
আল্লাহর পথে লড়াই করার যোগ্য ব্যক্তি হচ্ছেন তাঁরা যারা দুনিয়ার জীবনকে আখেরাতের বিনিময়ে বিক্রি কর দেন। আর যারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করেন তাঁরা বিজয়ী হোন অথবা নিহত; উভয় অবস্থায়ই আমরা তাদের প্রচুর পরিমাণ পুরস্কার দান করবো। -আল কুরআন
এক নজরে ইসলামী শিক্ষা-আন্দোলনের উজ্জ্বল নক্ষত্র শহীদ আবদুল মালেক
নাম: আবদুল মালেক
পিতা: মৃত মৌলভী মুন্সী মোহাম্মদ আলী।
মাতা: মৃত মোছাম্মত ছাবিরুন নেছা।
জন্মস্থান: গ্রাম-খোকসাবাড়ি (স্থানীয় নাম বগা), থানা- ধূনট, জেলা-বগুড়া।
জন্ম তারিখ: মে ১৯৪৭ ইং।
পারিবারিক পরিচিতি: ৫ ভাই ১ বোন। ভাইদের মধ্যে তিনি সর্বকনিষ্ঠ, বোনটি ছোট। ভাইয়েরা হলেন- মৃত ক্বারী মো: আবদুল রশিদ, মুন্সী মো: আবদুল কাদের, ডা. মো: আবদুল খালেক, মাস্টার আবদুল বারী মুন্সী, বোন আয়েশা খাতুন।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ: প্রথম শ্রেণী থেকে দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত্ম গ্রামের পাঠশালা (খোকসাবাড়ি স্কুল)। ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত্ম গোসাইবাড়ি হাইস্কুলে, যা বাড়ি থেকে ৪ মাইল দূরে অবস্থিত। পরবর্তীতে বগুড়া জেলা গভ: হাইস্কুল থেকে এস.এস.সি রাজশাহী কলেজ থেকে এইচ.এস.সি শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
বিভিন্ন পরীক্ষায় কৃতিত্ব: ১৯৬০ সালে জুনিয়র স্কলারশীপ বৃত্তি, ১৯৬৩ সালে এস.এস.সি. পরীক্ষায় অংক ও রসায়নে লেটারসহ রাজশাহী বোর্ডে একদশ স্থান অর্জন করেন। (এ সময় তাঁর পিতা মৌলভী মোহাম্মদ আলী ইন্ত্মেকাল করেন)। ১৯৬৫ সালে রাজশাহী সরকারী কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পরীক্ষায় দুই বিষয়ে লেটারসহ মেধা তালিকায় চতুর্থ স্থান লাভ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণরসায়ন বিভাগে ভর্তি: (Bio-chemistry) উক্ত বিভাগের চেয়ারম্যান ড. কামাল হোসেন মালেককে তাঁর রম্নমে নিয়ে যান। মালেক নির্দিষ্ট তারিখ ও সময়ের একটু পরে ভর্তি হতে আসেন। প্রথমত জিন্নাহ হলে (বর্তমান পরিবর্তিত সূর্যসেন হল) প্রভোস্টের কাছে যান। প্রভোস্ট বলেন তিন মাস পরে সীট হবে। তখন বায়ো-কেমিস্ট্রির চেয়ারম্যান ড. কামালের সাথে দেখা করলে তিনি ফজলুল হক হলে ভর্তির পরামর্শ দেন। পূর্বের ফরম ছিঁড়ে ফেলে দিয়ে নতুন হলে ভর্তি হন। প্রভোস্ট আগ্রহ করে তাকে নিয়ে যান। ফজলুল হক হলের আবাসিক ছাত্র হিসেবে ১১২ নং কক্ষে তিনি অবস্থান করতেন।
বন্ধু-বান্ধবদের মাধ্যমে যুক্তফ্রন্টের সাথে জড়িত হন। প্রথমে মুসলিম লীগ করতেন। জেলা স্কুলে পড়ার সময়ে ছাত্র রাজনীতিতে জড়িত হন, পরে রাজশাহী কলেজে ভালোভাবে জড়িয়ে পড়েন।
ছাত্রসংঘে যোগদান: অনার্স প্রথম বর্ষে থাকা অবস্থায় ইসলামী ছাত্রসংঘে যোগদান করেন।
দায়িত্ব পালন: কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং যোগ্যতার সাথে সংগঠনের গুরত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত হন। ১৯৬৬-৬৭ সালে তিনি ঢাকা শহর শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৬৭ সালে জুলাই মাসে শহর শাখার সভাপতি এবং ১৯৬৮ সালে নিখিল পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের কার্যকরী সদস্য নির্বাচিত হন।
তাঁর শিক্ষক: মায়ের কাছে প্রাথমিক ইসলামী শিক্ষা গ্রহণ, হাজী দারেস আলী-খোকসাবাড়ি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক, মাস্টার আবদুল জলিল, মৌলভী আবু বকর, ড. কামাল হোসন তৎকালীন ঢা. বি'র বায়ো-কেমিস্ট্রির চেয়ারম্যান, শামসুদ্দিন সহ. হেডমাস্টার বগুড়া জেলা স্কুল, দারেস আলী মাস্টার ও নাজির হোসনে গোসাইবাড়ি স্কুলের হেডমাস্টার।
তাঁর বিভিন্ন প্রবন্ধ: সংশয়ের আবর্তে আমাদের জীবন, আধুনকি বিশ্ব, প্রত্যয়ের আলোকে আমাদের জীবন, ধর্ম ও আধুনিক চিন্ত্মাধারা। এছাড়াও তৎকালীন জাতীয় ও আন্ত্মর্জাতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি অসংখ্য প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখছেন।
অবসর মুহূর্তে: বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক নেতা, সাহিত্যিকদের জীবনী পড়তেন। খাবার সময় ছাড়া তাকে পড়ার টেবিলে পাওয়া যেত।
প্রিয় ব্যক্তিত্ব: মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা)।
শখ: টাকা জমিয়ে বই কেনা, পত্রিকা পড়া।
পোশাক: সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবী।
শাহাদাতের পূর্ব ঘটনা: ২ আগস্ট ১৯৬৯ সালে ঢাকার নিপায় (NIPA) শিক্ষানীতির উপর আলোচনার জন্য ছাত্রদের আহ্বান করা হয়। সেদিন শহীদ আবদুল মালেকের ক্ষুরধার যুক্তি ও বলিষ্ঠ বক্তব্য মিলনায়তনের সবাইকে মুগ্ধ করলো। স্রোতারা ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থার পক্ষেই মত প্রকাশ করল। সেদিন তাঁর কণ্ঠস্বরে দৃঢ় বিশ্বাস ফুটে উঠেছিল। তাঁর সে কন্ঠস্বর ছিল বলিষ্ঠ, ছিল দ্বিধাহীন কিন্তু ইসলামবিরোধী চক্র ধর্ম নিরপেক্ষ শিক্ষার পক্ষে প্রস্তাব পাস করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। ১২ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টি.এস.সি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে ইসলামী শিক্ষার পক্ষে আলোচনা করার জন্য শহীদ আবদুল মালেক ও তাঁর সাথীরা দাবী জানায়। কিন্তু ধর্ম নিরপেক্ষ ও সমাজতন্ত্রের প্রবক্তাদের এটা সত্য হলো না। তারা শহীদ আবদুল মালেকসহ ইসালামপন্থী ছাত্রদের উপর হামলা চালায়। ছাত্র নামধারী দুর্বৃত্তরা লাঠি, লোহার রড প্রভৃতি দিয়ে আক্রমণ করে মালেক ভাইকে গুরম্নতর আহত করে। তিনি সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। প্রায় অর্ধমৃত অবস্থায় দুর্বৃত্তরা তাদেরকে সেখানে রেখে চলে গেলে আশে পাশের লোকেরা তাদেরকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়।
শাহাদাতের তারিখ: ১২ আগস্ট রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আহত হন। ১৫ আগস্ট ১৯৬৯ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে শাহাদাত বরণ করেন। (আল্লাহপাক তাঁকে কবুল করুন)।
জানাযার স্থান: প্রথম বার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে দ্বিতীয়বার কমলাপুর রেল স্টেশনে তৃতীয়বার ধূনটে। জানাযায় ইমামতি করেন আওলাদে রাসূল মাওলানা সৈয়দ মাহমুদ মোস্তফা আল মাদানী। জানাযার পূর্বে মাওলানা আবদুর রহীম বক্তব্য রাখেন।
কবরস্থান: খোকসাবাড়ি, বগুড়া।
স্মরণীয় উক্তি: 'কঠিন শপথ নিয়ে আমার সংগ্রামের পথে আমি চলতে চাই আশীর্বাদ করেন, সত্য প্রতিষ্ঠার এ সংগ্রামে যেন আমার জীবনকে আমি উৎসর্গ করে দিতে পারি।'
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:৩০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




