somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার (ওসিডি)

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রিমি আজকার খুব ক্ষুতক্ষুতে স্বভাবের হয়ে গেছে। খেতে বসলে বারবার হাত ধোয়। প্রতিটা খাবারে তার পরিচ্ছন্নতা চাই। ঝকঝকে প্লেট, টেবিল সব কিছু উপেক্ষা করে তার সব কিছু অপরিচ্ছন্ন লাগে। নিজের ছোট বোনটাকে আজকার সহ্য হয় না। বাবা মাকে শত্রু মনে হয়। নামাজ পড়তে বসলে, বারবার মনে হয় ভুল হচ্ছে কোথাও! নামাজ হবে না আজ! অজু করা হয়েছে তো ঠিক মত!
কোন কারণ ছাড়ায় আজকাল দাঁত দিয়ে নখ কাটে, একা একা মাথা চুলকায়।

খুব হতাশায় ভোগে অতিরিক্ত পরিচ্ছন্ন এই মেয়েটি। মাঝে মাঝে বলে ফেলে, "অতীত ভবিষ্যৎ সব কিছু শেষ। মৃত্যুই এখন একমাত্র প্রার্থনা। " সেদিন তো ছোট বোন ছাদে যেয়ে দেখে রিমি রেলিং এর উপর দাঁড়িয়ে আছে লাফ দেবে বলে! কি ভয়াবহ!

সেদিন আনাস একটা গোলাপ দিল ওর হাঁতে, ভুল করে গোলাপটা মাটিতে পড়ে গিয়েছিল। রিমি ওটা উঠিয়ে, আবার মাটিতে ফেলল, আবার উঠাল! এভাবে তিন চারবার একই কাজ করল! ব্যাপারটা আনাসের কাছে খুব অবাক লাগল, কিন্তু ওকে কিছু বলল না।


উপরে আলোচিত লক্ষণগুলো "অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার" নামক একটি রোগের লক্ষণ। এক ব্যাক্তির মাঝেই যে এই সকল লক্ষণ দেখা দেবে এমন নয়। আবার সব যে একসাথে দেখা যাবে না, এমন ও না। তবে, এগুলো কিছু সাধারণ লক্ষণ রোগটার। এক এক জনের সিমটম এক এক রকম দেখা দিতে পারে। এই রোগটি গ্রামাঞ্চলে "শুচিবায়ু" রোগ নামে প্রচলিত।

এ রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তিরা সাধারাণত অত্যান্ত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখে। তবে রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর এদের মাঝে অদ্ভুত কিছু চিন্তা ঢোকে। নিজেদের চরিত্রের বিপরীত নানান চিন্তা তাদের মাঝে কাজ করে। দেখা যায় যে খুব কাছের মানুষের প্রতি অমঙ্গলকর চিন্তা আসে। সবকিছুতে সন্দেহ হয়। একি কাজ বারবার করার প্রবণতা কাজ করে।

মজার ব্যাপার হল, এ রোগে আক্রান্ত রোগী নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বারবার কাজ করবে। অনিয়ন্ত্রিত মন তাকে দিয়ে করাবে। অর্থাৎ রোগের আক্রমণের পর আমাদের মন আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে না!

অনেকে দাঁত দিয়ে নখ কাটতে থাকে, অনেকে মাথার চুল ছেড়ে, একই কাজ বারবার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে থাকে, বেশ কিছু কাজ এরা প্রতিনিয়ত করতে থাকে। এগুলোকে স্বাভাবিক অভ্যাস বলে এড়িয়ে যাওয়া উচিৎ নয়। কেননা রোগটি থেকে বেশ বড় সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে পরবর্তীতে।

এসব রোগীরা প্রচন্ড অবসেশনে ভোগে। প্রচন্ড মানসিক অশান্তিতে ভোগে। নিজেকে একা মনে করে। মাঝে মাঝে ব্যাপারটি আত্মহত্যা পর্যন্ত গড়াতে পারে।

বাংলাদেশের জনসংখ্যার শতকরা ৩ ভাগ এই রোগে আক্রান্ত। এসব রোগীরা কিন্তু পাগল নয়। এরা মানসিক রোগী। তবে শতকরা ৮০ ভাগ বুঝতে পারে না এটা একটি মানসিক রোগ। এবং তারা অধিকাংশই ঠিক সময়ে, সঠিক পদ্ধতিতে চিকিৎসার অভাবে ভয়াবহ পর্যায়ে চলে যায় । এটি "নিউরোসিস" জাতীয় একটি মানসিক রোগ, এবং এর চিকিৎসায় রোগটি সম্পূর্ণভাবে নিরাময় সম্ভব।

মনরোগ বিশেষজ্ঞরা ওষুধ ব্যাবহার করে থাকে এ রোগের চিকিৎসায়। তবে এখন, ‘কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি’র মাধ্যমেও এই রোগ নিরাময় সম্ভব। রোগীর সাথে যথেষ্ট বন্ধুসুলভ আচরণ করতে হবে আশেপাশের মানুষের।

অপরেশনেও ভালো হয় ওডিসি। সাম্প্রতিক গবেষণা মতে ১৫ শতাংশ রোগী অপরেশনের মাধ্যমে ভালো হয়েছে। (সূত্রঃ আলোকিত বাংলাদেশ)। "সাইকো সার্জারি"র মাধ্যমে রোগটি সম্পূর্ণ ঠিক হয়ে যায়।
এছাড়াও রোগটির জন্য নানাবিধ চিকিৎসা ব্যাবস্থা আছে। তবে লক্ষণ দেখা মাত্রই রোগীকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যেতে হবে। খুব তাচ্ছিল্যের সাথে ব্যাপারটাকে না দেখার অনুরোধ থাকবে।

আবার বলছি, এই রোগে আক্রান্ত মানুষগুলো পাগল নয়। তাই রোগটি লুকানর কিছু নেই। বরঞ্চ লুকোলে নিজেরই ক্ষতি! সঠিক চিকিৎসায় সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব।

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:১২
১৪টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×