somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টং মামার ঢং মার্কা নাড়ানির রং চা যাদের প্রিয় তাদের গল্প ৷ পর্বঃ এক

৩০ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার এক স্যার সব সময় মানিব্যাগে কাগজের পুটলি দিয়ে ভরপুর করে রাখতেন(যদি মেয়েদের একটু সুদৃষ্টি পড়ে) আর আমি যোগ্য ছাত্র হিসেবে ভিজিটিং কার্ড দিয়ে এক ইঞ্চি ফুলিয়ে রাখি, সমস্যা হলো পয়ত্রিশ টাকার মানিব্যাগে দু-চারশ টাকা খুচরা রাখলেই ভরে যায় তবুও ঠেসে ঠুসে সিম কার্ডের বক্সটা রাখলে মানিব্যাগের সুস্থতা বৃদ্ধি পায়, পাশের ছোট ভাই গার্লফ্রেন্ডের বার্থ ডে তে হকার মার্কেট থেকে আড়াইশ টাকার বক্স কিনে দুইশত টাকার একটি মালা ভরে উপর দিয়ে এইডস লেগো আকৃতি করে রঙ্গিলা ফিতা বেধে সেন্ড করলে নাকি ওপাশ থেকে নাকি দামি উপহার আসে,এগুলো আমাদের গল্প, পাদুকার বাম পাশ ক্ষয়ে যাওয়া মানুষদের গল্প, টং মামার ঢং মার্কা নাড়নিতে যাদের রং চায়ের নেশা জেগে উঠে তাদের গল্প,

আমার এক বন্ধু প্রতিবার ডিটিং এ খামোখা ডাচ বাংলা বুথের সামনে দাড়ায়, প্রতিবার দশ হাজার টাকা উত্তোলন করে আবার দিন শেষে দশ হাজার টাকা বারংবার জমা দেয়, পুনঃপুন তা করে, এতে নাকি মেয়ের কাছে ডিমান্ড বারে এবং মেয়ে তাহার কাছে টাকার পাহাড় মনে করে নিজেই ভবিষ্যত ভেবে সত্তর শতাংশ বিল পরিশোধ করে দেয়, একে আমি মধ্যবিত্তের রসিকতা বলি,

নিজের টাকা দিয়ে কখনও আমার চাইনিজ খাওয়া হয় নি, হঠাৎ হঠাৎ রিজিকদাতার অপার কৃপায় দু একটা দাওয়াত পেলে অপ্রস্তুত হয়ে খাওয়ার চেয়ে বেশী ভাবতে থাকি এই বুজি কোন ভুল করে বসলাম, জানাজা/ঈদের নামাজের মত আড়চোখে তাকিয়ে দেখতে হয় পাশের জন কি করছে!? কাঠি চুরি কাস্তে কোদালগুলো দিয়ে টেবিলে কেমন করে চাষাবাদ করছে, আহা! চাইনিজ দেশে নুন মরিচের এত অাকাল! প্রশ্ন জাগে মনে, বোম্বাই মরিচের সালাদ দিয়ে তৈরী করা ফুচকা খাদক মেয়েরা কি অবলীলায় খেয়ে যাচ্ছে পোড়া আধকাঁচা !!

প্রথম যেদিন বুফে খেতে যায়, পর্যবেক্ষনে ছিলাম, সবাই দেখি ভোজনে ব্যস্ত, আমার পেলেট আসে না কেন? পিছন থেকে ঘুরে নতুন নতুন আইটেম নিয়ে আসে, কাউকে কিছু বলতে ও পারছি না যদি ক্ষেত ট্যাগ খেয়ে যায়, ইজ্জত ধুলোয় লুটে যাবে, এভাবে আড়চোখে এক সুন্দরীকে ফলো করতে করতে পর্যবেক্ষন থেকে জেনারেল হয়ে গেলাম, জানি না সেইফ হতে হলে আর কতগুলো চাইনিজ খেতে হবে! সেদিনের বুফে খেয়ে মনে হল ষাট থেকে একষট্টি কেজি ওজন বেড়ে গেল, পকেটে করে নিয়ে আসলাম প্রথম ডয়ার থেকে ছয়টা চকলেট, দ্বিতীয়টা থেকে তিন প্যাকেট পান, আরো দু চারটা ডয়ার ভয়ে খুলি নি, এই বুজি ওয়েটার এসে অর্ধচন্দ্র দিবে এই বলে , 'বেটা খেয়েছিস তো খেয়েছিস!! তোর জন্য আবার উনুনে হাড়ি চড়াতে হলো, কয়দিন উপোস ছিলি??'

সর্বশেষ চাইনিজ দাওয়াতে গুগল মামা থেকে আগের দিন রাতে কিছু মেনার নিয়ম কানুন সংগ্রহ করে মুখস্ত করতে লাগলাম, নিয়মগুলো ছিল অনুরূপ,

কাঁটা চামচ ধরার পদ্ধতিটি লক্ষ করুন। চামচটি উল্টো
করে এর গোড়াটি চার আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরুন এবং
তর্জনী চামচের হাতলের প্রায় শেষ প্রান্তে সেট
করুন।

প্রায় একই পদ্ধতিতে ছুরি ধরার নিয়মটি রপ্ত করুন।
এক্ষেত্রে তর্জনীটি ছুরির হাতলের শেষ প্রান্তের
এক-দেড় ইঞ্চি উপরে ধরুন।

এবার কাঁটা চামচ দিয়ে খাবারটি চেপে ধরে ছুরি
দিয়ে কেটে নিন।

এবার কাঁটা চামচ দিয়ে খাবারটি গেঁথে নিন।
চামচের সামনের অংশ (অবতল) আপনার দিকে মুখ করে
খাবারটি মুখে চালান করুন।

খাওয়া শেষ হলে কাঁটা চামচ ও ছুরি ছবির মতো করে
প্লেটে সাজিয়ে রাখুন।

কয়েকদিন চর্চা করুন। দেখবেন আপনি স্বাচ্ছন্দে
কাঁটা চামচ ও ছুরি ব্যবহার করে খাবার খেতে
পারছেন।

আর একটি ব্যপার। ছবিতে যেভাবে দেখানো হয়েছে
সেভাবেই কাঁটা চামচ ও ছুরি ব্যবহার করবেন।

অন্যভাবে কাঁটা চামচ ও ছুরি ব্যবহার করে আপনি হয়ত
খাবার খেতে পারবেন। কিন্তু বিষয়টি অভদ্র আচরন
হিসেবে গন্য হবে।

এই আটটা পয়েন্ট মুখস্ত করলাম তবে মাধ্যমিকস্তরে সর্বাধিক কমন ঐতিহাসিক কম্পিউটার রচনায় আটটি পয়েন্ট কখনও মুখস্ত করছি বলে মনে হয় না,তিনটি স্কেলে, দুটি সেন্টু গেঞ্জিতে, একটি পায়ে মৌজার ভিতরে লিখে নিয়ে যেতাম,বেঞ্চ আর দেয়াল যেন এক একটা উপন্যাসের পাতা,নতুন করে কিছু লেখার ঠাই নেই,ঠাই নেই ছোট সে তরী, সিনিয়রদের সোনার ধানে গিয়েছে ভরি! , তথাকথিত আটটি মেনারের মধ্যে পাঁচটা মেনার মনে আছে তিনটা কোন রকমেই মনে অাসতেছিল না,আমার বরাবরই চাঁদ কপাল পাশে ফলোইং হিসেবে পেয়ে গেলাম আরেক সুন্দরী, আড়চোখে ফলো করতেছি মেনার, বুড়ো আর তর্জনী আঙ্গুলের ডগায় এক পিচ মাখন নিয়ে মধ্যমা অনামিকা কনিষ্ঠাকে ক্রিকেটের ভেঙ্গে যাওয়া স্ট্যাম্পের মত দন্ডয়মান করে বোয়াল মাছের ন্যায় হা করে দু ঠোটে আঙ্গুল স্পর্শ না করে মুখে চালান করে দিল, তো আমি ও কপি করলাম, কি আজব তাজ্জব ব্যাপার, সবাই হাসতেছে ক্যান!! মনে মনে ভুলে যাওয়া তিনটা পয়েন্ট মাথায় আনার চেষ্টা করতে থাকলাম, কোথাও যেন মেনারের বিচ্যুতি হয়েছে, পরক্ষণে মনে পড়ল, সুন্দরী কমলা লিপিস্টিক বাঁচাতে এমন করল, আমি মেনার বাঁচাতে, কি লজ্জা!!! মনে হল, ছয়শত ফুট নলকূপের গভীরে মুখ লুকিয়ে রাখি!

মনে পড়ে গেল কিছুদিন আগে সন্দ্বীপে এক বিয়েতে গোস্ত মজা হয়েছে বলাতে, আধা কেজি এনে পেলেটে ঢেলে দিয়েছিল, আর মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে ছিল, 'চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসছেন বড় মানুষ, গরীবের ঘরে কি দিয়ে আপ্যায়ন করি, আস্তে আস্তে খান' বলে হা়ত পাখার বাতাস করতেছিল, আহ! কি মধুর অাপ্যায়ন!! সেদিনের সেই বড় মানুষ আমি আজ চকচকে চার দেয়ালের মাঝে নিজেকে ক্ষেত মনে হচ্ছে, সেদিন বুজলাম, কথা দিয়ে ও পেট ভরে, এখানে সবকিছু আছে, কি যেন নেই, সেই আদর, সেই মমতা, সেই লবন...

গ্রামে দু-একটা বিয়ের পোগ্রামে অংশগ্রহন করার সুযোগ হয়েছিল, নির্মল বিনোদন, পুকুর থেকে মাছ, গোয়াল থেকে গরু, হাসি গল্প ঠাট্টা মনে হয় যেন পুরো গ্রামের সপ্তাহব্যাপী বিয়ে,

শহরে মাসে আট দশটা বিয়ের দাওয়াত ও গ্রামে বছরে একটা বিয়ের নির্মল আনন্দের কাছে যেন ম্লান, চার দেয়ালে ইটগুলো যেন মাটি হয়ে সোদা গন্ধে কল্পনায় এই আমিকে লস্টালজিক করে দিল,

বলতেছিলাম সেই ফলোইং করা মেয়েটির কথা,মুখে মাখন চালান করে ব্যাগ খুলে গোল্ডেন কালারের মোবাইল বের করল, অতঃপর বরশীর মত এক হাত সামনের দিকে নিয়ে, ক্লিক ক্লিক ছবি তুলতে লাগলো, আমিও একটু সামনের দিকে ঝুঁকতে লাগলাম যেন টিভি ক্যামেরার সামনে দিয়ে মোবাইল কানে দিয়ে হেটে যাওয়া পথচারী,সেদিন থেকে সেলফি নামক এক অদ্ভুত এক হাত কাটা ছবির সাথে পরিচয়, মনে মনে বললাম, আমাকে বললে আমি দু চারটা ছবি তুলে দিতাম,চায়নিজ খাওয়ার মেনার না জানতে পারি, এই মেনারটা তো জানি, এ কেমন আজীব চিড়িয়া! নিজের ছবি নিজে তুলে! না, আর ভাবতে পাড়ছি না, সামনে গিয়ে বসলাম, ওনার যেন আমাকে রিকুয়েস্ট করতে সুবিধা হয় এই ভেবে, ওম্মা একি কান্ড! টেবেলি সাথে মুখ লাগিয়ে চায়নিজের সাথে উপর থেকে ক্লিক ক্লিক, আমি আর ভাবতে পারছিলাম না, একেই বলে হয়ত, বড়লোকের বিরাট কারবার, ওরা করলে মেনার, আমরা করলে ক্ষেত, ওরা ছিন্ন বস্ত্র পড়লে ফ্যাশন, আমরা পড়লে মলিন বসন, ওরা ফলোইং আমরা ফলোয়ার...!!
একবার ঢাকার রাস্তায় একটা মেয়ে দেখছিলাম, তাকে চট্টগ্রামে এক পলক দেখেই বলেছিলাম, ঢাকায় দেখেছি, কিন্তু কিছু কিছু মেয়েকে কখনো দেখি না, হয়তো দেখলে ও চিনি না, আধ ইঞ্চি মেকাপের প্রতি স্তরে নতুন নতুন লুক, এ যেন বহুরূপি, ভাবতে ভাল লাগে তারা আমাদের চিনে, চেহারার উপর শেষ ময়লাটি ও যেন ঘামে মুচে যায়,না হলে চৌদ্দ মাইল দূর থেকে দেখেও আগন্তুক কেউ ঠিকই ডাক দিয়ে বলে, ভাই চিনছেন নি?? আরে, আমরা আমরাই তো!
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×