এই এক বিচিত্র দেশ,যে দেশে বসে আমি ও স্বপ্ন
দেখতাম, নিউজ লেখতাম,হাততালি আর জনপ্রিয়তা
পেতাম,আজ আবার কাদলাম,ডায়রি খুলে, আসুন পড়ি
মেহের আলী নামে এক ভিক্ষুকের জীবন্ত গল্প,
লেখাটি প্রথম প্রকাশ হয় ৫ জুন, ২০০৭ সালে চট্টগ্রাম
বিশ্ববিদ্যালয় তৎকালীন রঙ্গিন ট্যাবলেড 'আমার
ক্যাম্পাস' পত্রিকায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
কলেজে পড়ার সময় 'দুঃখী মানুষের জীবন কথা' নামে
লেখাটি লিখেছিলাম,
জীবন সংগ্রামে ৯৬ বছর ধরে টিকে থাকার পর
অবশেষে ভিক্ষার ঝুলি কাঁধে নিলেন মেহের উদ্দীন
৷ ১৯৬০ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার
পূর্বে তার এ ক্যাম্পাসে আগমন ৷
বেছে নিয়েছিলেন কাঁচা ঘর তৈরীর কাজ, সুদীর্ঘ ৪৪
বছর ধরে তিনি এই পেশায় নিয়োজিত রাখেন
নিজেকে ৷ ভাগ্যের কি নির্মমতা! ২০০৪ সালে
"আজাদ কলোনিতে" একটি মাটির ঘর তৈরী করতে
গিয়ে বাঁশ ভেঙ্গে নিচে পড়ে যান তিনি ৷ প্রচন্ড
আঘাত পান পায়ে ৷
নানা চিকিৎসার পর মোটামুটি সুস্হ হলেও আর ফিরে
যেতে পারেননি স্বাভাবিক পেশায় ৷ সময়ের আবর্তে
বয়সের ভারেও নুয়ে পড়লেন তিনি ৷
জীবনের
প্রয়োজনে বেচে থাকার তাগিদে তাকে শেষ পর্যন্ত
বৃদ্ধ বয়সে বেছে নিতে হলো ভিক্ষা বৃত্তির মতো
ঘৃণ্যতম পেশাকে ৷
দুই বছর ধরে ক্যাম্পাস বাসীর একান্ত করুনায় জীবন
ধারন করে আসছেন এই বৃদ্ধ ৷ সুদীর্ঘ ৬০ বছর ধরে
চঃবিঃ তে তার বসবাস ৷ যেন বিশ্ববিদ্যালয়
ইতিহাসের জ্বলন্ত ডায়েরী ৷ সুযোগ পেলেই তিনি
স্মৃতিচারন করেন জঙ্গলে ঢাকা সেই সময়ের
বিশ্ববিদ্যালয় আর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা ৷
নয় ছেলে মেয়ের মধ্যে আব্দুল জব্বার, জয়নাল, আব্দুল
আজিজ নাম তিন ছেলে দুই মেয়ে এখনো জীবত আছে ৷
এদের সবাই বিবাহিত ৷বাবার দিকে তাকানোর একটু
অবসরও তাদের নেই ৷ কিন্তু সন্তানের কথা বলে
এখনো তাদের মঙ্গল কামনা করে এই বৃদ্ধ ৷ তাদের
প্রতি কোন অভিযোগ অভিশাপ নেই তার ৷
এখনো তিনি দেদারছে বলেন মাত্র ৬০ টাকা দিয়ে
গরু কেনার কথা ৷ ব্রিটিশ আমলে তার সুখকর দিনের
কথা ভেবে এখনো অশ্রু ঝরে তার দুচোখে ৷ উপযুক্ত
স্রোতা পেলে বলেন ব্রিটিশ পাকিস্তান আমলের
সেই সব ঐতিহাসিক কাহিনী ৷ চট্টগ্রাম
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দিনগুলোর কথা বলেন
অনর্গল ৷
দীর্ঘ সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার কারণে
ক্যাম্পাসের মায়ায় আবদ্ধ হয়ে গেছেন তিনি ৷
তাইতো বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের তিনি ছেলে
মেয়ের মতো মনে করেন এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন
তাদের ছোট ছোট সাহায্যের কথা ভেবে ৷
আসলে ভাবতে অবাক লাগে ৯৬ বছর বয়সে এসেও কেন
ভিক্ষার স্বাধীনতা,
সময়, ২০১৫ সাল, কলেজ পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়
মাস্টার্স শেষ করলাম, এখনো সেই শতবর্ষী মেহের
আলীকে দেখি লাঠির উপর ভর করে ভিক্ষা করছে,
চোখে দেখে না বললেই চলে, তবুও আমাকে খুজে নেয়,
মাথার উপর হাত বুলিয়ে দোআ করে, অল্প হলে ও তার
জীবনে একটু সমৃদ্ধি পরিচিতি এনে দেওয়ার যে
চেষ্টা করেছিলাম সেই কৃতঙ্গতা এখনো প্রকাশ করে
যাচ্ছেন ৷ তাই এখন দাদুর কাছ থেকে পালিয়ে থাকি,
দু দিন পর হয়ত মারা যাবেন...সমাপ্তি হবে দুঃখী
মানুষের অরেকটি জীবন গাথা ....

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




