somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আইবুড়ো কাল এবং দীর্ঘশ্বাস

১২ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ৯:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ তার বয়স ছত্রিশ বছর পূর্ণ হয়ে একদিন। অর্থাৎ আজ তার সাঁইত্রিশতম জন্মদিন। জন্মদিন পালন করা হয় না কখনোই। তবে কখনো কোনো জন্মদিনে কেউ শুভেচ্ছা জানালে বেশ ভাল লাগে। নিজের জন্মদিন অন্যের মনে আছে জানলে কার না ভাল লাগে। পৃথিবীতে নিজের কিছুটা হলেও গুরুত্ব আছে, এটা উপলব্ধিতে এলে মনটা অনেক ভাল হয়ে যায়।

শিফা আজ মোবাইলে অনেকগুলো শুভেচ্ছাবার্তা পেয়েছে। কিন্তু তার মোটেই ভাল লাগছে না। থেকে-থেকে মনেহচ্ছে প্রত্যেকে তার বয়সটা মনে করিয়ে দিচ্ছে। পঁচিশ বছর বয়স পর্যন্ত সে কোনোদিন বয়স নিয়ে টেনশন করেনি। বয়স যে বাড়ছে এটা কোনোদিন ভাবনাতেই আসেনি। ছাব্বিশতম জন্মদিনে এক বান্ধবি যখন ফোন করে জানতে চেয়েছিল বিয়ে হয়েছে কিনা এবং নিজের বাচ্চাদের বিভিন্ন বর্ণনা ও স্বামীর সাথে নানান খুনসুটির টুকটাক উদাহরণ দিচ্ছিল তখন মনেহয়েছিল, হমম বয়সটা এখন বিয়েরই বটে। একটা বর থাকলে মন্দ হয় না। কয়েক বছর পরে একটা ছেলে কিংবা মেয়ে। বাহ!

তারপর গত এগার বছর ধরে প্রত্যাশার ওজন সে বয়ে চলেছে। সাতাশ-আটাশ পর্যন্ত ততটা খারাপ লাগত না। কিন্তু ত্রিশের পর সেটা ক্রমশ বোঝা হয়ে উঠতে লাগল। এখন এই চল্লিশের কাছাকাছি এসে প্রত্যাশার বোঝাটা যন্ত্রণা হয়ে উঠেছে। প্রায়ই রাতে ঘুম হয় না। হাসফাস করে রাত কেটে যায়। শরীর এবং মন একটা শক্তপোক্ত পুরুষকে কামনা করে।

ইদানিং ঘনঘন উল্টা-পাল্টা কিছু করার ইচ্ছা হয় শিফার। অনেক তো ধৈর্য দেখিয়েছে। বঞ্চিত হয়েছে। বছরের পর বছর পার করেছে। বিনিময়ে প্রাপ্তির ঘরে যোগ হয়েছে বয়সের ভীষণ ভার! ঘরের সবাই তাকেই দোষারোপ করে। এমন কি প্রেম করার যোগ্যতা নেই বলেও গাল-মন্দ শুনতে হয়। যে মুহূর্তে সবার কাছ থেকে মানসিক সমর্থনটা বেশি দরকার সে মুহূর্তেই সে টের পায় সকলের এক বড় যন্ত্রণার নাম, শিফা।

শিফা কিন্তু দেখতে মোটেই খারাপ নয়। শ্যামলা মুখাবয়বে সবুজ প্রকৃতির স্নিগ্ধতা আছে। চোখের দৃষ্টিতে রয়েছে টুনটুনির প্লবগ চঞ্চলতা। শরীর ইদানিং সামান্য স্থূল হলেও বেঢপ নয় মোটেই। সব মিলিয়ে সে আকর্ষণীয়া নিঃসন্দেহে। পুরুষদের চোখে চোখ পড়লে সে আরও নিশ্চিত হয়ে যায়। তারপরও এই মধ্যবয়স পর্যন্ত, যদিও তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই, সে কুমারি রয়ে গেল।

হায় কবে যে কুমারিত্বের যন্ত্রণা ঘুচবে। অবশ্য ইচ্ছা করলে যে কোনো দিনই সেটা ঘুচানো যায়। মেয়েদের পক্ষে এটা সবচেয়ে সহজ কাজ। কেননা তাদেরকে এ ব্যাপারে সাহায্য করার জন্য দাতা হাতেম তাইয়ের অভাব নেই বরং একটু বাড়াবাড়ি রকমেরই বেশি আছে। কিন্তু শিফার সংস্কৃতি বরাবর তাকে নিরুৎসাহিত করে এসেছে। একটা বৈধ পবিত্র সম্পর্কের তৃষ্ণা তাকে হাতেম তাইদের সাহায্য নিতে বাধা দিয়েছে। কিন্তু সে তো কোনো রাবেয়া বসরীও নয়। খুবই সাধারণ একটি মেয়ে। ধৈর্যের দেওয়ালে ফাটলতো দেখা দিতেই পারে; এবং তাই হয়ত দিয়েছে। যে কোনো দিনই হুড়মুড় করে ভেঙে পড়তে পারে কোনো অনুকূল উপলক্ষের ছোঁয়ায়। এই সম্ভাবনা ইদানিং সে নিজেই খুব টের পাচ্ছে।

বাসায় মাস কয়েক আগে বার/তের বছরের একটি ছেলে, তাদের দূর-সম্পর্কীয় আত্মীয়, বেড়াতে এসেছিল। ছেলেটা তার কাছাকাছি এলেই শরীরের ভিতরে তার কেমন একটা অনুভূতি হত। ছেলেটাকে ধরে আদর করে দিতে ইচ্ছা করত। সকলের সামনে বসেই সে একদিন ছেলেটার গাল টিপে দিয়ে আদর করেছিল। যদিও ছোটদেরকে এভাবে আদর করাটা মোটেই অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু চোরের মন সব সময়েই অপরাধী। সে সংশয়ে এদিক-ওদিক তাকিয়েছিল, ব্যাপারটা দৃষ্টিকটু হয়ে যায়নি তো। কেউ কিছু মনে করেনি তো।
ছেলেটা একদিন তার ঘুমঘরে পাশে এসে বসলে, শরীরের সেই অনুভূতিটা প্রবল হয়ে উঠেছিল। গাল টিপে দিয়ে বলেছিল, তোমাকে আমার কিভাবে যে আদর করতে ইচ্ছা হয়!
- কিভাবে?
দেখবে?
ছেলেটা ঘাড় নেড়ে দেখাতে বললে সে ছেলেটাকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে, বরং বলা চলে জাপটে ধরে ভারী স্তনের চাপে পিষ্ট করে ওর দুঠোঁটে ঠকাস করে গাঢ় একটা চুমু ঠেসে দিয়েছিল। আর হ্যাঁ ওটাই ছিল পুংলিঙ্গের কাউকে তার কামনার্ত প্রথম চুমু। ছেলেটা শুধু দুষ্টু নয় দুষ্টও বটে। তারপর থেকে সে সুযোগ পেলেই শিফার গায়ের কাছে ঘেঁষতে চাইত। এবং শিফার কাছে সেটা ভালই লাগত। ছেলেটা কয়েকদিনের মধ্যে চলে না গেলে কী যে হত বলা যায় না।

তারপর এই তো সেদিন ফুপাত ভাই শিহাব এসেছিল। দশ/এগার বছরের বালক। আশ্চর্য ওকে দেখেও শরীরে, মনে কুটকুটানি শুরু হয়ে গিয়েছিল। ভয় লেগেছিল তার। সে কি তবে মানসিক রোগী হয়ে যাচ্ছে। ঘুমকামরায় ঢুকে অনেকক্ষণ কেঁদেছিল সে।

কিন্তু কান্না তো কোনো সমাধান নয়। শিফা এখন সমাধান চায়। রক্ত-মাংসের জীবন্ত সমাধান। বৈধ-অবৈধের তর্কে মন এখনও অসহায়। সুতরাং যা কিছু করার হুট করেই করতে হবে। একবার করে ফেললে সংস্কার আর পথ আগলে দাঁড়াবে না। প্রথম পদক্ষেপেই যত দ্বিধা। এই দ্বিধার বাধা হুট করে, স্রেফ হুট করে যে কোনো একদিন সে কাটিয়ে দেবে।

সিদ্ধান্তটা নিতে পেরে তার মন আমোদের আমেজে বেশ কিছুক্ষণ আহ্লাদিত থাকে। নিষিদ্ধের আকর্ষণ চিরন্তন। রক্তের ভিতরে এই আকর্ষণ মাঝে-মাঝে উন্মাদনার ঝড় তোলে। ঝড়ের তোড়ে নৈতিকতার চাল উড়ে যায়। শিফার দৃষ্টিতে ধরা পড়ে একটা পুরো আকাশ। বৃষ্টি আসুক বৃষ্টি। কুকুর-বেড়াল বৃষ্টি! লণ্ডভণ্ড করে দিক সব। সে এখন বৃষ্টিতে ভিজবে।

বাহ, এত চমৎকার একটা সমাপ্তি এত তাড়াতাড়ি পেয়ে যাব প্রত্যাশিত ছিল না মোটেই। লোভ হচ্ছে গল্পটা এখনেই থামিয়ে দেই। এমন অসাধারণ শিল্পিত পরিসমাপ্তি হয় না তো রোজ। কিন্তু শিফার পুরোটা যদি না শুনাতে পারি মনটা খচ-খচ করবে যে। তো -

তো পারিবারিক চেষ্টাতেও কিছুই হল না যখন, তখন সে নিজেই চেষ্টা শুরু করে দিয়েছিল। বিভিন্ন ম্যারেজ মিডিয়াতে সে ছবি পাঠিয়েছে, পত্রিকার পাত্রী চাই বিজ্ঞাপন ধরে ধরে সে যোগাযোগ করেছে; এমন কি কয়েকটা প্রেমের চেষ্টাও করেছে। কিন্তু ঐ যে কেউ কেউ আছে না যাদের কোনো কিছুতেই কিছু হয় না। বারবার পিছলে যায়। নব্বইয়ের ঘরে আটকে যায়। আহারে একটুর জন্য! এই আফসোস আর ঘোচে না।

আচ্ছা প্রেম কি চাইলেই পাওয়া যায় কিংবা করা যায়? রুচির একটা ব্যাপার আছে না। মিল-অমিলের শ্বাশ্বত নিয়ম-কানুন আছে না। ভাল লাগার শর্ত আছে না। শুধু কি তাই, ভাল লাগলেই কি ভালবাসা যায়? ভাললাগা এবং ভালবাসা এ দুয়ের মধ্যে আরও একটা স্তর কি নেই? মুগ্ধতা কি ভাললাগার চেয়ে অধিকতর গাঢ় নয়? গভীরতর নয়? সুতরাং মুগ্ধতার স্তরে উঠতে না পারলে ভালবাসা কিকরে হবে? বড় জোর মোহ আসতে পারে, যাকে ভালবাসা বলে অনেকেই ভুল করে। আর এখনতো চারিদিকেই ভুল ভালবাসার ছড়াছড়ি এবং ছাড়াছাড়ি!

প্রেম বুঝতে শেখার বয়স থেকেই তো শিফা মুগ্ধতার প্রত্যাশায় ক্রমাগত হেঁটেই চলেছে। হেঁটেই চলেছে। মঞ্জিলে মঞ্জিলে আরও পথই পেয়েছে। ঠাঁই আর পায় নি।

কিন্তু সে কাকে একথা বলবে। কেই বা তাকে বুঝবে। মেয়েদের কে আসলে কেউই বোঝে না। বুঝতে চায়ও না। শুধু রহস্যময়ী, ছলনাময়ী, মায়াবিনী ইত্যাদি বিশেষণ দিয়ে এড়িয়ে যেতে এবং জটিল করে তুলতেই সবাই অভ্যস্ত। প্রকৃতপক্ষে মেয়েদেরকে বুঝতে চায়, উপলব্ধি করতে চায়, অনুভূতির গহনে নিয়ে তাদেরকে ভাবতে চায় এমন কেউ কি আছে? অধিকাংশ পুরুষই তো শারীরিক। স্থূলভাবেই শারীরিক। শরীরটাই বোঝে। সে তো এমনও শুনেছে এটা নাকি পুরুষদের কমোন ডায়লোগ, “বৌয়ের শরীর খুশি তো সব খুশি”।

ছি! এমন শরীর সর্বোস্ব চিন্তাধারার পুরুষের সাথে দাম্পত্য সে ভাবতেই পারে না।
মনের সাথে মনের লেনদেনের যে সূক্ষ্মতা, যে কোমলতা, যে সৌন্দর্য্য, যে কারুকার্য তা উপভোগের যোগ্যতা ক’জনের থাকে? আদৌ কি কারও আছে? শিফার আজকাল সন্দেহ হয়। সূক্ষ্মতার সমীকরণ মিলল না বলেই তো তার প্রেম হতে হতেও হয়নি একবারও। সবাই হয়ত তার মতো সমীকরণ মিলবার অপেক্ষায় থাকে না। কেউ হয়ত অর্থ-বিত্তকে প্রাধান্য দিয়ে মনের সমীকরণকে এড়িয়ে যায়। কেউ হয়ত জোড়াতালি দিয়ে চালিয়ে নেয়। শুধু সেই পারল না। সে কি কোনো ভুল করেছে?

সম্বন্ধের বিয়েতে তো আর এত সব ভাবনার অবকাশ নেই। সুতরাং সে তা ভাবতেও যায় নি। মুরুব্বিরাই সাধারণত সব দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেন। সেটা যে খারাপ হয় তাও নয় বরং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভাল হয়। কেননা মুরুব্বিরা অনেক ভেবে-চিন্তে, বিচার-বিশ্লেষণ করে, খোঁজ-খবর নিয়ে তারপর বিয়ের ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছান। কিন্তু তার ক্ষেত্রে কোনো কিছুই ক্লিক করছে না। হতে হতেও হচ্ছে না। বারবার সেই নব্বইয়ের গেরো।
শিফা তথাকথিত সুন্দরী নয়, কিন্তু সুন্দর। ভিজে কাপড়ে বড় আয়নার সামনে সে মাঝে মাঝেই দাঁড়ায়। নিজের দিকে তাকিয়ে নিজেই মুগ্ধ হয়ে পড়ে। নিজেকে তার সমুদ্র সমুদ্র মনে হয়। অজস্র ঢেউয়ে গড়া তার নোনা শরীর। ভাবতে ভাবতে তার শরীরের ভেতর জেগে ওঠে আরেক শরীর। যেন আলাদা দুটি শরীর পরস্পর মুখোমুখী। তার দুটি হাত তখন রূপান্তরিত অন্য দুটি হাতে। সেই হাতের ছোঁয়ায় সে কেঁপেকেঁপে ওঠে। কখনো তর্জনী কখনো মধ্যমায় টর্নেডো শুরু হয়। আর টর্নেডোর পরে বিপর্যস্ত ঘরের মতো সেও পড়ে থাকে – বিষণ্ন! অবসন্ন!

এবং না চাইতেও এরকম দিনগুলি ফিরে ফিরে আসে। কিছুতেই রোধ করা যায় না। এই সময়টায় নিজেকে খুব অসহায় লাগে। মাঝেমাঝেই কান্না পায়। কাঁদেও। কিছুতেই বুঝতে পারে না কেন তাকে বছরের পর বছর এভাবে একদম একাকীই কাটিয়ে দিতে হল। দেখতে সে সুশ্রী। পারিবারিক ইতিহাসও ভাল। কোথাও কোনো ঝামেলা নাই। তারপরও সে আটকে রইল।

গতবছর পরিচয় হয়েছিল দুজনের সাথে। মোবাইলে। কিন্তু লুচচা দ্যা গ্রেট। চাইনিজের অন্ধকার কোণ যেন মেয়েদের বুক হাতানোর জন্য। সুতরাং প্রথম দেখার দিনেই তাদের কে পত্র পাঠ বিদায়। আসলে তার ভাগ্যটাই খারাপ। আশেপাশে যাদেরকেই পাচ্ছে সবাই যেন একই রকম; প্রত্যেকের চোখে আশ্বিনের কুকুরের লালা ঝরে। ঐ সব কুকুরের লোমশ থাবা তার শরীরের যত্র-তত্র ঘাটছে সে ভাবতেই পারে না।

সে কি তবে কাউকেই আর পাবে না? বয়সের সাথে তো এখন মিলিয়ে কাউকে পাওয়াই দুষ্কর। এই সব ভাবনার সাথে সাথে স্বয়ংক্রিয় হতাশা তাকে আঁকড়ে ধরতে চায়। হতাশার হাত থেকে বাঁচার জন্যই জোরে পানির কল ছেড়ে দিয়ে সে শুয়ে পড়ে। পানির তীব্র ধারা শিশ্নের মতো আঘাত করতে করতে তাকে ভিজিয়ে দিতে থাকে। পানির এই তীব্র বেগ তার ভাল লাগে। শরীরের ভেতর আরেকটা শরীর জেগে ওঠে। দুটি হাত হয়ে যায় পুরুষের হাত।

ইদানিং কোনো কল সে মিস করতে চায় না। তাই গোসল-কামরাতেও সে মোবাইল নিয়ে ঢোকে। বেসিং-আয়নার সামনের তাকে রেখে দেয়। সম্ভবত অবচেতনে আশা – কোনো একজন, কেউ একজন যদি কোনো দিন ---
সুতরাং মোবাইলটা বেজে উঠলে বেগানা পুরুষটি বিদায় নিল। পাশের ফ্লাটের রিংকুর কল। এবার এস. এস. সি. দিয়েছে। হাতে কোনো কাজ নেই তাই অকাজের কোনো শেষ নেই।

কী খবর রিংকু? কল দিলে যে?
- আরে সেই কখন থেকে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। কতবার নক করলাম। কেউ তো খুলছেই না। সবাই কি নাক ডেকে ঘুমাইতাছেন?

না, সবাই বাসার বাইরে আছেন। আমিই শুধু বাসায় আছি।
- তাইলে আপনি খুললেই তো পারতেন।
আরে আমি তো গোসল করছি। তা কি জন্য হিরোর আগমন?
- আপনার জন্মদিনের উইশ করতে।
কিভাবে জানলে?
- হাহ্ হা, রিংকু সবার হাড়ির খবর রাখে।
তাই?
- হাজার বার তাই।
ওক্কে বস, আপনি একটু দাঁড়ান, হিরোইন এক্ষুনি আসছে।

শিফা আয়নার দিকে তাকাল। অনেক দিন ধরে উলটাপালটা করার যে ইচ্ছাটা মনের মধ্যে তোলপাড় তুলছে তার আঘাতে এত দিন অবিচল থাকলেও এক্ষণে বুকের ভিতর ধড়াস ধড়াস পার ভাঙ্গার আওয়াজ উঠল। ভাঙ্গনের দ্রুত গতি তাকে আরও নিঃসংশয় হতে সাহায্য করল। আয়নায় তাকিয়ে নিজেকে একবার চোখ মারল। অর্থাৎ গো অ্যাহেড।
কোমরে তাওয়ালটা পেঁচিয়ে নিয়ে শিফা গোসলঘর থেকে বের হয়ে আলনা থেকে আরেকটা তাওয়াল টেনে নিয়ে গায়ে জড়াল। তারপর দরজা খুলে দিল। রিংকু ভিতরে ঢুকে শিফার এই মূর্তি দেখে হতবাক হয়ে পড়ল। উইশ করতে সে ভুলে গেল। শিফা তাকে অপাঙ্গে দেখল একবার তারপর ঘুমকামরার দিকে যেতে শুরু করে ডাকল, আসো।

ঘুমকামরায় ঢুকেই শিফা রিংকুর দিকে ঘুরে দাঁড়াল। ঠোঁটের কোনায় কেমন এক অনভ্যস্তের হাসি। কোথায় যেন অস্বস্তির কাঁটা বিঁধছে। না কিছুতেই পিছু হটা চলবে না। কাঁটাটাকে আজকেই তুলে ফেলতে হবে।

বুকের উপর কাঁধের দুপাশ দিয়ে নামিয়ে দেওয়া তাওয়াল মেঘের মতো শুধু পর্বত চূড়াই ঢাকতে পেরেছিল। মাঝখানটা ফাঁকা থাকায় পর্বতগাত্রের সবই দৃশ্যমান। এমন ভংগিতে শিফা দাঁড়িয়েছিল পায়ের উরু অব্দি দেখা যাচ্ছিল। রিংকু চোখ সরিয়ে নিতে চাইল। তার সংকোচ হচ্ছিল। শিফাপু এত সিনিয়র, তার দিকে এভাবে তাকানো হয়ত ঠিক নয়। কিন্তু ভিতরে সে তার প্রচণ্ড ষাঁড়ের শক্তি নিয়ে অনন্য জাগরণ টের পেল। বুঝতে পারল, মোমে আগুন লেগেছে। তার আর কিচ্ছু করার নেই। জ্বলন্ত মোম গলবেই।

শিফা রিংকুর দিকে তাকিয়ে মাথা পিছন দিকে হেলিয়ে দুহাতে চুল ঝাড়তে যেতেই বুকের তোয়ালেটা খসে পড়ে। আসলে খসে পড়ে তার শেষ সংকোচটুকুই। কৃত্রিম লজ্জার ভান করে ঝট করে তোয়ালেটা তুলতে যেতেই কোমড়ের কাছে গিটে টান লেগে – ওটা যেন সংস্কারের গিট – নিম্নাংগের তোয়ালেটাও পায়ের কাছে ঝরে পড়ে। সাথে সাথে শিফা অনুভব করে কোথাও কোনো সংকোচ-সংস্কারের আড়াল আর নাই। বেপর্দা ময়দান বেগানা বাণের জলে এবার ভেসে যাবে। ভেসেই যাবে।

আহ, আবারও সেই চমৎকার পরিসমাপ্তির হাতছানি। এই আহ্বান, এই আবেদন কিভাবে উপেক্ষা করি। এবং আমি কখনো উপেক্ষার হাতে সঁপি নি আন্তরিকতা। তাছাড়া শিফার ঘুম-কামরায় উঁকি দিয়ে নৈতিকতাকে বানের জলে ভেসে যেতে দেয়া আদৌ কি ঠিক হবে ? কিন্তু জীবন্ত 3 এক্স দেখার এমন সুযোগ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করাও কি বোকামি হয়ে যাবে না? সুযোগ কি জীবনে বার-বার আসে? সুতরাং -

সুতরাং শিফা এবার সরাসরি রিংকুর চোখের দিকে তাকাল। শিফার ঠোঁটের কোণে এখন কোনো অনভ্যস্ততার হাসি আর লটকে নাই। সেখানে তীব্র ইচ্ছার প্রজাপতি ডানা মেলেছে। দুটো ইচ্ছুক ঠোঁট বাড়িয়ে সে রিংকুর দিকে এগোতে শুরু করলে হঠাৎ রিংকুর মগজে একটা দৃশ্য ভেসে উঠল। সে ভয়ানক ভাবে চমকে উঠল। মেরুদণ্ড বেয়ে শীতল একটা অনুভূতি নেমে গেল।
শিফার চোখ দুটি যেন আগুনের ফুলকি। দুটি রাক্ষুসে ঠোঁট যেন তাকে গিলতে আসছে। সে ভয় পেল। দিনে দুপুরে ভুতের ভয়। তার মনে হল সে ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেছে। বাঁচার জন্য মরিয়া হয়ে সে দরজার দিকে ছুটতে শুরু করল।

পিছনে কি হচ্ছে তার কিছুই আর রিংকু দেখতে পায়নি। কিন্তু আমরা দেখতে পেলাম ছুটন্ত রিংকুর পিঠে শিফার হতাশ-হতবাক দৃষ্টির তীর পারলে ঝাঁঝরা করে দেয়।

পরিশিষ্টঃ গতরাতে রিংকু একটি ভুতের ছবি দেখেছিল। সেখানে এক ডাইনি, কামার্ত-সুন্দরী নারীর ছদ্মবেশে পুরুষদেরকে প্রলুব্ধ করে, তার ফাঁদে ফেলে তাদের ঘাড়ে দাঁত বসিয়ে রক্ত পান করছিল।

(এতক্ষণে গল্প আমার প্রকৃতই শেষ হল প্রিয় পাঠক/পাঠিকা। এতটাক্ষণ ধৈর্য ধরে আমার সাথে থাকার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।)

পরিশিষ্ট

ঘুমটা চটকে গেল নাঈমের। লাফ দিয়ে উঠে বসল। হাতড়াতে হাতড়াতে সুইচ টিপে আলো জ্বাললো। তারপর তাড়াতাড়ি আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। নাহ, সে শিফা নয়। নাঈমই আছে। স্বস্তি ফুটে উঠল চেহারায়। শরীর ঘামে ভিজে গেছে। টি-শার্টটা খুলে ছুঁড়ে মারল আলনার দিকে। বাথরুমে যাওয়ার আগে আরেকবার তাকাল আয়নায়। এই গভীর রাতে আলো জ্বালানোর জন্য তাকে এখন মহাবিরক্ত হয়ে কারও বলবার কথাঃ এই কী হইছে তোমার? আলো জ্বালাইছ কেন? দিলা তো ঘুমটা নষ্ট করে। যত্তসব!

কিন্তু ঐ যে আছে না কারও কারও কিছুতেই কিছু হয় না। যখন যা পাওয়ার, পায় না। যা থাকার, থাকে না। বারবার পিছলে যায়। নব্বইয়ের ঘরে আটকে যায়। আহারে একটুর জন্য! এই আফসোস আর ঘোচে না।

শিফার জন্য মায়া লাগল খুব। সে মায়ার শরীর কোমল, পেলব, কাশফুলের মতো নরম। সে মায়া শুধু নিজেকেই করা যায়।

হাহ .……

এক বেখেয়ালি দীর্ঘশ্বাস তারপর বাতাসে মিলায়! সাক্ষী তার রাতের বাতাস!

(কখনো কখনো সমালোচনা অধিকতর ভাল করতে, সুন্দর করতে সাহায্য করে। তবে শর্ত একটাই সমালোচনাকে হতে হবে গঠনমূলক। এই ব্লগে আমি ভাল কয়েকজন বন্ধু পেয়েছি। যারা আমার লেখার গঠনমূলক সমালোচনা করে আমাকে ভাল করার প্রেরণা দিচ্ছেন। সাহস দিচ্ছেন। আমার সেই প্রিয় বন্ধুদের মধ্যে অন্যতম একজন লেখক হাসান মাহবুব। এই গল্পটা তাকে উৎসর্গ করলাম।)
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ২:৪৯
৪৩টি মন্তব্য ৪২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×