আমি মুন্তাজুর রহমান। মগাটেলের সিনিয়র অফিসার। আজ রববার –অফিসের দিন। মগাটেল অফিসে আরেকটি কর্মব্যস্ত দিন কাটাতে হবে। খাওয়া ঘুম অফিসের চক্রে বাঁধা এক নিদারুন অসহায় মানুষ আমি।
নাস্তা করে কাজের লোক মফিজকে বললাম ঘোড়াটা বের করতে। মগাটেলে চাকরি করে নিজের পার্সনাল লাইফ বলতে তেমন কিছু বাকি নেই। তবে টাকা পয়সা ভালোই আছে। ৮ বছর চাকরি করে ৩টা প্রাইভেট ঘোড়া আর ৪টা গরুর মালিক হয়েছি। ঘরে ৩ জন কাজের লোক। মফিজ -গরু আর ঘোড়ার দেখভাল করে। জরিনা রান্না-বান্না আর সাংসারিক কাম কাজ করে। আর ছদরুল বাতাস করে।
মফিজ লাল ঘোড়াটাকে বের করে আমার হাতে দিতেই আমি তাতে চড়ে বসলাম আর লাগাম ছেড়ে ঘোড়া ছুটালাম।
ঢাকায় রাস্তার বিলুপ্ত হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগেই। এখন শুধু ঢাকায় কেনো,সারা দেশেই প্রচলিত কোনো পাকা রাস্তা নেই। রাস্তা না থাকায় জমির অপচয় অনেকটা কমে এসেছে।
এই বাড়ি অই বাড়ির ফাঁক দিয়ে ঘোড়া ছুটাতে চেষ্টা করলাম। শহরে এত ঘোড়া যে ঘোড়ার জ্যাম সবসময় ঢাকায় লেগেই আছে।
ছোট ছিলাম যখন তখন বাংলাদেশে বিদ্যুৎ তৈরি হত। সেই বিদ্যুৎ দিয়ে নানাজনে নানা কাজ করত। অনেকে টিভি দেখত,কেউ ফ্যান-এসি চালাতো। লাইট জ্বালাতো। ২০২২ সালে ভিশন ২২ এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশকে সম্পূর্ন বিদ্যুৎমুক্ত দেশ করা হয়। এরপর থেকে এদেশে আর কেউ কোনো কারেন্ট পায়নি। যেসব জায়গায় বিদ্যুৎ তৈরি হত সেসব(পাওয়ার প্লান্ট) জায়গায় পয়ঃনিষ্কানোরে ট্যাঙ্কি বানানো হয়। ক্রমবর্ধমান জনগনের নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই ট্যাঙ্কি বসানো খুবই জরুরি ছিল।
যাইহোক, ছুটির দিনে মগাটেল অফিসে যেতে লাগে ৩০ মিনিট। আজ ঘোড়া জটের কারনে অর্ধেক রাস্তাতেই ৪০ মিনিট চলে গেলো। সামনের বড় ফাঁকা মাঠটাতে বিজ্ঞাপন অনুষ্ঠিত হতে দেখলাম। মগাটেলেরই বিজ্ঞাপন। এসময়ের সেরা দুই মডেল ফখ আর কারিকা বিপুল উদ্যোমে মগাটেলের বিজ্ঞাপন করছে। “টেল টেল টেল- মগাআআআ টেল”- গানের তালে তালে নেচে চলেছে তারা। তার পাশেই বালটন ব্র্যান্ডের মলমের বিজ্ঞাপন করছে স্বপূর্ব। প্রাচীন কালে যখন বাঙ্গলার মানুষের ঘরে টিভি ছিলো তখন এইসব ফখ-কারিকাদের রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে বিজ্ঞাপন করতে হত না। একবারের বিজ্ঞাপন বারবার টিভিতে দেখানো যেত।
দেড় ঘন্টা নাগাদ মগাটেলের অফিসে উপস্থিত হতে পারলাম। মগাটেলের নিচের তলাটা অত্যাধুনিক গরুর গোয়াল। গরু গুলিকে জোড়ায় জোড়ায় বেধে দেয়া হয়েছে জেনারেটরের সাথে। গরুর সাথে সাথে জেনারেটরের রোটর ঘোরে-আর উতপাদিত হয় কিছু বিদ্যুৎ। আর সেই বিদ্যুৎ দিয়েই চলে মগাটেলের অফিসে। ইদানিং অনেক বড়লোকেরা নিজের বাড়ির আন্ডারগ্রাউন্ডে এরকম গরুর গোয়াল গড়ে তুলেছে যদিও সরকার বলেছে ইহা গো সম্পদের ব্যাপক অপচয়।
২০২৩ সালে দেশে যেটুকু তেল গ্যাস ছিল সবটুকু বিদেশে বন্ধু রাষ্ট্রদের কাছে উপহার স্বরুপ পাঠিয়ে দেয়া হয়। এর বিনিময়ে অবশ্য কোনো টাকা নেয়া হয়নি-কারন আমরা জাতি হিসেবে অনেক বড় মনের। টাকার বিনিময়ে আমরা কিছু দেই না, আমরা দেই মন থেকে-মুক্ত হস্তে।
পরের বছর টাকার অভাবে তেল-গ্যাস আমদানীও বন্ধ করে দেয়া হয়। সংবিধান সংশোধন করে লেখা হয়- ‘তেল-গ্যাস স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর’। এর পর থেকেই দেশে আবার ঘোড়া-গরুর নব জাগরন শুরু হয়। ঘোড়া হয়ে ওঠে আমাদের প্রধান বাহন, গরুর গোবর হয়ে ওঠে আমাদের প্রধান রপ্তানী পন্য।অবশ্য গরু ঘোড়ার জন্য পুষ্টিকর ঘাস আনতে হয় পাশ্ববর্তী একটি বন্ধু রাষ্ট্র আর দূরবর্তী অস্ট্রেলিয়া থেকে।
মগাটেলের অফিসের পাশেই সেভেন-স্টার সিনেপ্লেক্সে এ সপ্তাহে চলছে মঞ্চনাটক ‘খ্যানো তুমি পাস আয়া-Why you came close’। নায়ক লাকির বাপের সাথে নায়িকা আছে ইন্ডিয়ার চ্যাতরিনা। মরার মগাটেলের জ্বালায় মঞ্চনাটক দেখার সময়ই হয় না আমার।
মগাটেলের প্রধান দরজার উপরে বড় করে কোম্পানীর মোটো লেখা-“পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়ে-মগাটেল, কাছে থাকুন।।”
লেখাটা দেখে দীর্ঘশ্বাস পড়ল। মগাটেলের কাছে থাকতে থাকতে তথা অফিস করতে করতে জীবন যৌবন সবই গেলো। আর পরিবর্তন?- পরিবর্তন হয়াই তো দ্যাশের আজকে এই অবস্থা....
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১০:৪৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




