আনসারুল ইসলামের অনলাইনে ওদের প্রচারিত বই “উন্মুক্ত তরবারী” তে তারা বুখারী শরীফের ৪০৩৯ নাম্বার হাদীসের উদাহরণ দিয়েছে এবং সেই হাদিস থেকে স্পস্ট দেখিয়েছে যে ইহুদী “আবু রা’ফে” কে হত্যা করবার জন্য স্বয়ং নবী মুহম্মদ কিভাবে আব্দুল্লাহ ইবনে আতিককে নেতা বানিয়ে একটি স্লিপার সেল বানিয়ে পাঠিয়েছিলো। কারন নাকি নবী (সা) সম্পর্কে কটু মন্তব্য করে ছিলেন আবু রা' ফে' তাই ।
আনসার আল ইসলামের ওই বইতে বর্ণনা করা হয়েছে তারা কিভাবে নবীর (সা) নির্দেশে ইবনে খাতাল, কা’ব ইবনে আশরাফ,আবু আফাক, একজন অন্ধ সাহাবী কর্তৃক নিজ দাসীকে হত্যা করা এই ভাবে সব মিলিয়ে প্রায় ৫/৬টা হত্যা কান্ডের ঘটনা উল্লেখ করেছে যেখানে কেউ নবীজি সম্পর্কে কোনো মন্তব্য বা সমালোচনা কিংবা অশভোন কথা বললেই তাকে হত্যা করা হোতো।
আবার উন্মুক্ত তরবারী গ্রন্থে হাদীস গ্রন্থ আবু দাউদের ৪৩৬৩ নং হাদীসে মহানবীর একজন অন্ধ সাহাবা তার দাসীকে যে মেরে ফেলেছে সেটির বর্ণনা আছে। সেই দাসীর অপরাধ ছিলো যে তিনি নবীকে নিয়ে ব্যঙ্গ করত। এই ব্যাঙ্গ করার কারনে সেই সাহাবা মহিলাটিকে মেরে ফেলে। মেরে ফেলবার পর নবী অত্যন্ত খুশি হয় এই ঘটনায় এবং সেই হত্যার শিকার মহিলার রক্ত মূল্যহীন এমনটাই ঘোষনা করে। এ ছাড়াও এই গ্রন্থ থেকে বুখারী হাদীস ১৮৪৬ বর্ণনা করেছে নবী সম্পর্কে বিদ্রুপাত্নক গান গাইবার অপরাধে খুন করা হয়েছে ইবনে খাতাল কে। সেই ইবনে খাতাল কাবার গিলাফ ধরে বাঁচার প্রাণ পন চেষ্টা করলেও মহানবী তাকে ঐ অবস্থায় খুন করতে নির্দেশ দেন।
এই হাদিস গুলির মেরিট আমরা বিচার কোরবো কোরানের আয়াত দিয়ে । আদৌ কি শুধু বিদ্রুপ করার জন্য রসুল (সা) এর পক্ষে এই ধরনের হ্ত্যা কান্ডের নির্দেশ দেওয়া সম্ভব ?? দেখুন সুরা হিজরে আয়াত ৯৫ তে আল্লাহ কি বোলছেন -- বিদ্রুপকারীদের জন্য আমিই আপনার পক্ষ থেকে যথেষ্ট"----- সুতরাং এই আয়াত স্পষ্ঠ করে বলেছে বিদ্রুপকারীদের আল্লাহ নিজে শাস্তি দিবেন ।
তাহোলে ঐ হাদিস গুলো যদি সত্য হয় তাহোলে সেটা সরাসরি কোরান লংঘন হয়ে যাবে এবং এটা কখনোই সম্ভব নয় । আরো তিনটি কোরানের আয়াত দেখুন --
সুরা আহযাব (৩৩-৫৭) যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদের প্রতি ইহকালে ও পরকালে অভিসম্পাত করেন এবং তাদের জন্যে প্রস্তুত রেখেছেন অবমাননাকর শাস্তি। --- এই আয়াতে শাস্তি দানকারি স্বং আল্লাহ তালা কোন মানুষ নহে ।
সুরা মোজ্জামেল ( ৭৩--১0 ) কাফেররা যা বলে, তজ্জন্যে আপনি সবর করুন এবং সুন্দরভাবে তাদেরকে পরিহার করে চলুন।
সুরা নিসা আয়াত ১৪0- আর কোরআনের মাধ্যমে তোমাদের প্রতি এই হুকুম জারি করে দিয়েছেন যে, যখন আল্লাহ তা’ আলার আয়াতসমূহের প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন ও বিদ্রুপ হতে শুনবে, তখন তোমরা তাদের সাথে বসবে না, যতক্ষণ না তারা প্রসঙ্গান্তরে চলে যায়। তা না হলে তোমরাও তাদেরই মত হয়ে যাবে। আল্লাহ দোযখের মাঝে মুনাফেক ও কাফেরদেরকে একই জায়গায় সমবেত করবেন।
সুরা আল আনাম ( ৬--৬৮) ----- যখন আপনি তাদেরকে দেখেন, যারা আমার আয়াত সমূহ নিয়ে উপহাস করে, তখন তাদের কাছ থেকে সরে যান যে পর্যন্ত তারা অন্য কথায় প্রবৃত্ত না হয়, যদি শয়তান আপনাকে ভূলিয়ে দেয় তবে স্মরণ হওয়ার পর জালেমদের সাথে উপবেশন করবেন না।
সুরা আহযাব ( ৩৩ -৪৮)------ আপনি কাফের ও মুনাফিকদের আনুগত্য করবেন না এবং তাদের উৎপীড়ন উপেক্ষা করুন ও আল্লাহর উপর ভরসা করুন। আল্লাহ কার্যনিবার্হীরূপে যথেষ্ট।
সুরা ক্কাফ (৫০-- ৩৯) অতএব, তারা যা কিছু বলে, তজ্জন্যে আপনি ছবর করুন এবং, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে আপনার পালনকর্তার সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করুন। --
সুতরাং হাদিস গুলোর সাথে কোরানের আয়াত কোন ভাবেই মিলে না । আনসার আল ইসলাম উপরের হাদিস গুলোর উপর ভিত্তি করে ছোট ছোট স্লিপার শেল গঠন করে হত্যা কান্ড চালাচ্ছে । বিভিন্ন সুত্র থেকে জানা যায় কিছু লোককে স্লিপার শেল গঠন করে হত্যা করা হয়েছিল সে গুলো ছিল গুপ্তচর বৃত্তি, বিদ্রোহে মদদ দেওয়া ,ষড়যন্ত্র করা ইত্যাদি কারন, যদি শুধু ব্যঙ্গ বিদ্রুপের কারনে কাউকে হত্যা করা হয়ে থাকে উপরের হাদিস গুলোর বর্ণনা অনুসারে তাহোলে সেটা সরাসরি কোরানের লংঘন হয়ে যায় ।
Did Prophet Muhammad assassinate those who criticized him?
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:৪৫