রাজনৈতিক সংগঠন গুলো যে ব্যার্থ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। দেশ গঠন, জাতি গঠন বা সমাজ গঠনে তারা কোন ভুমিকা রাখতে পারেনি। ক্ষমতা লিপ্সু এই সংগঠন গুলো স্বার্থ ছাড়া এক পা নড়ে না। বরং দল বা ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলে দেশ বা সমাজকে ক্ষতি গ্রস্ত করতেও তাদের দ্বিধা নাই। নৈতীক চরিত্রের কি পরিমান অধঃপতন হয়েছে তা জোট গুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যায়। নৈতিক চরিত্র গঠন করতে আর বখে যাওয়া থেকে শিশু-কিশোর এবং যুবসামজকে দুরে রাখতে সামাজিক সংগঠন আজ বড় বেশী প্রয়োজন।
আমাদের পাশের পাড়াতেই ছিল মুকুল ফৌজ এর একটি শাখা। আর আমাদের সংগঠন "মহিষবাথান কিশোর কুঁড়ি"। মহিষবাথান আমাদের পাড়ার নাম। মুকুল ফৌজ এখন আর নাই তবে কিশোর কুঁড়ি এখনও আছে, চলছে ধুঁকে ধুঁকে। বিজয় দিবসে কিশোর কুঁড়ির অনেক আয়োজন ছিল। আজ এই দিনে খুবই মনে পড়ছে আমার সেই প্রান প্রিয় কিশোর কুঁড়ির কথা।
১লা ডিসেম্বর থেকেই শুরু করতাম ১৬ই ডিসেম্বরের প্রস্তুতি। বিজয় দিবস উদযাপন করতে হবে। পাড়ায় একটা উৎসব মুখর পরিবেশ তৈরী হতো। এবারের দেয়ালিকায় একটা কবিতা তো দেওয়াই চাই। ছেলে-মেয়ে সব আড্ডায় একই বিষয়। স্কুলের ফাইনাল পরিক্ষা শেষ, বিকেল ৩টার দিকেই মাঠে যেতাম প্যারেড অনুশীলন চলত ঘন্টা খানেক তারপর ক্রিকেট। ১৫ই ডিসেম্বর সন্ধার পরেই শুরু হতো পোশাক জোগাড়ের প্রতিযোগিতা। কে আগে জোগাড় করতে পারে , প্রয়োজন ছিল একটা নেভী ব্লু হাফ প্যান্ট আর সাদা শার্ট। প্রতি বছর বিজয় দিবস উদযাপন শুরু হতো সকালে স্টেডিয়ামে কুচকাওয়াজে অংশ গ্রহনের মধ্যে দিয়ে। পিটিতে প্রতিবারই প্রথম হতো পুলিশ লাইন স্কুলের মেয়েরা, আমরা "মহিষ বাথান কিশোর কুঁড়ি" দু বার সান্তনা পুরস্কার পেয়েছিলাম। বিকেলে পাড়ার মাঠে শুরু হতো আলোচনা সভা। এই সভাতেই সংগঠনের বড় ভাইয়ারা আলোচনা করতেন মুক্তি যুদ্ধের গৌরব উজ্বল ইতিহাস। আবৃতি হতো মুক্তিযুদ্ধের কবিতা। এই সভার মধ্যে দিয়েই প্রকাশিত হতো দেয়ালিকা, যেখানে থাকত পাড়ার ছেলে-মেয়েদের লেখা কবিতা।
আজ বড় বেশী মনে পড়ে সেদিন গুলোর কথা, যতদিন পাড়ায় ছিলাম সংগঠনটি ধরে রেখেছিলাম তার নিজস্ব মহিমায়। রাজনৈতিক সংস্পর্শ থেকে শতভাগ দুরে রেখেছিলাম এই সংগঠনটিকে। জীবিকার প্রয়োজনে আজ ভিন্ন শহরে। আমার প্রান প্রিয় "মহিষ বাথান কিশোর কুঁড়ি" আজ সাইনবোর্ড সর্বস্ব। খুবই কষ্ট পেয়েছিলাম যখন শুনলাম এবার (গতবছর) রাজশাহী ষ্টেডিয়ামে কুচকাওয়াজ হচ্ছে না। এবছর কি অবস্থা এখনও জানিনা।
পাড়ায় পাড়ায় গড়ে উঠুক সামাজিক সংগঠন। সবাইকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



