somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইতর প্রাণী

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



শুক্রবার সকাল ৭টা৤ বাইরে ঝুম বৃষ্টি৤ বর্ষাকালে শীতের আমেজ৤ আসিফ কাঁথাটা গায়ে টেনে নিয়ে একটা আয়েশী ঘুম দেওয়ার চেষ্টা করলো৤ বাদ সাধলো তীক্ষন গলার চিৎকার৤ সামান্য চোখ ফাঁক করে চিৎকারের উৎস বোঝার চেষ্টা করল৤ উৎসের অবস্থান এবং প্রকৃতি বুঝতে বেশিক্ষণ লাগল না আসিফের৤ তারপর আবার কাঁথা গায়ে দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা৤ কিন্তু তীক্ষনতার মাত্রা যেন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে৤ বাধ্য হয়ে ঘুম হারাম করে বারান্দায় এসে দাড়াল৤ নিচে রাস্তার অনকেখানি বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে, সামান্য একটু উঁচু জায়গা এখনও ডুবেনি৤ সেখানে বসে তারস্বরে চিৎকার করছে এক কালো কুচকুচে বিড়ালের বাচ্চা, এক ইতর প্রাণী৤ আশরাফুল মাখলুকাতের আনেক নিচে তার অবস্থান৤ পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে অনেক আশরাফুল মাখলুকাত, কারও সময় নেই সেটির দিকে তাকিয়ে দেখার৤ প্রণীটি এখনও বোঝেনি সৃষ্টি কর্তা তাকে প্রান দিয়েছেন, দিয়েছেন ক্ষুধার জ্বালা কিন্তু পৃথিবীর কোন খাদ্যের উপর তার কোন অধিকার দেননি আর যদি দিয়েও থাকেন আশরাফুল মাখলুকাতেরা তা স্বীকার করেনা৤ মানুষর উচ্ছিষ্ট খেয়ে যদি বা এই নগরীতে এতদিন তারা জীবন যাপন করছিল, এখন নগর পরিচ্ছন্নতার অভিযানে পড়ে তাদের সে খাদ্যটুকুও তেপান্তরে নির্বাসিত৤

তবুও প্রাণীটি প্রাণপন চিৎকার করে যায়, হয়তো তার মায়ের উদ্দেশ্যে বা তার কাছে ঈশ্বর তুল্য ক্ষমতাবান মানুষ নামের প্রাণীকুলের সাহায্যের আশায়৤ কিন্তু সে বুঝছে না এই নগরে, এই পৃথিবীতে সে অবাঞ্চিত৤

আসিফ র্দীঘক্ষণ ধরে দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছে৤ কী করবে ! ঢাকার ফ্লাট বাড়ি, তাও ভাড়ার৤ প্রতিবেশি বা বাড়িওয়ালা কেউই ভদ্রলোকের বাড়িতে ইতর প্রাণীর বাস মেনে নিবেনা৤ অপরদিকে বিবেকের দংশন৤ আসিফ এখনও ঠিক মানুষ হয়ে উঠতে পারেনি৤ ইতর প্রাণীগুলোর কষ্টে তার মন কাঁদে৤ সে মনে করে এই পৃথিবীতে তাদেরও অধিকার আছে৤

ভাবনার মধ্যে ডুবে থাকায় আসিফ খেয়াল করেনি কখন কান্না থেমে গেছে৤ নিচের দিকে তাকাতেই দেখলো প্রাণীটির কান্নার মত আর শক্তি নেয়৤ নেতিয়ে পড়ে গেছে চিৎকার করার জন্য মুখ ফাঁক করছে কিন্তু কোন শব্দ বের হচ্ছে না৤ আসিফ আর থাকতে পারলো না৤ বাড়িওয়ালার চোখ রাঙানী বা প্রতিবেশীর নালিশের ভয় মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে পাঁচতলা থেকে নিচে নেমে আসলো৤ তখনও প্রাণীটি মরেনি৤ বিধাতা তাদের কোন অধিকার না দিলেও দিয়েছেন যন্ত্রণা সইবার অপরিসীম ক্ষমতা৤

আসিফ কুৎসিত ইতর প্রাণীটিকে কুড়িয়ে এনে কাপড় দিয়ে গা মুছালো, তারপর হেয়ার ড্রাইয়ার দিয়ে লোম গুলো শুকিয়ে দিতেই চোখ মেলে তাকাল৤ কয়েক ফোঁটা গরম দুধ পেটে পড়তেই নিজে থেতে উঠে বাটির দুধ খাওয়া শুর করল৤ নিজের শরীরের শক্তি ফিরে পেতেই নিরাপত্তার জন্য খাটের তলায় ঢুঁকে পড়ল৤ তারপর? হয়ে গেল ও বাড়ির একজন সদস্য৤ বৃষ্টিরদিনে কুড়িয়ে নিয়ে আসায় আসিফের ভাগ্নি তার নাম দিল “বৃষ্টি কালু”৤ বৃষ্টিকালু ইতর প্রাণী তার বুদ্ধিও কম, তবু হয়তো তার মধ্যে কৃতজ্ঞতা বোধ টুকু ছিল, তাই আসিফ যখন বাইরে থেকে বাড়ি ফিরতো, দরজা খোলার সাথে সাথে দৌড়ে আসিফের কাছে এসে দু পায়ে ভর দিয়ে দাড়িয়ে হাত দিয়ে আসিফের পা জড়িয়ে ধরতো, তারপর শুরু করতো পায়ে মুখ ঘষা৤ আসিফ যতক্ষন আদর না করতো তক্ষণ চলতো এই কাজ৤ এভাবে মাস ছয়েক পার হল বৃষ্টিকিলু বড় হল৤ এখন আর সে ঘরের মধ্যে বন্দী থাকতে চায় না৤ বাধ্য হয়েই আসিফ তাকে বাইরে বের করা শুরু করলো৤ সেই সাথে শুরু হল আসিফের যন্ত্রনার পালা৤ আজ এর নালিশ, কাল বাড়িওয়ালার চোখ রাঙ্গানী৤ বৃষ্টি কালু কিছু না করলেও নালিশ৤ ও কুৎসিত কালো তাই সবাই ওকে ভয় পায়৤ সবারই এক কথা ওকে ফেলে দিয়ে আসা হোক৤
একদিন আসিফ দেখলো বৃষ্টিকালু লেংড়াতে লেংড়াতে আসছে৤ মেরে এক পা কেউ ভেঙ্গে দিয়েছে৤ এখন আর আসিফ বাইরে থেকে আসলে দু পায়ে দাড়িয়ে হাত দিয়ে ওর পা জড়িয়ে ধরতে পারে না৤ পায়ের কাছে এস শুধু মিউ মিউ করে৤ এভাবে ক‘দিন গেছে আসিফের মনে নাই৤ একদিন সকাল বেলা বাড়ির কোথাও আর বৃষ্টিকালুকে পেল না৤ সারা রাত দরজা বন্ধ ছিল, পাঁচতলা বাড়ি যাবে কোথায়? তাহলে কি পাঁচতলা থেকে পড়ে গেল?
নিচে গিয়ে আসিফ সব দিক খুঁজে আসল৤ যদি আহত হয়ে কোথাও পড়ে থাকে৤ কিন্তু না কোথাও নেই৤ তিনদিন পর অফিসে যাওয়ার সময় দেখলো বৃষ্টিকালু বাসার কাছের ডাস্টবিনে পড়ে আছে৤ মৃত ভেবে গায়ে হাত দিতেই হাত পা ছোড়া শুরু করলো, আসিফ বাসায় নিযে আসলো৤ পরের দিন পশু হাসপাতালে নেওয়ার পর ডাক্তার জানালেন, মাথায় আঘাত পেয়েছে বাঁচার সম্ভবনা কম৤অসহ্য যণ্ত্রণায় সে হাত পা ছুড়ছে৤ দিন পাঁচেক হাসপাতালে এনে আ্যন্টিবায়োটিক আর পেন কিলার ইনজেকশন দিতে হবে৤ যদিও বাঁচার আসা কম তারপরও চেষ্টা করা৤আসিফ হাল ছাড়লো না, প্রতিদিন হাসপাতালে নিয়ে ইনকশন দিয়ে আনলো৤ কিন্তু সুস্থ হওয়া তো দূরের কথা সামান্য যন্ত্রণা কমার লক্ষণও দেখা গেল না৤ এভাবে পাঁচদিন অসহ্য যন্ত্রণায় হাত পা ছুড়লো৤ ষষ্ঠ দিন অসীম যন্ত্রনা সইবার ক্ষমতাও বোধহয় তার ছাড়িযে গেল৤ ঈশ্বরের প্রদত্ত প্রাণটি হয়তো তাকে ফেরত দিযে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করলো বৃষ্টিকালু৤




৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×