বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য IELTS বলতে গেলে এখন অত্যবশ্যকীয় হয়ে দাড়িয়েছে। কানাডার বেশিরভাগ ভার্সিটি IELTS স্কোর অন্তত ৬.৫ চায়। আমিও তাই IELTS দিতে উদ্যত হলাম। আগস্টের ২১ তারিখের জন্য রেজিস্ট্রেশন করলাম। বলে রাখা ভালো,যে তারিখে এক্সাম দিতে চান তার অন্তত ২০ দিন আগে রেজিস্ট্রেশন করুন,নইলে জায়গা নাও থাকতে পারে। আর অবশ্যই রেজিস্ট্রেশনের জন্য চশমা ছাড়া পাসপোর্ট সাইজের ছবি নিয়ে যাবেন। ছবিতে চোখে চশমা থাকলে তারা এক্সেপ্ট করে না।
রেজিস্ট্রেশনের সময় তারা বলে দিলো,পরীক্ষারা ৩ দিন আগে তারা sms করে পরীক্ষার ভেন্যু,সময় ইত্যাদি জানিয়ে দেবে। আর সাথে কন্টাক্ট নাম্বারও দিয়ে দিলো যোগাযোগের জন্য।
যাইহোক,আমি নিশ্চিন্তে পড়তে লাগলাম।cambridge এর সাতটা খন্ড,মেনটোরস এর গাইড,McAsh এর বই ইত্যাদি পড়া লেগেছে। তাছাড়া ব্লগার পরিবেশবাদী ঈগলপাখি ভাইয়ের লেখা গুলি খুবি কাজের। যেমন এই লেখাটি ।
এভাবে ১৮ তারিখ হয়ে গেলো,কোনো sms এলো না। ঠিক করলাম ১৯ তারিখ নিজেই ফোন করব।২০ তারিখ আবার শুক্রবার।
১৯ তারিখ সকাল ১০ টা থেকে ফোন করা শুরু করলাম। ধরে না। মোট ১৫ বার কল দিলাম। একবারও ধরল না। চিন্তিত হয়ে গেলাম। কি করব কি করব ভাবতে ভাবতে ১টা বেজে গেলো। আবার ফোন দিলাম।এবারও না ধরলে ফুলার রোডে গিয়ে উপস্থিত হব ভবলাম। ভাগ্যক্রমে ৫ম বার ফোন রিসিভ করল। আমি বললাম যে আমার ২১ তারিখ পরীক্ষা অথচ আমাকে sms দেয়া হয়নি।আমার স্টুডেন্ট আইডি আর পরীক্ষার টাইম-ভ্যেনু জানালে সুখী হব। অপর প্রান্ত থেকে জানতে পারলাম আমার লিসেনিং,রিডিং আর রাইটিং টেস্ট ২১ তারিখ ১১.৩০ এ। কিন্তু এর পর যা শুনলাম তা হল,'আপনার স্পিকিং টেস্ট আজ দুপুর ১২টা ৩০ এ হয়ে গেছে'!! তখন ঘড়িতে বাজে ১.৩০। আমার আক্কেল গুড়ুম। বললাম,ভাই আমাকে sms করা হয়নি,আমি জানব কিভাবে? ২১ তারিখ পরীক্ষা,আমি নিজে থেকেই ১৯ তারিখ কনটাক্ট করলাম আর শুনতে হচ্ছে আমার পরীক্ষা শেষ?? লোকটা বলল,আপনি ৩ টার মাঝে যদি পৌছাতে পারেন তবে চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে টেস্ট নেয়া যায় কিনা।
আমি ইমেডিয়েটলি রাওনা দিলাম cng নিয়ে। মুখভর্তি দাড়ি আর অগোছালো অবস্থায়। কল্যাণপুর থেকে গুলশান। ভাবছিলাম আমার ভাগ্যটা এত খারাপ কেনো। সবাই sms পায়,আমি পেলাম না।
যাইহোক,ভাবতে ভাবতে মহাখালিতে cng টাও নষ্ট হয়ে গেলো। কি আর বলব! কোনোমতে একটা রিকশা যোগার করে ৩ টা বাজার জাস্ট ২-৩ মিনিট আগে পৌছালাম। ওখানকার লোকদের আমার অবস্থা বললাম। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার প্রায় তখনই ভাইভার ব্যবস্থা হয়ে গেলো। ভাইভা/স্পিকিং টেস্টটা দিতে যখন রূমে প্রবেশ করলাম তখন আমি সিওর হলাম,না,পরীক্ষাটা অন্তত দিতে পারব!!শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা দিতে পেরেছি আর প্রত্যাশিত স্কোরও পেরেছি।
পরে ব্রিটিশ কাউন্সিলের ফুলার রোড অফিসে গিয়েছিলাম জানতে। তারা বলল প্রতিবারই নাকি ৫-৭ জনের এভাবে sms মিস হয়। কথাটা আমার কাছে একেবারেই নতুন।আমি আগে কখনও শুনিনি যে এরকমটা হয়। আর যদি হয়ই,তারা sms এর পাশাপাশি ইমেইল করে দেয় না কেনো?
তারা আমকে sms এর ডেলিভারি রিপোর্টও দেখাতে পারেনি। মাঝখান দিয়ে ব্যপক এক মানসিক অত্যাচারের শিকার হলাম।