somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্য আই অফ গড অনুবাদ

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ঐতিহাসিক দলিল থেকে পাওয়া
-------


সত্য কি? যখন এই কথার সাথে অতীত জড়িয়ে যায়, এই প্রশ্নের উত্তর দেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। উইনস্টন চার্চিল একবার বলেছিলেন, ইতিহাস নাকি বিজয়ীদের হাতে লেখা। এ কথা সত্যি হয়ে থাকলে লিখিত ইতিহাসের ওপরে আমরা কতটুকু ভরসা করতে পারি? যা কিছু লিখিত পাওয়া যায় তা মাত্র ৬ হাজার বছর আগের, মানুষের খুব সামান্য কিছু অর্জনের চিহ্নই যাতে পাওয়া যায়। আর এমনকি ঐ চিহ্নও ছেড়া আর পোকায় খাওয়া পাতার আড়ালে ঢাকা। সবচে অসাধারণ ব্যাপার, ঐ ফাঁপা গর্তের মাঝে যে বিশাল বিশাল রহস্য আগে হারিয়ে গেছিল, তা এখন আবার ফিরে আসার অপেক্ষায়-যার মাঝে সেই সব মুহূর্তও আছে যা ইতিহাস নির্মাণ করেছিল। সেই সব দুর্লভ মুহূর্ত যা পুরো মানব সভ্যতাকেই পাল্টে দিয়েছিল।
এরকম একটা মুহূর্ত এসেছিল ৪৫২ খ্রিস্টাব্দে, যখন আটিলা দ্যা হানের লুটেরার দল উত্তর ইতালিতে হানা দিয়ে সামনে যা পড়ছিল সব ছারখার করে দিচ্ছিল। এই বর্বর অসভ্য লোকের সামনে রোম ছিল অসহায়। এমন এক মুহূর্তে পোপ লিও ঘোড়ায় চড়ে রোমের বাইরে গিয়ে গার্দা লেকের পাড়ে আটিলার সাথে দেখা করতে যান। তারা একলা আর গোপনে কিছুক্ষণ কথা বলেন। ঠিক কী বলেন তার কোন লিখিত দলিল পাওয়া যায় না। সেই সাক্ষাৎের পরে, আটিলা বিজয় নিশ্চিত জেনেও তার যাযাবর দলের লোক নিয়ে দ্রুত ইতালি ত্যাগ করেন।
কেন? তাদের মধ্যে গোপনে কী এমন কথা হয়েছিল যে বিজয় নিশ্চিত জেনেও আটিলাকে ইতালি ছাড়তে হল? ইতিহাস এই প্রশ্নের উত্তর দেয় না।
যদি জানতে চান আমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের কত কাছাকাছি নিয়ে গিয়েছিলাম তাহলে এই পৃষ্ঠা উল্টান। কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া মুহূর্ত আপনার সামনে জেগে উঠবে যেখানে পশ্চিমা সভ্যতা একটি তলোয়ারের সামনে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যাওয়ার সামনে চলে এসেছিল-সেই তলোয়ার যাকে ডাকা হয় "সোর্ড অফ গড" নামে।
-----
বৈজ্ঞানিক দলিল থেকে পাওয়া
------

বাস্তবতা কী? এর উত্তর দেয়া একই সাথে খুবই সহজ এবং খুবই কঠিন। যুগ যুগ ধরে এই প্রশ্ন দার্শনিক আর পদার্থবিদদের হতবুদ্ধি করে রেখেছে। রিপাবলিক নামক বইটিতে প্লেটো লিখেছেন সত্যিকারের দুনিয়া আসলে গুহার গায়ে পড়া ঝিকিমিকি ছায়া ছাড়া আর কিছুই না। আশ্চর্যের ব্যাপার, হাজার বছর পরে এসে বৈজ্ঞানিকরাও এখন ঠিক একই কথা বলছেন।

এখন যেই শক্ত পোক্ত পৃষ্ঠায় আপনি আমার লেখা পড়ছেন ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখবেন এটা তেমন কিছু না। আসলে এটা পরমাণু দিয়ে গঠিত। এই পরমাণু ভাঙলে প্রোটনের একটা ক্ষুদ্র নিউক্লিয়াস পাবেন আরও পাবেন নিউট্রনকে যার চারপাশে ইলেকট্রন ঘুরাফেরা করছে। এমনকি এগুলিকেও আবার ভেঙে ছোট ছোট করা যায়ঃ যেমন কোয়ার্ক, নিউট্রিনোস এবং আরও কত কী। আরও গভীরে যান, এমন অদ্ভুত এক দুনিয়ায় পৌঁছে যাবেন যেখানে শুধু এনার্জির জয়গান। যেটা হয়তোবা প্লেটোর গুহার গায়ে পড়া ঐ ঝিকিমিকি ছায়ার শক্তির উৎস।

এই একই অনুভূতি হবে রাতের আকাশের দিকে তাকালে। বিলিয়ন বিলিয়ন গ্যালাক্সির এই বিশাল মহাকাশ। এমনকি আমাদের এই বিশাল জগৎ যা হয়তো আরও অনেকগুলি জগতের একটা সেটাও প্রতি মুহূর্তে আকারে বেড়েই চলছে। আর এখন তো মনে করা হয় আমাদের এই জগত আসলে শুধুই একটা হলোগ্রাম। একটা ত্রিমাত্রিক ভ্রান্তির জগত। যেখানে আমাদের জন্য সবকিছুই আগে থেকে প্রোগ্রাম করে রাখা।

এটা কী করে সম্ভব? প্লেটো যা বলেছেন তবে কি সেটাই ঠিক? যে আমাদের চারপাশের বাস্তবতা সম্পর্কে আমরা আসলেই পুরোপুরি অজ্ঞ। আমরা যা দেখি তা আসলে গুহার দেয়ালের গায়ে পড়া ঝিকিমিকি ছায়া ছাড়া আর কিছুই না?

যদি ভয়াবহ সত্যিটা জানতে চান তাহলে পরের পৃষ্ঠায় যান।
-------
প্রস্তাবনা




৪৫৩ খ্রিস্টাব্দের গ্রীষ্ম
মধ্য হাঙ্গেরি
-------
রাজা তার বিয়ের ফুলশয্যায় ধীরে ধীরে মারা যাচ্ছেন।
খুনি তার সামনে একটু নুয়ে এল। মেয়েটি বার্গান্ডির রাজপুত্রের কন্যা। রাজার ৭ নম্বর বৌ। মাত্রই আগের রাত্রে বিয়ে হয়েছে। এই বর্বর রাজা তাকে ষড়যন্ত্র করে বিয়ে করেছে। নাম ইল্ডিকো, মাতৃভাষায় যার অর্থ "হিংস্র যোদ্ধা"। কিন্ত মৃতপ্রায় মানুষটির সামনে তাকে অতো হিংস্র লাগছে না।

সামনে শুয়ে আছে এক রক্তপিপাসু অত্যাচারী রাজা, লোকে যাকে "ফ্ল্যাজল্যাম ডেই" নামে ডাকে, যার অর্থ "দেবতার হাতের চাবুক"। এক জীবন্ত কিংবদন্তি। লোকেমুখে বলা হয় তার হাতের তলোয়ারটি সিথিয়ান যুদ্ধের দেবতার মাধ্যমে এসেছে।

তার আটিলা নাম শুধু একবার উচ্চারণ করলে—যেকোনো শহরের দরজা খুলে যায়, ভয়ে মানুষ তার চোখের দিকে সরাসরি তাকায় না। আর সেই মানুষ এখন নগ্ন অবস্থায় মারা যাচ্ছে, তাকে এখন অন্যদের তুলনায় তেমন ভয়ের কিছু বলেও মনে হচ্ছে না।
লম্বায় সে ইল্ডিকোর থেকে একটু বড় হবে, যদিও তার যাযাবর উপজাতির লোকদের তুলনায় পেশি আর হাড় খুব বেশি চওড়া হবে না। তার চোখ দুটো—দুইদিকে অনেক খানি প্রসারিত আর অনেক গভীরে খোদাই করা——যা দেখে ইল্ডিকোর শুয়োরের কথা মনে পড়ে যায়, বিশেষ করে যখন ভাসা ভাসা দৃষ্টিতে সে তার দিকে অনেকক্ষণ একটানা চেয়ে থাকে। রাতে বোতলের পর বোতল মদ খাওয়ায় ঐ চোখও এখন রক্তবর্ণ ধারণ করেছে।
এখন তার পালা ওর দিকে অনেকক্ষণ একটানা চেয়ে থাকার, সেই সময়ের অপেক্ষা করা কখন আজরাইল এসে ওকে তুলে নিয়ে যায়।
সে ভাগ্যকে গালমন্দ করল। তার ছোট্ট কাঁধে কী কারণে এতো বড় দায়িত্বভার দেয়া হল। পুরো দুনিয়ার ভাগ্য সামলানোর মত কঠিন দায়িত্ব কেন তার ওপরেই অর্পণ করতে হল? সে তো সামান্য এক বালিকা যার বয়স মাত্র ১৪ বছর?

সপ্তাহ দুয়েক আগে একজন আলখাল্লা পড়া মানুষ তাদের বাসায় এসে তাকে এই খুনে কাজের গুরুত্বের কথা বুঝিয়ে বলেছিলেন। ততদিনে ইল্ডিকোকে বর্বর রাজার কাছে বিয়ে দেয়ার কথা পাকা হয়ে গিয়েছিল। তারপরেও বাবা তাকে এই অচেনা লোকের সামনে এনে হাজির করান। কিছুক্ষণের জন্য কার্ডিনালের আঙুলে পড়া স্বর্ণের আংটি সে দেখতে পায় যতক্ষণে না তিনি সেটি কাপড়ের লুকিয়ে ফেলেন। তারপরে কার্ডিনাল তার গল্প খুলে বলেন। মাত্র এক বছর আগে আটিলার বর্বর বাহিনী কিভাবে উত্তর ইতালির পাদুয়া এবং মিলান শহরে তাদের সামনে পড়া সব নারী, পুরুষ, শিশুদের কচুকাটা করছিল। যারা যারা হামলা এড়িয়ে উপকূলের দিকের জলাভূমিতে পালাতে পারে, শুধু তারাই এই নিষ্ঠুরতার কাহিনী বলার জন্য বেঁচে আছে।

"রোম তার পাপাসক্ত তলোয়ারের কবলে পড়ে পতনের দিন গুনছিল, " কার্ডিনাল ঠাণ্ডা ঘরের এক কোণায় বসে বললেন। "বর্বর রাজার আগমনের কথা শুনে পোপ লিও ঘোড়ায় চড়ে তার সাথে দেখা করতে যান এবং নিজের প্রভাব খাটিয়ে নির্দয় হানকে তিনি এলাকা ছাড়তে বাধ্য করেন। "
কিন্ত ইল্ডিকো জানতো শুধু যাজকের প্রভাব খাটিয়ে তিনি ঐ বর্বরকে ফেরত পাঠাতে পারতেন না, সেই সাথে রাজার কুসংস্কারের ভয়কেও তিনি কাজে লাগিয়েছেন।

ভীষণ ভয় পেয়ে, সে বিছানার কাছে রাখা বাক্সটির দিকে একবার তাকাল। সেদিন পোপের পক্ষ হতে আটিলাকে দেয়া এই ছোট্ট সিন্দুকের বাক্সটিকে একই সাথে উপহার এবং হুমকি হিসেবে বলা যায়। বাক্সটা খুব বেশি বড় হবে না। কিন্ত সে জানতো এর ভিতর সমগ্র দুনিয়ার ভাগ্য রক্ষিত আছে। এটা স্পর্শ করতে ইল্ডিকোর ভয় হচ্ছিল। সে ভাবল, স্বামী মারা গেলে তখন এটা স্পর্শ করবে।

তার শুধু একবারে একটা আতংক সামলানোরই ক্ষমতা আছে।

তার ভীরু দৃষ্টি রাজার বিছানা ঘরের এদিক ওদিকে ঘুরাফেরা করতে থাকল। জানালা দিয়ে দেখা গেল, পূব আকাশ নতুন একটি দিনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ফর্সা হতে শুরু করেছে। সকাল হলে, তার লোকেরা দ্রুত গতিতে বিছানা ঘরে এসে হাজির হবে। অবশ্য ততক্ষণে তাদের রাজা মরে যাবে।

সে দেখল রাজার কষ্ট করে নেয়া প্রতিটা নিশ্বাসের সাথে সাথে রক্ত নাক দিয়ে বুদবুদ আকারে বের হয়ে আসছে। বুকের ভেতর থেকে কানে বাজে এরকম গলগল আওয়াজ আসছে। একটা দুর্বল কাশির সাথে রাজার ঠোঁটের কোণ দিয়ে রক্ত বের হয়ে দাঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে গলা বেয়ে নিচে নেমে গেল। তার হৃৎপিণ্ডের ধুকপুকানি এখান থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।

সে মনে মনে প্রার্থনা করল তার দ্রুত মৃত্যুর জন্য।
জাহান্নামের আগুনে মর, ওটাই তোর উপযুক্ত জায়গা...

যেন ঈশ্বর তার প্রার্থনা শুনতে পেলেন। শেষ একটা নিশ্বাস নিয়ে, ঠোঁট দিয়ে আরও কিছু রক্ত বের করে, বুকটা শেষ বারের কাঁপিয়ে রাজা বিছানায় ঢলে পড়লেন। আর উঠলেন না।

স্বস্তিতে ইল্ডিকোর কান্না পেয়ে গেল, চোখ বেয়ে পানি নেমে আসলো। একটা কাজ শেষ। ঈশ্বরের হাতের চাবুক শেষ পর্যন্ত মারা গেছে, দুনিয়ার সর্বনাশ ঠেকানো গেছে।
তার বাবার বাড়িতে, কার্ডিনাল তাকে আটিলা বাহিনীর আবারও ইতালিকে আক্রমণের পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন। বিয়ের ভোজের রাতে আটিলার লোকের সেই রকম কিছু কথা ইল্ডিকোর কানেও এসেছিল। ওরা বলছিল আবারও রোমে গিয়ে লুটপাট করবে, শহর জ্বালিয়ে দেবে আর সবাইকে কচুকাটা করবে। একটা উন্নত সভ্যতা নিষ্ঠুর রাজার তলোয়ারের কবলে পড়ে চিরকালের জন্য হারিয়ে যাবে।
একটা খুনের মাধ্যমে, এখনকার জন্য চিন্তামুক্ত হওয়া গেছে।
তবে কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। ভবিষ্যৎ এখনও ঝুঁকির মাঝে আছে।
কম্পমান শরীর নিয়ে পায়ের ওপরে দাঁড়িয়ে সে আরও ভয়ে ভয়ে ছোট্ট সিন্দুকের কাছে এগিয়ে এল। স্বামীর গ্লাসে বিষ ঢেলে দেয়ার সময়ও এতো ভয় লাগেনি।
লোহার বাক্সটি কালো রঙ এর, সব দিক সমতল। ওপরে একটা কব্জাও দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। কোন অলংকরণ করা না থাকলেও এর ওপরে একজোড়া প্রতীক আছে। এই লেখা তার কাছে অচেনা, কিন্ত কার্ডিনাল তাকে আগেই এ ব্যাপারে আভাস দিয়ে রেখেছিলেন। বলেছিলেন এই ভাষা আটিলার প্রাচীন পূর্বপুরুষদের ভাষা, সেই যাযাবর উপজাতি যারা অনেকদিন আগে পূবের দিকে থাকতো।

সে লেখাটি স্পর্শ করল।

"গাছ, " সে ফিসফিস করে বলল, শক্তি ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছে। অক্ষরটাকে একটা গাছের মত লাগছে। অনেক ভক্তি নিয়ে সে এর পাশের অক্ষরের দিকে আঙুল বুলালো—আরেকটা গাছ।
শুধু তখনই সে সিন্দুকের ঢাকনা খুলার সাহস জড়ো করতে পারল। ঢাকনা খুলে দেখা গেল, ভেতরে আরেকটা বাক্স রাখা, এবারেটা রুপালি রঙ এর। এর ওপরের লেখা একই রকমের অদ্ভুত, তবে এটাও খুব যত্ন করে লেখা।
ঐ সহজ সরল সূক্ষ্ম রেখার মানে হচ্ছে আদেশ বা নির্দেশ।
সময় দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে বুঝতে পেরে, নিজের কাপাকাপা আঙুল স্থির করে রুপালি বাক্সটা তুলে তার ভেতরের সোনালি বাক্স বের করল। মশালের আলোয় এর উপরিতল চকচকে তরল পদার্থের মত লাগছে। যেই প্রতীক এখানে খোদাই করা তা একটু আগে বের করা লোহা আর রুপার বাক্সে থাকা প্রতীকের মিলিত রূপ। একটার সাথে আরেকটা মিলে নতুন শব্দ তৈরি করেছে।
এই শেষ কথাটির ব্যাপারে কার্ডিনাল তাকে আগেই সতর্ক করে দিয়েছিলেন।
"নিষিদ্ধ, " তার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসলো।
খুব সাবধানে, মেয়েটি বাক্সটি খুলল। ওখানে কী রাখা আছে তা আগে থেকে জানার পরেও শরীরে শিহরণ বয়ে গেল।
স্বর্ণের বাক্সের মধ্যে মানুষের হলদে রঙ এর একটা মাথার খুলি রাখা। এর নিচের চোয়াল উধাও, শুন্য দৃষ্টি উপরের দিকে মুখ করে আছে। অন্য সব বাক্সের মত এখানেও হাড়ের মধ্যে কিছু লেখা শোভা পাচ্ছে। খুলির ওপরে লিখিত কথা গুলি সর্পিল আকারে নিচে নেমে এসেছে। আগের তিনটা বাক্সে যে ভাষা ব্যাবহার করা হয়েছে এখানে তার বদলে প্রাচীন ইহুদী ভাষায় কিছু কথা লেখা—কার্ডিনাল তাকে এভাবেই বুঝিয়েছিলেন। একইভাবে, তিনি এই ধরণের দেহাবশেষের কী উদ্দেশ্য হতে পারে সেই ব্যাপারেও ধারণা দিয়েছিলেন।
মাথার খুলিতে ইহুদী ভাষায় অতি পুরাতন জাদুমন্ত্র লেখা, ঈশ্বরের কাছে দয়া ভিক্ষার করুণ মিনতি।
পোপ লিও আটিলাকে এই সম্পদ দিয়ে তার হাত থেকে রোমকে রেহাই দেয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন। সেই সাথে, পোপ তাকে এই বলেও সতর্ক করেছিলেন যে, এই ক্ষমতাবান রক্ষাকবচের মত আরও অনেক গুলি রক্ষাকবচ রোমে রাখা আছে আর এটি স্বয়ং ঈশ্বরের দ্বারা সুরক্ষিত। যদি কেউ এর ক্ষমতাকে ছোট করে দেখে রোমের দেয়াল পার হওয়ার চেষ্টা করে তাহলে তার মৃত্যু অনিবার্য। এই কথাকে আরও জোরালো করার জন্য, পোপ তাকে একটি কাহিনী বলেন যেখানে প্রথম আলারিক রাজা ভিসিগঠ চল্লিশ বছর আগে রোম শহর লুটপাট করতে এসে শহর ছাড়ার আগ মুহূর্তে মারা যান।
অভিশাপের কথায় ভয় পেয়ে, আটিলা তার মূল্যবান ধন সম্পত্তি নিয়ে তক্ষুনি ইতালি ত্যাগ করেন। তবে এতো কিছুর পরেও মনে হয় তিনি শেষ পর্যন্ত ভয় কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলেন। তার আবারও রোম আক্রমণ করার সাধ জেগেছিল, ঈশ্বরের একটা পরীক্ষা নেয়ার বাসনাও হয়তো হয়েছিল।
ইল্ডিকো তার স্বামীর মৃত লাশের দিকে তাকালেন।
মনে হচ্ছে ঐ পরীক্ষায় সে ইতিমধ্যে ব্যর্থ হয়েছে।
একজন মানুষ যতই শক্তিশালী হোক, মৃত্যুর হাত থেকে তার রেহাই নেই।
কী করতে হবে আগে থেকেই জানা, এবার সে খুলির দিকে হাত বাড়াল। এখনো, তার দৃষ্টি সর্পিল আকৃতি লেখার মধ্যিখানে রাখা। খুলির গায়ে যার কাছ থেকে রেহাই পাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে তার কথা লেখা।
দুনিয়া ধ্বংসের তারিখ।
যার হাত থেকে নিস্তারের উপায় খুলির নিচে রাখা—লোহা, রুপা, স্বর্ণ এবং হাড়ের দ্বারা আড়াল করা। এর তাৎপর্য টের পাওয়া গেছে মাত্র এক চন্দ্র আগে, যখন পারস্য থেকে এক নেস্টোরিয়ান যাজক এসে রোমের দরজায় হাজির হন। সে শুনেছে যে চার্চের ট্রেজার ভল্ট থেকে আটিলাকে একটা উপহার দেয়া হয়েছে। সেই উপহার যা এক কালে নেস্টোরিয়াস, কনস্টান্টিনোপলের (তুরস্কের ইস্তানবুলের পুরানো নাম) প্রতিষ্ঠাতা, নিজে চার্চকে প্রদান করেছিলেন। যাজক পোপ লিওকে তিনটি বাক্স আর তার মধ্যে খুলির আড়ালে থাকা সত্যটা ব্যাখ্যা করলেন। কিভাবে এটি কনস্টান্টিনোপল থেকে এতো দূরে আসলো আর পবিত্র শহরে পাঠানো হল নিরাপদে রাখার জন্য।
শেষে, তিনি পোপকে এই বাক্সের সত্যিকারের সম্পদের ব্যাপারে অবহিত করেন—সেই সাথে ঐ মানুষটার কথাও খুলে বলেন যে এক সময় এই খুলি চামড়ার আড়ালে রেখে দুনিয়ার বুকে চড়ে বেড়াতো।
ইল্ডিকো তার আঙুল খুলির ওপর রাখল। খুলির ফাঁপা চোখ তার দিকে স্থির চেয়ে আছে। যেন তার মনের কথা বুঝতে চাইছে। এই একই চোখ, যদি নেস্টোরিয়ান যাজক সত্যি বলে থাকে, এক কালে যিশু খ্রিস্টের চোখের দিকেও চেয়ে ছিল।
পবিত্র খুলি উঠাবে কিনা সে ব্যাপারে তার মাঝে দ্বিধা দ্বন্দ্ব দেখা গেল—তার অনিচ্ছার জবাব হিসেবেই যেন ঘরের দরজায় কেউ একজন টোকা দিল। কেউ একজন রাজাকে ডেকে উঠল। সে হানের লোকদের ভাষা বুঝতে পারে না, তবে জানে যে এরা সব আটিলার লোক, রাজার কাছ থেকে কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে শীঘ্রই ভেতরে চলে আসবে।
সে ইতিমধ্যে অনেক দেরি করে ফেলছে।
তাড়াহুড়া করে খুলি উঁচু করে ধরল নিচে কী রাখা আছে তা দেখার জন্য—কিন্ত কিছুই পাওয়া গেল না। বাক্সের তলদেশে শুধু একটা স্বর্ণালী ছাপ দেখা গেল। এক সময় এখানে যা রাখা ছিল তার একটা ছাঁচ, বহু পুরাতন একটি ক্রস—একটি ভগ্নাবশেষ, বলা হয় যা স্বর্গ থেকে মাটিতে পতিত হয়েছে।
কিন্ত ওটা ওখানে নেই, সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
ইল্ডিকো তার মৃত স্বামীর দিকে স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে রইল, এই লোকটিকে মানুষ যেমন তার নির্মমতার জন্য চেনে তেমনি তার তীক্ষ্ণ বুদ্ধির জন্যও সে সুপরিচিত। লোকে আরও বলে যে সব টেবিলের তলায় তার কান আড়ি পেতে আছে। তাহলে কি হানদের রাজার কানে রোমের নেস্টোরিয়ান যাজকের বলা রহস্যময় কাহিনী পৌঁছেছিল? তিনি কি স্বর্গীয় ক্রসটি নিজের জিম্মায় নিয়ে লুকিয়ে ফেলেছিলেন? এটাই কি তাকে রোমে আবারও আক্রমণ করে লুটপাট করার আত্মবিশ্বাস যুগিয়েছিল?
বাইরের চেঁচামেচি এখন আরও জোরালো, দরজায় এখন আরও শক্তি নিয়ে আঘাত করা হচ্ছে।
হতাশ হয়ে ইল্ডিকো খুলিটি তার আগের জায়গায় রেখে বাক্স বন্ধ করে দিল। তারপরই হাঁটু গেড়ে বসে নিজের চেহারা ঢেকে ফেলল। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার কারণে শরীর দুলে উঠল, অন্যদিক থেকে পেছনের দরজা ভাঙার শব্দ ভেসে আসল।
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদার কারণে তার নিশ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছিল, ঠিক যেভাবে গলায় রক্ত আটকে থাকায় তার স্বামীর নিশ্বাস আটকে গেছিল।
মানুষ ধাক্কাধাক্কি করে শয়নকক্ষে ঢুকে পড়ল। তাদের রাজাকে বিছানায় মৃত পড়ে থাকতে দেখে কান্নার আওয়াজ আরও তীব্র হল। এরপরই শুরু হল হাহাকার।
কিন্ত রানীকে স্পর্শ করার সাহস কেউ করল না, হাঁটু গেড়ে বিছানার ওপরে এপাশ ওপাশ দুলে দুলে নতুন বৌ আহাজারি করতে লাগল। সবাই ভাবল এই চোখের জল তাঁর স্বামীর জন্য, তাদের মৃত রাজার জন্য, কিন্ত ওদের ধারণা ছিল ভুল।
মেয়েটি কেঁদেছিল দুনিয়ার জন্য।
সেই দুনিয়া যার ধ্বংস অনিবার্য।

সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১:১৯
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×