বাংলায় নাস্তিকতা শব্দটি বেশ বিভ্রান্তিকর যদিও অর্থগত দিক থেকে এটিকে ইংরেজি “Atheist” শব্দের প্রতিশব্দ মনে করা হয় কিন্তু ব্যবহারিক দিক থেকে এর প্রয়োগ আরো ব্যপক এবং সবার কাছে নাস্তিকতার ধারনাটি পরিস্কারও নয়
যেমন আমাদের দেশের সাধারণ অনেক মানুষকে(মুসলিম) যদি জিজ্ঞাসা করা হয় – নাস্তিক কারা?
তবে এর উত্তর হবে – আল্লাহ আছেন এ কথা যারা বিশ্বাস করেনা তারা নাস্তিক
আসলে কি তাই? মুসলমান ব্যতিত অন্য কোন ধর্মের লোকই তো আল্লাহ আছেন এ কথা বিশ্বাস করে না
তখন হয়তো এটিকে একটু ঘুরিয়ে বলা হবে – সৃষ্টিকর্তা আছেন এ কথা যারা বিশ্বাস করেনা তারা নাস্তিক
(প্রকৃত পক্ষে এ সংজ্ঞাটিও বাংলায় ব্যবহৃত নাস্তিক শব্দের সম্পূর্ণ ব্যপ্তি ধারণ করে না কারণ ইংরেজী Atheist, Deist, Agnostic বা Non Religious সবাইকে বুঝাতেই বাংলায় নাস্তিক শব্দটি ব্যবহার করা হয় Deist রা বিশ্বাস করে সৃষ্টিকর্তা আছেন তবে তাদের বক্তব্য হল “God is nothing but a power” অর্থাৎ ঈশ্বর হলেন একটি ক্ষমতা কোন সত্ত্বা নয় সে কারণে তার কোন চাওয়া পাওয়া নাই)
সে কারণে উপরের সংজ্ঞাটিও নাস্তিকতার প্রকৃত অর্থ প্রকাশ করেনা।
প্রকৃত পক্ষে বাংলায় নাস্তিক শব্দটি দিয়ে আমারা তাদেরকে বুঝায় যারা প্রচলিত ধারণার সৃষ্টিকর্তা বা ধর্মে বিশ্বাস করে না
এবার আলোচনায় আসি সমাজের সাধারণ মানুষেরা নাস্তিকদের সম্পর্কে কেমন ধারনা পোষণ করে সে প্রসঙ্গে বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষের কাছে বিশেষ করে এ দেশের মুসলিমরা নাস্তিকদের সস্পর্কে অত্যন্ত নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেন যদিও এদের আনেকেই হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টানদের সাথে সু-সম্পর্ক রাখা বা তাদের বন্ধু ভাবা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি প্রয়োজনীয় অংশ মনে করেন
কিন্তু কেন? ইসলামের দৃষ্টিতে একজন নাস্তিক কি একজন হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃস্টান বা শিখের চেয়ে অধিক গুনাহগার বা ইসলাম কি পৃথিবীর মানুষকে আস্তিক আর নাস্তিক এমন কোন শ্রেণীতে বিভক্ত করেছে? এর উত্তর হচ্ছে – না ইসলাম তা করেনি
প্রকৃত পক্ষে ইসলামের দৃষ্টিতে সারা পৃথিবীর মানুষ দুই ভাগে বিভাক্ত-
১) লা ইলাহা ইল্লাললাহু মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ- এ কথায় যারা বিশ্বাস করে
২) উপরোক্ত কথায় যারা বিশ্বাস করেনা
সহজ কথায় মুসলিম এবং অ- মুসলিম
ফলাফল হচ্ছে মুসলিমরা সারাসরি বা তার প্রাপ্য শাস্তি ভোগের পর বেহেস্তে প্রবেশ করবে আর অমুসলিমরা হবে চির জাহান্নামি
(অন্যান্য ধর্মের ক্ষেত্রেও কথাটি প্রায় সমভাবে প্রযোজ্য)
এখানে আস্তিক, নাস্তিক, হিন্দু,বৌদ্ধ, খৃস্টান বা ইহুদীর মধ্যে কোন ভেদাভেদা নাই
কাজেই দেখা যাচ্ছে যে শুধু আস্তিকতা ও নাস্তিকতার উপর ভিত্তি করে মানুষের মাঝে আমরা যে বিভাজন সৃষ্টি করেছি ইসলামের দৃষ্টিতে তা অর্থহীন “”আস্তিকরা ভাল আর নাস্তিকরা খারাপ” ধারণাটি সম্পূর্ণ নিজস্ব মনগড়া নীতিমালার উপর প্রতিষ্ঠিত, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এর কোন ধর্মীয় মূল্য নেই