প্রেমভালবাসা একটি বায়বীয় জিনিস, দেখা যায় না, ধরা যায় না, ছোঁয়াও যায় না কিন্তু উপলদ্ধি করা যায় ভালবাসা প্রকাশের মাধ্যমে। এমন অনেক মানুষ আমাদেরই আশেপাশে আছে যাদের বুকভরা ভালবাসার খবর তাদের বউয়ের কাছে অজানা। বউয়ের জন্য ভালবাসা যে বিদ্যমান তা নিম্মোক্ত পদ্ধতি অনুসরন করে খুব কম খরচে তাকে জানান দেওয়া যেতে পারেঃ
১। যখন স্ত্রী বাসার ভেতর থেকে দরজা খুলে দেবে তখন ৪টি প্রশ্নের উত্তরের জন্য ১০ সেকেন্ড তাকে আপদমস্তক নিরিক্ষণ করুন।
ক) ড্রেসটা কি নতুন/পড়ার ঢংটা কি আলাদা?
খ) নাক কান গলায় কি নতুন কোন গহনা আছে/বা নাই?
গ) হাতে পায়ের নখে কি নেইল পালিশ/মেহেদী লাগানো হয়েছে?
ঘ) চুলের খোঁপা কি গতানুগতিক থেকে আলাদা/চুলে কি কালার করা হয়েছে/নতুন ছাঁট দেওয়া হয়েছে ?
যদি কোন পরিবর্তণ লক্ষ্য করেন তবে প্রয়োজনীয় প্রশংসা করুন ৩০ সেকেন্ড। বাহ অনেক সুন্দর লাগছে তো তোমাকে? আশা করা যায় অনেক কিছুই সহজ হয়ে যাবে।যত খারাপই দেখা যাক না কেন ভুলেও সমালোচনা করতে যাবেন না তাহলে অন্তত কয়েকদিন খারাপ যাবে।
২। অফিস থেকে ফেরার পথে মিষ্টির দোকান থেকে একটা প্যাড়া সন্দেস কিনুন, অর্ধেকটা নিজে খান, বাকী অর্ধেকটা টিস্যু পেপারে মুড়িয়ে পকেটে রাখুন। বাসায় ফিরে ফ্রেস হয়ে স্ত্রীকে দিয়ে বলুন অফিসে একটা উপলক্ষে সন্দেস দিয়েছিল। তোমাকে ছাড়া কি করে খাই তাই অর্ধেক খেয়ে তোমার জন্য আনছি। আশা করা যায় রাতটা ভাল যাবে।মাঝে মাঝে বেছে বেছে ঠান্ডা সিংঙ্গাড়া আনতে পারেন।
৩। তরকারী যত খারাপই হোক না কেন ভুয়সী প্রশংসা করুন, তরকারী স্বাদের গন্ধের ও রংয়ের।যদি খারাপ হয় সে খাওয়ার সময় বুঝতে পারবে আপনার বলা লাগবে না।প্রথম লোকমা তার মুখে তুলে দিন।
৪। ছুটির দিনে বা সন্ধ্যার পর সে যখন রান্না করছে তখন এক মিনিট সময় দিন কিচেনে। তার কত কষ্ট সে বিষয়ে আলোকপাত করুন। তরকারীর স্বাদ বাড়ানোর জন্য একটু ফাজলামি/দুষ্টুমি করুন।
৫। ভুলেও তার বাপ ও ভাইয়ের সামান্যতম সমালোচনা করতে যাবেন না, তবে তার মা ও বোনের হালকা সমালোচনা করতে পারেন।
৬। পাশের বাড়ির ভাবী, নারী কলিগ, আগের আমলের বান্ধবী বা অন্য কোন নারীর গুনের বর্ননা করা যাবে না।
৭। ভুলেও মেয়েলী কোন কাজে সহযোগীতা করতে যাবেন না। তার পছন্দ হবে না কারন আপনার কাজ তার মত নিখুত হবে না সে বিষয়ে সে নিশ্চিত।
৮।রান্না ঘরে রান্নার কাজে সহযোগীতা করতে যাবেন না, তবে ডিস্টাব করতে বা ফাজলামী করতে অবশ্যই যাবেন। রান্না ঘরে একটু না জ্বালালে রান্না স্বাদ হয় না।
৯। স্ত্রীর অসুস্থতার সময় স্ত্রীর প্রতি আসল ভালবাসা প্রকাশ পাই। এসময় আপনি নিজেই রান্না করুন, স্ত্রীর কাপড় ধুয়ে দেন। ভেজা কাপড় মেলে দেওয়ার সময় খেয়াল রাখুন যেন পড়ে না যায়। ঘরের কাজ গুলো করুন, প্রয়োজনীয় সেবা করুন। ডাক্তারের কাছে যাওয়ার শিডিউল মিস করার মত বোকামী করলে বা ঔষুধ আনতে ভুলে গেলে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির সম্মূখীন হবেন।এ সময় অফিস থেকে ছুটি নিন। এই সময়টা আপনার অনার্সের সার্টিফিকেটের মত, পাশ করবেন একবার, বেনিফিট পাবেন বাকী জীবন।
১০। তার ধোয়া জামা কাপড় মেলে দিতে বললে হাসি মুখে বারান্দায় মেলে দিন এমনভাবে যেন তা নীচে পড়ে পুনরায় ময়লা হয়ে যায়।
১১। তাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য কেনা ড্রেসের ডিজাইন/রং পছন্দ না হওয়ায় বদলানো সিদ্ধান্ত নিলে তার অজান্তে কিচেনের চুলার আগুনে পুড়িয়ে ড্রেসের ছাই সংরক্ষণ করুন। ভুলেও তার সামনে কাজটা করতে যাবেনা। পরে ড্রেসটা সর্ম্পকে জিঙ্গাসা করলে ছাই উপহার দিতে পারেন। অথবা পরবর্তী মনে রাখার মত কিছু না ঘটার পূর্ব পর্যন্ত তার ড্রেস না কিনে ড্রেস কেনার টাকা সরবরাহ করতে পারেন।
১২। ভুলেও আপনার পিতামাতা, ভাই বোনের সমালোচনা তার সামনে করবেন না।কখনও না।
১৩। যে ব্যাপার গুলো আপনি মানবেন না কখনই সেগুলোতে আলোচনার কোন সুযোগ দেবেন না।
১৪। শরীর স্বাস্থ্য নিয়ে শুধুমাত্র ইতিবাচক কথা হবে। মনে রাখবেন স্ত্রীরা কখনও মোটা বা চিকন হয় না, তারা স্লিম ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারীনী হয়। যদি স্লিম হয় তাহলে বলা উচিত তোমার ধনুকের মত তনুর তীরে আমার হৃদয় এফোড় ও ফোড় হয়ে যায়।
আর যদি মোটা ওরফে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয় তবে বলা উচিত বাঙ্গালী বধুর শরীরে একটু মাংশ না থাকলে কি ভাল লাগে? স্বাস্থ্য ভাল নাহলে স্বামী সেবা করবে কি করে? চিকনা হলে রাত বিরাতে হাড়ে হাড়ে বাড়ি লেগে ঠকঠক শব্দ হয়।
১৫। সাজুঁগুজু করলে বলবেন তোমাকে অপূর্ব লাগছে আর সাজুঁগুজু না করলে বলবেন তোমাকে ন্যাচারাল পরীর মত লাগছে। আর যদি ধরে বসে যে গতকাল বললা সাজলে আমাকে অপরুপ সুন্দরী লাগে আর আজ সাজুঁজুগু করছি আর বলছ পরীর মত লাগছে। কোনটা সত্যি?
উত্তরে বলবেন তোমাকে সাজলে বেশী অপরুপ লাগে নাকি না সাজলে বেশী অপরুপ লাগে সেটা বুঝতে বুঝতেই তো এতবছর চলে গেল। মনে হয় বাকী জীবনও লাগবে বুঝে উঠতে।
এমনই খরচ বিহীন বা অতি সামান্য কিছু অভ্যাস যদি রপ্ত করেন আর অফিস থেকে বাসায় ফিরে সব মিলিয়ে আপনার পাঁচ মিনিট সময় ব্যয় করেন তবে বুকের ভেতর ভালবাসা থাকুক আর নাই থাকুক সংসার ভালবাসাময় হয়ে উঠবে বলে আশা করা যায়।
তবে টাইমিং এ কিন্তু খুব খেয়াল। পৌষ মাসের জালসায় জৈষ্ঠ্ মাসের গল্প বললে সারা রাত ঠান্ডায় ঠকঠক করে কাঁপা লাগবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ১১:৫২