** মগাটেল সিরিজের সব পর্বই ২০৩৫ পরবর্তী প্রেক্ষাপটে রচিত।
অনেক দিন পর ছুটি পেলাম। সালার মগাটেলে চাকরী করে জীবন –যৌবন সবই গেছে। পৃথিবীটা ঘুরে দেখা দূরে থাক, বাসা থেকে মাত্র ১ দিনের ঘোড়ায় চলা পথ, সেই পদ্মা সেতুও ঘুরতে যাওয়া হয় না।
এবার ছুটি পেয়ে ঘোড়া হাকিয়ে সোজা চলে এলাম মুন্সীগঞ্জের লৌহজং এ, পদ্মা সেতুর পাড়ে।
পদ্মা সেতুকে বলা হয় বাংলাদেশের কান্না। কেন কান্না বলে জানি না,অন্তত এই ২০৩৫ সালে এসে কোনো বাঙ্গালীর চোখ দিয়ে পানি পড়ে না। হয়ত বাবার আমলের লোকেদের সেরকম কোনো ফিলিঙ্গস ছিলো।
সে অনেক কাল আগের কথা।দেশের শাহেনশাহরা সিদ্ধান্ত নিলো এই পদ্মা সেতু বানাবে,ঋন-অনুদান নিয়ে। কিন্তু ঋন অনুদানের টাকা-পয়সায় শাহেনশাহর লোকদের নজর পড়লে সটকে পড়ে দাতারা। দেশের মানুষের প্রেস্টিজে লাগে এটা। সবাই মিলে, বিশেষ করে তখন যিনি রাজা ছিলেন তিনি ডিসিশন নিলেন, যেকোনো মূল্যে পদ্মাসেতু করতে হবে। সেজন্য বিপুল উতসাহ উদ্দিপনায় ‘পদ্মা সেতু ফান্ড’ তৈরি হলো। উনার এক উজির প্রস্তাব দিলেন, জনগন কে একবেলা বাজার না করে সেইটাকা পদ্মাসেতুর ফান্ডে জমা রাখতে হবে। আরেক উজির বললেন, দিনে একবেলা না খেয়ে সেই টাকা পদ্মাসেতুর ফান্ডে জমা দেয়া বাধ্যতামূলক করতে হবে। আরেকজন বললেন, জনগন ১ মিনিট কথা বললে ২৫ পয়সা ফান্ডে জমা দিতে হবে। চালের কেজিতে ১০টাকা সারচার্জ দেয়া হলো পদ্মাসেতু ফান্ডের জন্য। রাজার লোকদের তখন সাজ সাজ রব। ঠিক হলো, চাকরীজীবিদের বেতনের ৫০% কেটে নেয়া হবে পদ্মাসেতুর জন্য। এমনকি “পদ্মা” নামটা নেয়া মাত্র ১০হাজার টাকা পদ্মাসেতু ফান্ডে প্রদান বাধ্যতামূলক করা হলো। কিন্তু এভাবে ২ বছর যাবার পরেও ফান্ডের টাকা বাড়লো না।রাজার লোকেরা বলল, ফান্ডের তলায় ব্লাক হোল থাকায় টাকা বাড়ছে না।
শেষমেষ মদন ব্যাংক থেকে ঋন নিয়ে সম্পূর্ন দেশীয় প্রযুক্তিতে শুরু হলো পদ্মা সেতু নির্মান। তত দিনে যারা আগে দিনে ১ বেলা খেতো, তারা খাওয়া ছেড়ে পরপারে চলে গিয়েছে।
‘আমাদের ব্রিজ আমরা বানাবো,যেমনে খুশি তেমনে বানাবো’-এই নীতি নিয়ে এগিয়ে চলে সেতু নির্মান।৬.৫ কিমি দীর্ঘ সেতু প্রতি বছর ১ কিমি করে ৬.৫ বছরে শেষ করার কথা থাকলেও তা শেষ হয় ২০৩০ সালে,১৫ বছরে।
কিন্তু আফসোস, সম্পূর্ন দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ব্রীজটায় ফাটল ধরা শুরু হয় কয়েকমাসের মধ্যেই। টাংগিয়ে দেয়া হয় “ভাড়ি যান-বাহন চলা নিষেধ” ব্যানারটি।
আজ আমার সামনে পদ্মা সেতুটি দেখে তেমন অবাক হলাম না। ২ বছর আগে যেমন ছিলো,এখন আরো রুগ্ন-মলিন হয়েছে।সামনের বিলবোর্ডে লেখা, “পদ্মা ব্রিজ,সাবধানে পায়ে হেটে চলুন।। যানবাহন চলাচল নিষেধ।”
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০১২ রাত ১০:০৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




