somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্য ২০৩৫- মগাটেল ও আমি

০৮ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১০:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি মুন্তাজুর রহমান। মগাটেলের সিনিয়র অফিসার। আজ রববার –অফিসের দিন। মগাটেল অফিসে আরেকটি কর্মব্যস্ত দিন কাটাতে হবে। খাওয়া ঘুম অফিসের চক্রে বাঁধা এক নিদারুন অসহায় মানুষ আমি।
নাস্তা করে কাজের লোক মফিজকে বললাম ঘোড়াটা বের করতে। মগাটেলে চাকরি করে নিজের পার্সনাল লাইফ বলতে তেমন কিছু বাকি নেই। তবে টাকা পয়সা ভালোই আছে। ৮ বছর চাকরি করে ৩টা প্রাইভেট ঘোড়া আর ৪টা গরুর মালিক হয়েছি। ঘরে ৩ জন কাজের লোক। মফিজ -গরু আর ঘোড়ার দেখভাল করে। জরিনা রান্না-বান্না আর সাংসারিক কাম কাজ করে। আর ছদরুল বাতাস করে।
মফিজ লাল ঘোড়াটাকে বের করে আমার হাতে দিতেই আমি তাতে চড়ে বসলাম আর লাগাম ছেড়ে ঘোড়া ছুটালাম।
ঢাকায় রাস্তার বিলুপ্ত হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগেই। এখন শুধু ঢাকায় কেনো,সারা দেশেই প্রচলিত কোনো পাকা রাস্তা নেই। রাস্তা না থাকায় জমির অপচয় অনেকটা কমে এসেছে।
এই বাড়ি অই বাড়ির ফাঁক দিয়ে ঘোড়া ছুটাতে চেষ্টা করলাম। শহরে এত ঘোড়া যে ঘোড়ার জ্যাম সবসময় ঢাকায় লেগেই আছে।
ছোট ছিলাম যখন তখন বাংলাদেশে বিদ্যুৎ তৈরি হত। সেই বিদ্যুৎ দিয়ে নানাজনে নানা কাজ করত। অনেকে টিভি দেখত,কেউ ফ্যান-এসি চালাতো। লাইট জ্বালাতো। ২০২২ সালে ভিশন ২২ এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশকে সম্পূর্ন বিদ্যুৎমুক্ত দেশ করা হয়। এরপর থেকে এদেশে আর কেউ কোনো কারেন্ট পায়নি। যেসব জায়গায় বিদ্যুৎ তৈরি হত সেসব(পাওয়ার প্লান্ট) জায়গায় পয়ঃনিষ্কানোরে ট্যাঙ্কি বানানো হয়। ক্রমবর্ধমান জনগনের নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই ট্যাঙ্কি বসানো খুবই জরুরি ছিল।
যাইহোক, ছুটির দিনে মগাটেল অফিসে যেতে লাগে ৩০ মিনিট। আজ ঘোড়া জটের কারনে অর্ধেক রাস্তাতেই ৪০ মিনিট চলে গেলো। সামনের বড় ফাঁকা মাঠটাতে বিজ্ঞাপন অনুষ্ঠিত হতে দেখলাম। মগাটেলেরই বিজ্ঞাপন। এসময়ের সেরা দুই মডেল ফখ আর কারিকা বিপুল উদ্যোমে মগাটেলের বিজ্ঞাপন করছে। “টেল টেল টেল- মগাআআআ টেল”- গানের তালে তালে নেচে চলেছে তারা। তার পাশেই বালটন ব্র্যান্ডের মলমের বিজ্ঞাপন করছে স্বপূর্ব। প্রাচীন কালে যখন বাঙ্গলার মানুষের ঘরে টিভি ছিলো তখন এইসব ফখ-কারিকাদের রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে বিজ্ঞাপন করতে হত না। একবারের বিজ্ঞাপন বারবার টিভিতে দেখানো যেত।
দেড় ঘন্টা নাগাদ মগাটেলের অফিসে উপস্থিত হতে পারলাম। মগাটেলের নিচের তলাটা অত্যাধুনিক গরুর গোয়াল। গরু গুলিকে জোড়ায় জোড়ায় বেধে দেয়া হয়েছে জেনারেটরের সাথে। গরুর সাথে সাথে জেনারেটরের রোটর ঘোরে-আর উতপাদিত হয় কিছু বিদ্যুৎ। আর সেই বিদ্যুৎ দিয়েই চলে মগাটেলের অফিসে। ইদানিং অনেক বড়লোকেরা নিজের বাড়ির আন্ডারগ্রাউন্ডে এরকম গরুর গোয়াল গড়ে তুলেছে যদিও সরকার বলেছে ইহা গো সম্পদের ব্যাপক অপচয়।
২০২৩ সালে দেশে যেটুকু তেল গ্যাস ছিল সবটুকু বিদেশে বন্ধু রাষ্ট্রদের কাছে উপহার স্বরুপ পাঠিয়ে দেয়া হয়। এর বিনিময়ে অবশ্য কোনো টাকা নেয়া হয়নি-কারন আমরা জাতি হিসেবে অনেক বড় মনের। টাকার বিনিময়ে আমরা কিছু দেই না, আমরা দেই মন থেকে-মুক্ত হস্তে।
পরের বছর টাকার অভাবে তেল-গ্যাস আমদানীও বন্ধ করে দেয়া হয়। সংবিধান সংশোধন করে লেখা হয়- ‘তেল-গ্যাস স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর’। এর পর থেকেই দেশে আবার ঘোড়া-গরুর নব জাগরন শুরু হয়। ঘোড়া হয়ে ওঠে আমাদের প্রধান বাহন, গরুর গোবর হয়ে ওঠে আমাদের প্রধান রপ্তানী পন্য।অবশ্য গরু ঘোড়ার জন্য পুষ্টিকর ঘাস আনতে হয় পাশ্ববর্তী একটি বন্ধু রাষ্ট্র আর দূরবর্তী অস্ট্রেলিয়া থেকে।

মগাটেলের অফিসের পাশেই সেভেন-স্টার সিনেপ্লেক্সে এ সপ্তাহে চলছে মঞ্চনাটক ‘খ্যানো তুমি পাস আয়া-Why you came close’। নায়ক লাকির বাপের সাথে নায়িকা আছে ইন্ডিয়ার চ্যাতরিনা। মরার মগাটেলের জ্বালায় মঞ্চনাটক দেখার সময়ই হয় না আমার।
মগাটেলের প্রধান দরজার উপরে বড় করে কোম্পানীর মোটো লেখা-“পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়ে-মগাটেল, কাছে থাকুন।।”
লেখাটা দেখে দীর্ঘশ্বাস পড়ল। মগাটেলের কাছে থাকতে থাকতে তথা অফিস করতে করতে জীবন যৌবন সবই গেলো। আর পরিবর্তন?- পরিবর্তন হয়াই তো দ্যাশের আজকে এই অবস্থা....
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১০:৪৪
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জেনারেল রাও ফরমান আলী ছিল ইন্ডিয়ান 'র'-এর এজেন্ট

লিখেছেন ধূসর সন্ধ্যা, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২২



জেনারেল রাও ফরমান আলী ছিল ইন্ডিয়ান 'র'-এর একজন এজেন্ট। এই তথ্য কেউ জানতো না। তার ফ্যামিলিও জানতো না। ১৯৪১ সালে বর্ডার ক্রস করে সে ঢুকেছিল পাকিস্তান। তারপর আস্তে আস্তে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×