somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সবচেয়ে গরিব কে ? -১ম পর্ব

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সবচেয়ে গরিব কে?
এ প্রশ্নের জবাবে হাদীছ -এ বলা হয়েছে " ঐ ব্যক্তি সবচেয়ে গরিব - যে ক্বিয়ামতের দিনে পাহাড় পরিমাণ নেকী নিয়ে উঠবে, মনে করবে সে নিশ্চিত জান্নাতী। কিন্তু এরপর তার একের পর এক পাওনাদাররা আসবে। যাদের হক্ব সে নষ্ট করেছে। তখন তার নেকি দ্বারা তাদের সে হক্ব আদায় করা হবে। এরপরও বাকি থেকে যাবে। তখন পাওনাদারদের ( যাদের হক্ব সে নষ্ট করেছে ) গুনাহ তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। কিছুক্ষণ পূর্বে যে ব্যক্তি ছিল নিশ্চিত জান্নাতী এখন সে ব্যক্তি হয়ে পড়বে নিশ্চিত জাহান্নামী।”
এক দশক ধরে বাজারে যেসব ভোগ্যপণ্য বিক্রি হচ্ছে তার শতকরা ৫০ ভাগই ভেজাল। নিত্যপ্রয়োজনীয় সব ধরনের খাদ্যপণ্য যেমনÑ গম, ডাল, তেল, চিনি, লবণ, দুধ, কনডেন্সড মিল্ক, ঘি, মাখন, ফ্রুট জুস, ফ্রুট জেলি, সোডা পাউডার, সাগু, কর্নফ্লাওয়ার, রুটি, মিষ্টি, বিস্কুট প্রভৃতিতে জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বিষাক্ত কেমিক্যাল ও ফুড কালার মেশানো হচ্ছে।
খাদ্য পণ্যে ব্যবহৃত হয় টেস্টিং সল্ট, খাওয়ার সোডা, ফুড ফ্লেভার, যা লিভার ও কিডনির সমস্যা সৃষ্টি করে। ফরমালিন, হাইড্রোজ, কার্বাইড এবং ইথুফেন ব্যবহৃত হয় মাছ ও ফলের পচন রোধ করতে। জিলাপি মচমচে করতে, মুড়ি বেশি ফোলাতে, ফলপাকাতে এবং রঙ ভালো করতে। আবার ডিডিটি ও টেক্সটাইল রঙ ব্যবহৃত হচ্ছে শুঁটকি মাছ, মরিচ, হলুদ, ধনিয়া, মসলা ও আইসক্রীমে। এ সব রাসায়নিক দ্রব্য বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার এমনকি ইষড়ড়ফ ঈধহপবৎ পর্যন্ত ঘটাতে পারে। সবচেয়ে ভয়াবহ হচ্ছে, বাচ্চাদের জন্য যে লিচু বা আমের জুস তৈরি করা হয়, তাতে লিচু বা আমের কোনো অস্তিত্বই নেই। কৃত্রিম লিচু বা আমের গন্ধ দিয়ে এসব জুস বানানো হচ্ছে। চকলেটের মধ্যে চিনির পরিবর্তে স্যাকারিন ব্যবহার করা হচ্ছে অহরহ।
আমাদের সংবিধানে অনুচ্ছেদ নং ১৫ এবং ১৮-এ বলা আছে সরকার জনগণের খাদ্য নিশ্চিত করবে এবং পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদন বা সরবরাহ-ই হবে সরকারের অন্যতম কাজ। কিন্তু সরকার আজ সেখানে ব্যর্থ। অবাধ প্রতিযোগিতা, মুনাফা অর্জনের জন্য লালায়িত মানসিকতা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শিথিলতা ইত্যাদি কারণে বর্তমানে খাদ্যে ভেজাল মেশানো একটা স্বাভাবিক রীতিতে পরিণত হয়েছে।
১৮৬০ সাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত ২০টির অধিক ভেজালবিরোধী আইন হয়েছে। তন্মধ্যে জাতীয় খাদ্য নীতি ২০১০-এ নিরাপদ খাদ্য আইনগুলো আধুনিক করতে এবং ফুড এন্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন একত্র করতে বলা হয়েছে। জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টিনীতি ১৯৯৭-এ খাদ্য মান মনিটরিং করতে বলা হয়েছে। বাংলদেশ নিরাপদ খাদ্য নীতি-২০০৫ এ বিষাক্ত অথবা ক্ষতিকারক রাসায়নিক যুক্ত খাবার বিক্রি অথবা উৎপাদন বন্ধের জন্য বলা হয়েছে। আমদানি-রপ্তানি নীতি ২০০৬-এ সার্টিফিকেট এবং বিভিন্ন পরীক্ষার কথা বলা হয়েছে। সম্প্রতি ১৯৫৯ সালের "চঁৎবঋড়ড়ফ ঙৎফরহধহপব"কে পরির্বতন ও পরিবর্ধন করে যুগোপযোগী নতুন আইন “নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩” সংসদে পাস হয়েছে। এই আইনে সর্বোচ্চ ৫ বছরের জেল ও ১০ লক্ষ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।
এতগুলো আইন থাকা সত্ত্বেও এর অধিকাংশই বাস্তবায়ন হচ্ছে না। যেমন : হোটেলগুলোতে মৃত মুরগি খাওয়াচ্ছে। আজো ফুড এন্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিষ্ট্রেশন একত্র করা হয়নি। ফরমালিন এবং ডিডিটি খাবারে সচরাচর পাওয়া যাচ্ছে। সম্প্রতি প্রাণ কোম্পানির মরিচের গুঁড়ায় বিদেশে রপ্তানি হওয়ার পরও ভেজাল পাওয়া গেছে তাও আবার আমেরিকাতে। যেটা বাংলাদেশে খুব সহজেই পার পেয়ে গেছে।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে, বাংলাদেশের এক চতুর্থাংশ মানুষই ২০২৫ সালের মধ্যে শুধুমাত্র ভেজাল খাদ্য গ্রহণ করার ফলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে যাচ্ছে। এনটিএফএস-এর রিপোর্টের মতে, প্রতিবছর ৫.৭ মিলিয়ন লোক কোনো না কোনোভাবে পঙ্গু হচ্ছে শুধুমাত্র ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে। রপফফৎ,ন এর সূত্রমতে প্রতিবছর ৩৮৫০ জন শিশু শুধু ডায়রিয়ার কারণেই মারা যাচ্ছে।
এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে প্রয়োজন, ব্যক্তি থেকে শুরু করে প্রতিটি লেভেলের সিস্টেমের পরির্বতন করা। এ জন্য প্রথমে ব্যক্তিকে বুঝতে হবে এর ক্ষতিকর দিকটি। দ্বিতীয়ত এসব পণ্যেও প্রচার ও প্রসারকারীগণকে এর গুণগতমান সত্যিকার অর্থে কোনো পর্যায়ের তা পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞাপন প্রচারে রাজি হওয়া উচিত। এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকেও হতে হবে সতর্ক। বারবার যারা একই অপরাধ করছে তাদের ব্যাপারে কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
আইন কিন্তু একটা জড় পদার্থ। আইনের সুফল হবে না কি কুফল হবে তা নির্ভর করে যিনি আইন প্রয়োগ করবেন তার উপর। তিনি যদি দক্ষ এবং স্বচ্ছ না হন তাহলে মানুষ এর দ্বারা কুফলও পেতে পারে। সুতরাং যাদেরকে এরকম মর্মস্পর্শী অভিযানের দায়িত্ব দেয়া হবে তাদের স্বচ্ছ এবং দক্ষ হওয়া দরকার। এবং তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা, আচরণ এবং কাজের মান দেখে মনোনিত করা উচিত।
দেশে ওষুধে ভেজাল পরীক্ষা করার জন্য যে ড্রাগ-ল্যাবরেটরী তৈরি করা হয়েছে সেখানেই সব রাসায়নিক মিশ্রণ পরীক্ষা করা সম্ভব। সরকারের নতুন করে কোনো অর্থ ব্যয় করতে হবে না। শুধু এর সঙ্গে খাদ্যকে একত্র করে সিদ্ধান্ত নিলেই এটা সম্ভব। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে ''ঋড়ড়ফ ধহফ উৎঁম অফসরহরংঃৎধঃরড়হ'' একত্রে কাজ করে, কোথাও আলাদা নেই।
আইনের বিষয়ে অজ্ঞ থাকলে সেটা কোনো অজুহাত হতে পারে না। ভোক্তাকেও তার অধিকার জানতে হবে।
প্রসঙ্গত: আমরা মনে করি যে, শুধু আইনের বল প্রয়োগেই এ ভেজাল প্রবণতা রোধ করা যাবে না। সেক্ষেত্রে অত্যাবশ্যকীয় হলো- মানুষের আল্লাহ পাকের প্রতি অনুগত হওয়া ও উনার ভয় লালন করা এবং এ সম্পর্কিত সঠিক ইসলামী মূল্যবোধ জাগ্রত করা ।


সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ২:৪৩
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×