কিছুদিন আগে আমার এক বন্ধু হঠাৎ করেই তাদের একটা সংঘঠনের অনুষ্ঠানে নিয়ে গিয়ে বলল, তাদের উদ্দেশ্য বর্তমান সমস্যা এবং তার সমাধান নিয়ে কিছু বলতে। আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না কিন্তু কিছু না বলেও পারছিলাম না। তাই শুরু করেছিলাম এভাবে, আমার বন্ধু আমাকে বলল বর্তমান সমস্যা ও তার সমাধান নিয়ে কিছু বলতে, আমি আমার বন্ধুকে একটা প্রশ্ন করতে চাই, তার আগে একটা গল্প মনে পড়ছে সেই ছোট কালের।
শিক্ষক তার ছাত্রকে জিজ্ঞাস করলেন, বলত আল্লাহ কোথায় আছেন? উত্তরে ছাত্র বলেছিল, আমি এর উত্তর দিব তার আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দিন, আল্লাহ কোথায় নাই?
আমি আমার বন্ধুর কাছে জানতে চাই, কোন জায়গায় সমস্যা নাই? সে যাইহোক, রাজনীতিক বক্তব্য আমি দিতে চাই না।
আমার দেশের সরকার মনে হয় কিছু কাজে পরিকল্পনা না করেই কাজ করে। যানজট নিয়ে লিখতে ইচ্ছা করে না,শুধু যানজট নিয়ে নয় এত সমস্যা নিয়ে লিখতে এখন কষ্ট হয়,মাঝে মাঝে ইচ্ছা হয় সমস্যা বাদ দিয়ে যদি ভালো কিছু লিখতে পারতাম।
মাত্র পনেরদিন আগে দেখলাম রাস্তা মেরামত করছে আর আজকে দেখি সেই নতুন রাস্তাকেই ধর্ষণ করা হচ্ছে মানে খুড়াখুড়ি চলছে, আমি ঠিক রাস্তা খুড়াখুড়িটাকে ধর্ষণ বলতেই সাচ্ছন্দ্যবোধ করি,কারণ দুইদিন পরপর নষ্ট রাস্তা ঠিক করবে আবার নতুন রাস্তাকে খুড়াখুড়ি করবে তাকে ধর্ষণ না বলে কি উপায় আছে।
ওবায়দুল কাদেরকে বলায় বাংলার ফাটাকেষ্ট, আমি নিজেও ব্যাক্তিগত ভাবে উনাকে সম্মান করি উনার কাজের জন্য। কিন্তু আমার খুব কষ্ট হয় যখন এই মানুষটার এত পরিশ্রম অন্য কোন মন্ত্রণালয় এর সিদ্ধান্তের জন্য প্রশ্নবিদ্ধ হতে হয়, রাস্তার মানুষগুলো যখন গালাগালি করে।
ব্যাটা ওবায়দুল কি আর করবে, উনি রাস্তা মেরামত করেন আর গ্যাস,পানি এইসব সরবরাহ করতে গিয়ে দুইদিনে সেই রাস্তা নষ্ট করে দিয়ে চলে যায়, জনগণ আবার গালি দেওয়া শুরু করে উনাকে।
যাইহোক, স্থানীয় রাস্তাগুলো উনার অধিনে নয় আমি যতদূর জানি এগুলো সিটি কর্পোরেশন,পৌরসভা এর অধিনে।
এরা যখন কাজ করে তখন কি কোন পরিক্লপনা থাকে না নাকি তাই বুঝতেছিনা, শুধু ঢাকা শহরে নয় ঢাকার বাইরেও এই রাস্তা খুড়াখুড়ির কাজ চলে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এর অধিনে এই কাজগুলো বাস্তবায়ণ করে সিটি কর্পোরেশন আর পৌরসভা।
সরকার পুরু দেশ নিয়ে পরিক্লপনা করে আর সিটি কর্পোরেশন শুধু তার অধিনের এলাকা, আর পৌরসভা আরো ছোট পরিসরে তাদের পরিল্পনা করে। তাহলে এদের পরিক্লপনাগুলো আরো বেশি সহজতর। কিন্তু এই সহজ কাজগুলোকেই এরা জটিল বানিয়ে ফেলে।
কিছুদিন আগে একটা প্রতিবেদন পড়ছিলাম যার শিরোনাম ছিল ধর্ষণ!! উনি এই রাস্তা ধর্ষণ নিয়ে খুব সুন্দর করে কিছু তথ্য তুলে ধরেছিলেন। তিনি এই সব খুড়াখুড়ির কাজ করে যারা আর যারা মেরামত করেন তাদের বক্তব্য তুলে ধরেছিলেন, সেই সাথে কারওয়ান বাজার এর একটা কাজের তথ্যও দিয়েছিলেন। উনার সাথে যারা কথা বলেছিল তাদের বক্তব্য ছিল এমন, রাস্তা যদি খুড়াখুড়ি না হয় তাহলে রাস্তা মেরামত করতে সময় লাগবে বেশি আর এই বেশি সময় ধরে সরকারের টাকা ফেলে রাখার চেয়ে বরং খুড়াখুড়ি করে রাস্তা নষ্ট কর আর বাজেট করাও, সরকারের টাকা তোমার পকেটে চলে আসবে।
তো আমিও যখন গতকাল দেখলাম মাত্র পনেরদিন আগে মেরামত করা রাস্তা খুড়াখুড়ি চলছে তখন সেখানে কর্মরত শ্রমিকদের জিজ্ঞাস করলাম ভাই, মাত্র পনেরদিন আগে রাস্তাটা মেরামত করা হয়েছে এই পনেরদিন আগে কি উনাদের মনে হয়নি যে এখানে পানির লাইনে সমস্যা আছে? তাহলে ত রাস্তাটা এভাবে নষ্ট হত না।
তাদের উত্তর, ভাই সবাই জানত আর জেনেই এই কাজ করেছে। পনেরদিন আগে রাস্তার কাজ করিয়েছে এখন আবার করাবে,টাকা গেলে সরকারের যাবে। আপনি আপনার কাজ করুন ডিস্টাব করবেন না। আমি হতাশ হয়ে শুধু বললাম ভাই, টাকাটা সরকারের নয়, আপনার আমার আমাদের। উপর দিয়ে পানি ঢালছে আর নিচ দিয়ে গাছ কাটছে এটা আপনারা বুঝতেছেন না। এবার তাদের উত্তর আরো ভয়াবহ, আপনি যান ত এই সব জ্ঞানের কথা আমাদের বলে লাভ নাই,যেখানে বলে লাভ হবে সেখানে গিয়ে বলেন।
আমি জানি ভাই, আমার এই কথা কেউ শুনবেও না, আর এই লেখাটাও আমার নিয়মিত পাঠক এর বাইরে হয়ত দুয়েকজন পড়বে কিন্তু তাতে কি হবে? কিছুই না। আমি বারবার হতাশ হই, ব্যার্থ হই তারপরেও আশা করি একদিন উন্নতি হবে।
সিটি কর্পোরেশন আর পৌরসভার কাজ নিয়ে সব সময় প্রশ্ন থাকে,এখনো থাকল। এরা কি আসলেই কোন পরিকল্পনা করে কাজ করে নাকি শুধু নিজেদের পকেট ভারী করার চিন্তায় থাকে।
একটা কথা মনে পড়ল, সারা অঙ্গে ব্যাথা ঔষধ লাগাব কোথায়?
তারপরেও আমি আশা করি, তরুণ শিক্ষিত প্রজন্ম আসবে ক্ষমতায়, ব্যাক্তিস্বার্থের উর্ধে উঠে দেশের জন্য কাজ করবে।