somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টং মামার ঢং মার্কা নাড়ানির রং চা যাদের প্রিয় তাদের গল্প ৷ পর্বঃ দুই

৩১ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ১০:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্কুলে প্রতি ক্লাসে ফাস্ট হওয়া সপ্তাশ্চার্যটিকে কখনো মানবী মনে হত না, আগে পরী,পরে অবশ্যই এলিয়েন টাইপের কিছু,স্পর্শ করে দেখতে ইচ্ছে হতো,অদ্ভুত গ্রহের জীব মনে করে তারা সাথে কখনো কথা হতো না !!

তবে তাকে একদিন টং মামার ঢং মার্কা নাড়ানির রং চা পান করাতে পারলে সে ও হয়ত মানুষ হয়ে উঠবে, তেত্রিশ পাবে, মাঝে মাঝে ডাবল আন্ডা, বকুনি খাবে, মন খারাপ হবে, কবিতা লিখবে, সামনের বছর ফাটিয়ে দিবে ভাববে,আবার ডিম পারবে,তারপরই না মানুষ বলা যাবে তাকে!!

নানা বাড়ি, শুক্রবার সাড়ে তিনটা, পূর্ণ দৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি, ভেনুঃ চায়ের দোকান, টিকেট মূল্যঃদু টাকা, দিন দুপুরে দোকান বন্ধ করে দেওয়া হলো, লাল নীল আংটা ব্যাটারিতে লাগানো হল, ছবি শুরু হবে, পবলেম দোকানের টিনের ফুটো, সামর্থ্যহীন ছেলেদের ছবি দেখার শখ, এক জনের দায়িত্ব ছিল,বিঞ্চাপন বিরতিতে ওদের দৌড়িয়ে বিলে দিয়ে আসা, ছবি শুরু হলে ওরা আবার ফিরে এসে ফুটো দিয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতো,ওদের মধ্যে কে আগে দৌড়ে এসে বড় ফুটো দখল করবে তার প্রতিযোগিতা চলত , দিন শেষে আবার মুরব্বিদের নালিশ করে ক্ষোভ প্রশমিত করত, তবে টিকেট না নিলে নূন্যতম ঢং মার্কা নাড়ানির এক কাপ রং চা খেতে হতো বিস্কুট/মোল্লা দিয়ে,

বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর হবে, এই উপদেশ সমবয়সী কেউ পালন করত না, বর্ষাকালে সমগ্র বাংলাদেশের নির্বাচিত উপদেশ ছিল এটি, বাংলায় পড়ুয়া জসীম স্যার বলত, বৃষ্টিতে না ভিজলে বর্ষা উপলব্ধি করা যায় না, কখনো ছাতা কিনতে দেখি নি স্যারকে, কিন্তু বিবিএ পড়ুয়া স্যার কে যখন বললাম, "দেখ, ১০০ টাকার ছাতি খরচ বাঁচাতে গিয়ে তিনশত টাকার ঔষুধ খরচের কোন মানে হয় না ৷"
তবে যেদিন থেকে ডান হাতকে পকেট থেকে বিতাড়িত করে মোবাইল স্থান করে নিল সেদিন থেকে উপদেশ অদৃশ্য শক্তির টানে অটো পালিত হতে লাগল, টং মামার ঢং মার্কা নাড়নির রং চা ব্যবসা'তে একটু লোকসান দেখা দিল,


ঢাকায় রিক্সা চালাতো মোল্লা(ডাক নাম), গাজীপুরে রিক্সা চালাতে গিয়ে এক্সিডেন্ট করে রিক্সা চালানো বাদ দিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চলে আসে,
টুকটাক হুট ফরমায়েশ পালন করে খুব সুন্দর জীবন যাপন করতেছিল, এতো অমায়িক হাস্যউজ্বল মিশুক ছেলেটি হয়ে উঠেছিল সবার প্রিয় পাত্র,

আমার চৌকির পাশে ছোট্ট একটা চৌকিতে রাতে ঘুমাত, সন্ধ্যা থেকে রাত তিনটা পর্যন্ত কন্টাকে মাটি কেটে এসে আমার দরজায় নক করত, শরীফ ভাই, ও শরীফ ভাই, দরজা খোলেন, সামনে পরীক্ষা থাকায় নবজন্ম নেওয়া ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ায় খুব রাগ হতো,

মধ্য রাতে মাথায় চুপচুপ সরিষার তৈল দিয়ে পাঁচ মিনিট চুল আচড়াত, কি যে কিউট লাগতো তখন সেই অমানুষিক পরিশ্রম করা কামলা ছেলেটিকে, ওকে কামলা না ডেকে কেন মোল্লা ডাকে তা আমাকে ভাবিয়ে তুলত, আমার বন্ধু করে নিলাম ওকে, টেবিলে পড়ে থাকা বইগুলো উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখে বলতো, এগুলো কি বেশী কঠিন?!;

বিশ টাকার কার্ড নিয়ে এসে হাতে গুজে দিয়ে বলতো, 'কিছু মনে কইরেন না, মা'র সাথে একটু কথা বলবো', ফোন দিলে এক দোকানদার ধরত, তার মাকে খবর দিতে পাঠাত দোকানের ছেলে কে, একঘন্টা পর মিসকল দিত দোকানদার, আমি ফোন করতাম, ওপাশ থেকে মধ্যবয়স্কা এক নারীর কন্ঠ ভেসে আসত, "বাবা মোল্লা, বাবা আমি তোর মা, বাবা মোল্লা..." না খালাম্মা এই নেন মোল্লার সাথে কথা বলেন, সামনে উঠোনে হাটু ভাজ করে বসে কথা বলত, মা টাকা পাইছ? ইত্যাদি ইত্যাদি..গরীবে দু হাটুই সব, বসার কাজ ও করে হাটুর উপর ভর দিয়ে,রিক্সা ও চালায় হাটুর জোরে, সব...

একদিন বললো, ভাই ভালো লাগতেছে না, মাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে, এক হাজার টাকা দিয়ে তার দুদিন আগে একটি সাইকেল কিনছিল, তো সাইকেল চালায় কোথায় যাচ্ছিল আর পিছন থেকে কে ডাক দিল, এই মোল্লা বলে, খুশির ঠেলায় উত্তর দিতে গিয়ে কোমর পিছনে ঘুরাতে গিয়ে সাইকেল ঘুরে দেয়ালে ঘুসি, আহত স্থানে ও সরিষার তেল,মাথায় /সাইকেলে/ফোড়ায় সব জায়গায় ওদের একটাই অবলম্বন, খাটি সরিষার তেল মাখতে মাখতে পরের দিন সকালে উঠে চলে গেল আমি ঘুম থেকে উঠার আগেই, ওদের আগমনে বিদায় পৃথিবীর কাছে নিতান্তই তুচ্ছ, বিদায় বন্ধু না বলেই বিদায়!!

হঠাৎ একদিন অচেনা নাম্বার থেকে ফোন, শরীফ ভাই, আমি মোল্লা মোল্লা মোল্লা!! কোথায় এখন? মাকে দেখতে চলে আসছি, কি করিস? কখন আসবি? এখন আসবো না, অাগের মত রিক্সা চালায় ৷ একবার তো এক্সিডেন্ট করছিলি!! মনে আছে? আছে ভাই ৷ আপনার রেজাল্ট কেমন হলো? ভালো ৷ অনেক কষ্টে আপনার নাম্বার জোগাড় করে ফোন দিছি ৷ তোর কিছু টাকা বাবার কাছে জমা ছিল, কখন নিবি? আবার আসলে নিবোনে, জমা থাক ৷

মাস ফেরিয়ে গেল তার আর খবর নাই, এতো ভবঘুরে ও মানুষ হয় ৷ তারপর সেই নাম্বারে রিং দেওয়া হলো ৷ দোকানদার মাকে ডেকে পাঠালো, মা আসলো, কান্না শুরু করলো, "বাবা, মোল্লা তোমাদের কথা অনেক বলতো, কিছুক্ষণ কান্নার পর বললো তার ছেলে রিক্সা এক্সিডেন্টে মারা গেছে কিছুদিন অাগে"........

!!! মনে পড়ে গেল ওর সাথে টং মামার দোকানে ঢং মার্কা নাড়ানির রং চা খাওয়ার কথা !!!, সরিষা মাখা জং ধরা সাইকেলের কথা, যে জাম গাছের ডালপালা সে কেটেছিল সেই গাছে নতুন কুড়ি এসেছি, ঝড়ে যাওয়া পাতার অদ্ভুত এক হাহাকার, মূল্যহীন জীবনের স্মৃতি বয়ে যাচ্ছে সদ্য জন্মগ্রহণ করা কালো জাম...


প্রথম পর্বঃ Click This Link
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×