somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হিমু,মিসির আলী ও অন্যান্য... (১ম অংশ)

১২ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(১৩ তারিখে স্যারের জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ ধারাবাহিক গল্প)
---------------------------------------------------------
১.


বুকে একটা র‍্যাপিং করা ব্যাগ জড়িয়ে ধরে রিকশায় চেপে হাওয়া খেতে খেতে যাচ্ছি। সময় কম, নইলে হেটেই যেতাম। ব্যাগে কি আছে জানি না, তবে এটা জানি, মাজেদা খালা হুকুম দিয়েছেন আমি যেন এটা যক্ষের ধনের মতো বক্ষে ধারণ করে সুফিয়া কামাল হলে দিয়ে আসি। তাই বুকের সাথে চেপে ধরে রিকশায় বসে আছি। আমার চেহারায় "I am at your Service" জাতীয় ভাবটা প্রকট। নইলে সবাই আমাকে দিয়ে, বিশেষ করে মেয়েরা আমাকে দিয়ে এত কাজ করাবে কেন? একজন টহল পুলিশ আমার রিকশায় টর্চলাইট মারল।



'ঐ রিকশা দাঁড়া।'
আমার রিকশা দাঁড়াল।
'আপনার এই ব্যাগে কি আছে।'


'আমি জানি না। তবে আপনি জানতে চাইলে খুলে দেখতে পারি। বুড়ি মা চকোলেট বোমা থাকতে পারে।'
'কি কস এগুলা? কই যাবি এত রাইতে।'

অবৈধ কিছুর কথা শুনলেই এদের ভাষা স্যার থেকে দোস্তে নেমে আসে। মানে আপনি থেকে তুই-তোকারি আর কি।

'ওস্তাদ, এই সুফিয়া কামাল হল যাব।'


'এত রাইতে ওদিকে যাওয়া নিষেধ। ব্যাগ খুল, দেখি কি এমন জিনিস ব্যাগে এত আদর কইরা নিয়া যাইতাছোস।'


আমি বিনীতভাবে বললাম,'একটা সত্য কথা বলি।'

পুলিশদের সামনে কেউ সত্য কথা বললে তারা খুব অস্বস্তি অনুভব করে। কারণ, মানুষ এই জগতে দুইজনের সামনে সহজে সত্য বলে না, এক, স্বামী তার স্ত্রীর সামনে, আর দুই,অসাধু পুলিশের সামনে। প্রথমজনকে মানুষ না ভাবলেও চলবে।

'দেখ,আজকের রাত আমার কাছে বিশেষ রাত। এই রাতে আমি মালপানি নেই না।'

'বলদ, যার সব কিছু ঠিক, শুধু এক জায়গায় গলদ।'


'তুই আমারে বলদ বললি ক্যান?'


'আপনাকে না ওস্তাদ, আমি বলদের সংজ্ঞা দিলাম।'


'আমি কি দিতে বলেছি? দিমু নি ভইরা। তাড়াতাড়ি বাক্স খুল।'


'এটা তো মোস্তাক স্যারের মেয়ের জন্য। খোলা নিষেধ।'


'কোন মোস্তাক, কালা মোস্তাক না ন্যাংড়া মোস্তাক। কোড বল।'


'থ্রি টু ওয়ান জিরো।'


'ধুর, এটা কোন মোস্তাকের কোড? ব্যাগ খুল।'


'এটা ডি আই জি মোস্তাক স্যারের ব্যাগ। আপনি খুলেন।'


'সত্য বলতাছিস?'


'মোবাইল দেন, আমি সার্কাসের বলদ মানে বাঘের মতো এখানেই বসে আছি। কল দেন।'


'দাঁড়ান, কল দিচ্ছি।'

পুলিশ এবার নিশ্চিত ধোঁকা খেয়েছে। নইলে দোস্ত থেকে স্যারে চলে যেত না। এখন মুখে বোকা বোকা ভাব রাখতে হবে। পুলিশটার বুকের ব্যাজে নাম দেখলাম, তরিকুল। মোবাইল নিয়ে কিছুক্ষণ নাড়ছেন। নাম্বার খুঁজছেন? না, তিনি আড়চোখে আমার অভিব্যক্তি দেখছেন।

'আচ্ছা, ব্যাগ খুলতে হবে না। তাড়াতাড়ি যান। বোঝেন তো, কিছু হয়ে গেলে আমাদের উপরেই সবাই রাগ ঝাড়ে।'

রিকশাওয়ালা যেই প্যাডেল মারলেন অমনি ঘাড় ফিরিয়ে বললাম, তরিকুল সাহেব, আজ আপনার মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী, তাই আজ আপনি কোন অপরাধ করেন না। তার কবরটা বাঁধাই করে দিয়েন।'

তরিকুল ঘাড় উঁচিয়ে বিস্ময়ভরা চোখে অচেনা যুবকটাকে দেখছে। এইমাত্র তার কাছে একটা ১২বছর ধরে গোপন রাখা সত্য শুনলেন। তার পর্যবেক্ষণ যদি ভুল না হয় তাহলে যুবক খালি পায়ে হলুদ রঙের সিল্কের পাঞ্জাবী পড়েছে। অবাক করা বিষয়, পাঞ্জাবীতে পকেট নাই, মেয়েছেলের পাঞ্জাবী। এর নামই কি হিমু?


মাকে মনে পড়ছে।


২.

সুফিয়া কামাল হলের বিপরীতে দাঁড়িয়ে আছি। কার্জন হলের মতো করে লাল ইটের আবহ দেওয়া হয়েছে। ভালোই লাগছে। ওভার ব্রিজটা দিয়ে ভালো হয়েছে। কিছু উদ্বাস্তু মানুষের ঘুমানোর জায়গা হয়েছে, আর সিড়ির নিচে অলিখিত আমজনতার টয়লেট। বাক্সটা মাজেদা খালা না, দিয়েছে বাদল। সে এক মেয়ের প্রেমে পড়েছে। ঢাবিতে ইকনোমিক্সে পড়ে। আমিও পড়ি ঢাবিতে। তাই আমাকে মেয়েটার কাছে এই উপহার পাঠানোর জন্য পাঠিয়েছে। আমার কেন যেন খুব কৌতূহল হচ্ছে কি আছে এই বাক্সে তা জানার জন্য। পেনডোরা ভর করেছে আমার উপর। মিসির আলীর কাছে গেলে কেমন হয়? বাক্স না খুলেই বলে দেবেন।

'কুক্কুরুক্কু'


এই রাতের বেলায় মোরগের ডাক! ওহ, না। মোবাইলে মেসেজ আসার টিউন। রূপার মেসেজ। কারণ এই মোবাইল রূপা দিয়েছে।

ইনবক্স খুলে দেখলাম,'তুমি কি বাসার সামনে আসতে পারবা। আজ অনেক সুন্দর চাঁদ উঠেছে। ভরা জ্যোৎস্না।'

রূপা জানে আমি তার মেসেজের উত্তর দেব না। এটাও জানে আমি তার বাসার সামনে যাব না। ভরা জ্যোৎস্নায় আমি রাস্তায় হেঁটে বেড়াই। পৃথিবীর আসল রূপ তো এই জ্যোৎস্নাতেই ফুটে ওঠে।

আমি ব্যাগটা হাতে নিয়ে পা বাড়ালাম। আগে জানতে হবে বাক্সে কি আছে, তারপর তা গ্রাহকের কাছে পৌঁছাবে।

কি আছে এই বাক্সে? পেনডোরার বাক্স নয়তো। খুললেই বেড়িয়ে আসবে অজানা কোন অশুভ জিনিস। মিসির আলীকে এখন খুব প্রয়োজন।


জগতের সবচেয়ে রহস্যময় প্রাণী কে?


১১.১১.১৪

(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৪৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কথা: দাদার কাছে—একজন বাবার কিছু প্রশ্ন

লিখেছেন সুম১৪৩২, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৫



দাদা,
কেমন আছেন? আশা করি খুবই ভালো আছেন। দিন দিন আপনার ভাই–ব্রাদারের সংখ্যা বাড়ছে—ভালো তো থাকারই কথা।
আমি একজন খুবই সাধারণ নাগরিক। ছোটখাটো একটা চাকরি করি, আর নিজের ছেলে–মেয়ে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×