somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অণুগল্প : বোবা প্রতিশোধ

১৫ ই জুন, ২০১৪ রাত ৯:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-মার, মার। মার শালার কুত্তাটাকে। শালা চার চারটা মানুষকে মারছে। একেবারে নল্লী চিরে ফেলছে।

-আরে, এই পিশাচ কুকুর তো আমাকে একবার টানতে টানতে এই গোরস্থানেই নিয়ে এসেছিল। কি কিসব জামা-কাপড়, দড়ি পায়ের কাছে এনে রাখছিল। যা ভয় পেয়েছিলাম।

-আর বলিয়েন না অ্যাডভোকেট সাহেব, আমাকেও টেনেছিল। এমন লাত্থি দিয়েছিলাম, ঠিক মতো লাগলে ঐ দিনেই মরতো। শুনেছি পুলিশদেরও কামড়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু সুবিধা করতে পারে নাই।
দুইজন অ্যাডভোকেট দূর থেকে দাঁড়িয়েই আবার হাঁক দিল, মার, শালার কুত্তাকে।

অবশ্য মারমুখী উত্তেজিত লোকেরা ক্লান্ত হয়ে যাবার বেশ আগেই কুকুরটি ইহলোক ত্যাগ করেছিল।

-------------

আধা ঘণ্টা আগের ঘটনা...

সাতদিন আগের একটা নতুন কবরের পাশে একটা কুকুর হাঁপাচ্ছে। পিছনের দিকের ডান পাশের এক পা ভেঙ্গে গিয়েছে। বুকের পাশে বেশ গভীর ক্ষত। একটা চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছে, সোজা হয়ে দাঁড়ানোর শক্তি নেই, শুয়ে শুয়ে কাতরাচ্ছে, শেষ মুহূর্ত আগমনের প্রতীক্ষা ।

কুকুরটা যেন বলছে, আমাকে মাফ কর, বাবা। এছাড়া আমার কোন উপায় ছিল না। একটা বোবা প্রাণী হিসেবে আমার যা করার ছিল তারচেয়ে বেশি কিছু করতে পারি নি। আমি পুলিশের কাছে গিয়েছি, যাদের তুমি আমাকে দেখাতে পার্কে হাঁটার সময়। তারা আমাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছে। আমি অ্যাডভোকেটের কাছে গিয়েছিলাম, যাদের কাছে তুমি আমাকে মাঝে মধ্যেই পরিচয় করিয়ে দিতে। আমি সকল তথ্য প্রমাণ তাদেরকে দিয়েছিলাম। তারা আমাকে বিশ্বাস তো করেই নি। উল্টো আমাকে লাথি মেরেছে।

মানুষ হয়ে জন্মায় নি বলে তোমার ছেলের দায়িত্ব পালন করতে পারব না, এটা তো হতে পারে না। আমার মনে আছে সেদিনের কথা যেদিন তুমি আমাকে বৃষ্টিতে ভিজে কাতরানো অবস্থায় কুড়িয়ে এনেছিলে। তোমার উষ্ণতা না পেলে হয়তো সেদিনই হত আমার অন্তিম দিন। হলে ভালোই হত, এভাবে চোখের সামনে তোমাকে মরতে দেখতাম না। মনে আছে, তুমি আমাকে বলতে জগতের সবচেয়ে বুদ্ধিমান কুকুর। আমাকে অনেক কসরত শিখিয়েছিলে। তোমার শিক্ষা, আমার একমাত্র সম্বল ছিল।

তোমার মুখে বালিশ চাপা দিয়েই যদি তারা শান্ত থাকতো তাও হত, যেভাবে তোমার বুকের উপর বসে তোমার হাত-পা বেঁধে তোমাকে কষ্ট দিচ্ছিল, সেই দৃশ্য আমি কখনো ভুলবো না। আমাকে বেঁধে রাখার ঐ লোহার খাঁচা ভাঙ্গার শক্তি থাকলে সেদিন তোমাকে মারতে দিতাম না। কখনো না।

কেউ যখন আমার কথা শুনলো না। তখন সৃষ্টিকর্তাকে সাথে নিয়ে নেমে পড়লাম প্রতিশোধে। বোবা প্রাণীর প্রতিশোধ। প্রথমে তাদের দুইজনকে খুঁজে বের করেছি। প্রথমজনকে সহজে বোকা বানিয়েছিলাম। আমাকে আদর করে বুকে নিতেই কামড় বসিয়ে দিয়েছি। ঠিক গলার মাঝখানে কামড় বসিয়েছি। ঠিক যেভাবে তোমার বিশ্বাসের সাথে তারা প্রতারনা করেছে। দ্বিতীয় জন বেশ চতুর ছিল। তাকে মারতে বেশ খাটতে হয়েছে। তবে আমি হাল ছাড়ি নি। ঠিক গলাতেই কামড় বসিয়েছি। তৃতীয় জন আগে থেকেই আমার কথা জেনে গিয়েছিল। লোক নিয়ে প্রস্তুত ছিল। সেখানেই আমার পিছনের ডান পা ভাঙ্গে। কিন্তু আমাকে থামাতে পারে নি। চতুর্থ জন পালাচ্ছিল। আমি আমার ভাঙ্গা পা নিয়েই তার পিছনে ছুটেছি। একটু আগে তাকে শেষ করেছি। ওদের লোকজন আমার পিছু নিয়েছে। হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবে।

আমি নাহয় কুকুর, তারা তো মানুষ ছিল। মানুষ হয়েও ওরা কিভাবে অমন করে? আমাদের চেয়েও নিচে নেমে যায়। কিভাবে?

বাবা, জানো, ওরা আমাকে খুব মেরেছে, খুব। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমাকে কি তোমার বুকে নেবে, বাবা। যেভাবে আমাকে বুকে নিয়ে ঘুমাতে, সেভাবে। আমার আর কষ্ট সহ্য হচ্ছে না, বাবা। সব কিছু কেমন যেন অন্ধকার হয়ে আসছে, বাবা, আমার ভয় করছে, ভীষণ ভয়... বাবা... বাবা...

---------------------------

সাত দিন আগের ঘটনা...

বৃদ্ধাশ্রম থেকে এক মৃত ব্যক্তির লাশ তার সন্তানরা নিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যাওয়ার কথা লিখলেও ঘটনা ছিল অন্য। জুয়াড়ি সন্তানরা তাদের সম্পত্তির উপর পূর্ণ অধিকার পাবার জন্যই তাদের পিতাকে হত্যা করেছিল। পৃথিবীর কেউ বৃদ্ধের পক্ষে ছিল কিনা জানি না, তবে দুজন ছিল একথা নিশ্চিত। একজন সৃষ্টিকর্তা, অন্যজন...
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৫
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কথা: দাদার কাছে—একজন বাবার কিছু প্রশ্ন

লিখেছেন সুম১৪৩২, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৫



দাদা,
কেমন আছেন? আশা করি খুবই ভালো আছেন। দিন দিন আপনার ভাই–ব্রাদারের সংখ্যা বাড়ছে—ভালো তো থাকারই কথা।
আমি একজন খুবই সাধারণ নাগরিক। ছোটখাটো একটা চাকরি করি, আর নিজের ছেলে–মেয়ে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×