somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধঃ প্যারিসের জার্মান রক্ষক(০২)

১৯ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ডিয়েটরিচ ফন ক্লটিজ
ডিয়েটরিচ ফন ক্লটিজ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একজন সমর নায়ক ছিলেন। তিনি তৎকালিন জার্মানী অধিক্রিত প্যারিসের শেষ গর্ভনর ছিলেন। তিনি মিত্র বাহিনীর কাছে বিনা ধ্বংসজগ্গে প্যারিস সমর্পন করেন। তিনি হিটলারের আদেশে প্যারিসের কোন শিল্প সামগ্রী লুন্ঠন বা নষ্ট করেন নি।
ডিয়েটরিচ ফন ক্লটিজ ১৮৯৪ সালের ৯ নভেম্বর নেয়াস্টাক্ট এ জন্ম গ্রহন করেন। ১৯০৭ সালে তিনি সাম্রাজ্যবাদী জার্মান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ডিয়েটরিচ ফন ক্লটিজ সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসাবে স্যাকসন আর্মির হয়ে পশ্চিম ফ্রন্টে যুদ্ধ করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানীর পরজয়ের পর সীমিত সংখ্যাক জার্মান আর্মির মধ্যে তিনি থেকে যান। ভলমার রিপাবলিক আর্মিতে তিনি ১৯২৯ সালে ক্যালিভারি ক্যাপ্টেন হিসাবে তিনি পদন্বতি পান। একং পরবর্তিতে তিনি ঐ ইউনিটের ৩য় ব্যাটিলিয়ানের কমান্ডার হন এবং মেজর পদে পদন্বতি পান। এবং ১৯৩৮ সালে তিনি ১৯ ইনফেন্ট্রি রেজিমেন্টের লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসাবে দায়িত্ব গ্রহন করেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে ডিয়েটরিচ ফন ক্লটিজ যুদ্ধে খুব গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখেন। হল্যান্ডের সমুদ্র বন্দর রটারড্যামে তার নেতৃত্বে জার্মান প্যারাটুপার ব্যাটিলিয়ান অবতরন করে। তার এই দুঃসাহসিক নেতৃত্বের জন্য তিনি নাইট ক্রস অব আয়রন ক্রসে ভূষিত হন। এই কৃতিত্বের জন্য সেপ্টেম্বরে তিনি পূর্ন কর্নেল হন এবং একটি প্যারাটুপার রেজিমেন্টের কমান্ডার নির্বাচিত হন। সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ক্লটিজের রেজিমেন্ট অংশ গ্রহন করে এবং ১৯৪২ সালের সাভাস্তাপল শহর অবরোধে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে।

এই বছরেই সে পদনন্তি পেয়ে মেজর জেনারেল হয় এবং ১৯৪৩ সালে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হন। তিনি তখন ২৬০তম ইনফেন্ট্রি ডিভিশনের সহকারি কমান্ডার হন এবং পরবর্তীতে ১৯৪৪ সালের মার্চে ৪৮তম প্যানজারের অধিনায়কের দায়িত্ব গ্রহন করেন। সে সময় ৪৮তম প্যানজার ইতালিতে অবস্থান করছিল। এবং এখানে তিনি জুন পর্যন্ত অবস্থান করেছিলেন। পরবর্তিতে তিনি মিত্র বাহিনীর বন্দী হিসাবে ইংল্যান্ডের ট্রেন্ট পার্কের কারাগারে যান। সে সময় তিনি এক লোকের কাছে জবান বন্দী দেন যে, রাশিয়ায় থাকাকালিন ইহুদিদের মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন কাজ। এই কথা তিনি ২৯ আগষ্ট ১৯৪৪ সালে বলেছিলেন।
গর্ভনর অব প্যারিস
আগষ্ট ১,১৯৪৪ সালে ফন ক্লটিজ জেনারেল অব দ্য ইনফেন্ট্রি পদে অধিস্টিত হয়ে প্যারাইসের গর্ভনর পদের দায়িত্ব নেন। তিনি ৭ আগষ্ট প্যারিসের মেলেটারি গর্ভনরের দায়িত্ব নেন। তিনি ৯ তারিখ প্যারিসে এসে পৌছান। এর ১৬ দিনের মাথায় তিনি জার্মান ফুয়েরার এডলফ হিটলারের বেশ কিছু সরাসরি নির্দেশ অমান্য করেন। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ছিল হিটলার প্যারিসকে ধ্বংস করে দিতে বলেছিলেন। তিনি ২৩ আগষ্ট তাকে বলেন, শুত্রুর হাতে এই শহরকে তুলে দেওয়ার আগে অবশ্যই একে বসবাসের অযোগ্য করে দিতে হবে। সে সময় হিটলার ফোনে তাকে একথা বলেছিলেন এবং সেখানে তিনি চিৎকার করছিলেন। সেই সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন হিটলারে চিফ অব স্টাফ কলোনেল জেনারেল জডিল। হিটলার জডিলকে প্রশ্ন করেছিলেন, প্যারিস কি জ্বলছে? হিটলার আবার বলছিলেন, জডিল আমি শুনতে চাই প্যারিস জ্বলছে। তখন ক্লটিজ এর বিরোধীতা করে বলেন, তিনি প্যারিসকে আরেকটি স্ট্যালিনগ্রাড বানাতে চান না। তার অধিনে থাকা ১৭,০০০ সৈন্যের জীবন তিনি কোন রকম খেলা খেলবেন না। তিনি শত্রুর সাথে আলোচনা করছেন কিভাবে ১৭,০০০ সৈন্যকে বাচানো যায়। তিনি এখন ফ্যাঞ্চ জেনারেল ফিলিপ লেকার এবং সাধারন যোদ্ধা নেতা হেনরল ট্যাঙ্গি দ্বারা অবরোধ হয়ে আছেন। এই প্যারিসকে ধ্বংস না করার জন্য তাকে প্যারিসের রক্ষা কর্তা বলা হয়ে থাকে।
বন্দীত্ব এবং মুক্ত জীবন
তিনি যুদ্ধের পরবর্তী সময়টুকু ইংল্যান্ডের ট্রেন্ট পার্কের কারাগারে অন্যন্ন জার্মান সেনা কর্মকর্তাদের সাথে কাটান। সেই সময় তিনি কারও কাছে তার জবানবন্দী দেন যেটা পরবর্তীতে বিখ্যাত পে চ্যানেল হিস্ট্রি-৫ উদ্ধার করে। এবং হিস্ট্রি চ্যানেলের ডকুমেন্টরী ভলমার্খঃ দ্য ক্রাইম নামের শিরোনামের পর্বে প্রচার করা হয়। জেনারেল ফন ক্লটিজ অক্টোবরে এই জবানবন্দী দেন। সেখানে তিনি বলেন
“আমরা আমাদের দোষ সবার সাথে ভাগ করে নিয়েছি। আমরা যেকোন কিছু করতে প্রস্তুত ছিলাম, যা নাৎসি সরকার আমাদের করতে বলতো। তারা আমাদের বলতো, এই সব অপদার্থদের নরকে পাঠাও। আমরা তাই পাঠাতাম। এবং আমি আমার সৈন্যদের এই জিনিসের প্রতি বিশ্বাষ এবং তাদের সেভাবে পরিচালনা করেছি। আমি খুবই লজ্জিত। আমি পশুর মতো আচরন করেছি।”
মিসিসিপির ক্যাম্প ক্লিনটন থেকে তিনি ১৯৪৭ সালে মিত্রবাহিনীর হাত থেকে মুক্তি পান। ফন ক্লটিজ ১৯৬৬ সালের নভেম্বরে যুদ্ধের কারনে অসুস্থতার জন্য বাদেন এর সিটি হসপিটাল অব বাদিনে মারা যান। তাকে বাদিনের কেন্দ্রীয় কবরস্থানে কবর দেয়া হয়। সে সময় ফ্রান্স সেনা বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। বাদিন যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জার্মানীতে ফ্রান্স সেনাবাহিনীর ক্যান্টনম্যান্ট ছিল।

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৩৬
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×