somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মায়াবতী (ছোট গল্প)

২২ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিকেল সাড়ে তিনটা। রুমে তালা দিয়ে ক্যাম্পাসে বের হলাম। ক্যাম্পাসটা ঝিম মেরে আছে। ছাত্র-ছাত্রীরা জোড়ায় জোড়ায় হাঁটবে। গাছের ছায়ায় বসে আড্ডা দিবে। সরু রাস্তায় রিক্সার টুন-টুন বাজবে। তবেই না মনে হবে ক্যাম্পাসে প্রাণ আছে। ঝিমমারা ক্যাম্পাস দেখতে ভাল লাগে না। কিছুদিন ধরে ছাত্রদল এবং ছাত্রলীগের মধ্যে চাপা উত্তেজনা যাচ্ছে। একদিন বিস্ফোরণ ঘটবে সবাই জানে, কিন্তু কবে কেউ জানে না।
পলাশীল মোড়ের দিকে আসতেই হঠাৎ গুলির শব্দ শুনলাম। কোন দিক থেকে আসছে বুঝতে পারছি না। পলাশীর রাস্তা পর্যন্ত যেতে পারলে হত। চট করে একটা রিক্সা বা সিএনজি-তে উঠতে পড়তাম। হঠাৎ কে যেন চিৎকার করে বলল,
শুয়ে পড়ো, শুয়ে পড়ো।
মাথা নিচু করে শুইতে যাবো, হঠাৎ বাম বাহুতে তীব্র একটা ঝাঁকুনি খেলাম। তাকিয়ে দেখি রক্ত! গলগল করে বের হচ্ছে। তীব্র একটা ব্যথা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ল। মাথা চক্কর দিয়ে উঠল। গভীর ঘুমে তলিয়ে যাওয়ার আগে সারা শরীরে যেমন অবসাদ, তেমন অবসাদে শরীর ভেঙ্গে আসছে।
যখন জ্ঞান ফিরলো, দেখি বিছানায় শুয়ে আছি। দেয়ালে একটা লাইট টিম টিম করে জ্বলছে। রুমে ফিনাইলের গন্ধ। বুঝলাম হাসপাতালে। কিছু মানুষ চিন্তিত মুখে আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। দু’জনকে চিনলাম। সজীব আর তাপস। আমি চোখ মেলতেই ওদের চোখে-মুখে খুশীর আভা ছড়িয়ে পড়ল।
সজিব বলল, কিরে আরেকটু হলেই তো গেছিলি। ভাগ্য ভাল গুলিটা পেশীতে লেগেছে। দুপুর বেলা তুই একা একা কোথায় যাচ্ছিলি?
টিউশনীতে।
এই দুপুরে?
হ্যাঁ। আগে-ভাগেই যাচ্ছিলাম। সন্ধ্যার আগে ফেরার প্ল্যান ছিল। সামনে পরীক্ষা না?
পরীক্ষা নিয়ে আর ভাবতে হবে না।
কেন?
ক্লাশ অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ। সবাইকে হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে।
কবে?
কাল দশটার মধ্যে।
ওহ!
তাপস বলল,
প্রভোস্ট স্যার তোকে দেখতে এসেছিলেন। তুই তখন অচেতন।
কিছু বললাম না। পাশ ফিরে শুইলাম। চিনচিনে একটা ব্যথা পাক দিয়ে উঠছে। বাম বাহুতে শক্ত করে ব্যান্ডেজ বাঁধা। সেখান থেকে ব্যথাটা জানান দিচ্ছে।
হল ছাড়ার কথা শুনে মনটা দমে গেল। তার মানে এই ব্যান্ডেজ নিয়েই বাড়ি যেতে হবে। মা ভড়কে যাবেন। কেঁদে-টেদে অস্থির হবেন।
সন্ধ্যার পর আমি নিজেই ভড়কে গেলাম। যে ওয়ার্ডে আমাকে ভর্তি করা হয়েছে, সেই ওয়ার্ড লোকজনে ভরে গেল। আয়া-নার্সরা ভীড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। তীক্ষ্ম কণ্ঠে বারবার বলছেন,
সবাই বাইরে গিয়ে দাঁড়ান। এখানে ভীড় করবেন না। রোগীদের সমস্যা হয়।
কে শুনে কার কথা। দেখলাম, আমার ক্লাশমেটরা তো এসেছেই, অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের ছাত্র-ছাত্রীরাও এসেছে। যাদের সাথে ক্যাম্পাসে দেখা হয়, কথা হয় না। কয়েকজন শিক্ষকও এসেছেন। একজন ফটো সাংবাদিক পটাপট ছবি তুলছেন।
চ্যানেল আইয়ের মনোগ্রাম লাগানো বিশাল একটা ক্যামেরাও দেখলাম। আমার দিকে তাক করা হচ্ছে।
‘আহত কি আমি একা হয়েছি? অন্য কারো কাছে যাচ্ছে না কেন?’
একজন স্মার্ট তরুণী লম্বা একটা মাইক ধরে বলছে,
দেশের শ্রেষ্ঠ মেধাবীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বুয়েট। এখানকার ছাত্র-ছাত্রীরা দেশে-বিদেশে অবদান রাখছে। এই শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানও ছাত্ররাজনীতির কালো থাবা থেকে মুক্ত নয়। আজ দুপুরে ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে অসংখ্য মেধাবী সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী আহত হয়েছে। যাদের হাতে এখন বই থাকার কথা, তারা এখন হাসপাতালের বেডে শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। তেমনি একজন ইমন আহমেদ। কম্পিউটার সায়েন্সের শেষ বর্ষের ছাত্র। আমি এখন ইমনের সাথে সরাসরি কথা বলছি।
আচ্ছা ইমন, ঘটনার সময় আপনি কোথায় ছিলেন?
আমি কিছুক্ষণ কথা বলতে পারলাম না। একবার মেয়েটির দিকে, একবার লম্বা মাইকের দিকে তাকালাম। মাইকটিকে মনে হচ্ছে পিস্তল। এখুনি গুলি ছুটবে।
সবাইকে সরিয়ে ঠেলেঠুলে স্বাস্থ্যবান একজন ডাক্তার এলেন। তিনি এতক্ষণ ছিলেন না। আমার চেক-আপের জন্য এলেন, না ক্যামেরা দেখে এলেন- বুঝতে পারছি না। তার পরনে ধবধবে সাদা অ্যাপ্রন। হাসপাতালে সাদা কাপড় দেখলে দাফনের কাপড়ের কথা মনে পড়ে। মাইকওয়ালী এবার ডাক্তারের দিকে ঝুঁকলেন।

‘আচ্ছা, আজকের বুয়েটের সংঘর্ষে আপনাদের এখানে কেমন হতাহতরা আসছে?’
ডাক্তার সাহেব যেন উত্তরের জন্য তৈরিই ছিলেন। তিনি চোখে মুখে গম্ভীর ভাব ফুটিয়ে বললেন,
যারা এখানে এসেছে, তারা বেশিরভাগ গুলিবিদ্ধ। আমরা প্রথমে তাদের গুলি অপসারণ করি। তারপর উপযুক্ত চিকিৎসা দেই। এদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আমরা তাদের বিশেষ কেয়ারে রেখেছি। তাদের ‘প্রপার ট্রিটমেন্টের’ জন্য পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটা ‘মেডিক্যাল টিম’ গঠন করা হয়েছে। এই টিম সর্বক্ষণ তাদের ‘সুপারভাইস’ করছে।
রাত দশটার দিকে ওয়ার্ড প্রায় ফাঁকা হয়ে এল। আমার সাথে আছে সজিব। সে ফ্লোরে চাদর বিছিয়ে রাত জাগার আয়োজন করছে। এরিমধ্যে চায়ের ফ্লাক্স জোগাড় করেছে। হুমায়ুন আহমেদের একটা বইও নিয়ে এসেছে।
আমি এক পলক তাকিয়ে বললাম,
তুই চলে যা। শুধু-শুধু কষ্ট করছিস। সজিব কড়া গলায় বলল,
বকবক না করে তুই একটু ঘুমানোর চেষ্টা কর। তোর এখন ঘুম দরকার। আমি চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করছি। জোর করে জেগে থাকা যায়, জোর করে তো আর ঘুম আনা যায় না। ব্যথাটাও বাড়ছে। রাত বাড়লে সব ব্যথাই বাড়ে।
ঝিমুনী ভাব আসছে। হঠাৎ সজিবের ডাক শুনলাম।
দেখ কে এসেছে?
চোখ খুলে দেখি- যুথীর মা। পাশে যুথী। অবাক হয়ে সে আমাকে দেখছে। তার-চোখে-মুখে আতঙ্ক।
যুথীর মা শঙ্কিত গলায় বললেন,
বাবা, কেমন আছো?
আমি উঠার চেষ্টা করতেই তিনি দ্রুত বললেন,
উঠো না, উঠো না, শুয়ে থাক।
তিনি একটা চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললেন,
আমি সাধারণত খবর-টবর দেখি না। আজ কি মনে করে নয়টার খবর ছাড়লাম। খুলেই দেখি- তোমাকে। আমার সারা শরীরের লোম খাড়া হয়ে গেল। এই দেখো, এখনও গা কাঁপছে। আল্লাহ, যুথীর স্যারের এই কি অবস্থা!! ভদ্র-শান্ত একজন ছেলে!
সাথে সাথে ড্রাইভারকে বললাম গাড়ী বের করতে। এদিকে হয়েছে কি, তুমি কোন হাসপাতালে খেয়াল করিনি। যুথীর বাবাকে ফোন দিলাম। সে আছে চিটাগাং। তার ব্যবসার কাজে। সে বলল, সে খবর দেখেনি। দেখো কাণ্ড। এমন একটা ঘটনা, সে বেছে বেছে ‘আজকের খবর’ দেখেনি। তারপর চ্যানেল আইয়ে ফোন দিয়ে জানলাম, তুমি ঢাকা মেডিকেলে। দেখো, আসতে আসতে কত দেরী করে ফেললাম। তুমি এখন কেমন বোধ করছো?
আমি লজ্জিত ভঙ্গিতে হেসে বললাম,
ভাল। তেমন কিছু হয়নি, খালাম্মা।
তুমি কেন আজ বের হতে গেলে? ক্যাম্পাসে গণ্ডগোল। একদিন না পড়লে যুথী সব বিদ্যা ভুলে সন্ন্যাসী হয়ে যাবে না। যুথী, তুই মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন? স্যারকে কমলা ছুলে দে!
যুথী একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। মা’র কথায় লজ্জা পেয়ে তাড়াতাড়ি ফলের ব্যাগে হাত বাড়াল। যুথীর মা ব্যাগভর্তি আঙ্গুর, আপেল, কমলা নিয়ে এসেছেন। তিনি চিকিৎসার ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিলেন। ডাক্তারদের সাথে কথা বললেন।
যাওয়ার সময় বললেন,
এখানে যদি ভালো চিকিৎসা না হয়, তোমাকে প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে যাবো। কোন চিন্তা করো না। তুমি আমার ঘরের ছেলের মতো। তোমাকে আমরা দেখব।
খালাম্মা চলে গেলেন। আনন্দে আমার চোখে পানি এসে গেল। সামান্য দুটো কথা! তাতেই আমার দেহ-মন অপার্থিব এক শক্তিতে ভরে উঠল!

দুই

ঘুম ভেঙ্গে দেখি মুখের ঠিক দু ইঞ্চি উপর একটি মেয়ের মুখ ঝুঁকে আছে। আধো-ঘুম, আধো জাগরণে আমি একটা ছোটখাটো ধাক্কা খেলাম। প্রথম কয়েক সেকেন্ড মাথা ফাঁকা হয়ে থাকল। মেয়েটি বলছে,
স্যার, ঘুম ভেঙ্গেছে?
ওহ, যুথী!
ঘুম ঘুম ভাব কেটে গেল। সাদা ড্রেসে ওকে মেয়ে ডাক্তার মেয়ে ডাক্তার লাগছে। পার্থক্য ডাক্তারদের মুখভঙ্গি থাকে কঠোর, ওরটা কোমল। আমি চোখ খুলতেই ও উজ্জ্বল মুখে বলল,
স্যার, আপনার জন্য নাস্তা নিয়ে এসেছি। আম্মু পাঠিয়েছে।
আমি আশেপাশে তাকালাম। যুথী মিনারেল ওয়াটার বোতলের ক্যাপ খুলতে খুলতে বলল,
স্যার, ড্রাইভারকে নিয়ে এসেছি। তাকে ডাব আনতে পাঠিয়েছি।
আমি মনে মনে স্বীকার করতে বাধ্য হলাম, সে অংক না বুঝুক, মানুষের মনের কথা ঠিকই বুঝতে পারে।
স্যার, একটু উঠুন। মুখটা ধুয়ে ফেলুন। আমি পানি ঢালছি।
সজিব কোথায়?
সজিব ভাইয়া চা আনতে গেছে। উঠুন স্যার, স্যুপ ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে।
আবার স্যুপ এনেছো? কালকে যে ফল এনেছো, তা তো একমাসেও শেষ হবে না। এত ফল খাবে ?
আপনি খাবেন। এখন আপনার ভিটামিন সি দরকার।
হু। এত ফল খেলে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভিটামিন সি’র অভাব হবে না।
দুপুরে আম্মু খাবার নিয়ে আসবে। তখন দেখবেন কত কিছু খেতে হয়। এখন আম্মু বাসায় ফকির খাওয়াচ্ছে।
কেন?
কাল আসার সময় আম্মু মানত করেছিল, তোর স্যার যদি সুস্থ থাকে.....
যুথীর চোখ টলমল করছে। সে গোপনে চোখ মুছল।
স্যার, আপনার এই অবস্থার জন্য আমি দায়ী।
তুমি দায়ী কেন? গুলি কি তুমি করেছো?
আমাকে পড়াতে আসছিলেন। আমাকে না পড়ালে আপনার গায়ে গুলি লাগত না।
অন্য রকম তো ঘটতে পারতো। ধর, তোমাকে না পড়ালে বন্ধুদের সাথে বসে আড্ডা দিতাম। গুলি এসে বুকে লাগত। সাথে সাথে ঠুস। তোমাকে পড়ানোর জন্য হয়তো বেঁচে গেছি।

যুথী কিছু বলল না। সে যত্ন করে নাস্তা দিল। ফল কাটল। টিফিন ক্যারিয়ার গোছাল। কি ধীরস্থির ভাবে মেয়েটা কাজগুলো করছে। ক্লাশ টেনে পড়ুয়া একটা মেয়ের মধ্যে হঠাৎ এত ধীরস্থির ভাব এল কিভাবে? এই কি সেই মেয়ে যে অংক না পারলে বসে বসে কলম চাবায়? ধমক দিলে চোখে পানি এসে পড়ে?
যুথীকে প্রথম পড়াতে যাই ক্লাশ সিক্সে। আমি সবেমাত্র বুয়েটে ভর্তি হয়েছি। বুয়েটের কোন ছাত্র ক্লাশ সিক্সের ছেলে-মেয়ে পড়ায় না। পিচ্চিদের পড়ানো মানে একটা চঞ্চল পাখীকে বশ মানানো। মহা ঝামেলা। আমি সেই মহা ঝামেলাকে কাঁধে নিলাম- হাতখরচের লোভে। বন্ধু মিলন টিউশনী যোগাড় করে দিয়ে বলল,
আপাততঃ কাজ চালিয়ে যা। ভাল কিছু পেলে ধানাই-পানাই করে কেটে পড়িস।
আমার আর কেটে পড়া সম্ভব হয়নি। আমার মত অজপাড়াগাঁয়ের এক গ্রাম্য ছেলের প্রতি এই ফ্যামিলিটা যে ভালবাসা দেখিয়েছে, তা অগ্রাহ্য করার শক্তি সৃষ্টিকর্তা আমাকে দেননি।
দুপুরের দিকে যুথীর মা এলেন। হাতে দুই ক্যারিয়ার ভরতি খাবার। মনে মনে ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেললাম। শরীরের কোন সিস্টেমে যদি আঘাত লাগে, পেট ভরে খাওয়া যায় না। এটা সুস্থ মানুষ বোঝে না। তিনি আমাকে গলা ডুবিয়ে খাওয়ালেন। তারপর ডাক্তারদের সাথে দেখা করতে গেলেন। ফিরে এসে বললেন,
তোমার রিলিজের ব্যবস্থা করেছি। ডাক্তার বললেন এখন আর ভয়ের কিছু নেই। তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যাব।
আমি হতবাক হয়ে বললাম, কোথায়?
আমার বাসায়।
বাসায়?
হ্যাঁ। আমি যতদূর জানি ঢাকায় তোমার কেউ নেই। এই অবস্থায় গ্রামের বাড়ি যাওয়াও ঠিক হবে না। যুথীর বাবাও বলেছে বাসায় নিয়ে আসতে। মাকে জানিয়েছ?
ফোন করেছিলাম। তারা কিছুই জানেন না। আমিও আর জানাইনি।
ভাল করেছো। মা'কে দুশ্চিন্তায় রাখা কাজের কথা না।
যুথীর চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে । সে হড়বড় করে বলল,
আম্মু জান, হাসপাতালের খাবার যে কী নোংরা! পাশের ওয়ার্ডে ভাতের মধ্যে তেলাপোকা পেয়েছে। এই নিয়ে কী হৈ চৈ! যদি দেখতে।
যুথীদের বাসায় উঠে এলাম। লালমাটিয়ায় বিশাল বাড়ি। ফাঁকা রুমের অভাব †নই।
যুথী একেক দিন তার প্রিয় বান্ধবীদের এনে আমাকে দেখায়।
তারপর চোখ বড় বড় করে গল্প করে, আমার স্যার গুলিটুলিকে ভয় পান না। ভার্সিটিতে গণ্ডগোলের সময় সবাই যখন পালিয়ে ছিল, স্যার একাই বের হয়েছেন।
আমি মনে মনে হাসি। একদিন বললাম,
যুথী, এটা ঠিক হচ্ছে? আমি কি চিড়িয়াখানার জন্তু, তোমার বান্ধবীদের ধরে ধরে এনে দেখাচ্ছো?
যুথীর চোখে পানি এসে গেল। সে কান্না সামলাতে দ্রুত উঠে গেল। সারা দুপুরে ওকে দেখলাম না। খোঁজ নিয়ে জানলাম ওর রুমে দরজা দেয়া। দুপুরে সে কিছুই খায়নি। খালাম্মা অনেক ডাকাডাকি করেছেন। দরজা খুলেনি।
সন্ধ্যার দিকে সে এল। তার চোখ ফোলা ফোলা। কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,
স্যার, আই অ্যাম সরি। আর কোন বান্ধবীকে আপনাকে দেখাতে আনব না।
আচ্ছা ঠিক আছে। আমি এমনি বলেছি। তুমি এত রাগ করেছো কেন?
যুথী কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। তারপর কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
স্যার, একটা কথা বলবো? রাগ করবেন না তো?
বল।
স্যার, মাঝে মাঝে আমার ইচ্ছা হয় আপনাকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলি।
আমি চমকে ওর দিকে তাকালাম।
এমন ইচ্ছা হয় কেন?
জানি না স্যার। আরো ইচ্ছা হয় ঢাকা শহরের সমস্ত মানুষকে জানাতে- ইমন স্যার আমাদের বাসায়, ইমন স্যার আমাদের বাসায়। তাই বান্ধবীদের নিয়ে এসেছি। আপনি রাগ করবেন, ভাবিনি।
ওর চোখে আবার পানি এসে গেল। আমি গম্ভীর স্বরে বললাম,
ঠিক আছে, তুমি যাও।
ও ধীরস্থির ভাবে উঠে চলে গেল।
হায় ঈশ্বর! আবেগ-মমতা আর ভালবাসার সমুদ্র নিয়ে মেয়েটি বসে আছে। আমি দাঁড়িয়ে আছি তীরে। যে কোন মুহূর্তে অন্য জগতে চলে যাবো। সমুদ্রে নামার অধিকার কি সৃষ্টিকর্তা আমাকে দিয়েছেন? মেয়েটি করুণ চোখে তাকিয়ে আছে!
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:১১
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×