়িটা বাসায় পাঠিয়ে রাস্তা পার হতে হল।
ভাবতেই দু’পাটির চারটি কর্তনদাঁতের সংঘর্ষ হল। ঠোঁটটা একটু ডানদিকে বেকে যায়। বাংলা চলচ্চিত্রের দৃশ্য হলে নায়ক আর খলনায়কের মধ্যে কে ফোনটি তুলবে- সেটা নিয়ে রীতিমত এলাহী কান্ড বেধে যেত।
ওর পা দু’টি পেনসিল হিলের উপর থরথর করে কাঁপছে। ডানে বায়ে তাকিয়ে বলল- ধ্যাৎ... নড়তেও পারছি নাহ।
ডাস্টবিনের পাশে বাদাম বাদাম করা ছেলেটা ট্রাফিক পুলিশের মত হাত নাড়িয়ে পেছনের গাড়ির গতিবেগ পরিবর্তন করে এগিয়ে এলো তূর্ণার কাছে। বাদামের ঝুড়িটা হাতে আলগোছে রেখে বাম পায়ের উপর ভর করে বসে। একবার তূর্ণার চোখটা দেখে মোবাইলের দিকে তাকায়। তারপর ডানহাত দিয়ে বাদামের থালাটা ধরে বামহাত দিয়ে তুলে নেয়। হাতে দিতেই তূর্ণা গাম্ভীর্যের সাথে হাসার ভান করে বলল
- থ্যাংকস
- আইচ্ছা... ঠিক আচে।
সস্তা সিগারেট, ডাস্টবিন আর কয়েকদিন দাঁত ব্রাশ না করতে পারার গন্ধ ভুরভুর করে স্যালাইনের মত চলে গেল ওর পেটে। ঠোঁট দু’টি শক্ত করে ধরে তিনবার ঢোক গিলল। তাতে সুবিধা করতে না পেরে হড়হড় করে বমি করে দিল বাদাম-ভর্তি প্লেটের উপর।
ডীপ পাম্প থেকে আনা পানির শ্যাওলাপড়া বোতল ওর হাতে দিল। সিআর দত্ত রোডে কোন পানির ব্যবস্থা না থাকায় হাতে নিল। নাকের ত্বক জড়ো করে কোনভাবে একঢোক পানি মুখে নিয়েই ফুঁৎ করে ফেলল চলতে থাকা রিক্সার চাকাতে। ছেলেটি তখনো দাঁড়িয়ে ছিল বোতলটির অপেক্ষায়। কাটাবনে সিগনাল পড়াই মাইক্রো, দু’টি ঠেলাগাড়ি আর রিক্সার বহর থমকে আছে।
- ওহেনে চলেন। রাস্তাই খাড়ায়া থাকলে মাইনষে ডিস্টাব অইবো
তূর্ণার চোখ লাল হয়ে যাচ্ছে। রক্তরা মিছিল নিয়ে ধেয়ে আসছে চোখের ভেতর। ছেলেটির ভ্রুক্ষেপ নেই সেদিকে। ওর নজর কিছুটা বাদামের উপরে রয়েছে। তূর্ণা বাদামের জরিমানা দেয়ার ভয়ে হোক, নোংরা বোতল দেয়ার অপরাধেই হোক, আর রাস্তার ছেলে হয়ে তাকে সহানুভূতি দেখানোর অপরাধেই হোক, বাম হাতের আঙ্গুলগুলো একসাথে লাগিয়ে ফাস্ট বল করার মত দূর থেকে হাত এনে বসিয়ে দিল ওর ডানগালের উপর। ছেলেটা কিছু বলার সাহস পেল না।
- তোর নাম কী?
- ছমের
- তোর বারোটা বাজিয়ে ছাড়ব
- আইচ্চা
ওর বারোটা বাজানোর অর্থ যে সে বোঝেনি, এতক্ষণে তূর্ণা বুঝল।
মোবাইলটা নিয়ে বিপাকে পড়ে গেল। নোংরা ছেলের হাত পড়েছে ফোনে, এটা ব্যবহার করার মত নোংরামী তার করা উচিৎ হবে কি না ভাবে। রাত এগারটা একচল্লিশ। ডুপ্লেক্স বাসার দ্বিতীয় তলার সিড়ির কাছের রুমটা ওর বাবা মার। দরজার কাছে গলাটা পরিষ্কার করতেই ভেতরে ঢোকার অনুমতি পেয়ে যায়।
- কিরে মা, এতরাতে জেগে আছিস? ঘুম আসছে না?
- উহু...। গাল ফুলিয়ে চোখ ভেজা ভেজা করে জবাব দিল।
কাছে টেনে নিয়ে জিজ্ঞাসা করল
- কেন রে? কিছু হয়েছে?
- হু...
- কী? বল
- ফোনটা আর ইউজ করব না
- কেন? মাসখানেক হল তোর দুলাভাই গিফট করল। এখনই ফেলে দিবি কেন?
- আম্মু, রাস্তার এক ছোকড়া ফোনটা ধরছিল।
- ও ... তো এখনো হাতে রাখছিস কেন? ফেলে দিয়ে এলেই পারতি। কামরুলকে আসতে বলছি। ও এলে ওকে ফেলে দিতে বলিস। আর হাত ধুয়ে শু’তে যা।
- হুম...ওকে মাম্মি।
কামরুল ‘বাড়ৈ গ্রুপ অব ইন্ড্রাস্টিজ’র মালিক গাজী মুহিত বাড়ৈ এর হোম সেক্রেটারি। বাণিজ্যিক প্রয়োজনে দেশের বাইরেই সময় কাটাতে হয় বাড়ৈ সাহেবকে। তাই বাড়ির আভ্যন্তরীণ কাজগুলো দেখাশোনার দায়িত্ব কামরুলের। তাকে ডাকতেই বাড়ির ভেতরে ডান হাত দিয়ে বাম হাতে কব্জি ধরে প্রবেশ করল।
- ম্যাডাম ডেকেছেন?
- হুম। তূর্ণার ফোনটা ফেলে দাও। কোন ফকিন্নির বাচ্চারে দিতে পারলে দিও।
- জ¦ী আচ্ছা ম্যাম। আর কিছু?
- আবার কী? যা বললাম তাতে হচ্ছে না?
- সরি ম্যাম।
- কিসের সরি? বেয়াদব কোথাকার। শুধু মুখেমুখে তর্ক। যাও... যা বললাম, কর। দেন, জানাবে।
কাঁচুমাঁচু করতে করতে বেরিয়ে গেল কামরুল। তূর্ণার ফোনটা এখন কামরুলের হাতে।
পাতলা চাঁদরটা গায়ের উপরে রেখে শুয়ে পড়ল তূর্ণা। অনেকক্ষণ চুপ হয়ে শুয়ে থেকেও ঘুম আসল না, আসল বাদামঅলা ছেলেটার ছবি। সে মুছতে পারছে না। আস্তে আস্তে ঠোঁট নাড়তেই মুখ দিয়ে বের হল
- আমি নিচু হয়ে ফোনটা নিতে পারতাম তো। কিছু ছোটলোক না হয় তাকাতো। তাকালেই কি আমার সব দেখে ফেলত? আমার বুক দেখায় ওরা উন্মুখ কেন?
সে উত্তর পায় না। উত্তর দেয়ার মত কেউ নেই পাশে। তবে দু’টি মশা এসে কিছু বলতে চায় কানের কাছে। বুঝতে না পেরে শাহেদকে দেয়া শেষ থাপ্পড়ের মত হাত চালাল।
রাতের অন্ধকারে স্যাঁতস্যাঁতে ঘরে কম্পিউটার অন করল। ফেসবুকে লগইন করেই পোস্ট দিল
- আমি আর পেনসিল হিল ব্যবহার করব না।

সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:১৮
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×