somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাম্প্রদায়িকতাঃ একই মদ বিভিন্ন বোতলে

২৬ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ৯:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমরা সবাই কমবেশী ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, লিঙ্গ বা জাতীয়তা দ্বারা প্রভাবিত হই। প্রতিটি মানুষের উপর এর প্রভাব থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। তবে কোন মানুষ যত বেশি এ সবের প্রভাবমুক্ত থাকতে পারবেন তিনি ততই মুক্তমনের এবং যুক্তিবাদী মানুষ হবেন। এর বিপরীতে একজন ব্যক্তি যত বেশী এর দ্বারা প্রভাবিত হবেন তিনি ততই সংকির্ণ এবং অযৌক্তিক মানুষে পরিণত হবেন।

প্রত্যেক ব্যক্তিরিই নিজস্ব ধর্ম, বর্ণ বা জাতীয়তার প্রতি ভালবাসা থাকা বা টান অনুভব করাটা স্বাভাবিক। এই স্বাভাবিকতা ততক্ষণ পর্যন্ত অন্যায় হবে না যতক্ষণ তিনি এসবের প্রভাবে সার্বজনিন ন্যায় অন্যায় বা হিতাহিত জ্ঞান হারাবেন।

দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদের উপমহাদেশে সার্বজনিন ন্যায় অন্যায় বোধ বা হিতাহিত জ্ঞান শুন্য লোকের স্ংখ্যাই বেশি, এরা নিরপেক্ষভাবে কোন কিছু চিন্তা করতে পারেন না বা এদের ন্যায় অন্যায় বোধ অথবা হিতাহিত জ্ঞান এদের নিজস্ব ধর্ম, বর্ণ বা জাতীয়তা দ্বারা প্রভাবিত বা বায়াস্ড। ন্যায়, অন্যায় ভাল ,মন্দ যুক্তি বা অযুক্তি এরা নিজেদের ধর্ম বা জাতীয়তার কোষ্টি পাথরে যাচাই করে প্রকাশ করে থাকেন, সার্বজনীন গ্রহণযোগ্য চিন্তা ভাবনা করতে এরা অক্ষম। সব সময় এরা নিজের ধর্ম, বর্ণ, জাতীয়তা কে শ্রেষ্ঠ এবং অপরের ধর্ম, বর্ণ বা জাতীয়তাকে নিকৃষ্ট মনে করে থাকেন । ধর্ম দ্বারা এরা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত।

এ সব ব্যক্তিরা যদি নিরপেক্ষভাবে অনুসন্ধাণ বা বিচার বিশ্লেষণ করে এ ধরণের সিদ্ধান্তে উপনিত হতেন তবে কোন সমস্যা ছিল না। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এরা তা করেন না। তারা যে ধর্ম, বর্ণ বা জাতীয়তা নিয়ে জন্ম গ্রহণ করেন সে ধর্ম, বর্ণ বা জাতীয়তাকে তারা জন্ম থেকে উৎকৃষ্ট এবং অন্য ধর্ম, বর্ণ বা জাতীয়তাকে নিকৃষ্ট ভাবতে শেখেন বা পরিবার এবং সমাজ তাদের সেটা ভাবতে শেখায়। পরবর্তিতে যখন তারা বড় হন, যুক্তি বুঝতে বা বিচার বিশ্লেষল করতে শেখেন তখন তারা এ প্রভাব বলয়ের ভিতরে থেকেই নিজের ধর্ম, বর্ণ বা জাতীয়তার ভাল দিক গুলো খুঁজতে থাকেন এবং নিজেদের মন্দ দিক গুলোকে কোন ধরণের কু যুক্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করে নিজেদের জয়গান গাইতে থাকেন। খুব কম ব্যক্তিই এ প্রভাব বলয় থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারেন। এ বলয় থেকে বের হয়ে আসার জন্য যে শিক্ষা এবং চেতনা দরকার হয় তা আমাদের এ উপমহদেশে খুব বেশি পরিমানে নিরুৎসাহিত এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে নিষিদ্ধ। তাই এরা ভারতে হিন্দু পরিবারে জন্মালে ভারত আর হিন্দুত্বের গুণ কীর্তন করেন আর বাংলাদেশের মুসলমান পরিবারে জন্ম নিলে বাংলাদেশ আর মুসলমানদের জয়গান গান। ভুলেও নিজের দেশ বা ধর্মের দোষটা আর অন্যের ধর্ম বা দেশের গুনটা দেখার চেষ্টা করেন না। যুগে যুগে দেশে দেশে এদের দ্বারাই মূলত অন্য ধর্ম, বর্ণ বা গোত্রের মানুষরা নির্যাতিত হন।

কিন্তু যারা নিজের ধর্ম বা দেশকে নিরপেক্ষভাবে বিচার বিশ্লেষন করে শ্রেষ্ট মনে করেন বা যারা নিজ ধর্ম, বর্ণ বা জাতীয়তা শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে মনে সন্দেহ পোষণ করেন তাদের দ্বারা ভিন্ন ধর্ম, বর্ণ বা জাতীয়তার মানুষেরা কম নির্যাতিত হন।

সাম্প্রতিক আমাদের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রে সাম্প্রদায়িক দল ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে। এবার সেখানে শুরু হয়েছে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা। এখনকার সাম্প্রদায়িক সহিংসতার মুল চালিকা শক্তি হচ্ছে গরু বা গো-হত্যা। সাম্প্রদায়িক শক্তির মদদ পুষ্ট সে দেশের সরকার সহিংসতা বন্ধের কার্যকর কোন ব্যবস্খা তো গ্রহন করছেই না বরং বিষয়টিকে জিইয়ে রেখে ফায়দা লুটছে। কারণ সাম্প্রদায়িকতাই সে দেশের বর্তমান সরকারের সফলতার চাবিকাঠি। যত সাম্প্রদায়িকতা বৃদ্ধিপাবে ততই সরকারে শক্তি সুসংহত হবে।

গো হত্যা ইস্যুতে যে সব হিন্দুরা সহিংসতা করছে তাদের বেশির ভাগই অশিক্ষিত এবং দরিদ্র। দারিদ্রতা এবং অশিক্ষার বা কু-শিক্ষার কারণে এরা নিজ ধর্ম এবং বর্ণের প্রতি অন্ধভাবে আসক্ত অপরদিকে অন্য ধর্ম বা বর্ণের প্রতি এদের রয়েছে অন্ধ আক্রোশ। এরা বহু স্থানে গো হত্যা বা গো মাংস খাওয়ার জন্য বেশ কিছু মুসলিমকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। এ হত্যাকাণ্ডের মোটিভ কতটা গরুর জন্য ভালবাসা বা শ্রদ্ধা আর কতটা আজন্ম পুষে রাখা সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ তা মনে হয় ক্ষতিয়ে দেখা দরকার। তবে আমার মনে হয় গরুর প্রতি ভালবাসার চেয়ে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ এখানে বেশি কাজ করে। এ ধরণের মানসিকতা সম্পন্ন ব্যক্তি উপমহাদেশের প্রায় সবদেশে রয়েছে। এরা ভারতে মুসলিম হত্যা করে গো হত্যার অজুহাতে, বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন করে ইসলাম অবমাননার কারণে বা পাকিস্তানে শিয়া হত্যা করে গোত্র প্রীতি থেকে। এ হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতা নামের নেশা যা শুধু ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন প্যকেটে আবৃত।



আমাদের পার্শবর্তী রাষ্ট্রে গো হত্যার অজুহাতে যে নৃশংসতা হচ্ছে তার প্রতিবাদ করা উচিত সব দেশের সব বিবেকবান মানুষের। কিন্তু তা কি আমারা দেখতে পাচ্ছি, পাচ্ছি না। বিশেষ করে পার্শবর্তী রাষ্ট্রে এর বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে না। কারণ যারা দরিদ্র ও অশিক্ষিত তাদের সাম্প্রদায়িকতার প্রকাশ উলঙ্গভাবে হচ্ছে আর যারা তাথাকথিত ভদ্র বা কু-শিক্ষিত তাদেরও অনেকের বিবেক সাম্প্রদায়িকতার বিষে বিষাক্ত। তারা নগ্ন হতে লজ্জা করেন, তবে ভদ্রলোকের মুখোশ পরে খেলা উপভোগ করতে তাদের আপত্তি নাই।

বাংলাদেশে এর প্রতিবাদ হচ্ছে তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রতিবাদ হচ্ছে মিথ্যা এবং সাম্প্রদায়িকতার বিষ বাষ্প ছড়িয়ে, যা ওখানকার হিন্দু সাম্প্রদায়িকতার আরেকটি রূপ। গো হত্যা বা গো মাংস ভক্ষণ যেহেতৃ ভারতে আইন দ্বারা নিষিদ্ধ নয় সেহেতু ভারত সরকারে দায়িত্ব মুসলমানদের সে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করা। যদি নিষিদ্ধও হয় তারপরও কারও অধিকার নেই আইন হাতে তুলে নেয়ার। সে প্রেক্ষিতে আমরা এর প্রতিবাদ করতেই পারি বা মুসলমানদের গণতান্ত্রিক অধিকার রয়েছে গো মাংস খাওয়ার অতএব এর বিরুদ্ধে কোন আইন না করারও দাবী জানাতে পারি। কিন্তু ”গরু আবার মা হয় কেমনে?”, “ তাগো কোন ধর্মগ্রন্থে গরু খাইতে না করছে।” , ”মুসলমানরা গরু খাইলে ওদের এত জ্বলে ক্যন?” ধরনের কথা প্রতিবাদের ভিত্তিকে শুধু দুর্বল করে না, বরং আরেক ধরণের সাম্প্রদায়িকতার জন্ম দেয়।

আবার অনেকের কাছে মুসলমানরা গো জবাই করলে বা গো মাংস খেলে হিন্দুদের কি অসুবিধা এটা বুঝতে পারেন না। তাদেরকে একটা কথা বলা প্রয়োজন, আমাদের দেশে তো শুকর জবাই করা বা শুকরের মাংস বিক্রি করার উপর নিষেধাজ্ঞা নাই (আমার জানা মতে)। এখন আপনার বাসার সামনে যদি কেউ একটা শুকরের মাংসের দোকান দিয়ে মাংস বেচাকেনা শুরু করে আর সেখান থেকে হিন্দু, খৃস্টান বা উপজাতীরা মাংস কিনে খায় তাহলে তারা আশা করি কিছু মনে করবেন না।
মনে করা তো সামান্য ব্যপার সম্ভবত এরা ঐ মাংস বিক্রেতার আবস্থা তাই করবেন ভারতের উগ্রবাদী হিন্দুরা গো মাংস বহন বা গো হত্যার দায়ে কিছু অসহায় মুসলমানের যা করেছেন।

আসলে আমরা নিজের গুণ আর অন্যের দোষ দেখতে অভ্যস্ত এর বিপরীতটা খুব কম ক্ষেত্রে করি। ধর্ম, বর্ণ বা স্থান ভেদে যতই ভিন্ন চেহারা হউক না কেন সব সাম্প্রদায়িক ব্যক্তির পরিচয় একই, এরা সঙ্কীর্ণ মনের, অশিক্ষিত বা কুশিক্ষিত , ব্লক হেডেড ব্যক্তি।


সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১০:১০
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×