somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ

০২ রা নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ
এমাজউদ্দীন আহমদ

গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অনেক প্রাজ্ঞ ঐতিহাসিক, দার্শনিক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রকাশ করেছেন তীব্র হতাশা। শুধু আফ্রিকা, এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকায় কেন, ব্রিটেন-আমেরিকার সমাজ ক্ষেত্র ছাড়া ইউরোপের অন্যান্য সমাজ সম্পর্কেও তাদের হতাশা অত্যন্ত গভীর। যে দু-চারজন আশাবাদী ছিলেন, তাদের কথাও খ্যাতনামা দার্শনিকদের বক্তব্যের চাপে প্রাণহীন, অস্ফুট হয়ে পড়ে। ১৯৫৯ সালে ব্রিটিশ ঐতিহাসিক ডেভিড টমসন এশিয়ায় গণতন্ত্রের দৈন্যদশায় ব্যথিত হয়ে বলেছিলেন : ‘যে সামাজিক ও শিক্ষার দৃঢ় ভিত্তি এবং রাজনৈতিক আচরণ ও ঐতিহ্যের যে সূত্র পাশ্চাত্যে প্রতিনিধিত্বমূলক সংসদীয় প্রতিষ্ঠানকে সচল রাখে, এশিয়ার দেশগুলো এখনো তা আয়ত্তে আনতে সক্ষম হয়নি।’ ("Asiatic countries still mainly lack the social and educational foundations as well as the political habits and traditions of sound representative parliamentary institutions.")। পশ্চিম ইউরোপ দীর্ঘ দিন ধরে ধীর পদক্ষেপে সমাজ জীবনের উপযোগী যেসব প্রতিনিধিত্বমূলক সংসদীয় প্রথা-পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে, এশিয়ার অখ্যাত অজ্ঞাত অদ্ভুত পরিবেশে তা প্রাণহীন হতে বাধ্য।
ল্যাটিন আমেরিকায় গণতন্ত্রের সম্ভাবনা সম্পর্কে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রবার্ট ডাল (Robert Dahl) ১৯৮৪ সালে বলেন, দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকায় যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র বিস্তারের যে নীতি অনুসরণ করছে তা ভ্রান্ত। এ অঞ্চলের অগণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে অর্থ সাহায্য, উপদেশ বিতরণ বা হস্তক্ষেপের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপে সুসজ্জিত করা সম্ভব নয়। তার নিজের কথায়, বহু দিন পর্যন্ত এসব দেশ স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গঠনে সক্ষম হবে না (These countries are not likely to achieve stable democratic institutions for a long time to come)। আমেরিকার Public Interest পত্রিকার সম্পাদক আর্ভিং ক্রিস্টল (Irving Kristol) রবার্ট ডালের কথার প্রতিধ্বনি করে বলেছেন, অদূর ভবিষ্যতে গণতন্ত্র বিশ্বজয়ে সক্ষম হবে না। বিশ্ব এ জন্য তৈরি হয়নি। গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত অত্যন্ত জটিল। কিছু প্রাণবন্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং উদার সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রবণতা এ জন্য অপরিহার্য (The Preconditions for democracy are complex... certain strong cultural traditions, certain strong cultural attitudes.)। তাই, যত দিন পর্যন্ত ওই সব সমাজে এসব উপাদান জীবন্ত হয়ে না উঠবে, তত দিন গণতন্ত্র স্থিতিশীল হবে না। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলেও তা টিকে থাকবে না।
এশিয়া, আফ্রিকা এবং তৃতীয় বিশ্বের অন্যান্য স্থানে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির কঠোর সমালোচক, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রবার্ট প্যাকেনহ্যামের (Robert Packenham) অভিমত প্রায় একই রূপ। তার মতে, ‘তৃতীয় বিশ্বের অধিকাংশ দেশে অদূর ভবিষ্যতে উদারনৈতিক গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ মোটেই উজ্জ্বল নয় ("The chances for liberal democracy in most Third World countries in the foreseeable future are not very great")। তিনি বলেন, আমেরিকার জন্য তৃতীয় বিশ্বে সাংবিধানিক সরকার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ এক দিকে যেমন অপ্রয়োগযোগ্য ও অবাস্তব, অন্য দিক থেকে কুলভিত্তিক বলেও তেমনি অনাকাক্সিক্ষত। ওই সব দেশে নির্বাচন ছাড়াও রয়েছে ক্ষমতায় যাওয়ার বিকল্প পথ। এমন কি গণতন্ত্রের সংজ্ঞাও তাদের কাছে ভিন্ন।
শুধু তৃতীয় বিশ্বে কেন, অ্যাংলো-আমেরিকান সমাজ-ক্ষেত্র ছাড়া, ইউরোপের পূর্ব ও দক্ষিণ অংশেও গণতন্ত্রের সম্ভাবনা সম্পর্কে কোনো কোনো লেখক গভীর সন্দেহ পোষণ করেছেন। ১৯৪৩ সালে Foreign Affairs পত্রিকায় ওয়াল্ডো ফ্রাঙ্ক (Waldo Frank) জার্মানিতে হিটলারের উত্থান সম্পর্কে মন্তব্য করে লিখেছিলেন : ‘পশ্চিম ইউরোপে গণতন্ত্রের ধর্ম (Religion of Democracy) শৈশব থেকে পালিত হয়েছে অতি যত্নে। আজ তা আত্মরক্ষার সংগ্রামে লিপ্ত। সমগ্র মহাদেশের অস্তিত্ব আজ অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে। হিটলারের পতন হলেও এ অনিশ্চয়তা দূর হবে বলে মনে হয় না। কারণ আধুনিক ইউরোপীয় চিন্তাভাবনা এবং শিল্পসমৃদ্ধ পাশ্চাত্যের মানসে গভীরভাবে প্রোথিত, যে অগণতান্ত্রিক শক্তির প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে ফ্যাসিবাদ এরই ফলশ্রুতি বলে মনে হয়। ("The threat will outlast Hitler, since fascism itself is a mere end product of deep-grained anti-democratic forces within the very texture of modem European thought, and of the whole industrial West")।
শুধু কি তাই? ফ্যাসিবাদের প্রভাব সম্পর্কে মন্তব্য করে ফ্রাঙ্কের এক দশক আগে ব্রিটেনের খ্যাতনামা ঐতিহাসিক আর্নল্ড টয়েনবি (Arnold Toynbee) বলেন : ইতালিতে ফ্যাসিবাদের প্রভাব দেখে কোনো সংসদ সদস্য আর চোখ বন্ধ করে থাকতে পারেন না। ইতালির গণতন্ত্র বর্জনে এ প্রশ্ন আজ চার দিকে উচ্চারিত। রাজনৈতিক এ চারা তার নিজস্ব ভূমি ছাড়া অন্যত্র স্থায়ী শিকড় গজাতে পারবে কি? ("Whether this political plant can really strike permanent root any where except in its native soil")। শুধু গণতন্ত্র কেন, জাতীয় রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা সম্পর্কেও কোনো কোনো লেখক ব্যক্ত করেছেন সীমাহীন হতাশা। জোসেফ স্ট্রেয়ার (Josheph R. Strayer) ১৯৬৩ সালে লিখেছেন, গত পঞ্চাশ বছরে যেসব রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছে, তাদের অধিকাংশই জাতিরাষ্ট্রের পর্যায়ে উন্নীত হবে না। তাদের অনেকেরই গতি রুদ্ধ হবে অভ্যুত্থান, দখল, বিদ্রোহ ও যুদ্ধের সীমাহীন আবর্তে (Endless round of coups, conquests, revolutions and wars,")।
ঐতিহাসিক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, পর্যালোচক এবং পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞদের ভবিষ্যদ্বাণী সত্ত্বেও কিন্তু গণতন্ত্রের জয়যাত্রা অব্যাহত রয়েছে। জোশুয়া মুরাভসিক (Joshua Muravchik) সম্প্রতি এক নিবন্ধে যেসব তথ্য পরিবেশন করেছেন, তা সত্যই উৎসাহব্যঞ্জক ও বিপ্লবাত্মক। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এক গবেষণা সংস্থা, ফ্রিডম হাউজ তার ১৯৯০ সালের রিপোর্টে প্রকাশ করেছে, বিশ্বের ১৬৭টি সার্বভৌম রাষ্ট্রের মধ্যে ৬১টি গণতান্ত্রিক, স্বৈরাচারের শৃঙ্খলমুক্ত, অবাধ। এসব রাষ্ট্রে বসবাস করে বিশ্বের শতকরা প্রায় ৩৯ ভাগ জনসমষ্টি। অতীতে এমনটি আর কখনো দেখা যায়নি। তখনো অবশ্য বাংলাদেশ মুক্ত হয়নি। মুক্ত হয়নি নামিবিয়া ও পূর্ব ইউরোপীয় সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো। অন্য কথায় ২০১৪ সালে বিশ্বে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সংখ্যা বেড়েছে। বেড়েছে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বসবাসকারী জনসমষ্টি।
ফ্রিডম হাউজের তালিকাভুক্ত ৬১টি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের দিকে তাকালেও দেখা যাবে, মাত্র ২২টি রাষ্ট্র রয়েছে টয়েনবি বর্ণিত গণতন্ত্রের আদি, অকৃত্রিম, গণতন্ত্রের সূতিকাগার বলে খ্যাত ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে। অন্য দিকে ৩৯টির অবস্থান তৃতীয় বিশ্বে (৯টি ল্যাটিন আমেরিকায়, ১২টি ক্যারিবীয় অঞ্চলে, ১৪টি এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায়, ৩টি আফ্রিকায় এবং একটি মধ্যপ্রাচ্যে)। জনসংখ্যার দিক থেকে ৩৯টি রাষ্ট্রে বসবাস করছেন সামগ্রিকভাবে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বসবাসকারীদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ। এক সময় বলা হতো, গণতন্ত্রের স্রোত শুধু প্রবাহিত হবে অ্যাংলো-আমেরিকান বিশ্বে, ইংরেজিভাষীদের মধ্যে, শুধু অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ জনপদে। ফ্রিডম হাউজের রিপোর্টে কিন্তু দেখা যায়, গণতন্ত্রের অভিযাত্রা ইউরোপ-আমেরিকা অতিক্রম করে ছুটে চলেছে এশিয়ায়, আফ্রিকায়, অতি দ্রুতগতিতে। এর মধ্যে রয়েছে ভারত ও জাপানের মতো বড় রাষ্ট্র, রয়েছে নাউরু, তুভালুর মতো ছোট রাষ্ট্রও। আমেরিকা, জাপানের মতো সমৃদ্ধ রাষ্ট্র যেমন হতে পেরেছে গণতান্ত্রিক, তেমনি ১০০০ ডলারের কম বার্ষিক উৎপাদনের দেশ ভারতও গণতান্ত্রিক হয়েছে। ইংরেজির প্রভাবমুক্ত বলিভিয়া, বোটসওয়ানা, ডোমিনিক্যান প্রজাতন্ত্রের মতো দরিদ্র রাষ্ট্রও। ইউরোপকে গণতন্ত্রের স্বাভাবিক ক্ষেত্র হিসেবে যারা চিন্তা করতেন তারাও ভ্রান্ত প্রমাণিত হয়েছেন। ইউরোপের তুরস্ক ও রাশিয়া এখনো হতে পারেনি গণতান্ত্রিক, অন্য দিকে অন্ধকারাচ্ছন্ন’ মহাদেশেও শুরু হয়েছে গণতন্ত্রের জয়যাত্রা। নামিবিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, মোজাম্বিক, নাইজেরিয়া, হাইতি গণতন্ত্রের দ্বারপ্রান্তে। অবশ্যই এ দিক থেকে বলা যায়, পূর্ব ইউরোপের চেকোশ্লোভাকিয়া, বুলগেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, রাশিয়া, যুগশ্লোভিয়াও এসে গেছে গণতন্ত্রের কাছাকাছি। চীন, ভুটান, মালদ্বীপে গণদাবি আজ অপ্রতিরোধ্য।
গণতন্ত্রের প্রবৃদ্ধির গতিও অত্যন্ত নাটকীয়। পঞ্চাশ বছর সময়কালকে একটা পর্যায় ধরলে গত দুই বা সোয়া দুই শ’ বছরে গণতন্ত্রের প্রবৃদ্ধি ঘটেছে বৈপ্লবিক। ১৮ শতকের বিশ্বে ছিল একটি মাত্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। ১৭৭৬ সালে জন্ম হয় গণতান্ত্রিক আমেরিকার। তখন অনেকেই ব্রিটিশ ব্যবস্থাকে গণতন্ত্র বলতে চাননি। ব্রিটেনকে গণতান্ত্রিক ধরলেও মোট গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সংখ্যা তখন ছিল মাত্র দুই। ১৮৫০-এর পর্যায়ে এ মিছিলে যুক্ত হয়েছে বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড। ১৯০০-এর পর্যায়ে ইতালি, নেদারল্যান্ড, স্ক্যান্ডিনেভিয়ার দেশগুলো গণতন্ত্রকে সাদরে বরণ করেছে। ফ্রান্স হয়েছে গণতান্ত্রিক। ১৯৫০-এর পর্যায়ে একটি মাত্র দেশ ছাড়া সমগ্র ইউরোপ গণতন্ত্রের উৎসবে শামিল হয়েছে। ইউরোপ উপচে গণতন্ত্র বেরিয়ে এসেছে এশিয়ায়, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে, ল্যাটিন আমেরিকায়। ২০০০-এর পর্যায়ে বিশ্বের বৃহত্তম অংশ এর আওতায় এসেছে, তা সুনিশ্চিত। গত দুই শ বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করে জোশুয়া মুরাভসিক বলেছেন, ১৯৯০ সালে বিশ্বের প্রায় দুই শ কোটি জনসমষ্টি গণতন্ত্রকে রাজনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করেছিল। এ দুই শ বছরে বিশ্বের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ছয় গুণ, কিন্তু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বসবাসকারীদের সংখ্যা বেড়েছে দুই হাজার গুণ।
এ সময়ে গণতান্ত্রিক বিশ্বের পরিসরই শুধু বৃদ্ধি পায়নি, গণতন্ত্রের গভীরতাও বেড়েছে আশাতীতভাবে। ১৭৭৬ সালে আমেরিকায় যখন গণতন্ত্রের শুভ সূচনা হয়, তখন তা সীমিত ছিল শুধু মুক্ত ও সাদা মানুষদের মধ্যে, কোনো কোনো অঙ্গরাষ্ট্রে সম্পদশালীদের মধ্যে ক্রীতদাসদের কোনো অধিকার স্বীকৃত হয়নি। নারীরাও এর আওতার বাইরে ছিলেন। এ শতকের ষষ্ঠ দশকে ‘সিভিল রাইট’ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের অবয়বে যে পরিবর্তন আসে, তা গণতন্ত্রের প্রাণপ্রাচুর্যের পরিচায়ক। শুধু যুক্তরাষ্ট্রে কেন, ব্রিটেন ও অন্যান্য ক্ষেত্রেও গণতন্ত্রের গভীরতা সমাজ জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে।
এটাও অবশ্য স্বীকৃত, গণতন্ত্রের গতি ঋজু নয়; নয় সহজ, সরল। অনেক উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে তাকে পথ করতে হয়েছে। কোথাও তা কর্তৃত্ববাদিতার আড়ালে ঢাকা পড়েছে। স্বৈরাচারের মেঘ কেটে গেলে আবার তা আপন গৌরবে হয়েছে প্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশেও গণতন্ত্রের গতি ঋজু ছিল না। নেই তার ধারবাহিকতা। তবে এর প্রাণশক্তি যে দুর্বার, তার প্রমাণ রয়েছে।
এ প্রেক্ষাপটে বলা যায়, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের কাঠামো তৈরি হয়েছে বটে, কিন্তু সেই কাঠামোতে প্রাণের স্পন্দন এখনো শুরু হয়নি। ইঙ্গ-মার্কিন সামাজিক ক্ষেত্রে যে সৃজনশীল প্রত্যয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে রাষ্ট্র-ক্ষমতাকে শুধু ন্যস্ত ক্ষমতা অথবা জনগণের আমানত হিসেবে ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করেছে, বাংলাদেশে তা অনুপস্থিত। কিন্তু জনগণের সংগ্রামী চেতনা রাজনৈতিক নেতাদের তা গ্রহণে বাধ্য করবে বলে মনে হয় তাদের আন্দোলনের স্পৃহা এবং ত্যাগ স্বীকারের মন-মানসিকতা অনুধাবনে। পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা গণতন্ত্রের সাফল্যের জন্য বরাবর উপদেশ দিয়েছেন জনগণকে তাদের দাবি ও অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে। বাংলাদেশের বাস্তবতায় আমাদের উপদেশ হলো, গণতন্ত্রকে অর্ধপূর্ণ করতে হলে অপরিহার্য যেমন জনগণের সচেতনতা, তেমনি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের শক্তিশালী অঙ্গীকার (Commitment) এবং শাসন-প্রশাসনে সামন্তবাদী মনের পরিবর্তে গণতান্ত্রিক চিন্তা-চেতনা। সামন্তবাদী মন এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা এক সাথে চলে না। বাংলাদেশেও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল; স্বৈরাচারের আঘাতে মুচড়ে গেছে, কিন্তু নিঃশেষ হয়নি। দেহ তার ক্ষতবিক্ষত হয়েছে, কিন্তু অন্তরাত্মা রয়েছে অক্ষত। কেউ কেউ বলেন, ক্ষেত্র প্রস্তুত না হলে গণতন্ত্রের সোনালি ফসলে সমাজ সমৃদ্ধ হবে না। সত্যি বটে, গণতান্ত্রিক বিকাশের জন্য চাই এক উর্বর ক্ষেত্র, গণতান্ত্রিক কৃষ্টির ব্যাপক চর্চায় সিক্ত ক্ষেত্র। কিন্তু এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য, সাজগোজ সম্পূর্ণ করে গণতন্ত্রের অপেক্ষায় থাকার প্রয়োজন নেই। যা প্রয়োজন, তা হলো গণতন্ত্রকে সঙ্গী করেই পথ চলা আর চলতে চলতে গণতন্ত্রের জন্য সুসজ্জিত হওয়া। যেসব জনপদ গণতন্ত্রকে অর্থপূর্ণ করতে সক্ষম হয়েছে, তারা এভাবেই অগ্রসর হয়েছে।
পাদটীকা :
১. Joshua Muravchik, ‘Advancing the Democratic Cause’. Didiogue. 94(4/91), pp 19-24; ২. Ibid. p.20; 3. Ibid, p. 21; 4. Joseph Suayer. ‘The Historical Experience of Nation Building in Europe’ in Karl Deutsch and William J. Foltz. eds, Nation Building (New York Atherton, 1963) p. 26.; ৫. যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক Freedom House সংস্থা রাজনৈতিক স্বাতন্ত্র্য এবং সামাজিক স্বাধীনতার বৃহত্তর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতি বছর তার বার্ষিক প্রতিবেদনে বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোর অবস্থান নির্ণয় করে। এ সংস্থার মতে, কোনোটি মুক্ত, কোনোটি আংশিকভাবে মুক্ত এবং কোনোটি মোটেই মুক্ত নয়। ১৯৯০-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৬৭টি রাষ্ট্রের মধ্যে ৬১টি সার্বভৌম রাষ্ট্র পূর্ণরূপে মুক্ত।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:০২
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×