কিছুদিন আগে কেডিএস এক্সেসোরিজের কলিগ বদরুল ভাই বাসে চিৎকার করে বলতেছিলো 'কার মোবাইল নিয়ে চিনতাইকারী নেমে যাচ্ছে' তা শুনে সবাই পকেট চেক্ করে দেখে যার যার মোবাইল তার তার পকেটে আছে উল্টো বদরুল ভাইয়ের মোবাইল খোয়া গেছে!
.
এটি চিৎকার থেকে নির্বাক হওয়ার গল্প,
.
এতদিন বুক ফুলিয়ে বলতাম এই শহরে কোন পকেটমার্ নেই যে আমার সচেতনতা ভেদ করে একটি কয়েনও নিয়ে যেতে পারবে!
.
আজ বুঝলাম ঘটবে না বলে পৃথিবীতে কোন ঘটনা নেই!
.
সর্বকালের সেরা গোলকিপার ইতালির ডিনো জোফ, জার্মানির 'সুইপার কিপার' খ্যাত ম্যানুয়েল নয়্যার কিংবা সোভিয়েত ইউনিয়নের 'ব্ল্যাক প্যানথার' নামে পরিচিত লেভ ইয়াসিন অথবা ইতালির জিয়ানলুইজি বুফন নতুবা স্পেনের ইকার ক্যাসিয়াসের মতো আমি ছিলাম সর্বকালের সেরা 'পকেট্ কিপার'
.
তবুও লক্ষ্য ভেদ্ করে যেমন গোল হওয়া অসম্ভব কিছু না তেমনি পকেট মার্ হওয়ার সম্ভবনাও...!
.
সুতরাং সাধু সাবধান,
.
এতোদিন আমি ছিলাম ভার্জিন পকেট কিপার্ আজ সেই খেতাব হারিয়ে আমি অন্যদের মতো কেবলি একজন পকেটমার্ দ্বারা ধর্ষিত এক যুবক!
.
ঠিক একই জায়গা বায়জিদে কিছুদিন আগে মোবাইল হাত থেকে পাশে রেখে এক ছেলে হলারের ভাড়া দিয়ে আবার মোবাইল নিতে গিয়ে দেখে মোবাইল আর সেখানে নাই!
.
সঙ্গে সঙ্গে আমার মোবাইলে তার নাম্বার ডায়াল করে কল দিলাম চোরাইইয়া কলও রিসিভ করলো এবং বললো, ভাই একটু দাঁড়ান মোবাইল নিয়ে আসতেছি..! বললাম, 'ভাই তাড়াতাড়ি আসেন লেট্ করলে দেরী হয়ে যাবে! বেচারা হালাল টাকা দিয়ে কিনেছে'....তারপর আমরাও বোকার মতো গাড়ি থেকে নেমে চোরাইইয়ার ফিরে আসার বৃথা প্রতীক্ষা করে যাচ্ছিলাম.....!
.
কিছুদিন আগে সিইপিজেড থেকে ফেরার পথে কোন গাড়ি পাচ্ছিলাম না! ঠাসাঠাসি করে দশ নম্বার বাসে উঠলাম আমার সাথে আরো চার/পাঁচটা মহিলা উঠেছে! একজন লোক নেমে যাওয়ায় আমি সিঁট পেলাম! বসার পর খেয়াল করলাম দাঁড়িয়ে থাকা চারজন মেয়ের মধ্যে একটি সুন্দরী মেয়েও আছে! আজ মনে হয় চান্স আছে! এক্সকিউজ মি ম্যাডাম বলে বসার জন্য তাকে আমন্ত্রণ করলাম! একটি সুন্দরীর জন্য এতটুকু কষ্ট করা যেতেই পারে!
.
সুন্দরী কোন রকমে বসবে না! না বসলে যাউগ্গা! আমার কি! এই শহরে কে কাকে না পারতে বাসের সিঁট ছেড়ে দেয়! ব্লা ব্লা!
.
একটু পর পাশ থেকেই এক হিজাবওয়ালা মধ্যবয়স্কা মহিলার চিৎকার শুনতে পেলাম! ঐ চারজন কৌশল করে নেকাপের মধ্য দিয়ে হাত গলিয়ে মহিলার স্বর্ণের চেইন নিয়ে চম্পট্! চেইনে একটি তাবিজও ছিলো! তাবিজটি নিচে পরে আছে!
.
খেয়াল করে দেখলাম আমার পাশের সেই সুন্দরী মেয়েও নেই....!
.
একটি সন্দ্বীপ্পা প্রবাদ আছে, রূপ দেখে মাইরো না ফাল্(লাফ), এমনও হতে পারে সেখানে কিবলি খাল্ আর খাল্!
.
শুধু আমি না প্রিয় উপন্যাসিক স্বয়ং শরৎচন্দ্র পকেটমারের শিকার হয়েছিলেন! তরুণ পকেটমার শরৎচন্দ্রের বুক পকেটে হাত দিয়ে 'পকেট ঘড়ি' চিনতাই করার সময় শরৎচন্দ্র তাকে হাতেনাতে ধরলেন! ধরা খাওয়ার পর, পকেটমার্ জিজ্ঞেস করে, ভাই কয়টা বাজে?
.
একটা ঘুষি মেরে তিনি বললেন, 'একটা বাজে' তখন চিনতাইকারী বলে উঠলো, 'ভাগ্যিস বারেটা বাজেনি! নাইলে খবর ছিলো!'
.
দশ হাজার টাকা পকেটমারি করে ধরা খাওয়ার পর জৈনক পকেটমারের বন্ধু তাকে গিয়ে বললো, দোস্ত বিশ হাজার টাকা দিয়ে তোকে ছাড়িয়ে এনেছি পকেট্ একদম খালি চল্ আবার পকেটমারি....!
.
এই শহরে আরো অনেক বড় বড় পকেটমার আছে তার কেউ কেউ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আমলা, এমপি, মন্ত্রী থেকে শুরু করে স্যার নামেও পরিচিত! ব্লা ব্লা!
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৬