somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্লান্তিহীন আনন্দ ভ্রমণ: চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবন, শালবন বিহার

০৫ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


চট্টগ্রাম, বিয়ের তারিখটা মার্চের ১১। বরপক্ষ থেকেই ঠিক করা ছিল। কনের কাছ থেকে কিছু জিজ্ঞেস না করেই মুরুব্বীদের বিয়ের তারিখ পাকা করাটা আমার একদম পছন্দ না।
বাসায় আমাদের দাবী ছিল চট্টগ্রাম বিয়ে খেয়ে তারপর কক্সবাজার যেতে হবে।
একেতো বিয়ে (বিয়ের দিন সকালে গায়ে হলুদ আর মাঝরাতে বিয়ে), বৌভাত তারপর কক্সবাজার ঘুরুন্তি। কয়েকদিন আগে থেকেই ব্যাগ গোছানো শুরু । একাধিক দিন যেহেতু থাকবো আর দুরের ভ্রমণ তাই প্রয়োজনীয় জিনিস যেনো নিতে মিস না করি।

প্রথমে কাগজে যার যার প্রয়োজনমতো লিস্ট করে সেই অনুযায়ী ব্যাগ গুছিয়েছি। আর কোন জরুরী কিছু মনে পড়লে সাথে সাথে গুরুত্ব বুঝে লিস্টে এ্যাড করেছি।
ভ্রমণে বিশেষ প্রয়োজনীয় যেসব দিকে খেয়াল রাখবেন:
►মোবাইল, ক্যামেরা, ল্যাপটপ (প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে) ফুল চার্জ করে চার্জার নিতে যেনো ভুল না হয় ।
►রোদ থেকে রক্ষা পেতে সানস্ক্রিন, সানগ্লাস, ছাতা ।
► বর্ষাকাল বা বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলে স্যান্ডেলটা বৃষ্টির উপযোগী, বাইরে পরার পোশাক নির্বাচনেও আবহাওয়া অনুযায়ী বাছাই করা জরুরী।
► মেয়েদের ক্ষেত্রে ভারী মেকাপের বক্স এভয়েড করাই বুদ্ধিমানের কাজ ।
►ব্রাশ, পেস্ট, সাবান, নিজের টাওয়েল (যত হালকা হয়), আন্ডার গার্মেন্টস একদিনের বাসীটা যেনো অবশ্যই পরেরদিন পরতে না হয় সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা। প্রয়োজনে সাথে একাধিক সংখ্যক নিতে হবে।
আর লিখতে পারবো না...বাকীটা নিজেরা করে নেন /:)

ব্যাগ গুছানো শেষ এবার চলুন ভ্রমণে বেরিয়ে পড়ি।
ভোর ঠিক ৫টা ৬ মিনিটে আমাদের যাত্রা শুরু হয়ে পৌঁছাতে দুপুরের কাছাকাছি হয়ে গিয়েছিল। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান ততক্ষণে প্রায় শেষ। ওরা আমাদের জন্যে কেক কাটা বাদ রেখেছিল।


এরপর ও.আর নিজাম রোডে অবস্থিত নাবা ইন-এ আস্তানা গাড়লাম ভ্রমণ ক্লান্তি দূর করতে।

ফ্রেশ হয়ে এরপর পেট পুঁজো করতে বেরিয়ে পড়লাম। কাছাকাছি দুইটা রেস্টুরেন্টে ঢুকেও বেরিয়ে আসতে হয়েছিল সব মিলিয়ে মনমতো না হওয়ায়।


শেষে হান্ডিতে মধ্যাহ্নভোজন পর্ব শেষ


রুপনগর কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ে...ব্যান্ড পার্টির বাজনায় কানে তালা লাগার জোগাড় ! আমি দুই কান বাঁচাতে কানে টিস্যু গোজার পর দেখলাম বাজনা শুনতে বেশ স্বস্তিদায়ক লাগছে।


বলুনতো এটা কিসের ছবি? ;)

চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবেনা এসব বিয়ের অনুষ্ঠানে বর-কনেকে কী পরিমাণ কষ্ট সহ্য করতে হয়! :|
পাশে দাড়ানো এক আবিয়াইত্যা আমাকে বলছিলো যে, এমন কষ্ট করে বিয়ে করতে হয় বলেই ওদের বিয়ে এতো টিকে থাকে। আমি কী বলবো সেই মুহুর্তে ভেবে একটা মলিন হাসি ফিরিয়ে দিলাম।
রাত বারোটার পর ফিরতে হলো সেদিন।


নাবা ইন-এ সকালের নাস্তা সেরে রুমে ফেরার সময় চোখে পড়লো নামাজের রুম। আস্তিক মানুষ হিসেবে এই রুমটা দেখে খুব ভালো লেগেছে। তাই ছবিটা তোলা।


পাশের রুমটা দেখে বাচ্চারাতো মহা খুশি হয়ে তাদের কসরৎ শুরু করে দিয়েছে। ট্রেডমিলে অবশ্য আমিও একটু সুযোগ নিয়েছি ;)

যেহেতু বৌভাত তার পরের দিন কাজেই আমরা নাবা ইনকে টাটা দিয়ে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম সকাল নয়টার দিকে।



যখন গিয়েছিলাম শেষ মুহূর্তে প্রবালে রুম বুকিং করা যায়নি। ফলে মোটেল উপল-এ বুকিং করতে হয়েছিল। আমরা উপলে উঠে পুরাই মর্মাহত!
কিন্তু তারপরও মন খারাপ করে বসে থাকার মতো আমরা নই।


রওনা দিলাম সমুদ্রের টানে...


সৈকতে পুত্রের আনন্দের জোয়ার দেখে মন ভরে যাচ্ছিল । ও পাগলের মতো ছুটোছুটি করছিল। আমরা নিজেরা কী ভিজবো ওকে পাহারা দিতেই ব্যস্ত। খালি পানির ভিতরের দিকে রওনা দেয়।


এরপর যখন জ্যান্ত স্টার ফিসের শতশত শুর (নাকি পা?) নড়ে উঠতে দেখলো তখন আর তাকে পানিতে একা নামানো যায়নি;)

দুপুরে চিটাগাং রেস্টুরেন্টে খেয়ে রওনা দিলাম বার্মিজ মার্কেটের উদ্দেশ্যে


প্রিয়জনদের জন্যে মুক্তার গহণা কেনার সুবর্ণ সুযোগটা হাতছাড়া করিনি।


আম্মাজান আর শাশুড়ি আম্মার জন্যে সামুদ্রিক শুটকি কিনতে মিস করিনি।


পরদিন কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে রওনা দিলাম ইনানীর পথে...


এই ছবিটা যতদিন দেখবো ততদিন আমার (সেই সময়ের ) সহিষ্ণুতার কথা ভেবে নিজেকেই নিজে ধন্যবাদ দিব।


হিমছড়ি পাহারে উঠার শুরুতে আপনি ভাবতেও পারবেন না কী অপেক্ষা করছে আপনার জন্যে !


সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত এর নিরাপত্তার দিকে আরো মনোযোগী হওয়া। কেননা কিছু জায়গা পার হওয়া খুবই বিপজ্জনক ।


সেই উঁচুতে তিনারা আপনার জন্যে সেলফি স্টিক নিয়ে বসে আছেন ;)


এতো টেনশনে আর কাহিল হওয়ার পর টয়লেট চাপবে কি !? নামতে পারলেই বাঁচি !


এর আগের দু'বার কক্সবাজার গেলেও হিমছড়ির ঝর্ণা দেখার সুযোগ হয়নি...কিন্তু এই কৃত্রিম ঝর্ণা দেখতে হবে জানলে আমি কি আর যেতাম নাকি সেখানে? X(

এরপর যাত্রা উদ্দেশ্য বান্দরবন...


লামা যেতে কিছু কিছু রাস্তা পার হওয়ার সময় গাড়ির মোচর নেওয়া দেখে :((


মাতামহুরি নদীর আসল সৌন্দর্য এখানে কিছুই ধরা পড়েনি।

দুপুরের পর আবার চট্টগ্রাম ফিরে নাবা ইনে আস্তানা গাড়লাম ।
পরের দিনে ফেরার পথে...


চট্টগ্রামের পথে...এই ঘৃণা স্তম্ভ দেখে গাড়ি থামিয়ে কাছে গেলাম। বাচ্চাদের অল্প কথায় এর ইতিহাস জানালাম।


হাইল্যান্ড ইন-এর কাপ দইটা ফাটাফাটি। সেই পথে কেউ গেলে যেনো মিস না করে তাই এই ছবি দেওয়া।


এই ছবিটাতে আপনার চোখের আরাম হবে না কিন্তু কয়েক সেকেন্ড ভাবুন তো...


আমার একটু ইচ্ছে হয়েছিল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় দেখার...কিন্তু এতো দীর্ঘ ভ্রমণের পর আর বলার সাহস পাইনি...বাচ্চারা ক্যাও ম্যাও করে উঠবে নির্ঘাত।


পোস্ট বেশ বড় হয়ে যাচ্ছে। শালবন বিহারের ছবি আপাতত একটাই দিলাম।


ফেরার পথে কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজের না দেখা, না চেনা কাউকে মনে হয় মিস করছিলাম !


দুপুরে খাওয়ার জন্যে কাছাকাছি আর কোন রেস্টুরেন্টের তুলনা এর সাথে হবে কিনা সন্দেহ।

এবং দিনশেষে অবশেষে হোম সুইট হোম :D

ভ্রমণ ব্লগে এতো কষ্ট জীবন নষ্ট :(

উৎসর্গ: তেমন কোন বিশেষ বর্ণনা না দিয়েও আজ হারে হারে টের পেলাম কী অসাধারণ ধৈর্য শক্তির গুনে প্রিয় ব্লগার "জুন" তাঁর ভ্রমণ ব্লগ সাজান।

ছবি সূত্র:
সব অতিসাধারণ মোবাইলে তোলা।
"হান্ডি"র ছবিটা নেট থেকে নেয়া। খেতে বসে ছবি তুললে বকা খেতে হতো তাই রিস্ক নেইনি।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:১৮
৭১টি মন্তব্য ৭২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×