somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধারাবাহিক ফ্যান ফিকশনঃ হিমু,মিসির আলী ও অন্যান্য... (সপ্তম অংশ)

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের অংশ
৯.
যেভাবে সবকিছু অন্ধকার হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, ঠিক সেরকম ভাবেই সবকিছু আলো হয়ে জেগে উঠলাম। ঠিক জেগে উঠলাম কিনা জানি না। কারণ, আমার মুখের উপর একটা মুখ। মাথা ভর্তি রেশমী চুল, সাদা মোমের মতো শরীর, লালচে ঠোঁট। এক দেবশিশু।

নাহ, দেবশিশু না। দেবশিশু হলে চোখে চশমা থাকতো না। কে এই দেবশিশু? মনে আসছে আবার আসছে না। এই পরিস্থিতিটা খুবই অস্বস্তিকর। যেন কোন এক পরিচিত মানুষ হাসিভরা মুখ নিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে আছে, অথচ আমি তার নামটাই মনে করতে পারছি না।

উঠে বসতেই দেবশিশু বলল, 'হিমু ভাইয়া, আমি শুভ্র। রূপা আপু আমাকে আপনার খোঁজে পাঠিয়েছে।'

অন্য যে কেউ 'রূপা আপু"-কে উচ্চারণ করবে রূপাপু। কিন্তু শুভ্র খুব সুন্দর করে সময় নিয়ে প্রতিটা শব্দ বলেছে। 'রূপা' তারপর খানিক থেমে 'আপু'।

'আমার খোঁজ কিভাবে পেলে?' আমি খানিকটা বিস্মিত।

'রূপা আপু আপনাকে যে মোবাইলটা দিয়েছেন সেটাতে কল দিয়েছিলেন। এই দোকানদার ভাইয়া ধরেছিল। তিনি ঠিকানা দিয়েছেন। আপু ঠিকানা জেনে আমাকে পাঠিয়েছেন।'

'কতক্ষণ আগে এসেছ?'

'অনেকক্ষণ। আপনি ঘুমিয়েছিলেন দেখে ডাকি নাই। বসে বসে রুবিক্স কিউব মিলাচ্ছিলাম।'

এবার তার হাতে রুবিক্স কিউবটা চোখে পড়ল। আর কোন কথা না বলে শুভ্রকে নিয়ে বেড়িয়ে
পড়লাম। দোকানদার ডেকে বলল, 'হিমু ভাই। আপনার মোবাইলটা নিন।'

'ওটার কাজ শেষ। ওটা আপনার কাছে রেখে দিন। যদি কখনো ওটার দরকার হয় এসে নিয়ে যাব।'

আমি চাই না আমি হারিয়ে গেলে কেউ আমাকে খুঁজে বের করুক। শুভ্রকে নিয়ে রিকশায় উঠলাম। পিছনে শুভ্রের গাড়ি আসতে লাগলো। ড্রাইভারকে বোধহয় শুভর মা রেহানা অথবা তার বাবা ইয়াজউদ্দিন কড়া নির্দেশ দিয়ে রেখেছেন,যাতে শুভ্র চোখের আড়াল না হয়।

শুভ্র রুবিক্স কিউবটা আমাকে দেখাতে দেখাতে বলছে, 'জানেন ভাইয়া রুবিক্স কিউবের সম্ভাব্য কম্বিনেশন হতে পারে ৪৩,২৫২,০০৩,২৭৪,৪৮৯,৮৫৬,০০০ টি।'

'এত বড় সংখ্যা মনে রেখেছ কি করে?'

'প্রথম প্রথম মনে রাখা কষ্টকর ছিল। সবাইকে বলতে বলতে আত্মস্থ হয়ে গিয়েছে।' বলেই শুভ্র একটা হাসি দিল। অসম্ভব সুন্দর হাসি। একজন মানুষের হাসি এত সুন্দর হয় কি করে?

শুভ্র আবার বলা শুরু করল,এর মানে হলো ৪৩-এর পরে আঠারোটা শূন্য বসালে যে সংখ্যা হয়, ঠিক তত রকম চাল আছে নাকি রুবিক্স কিউবের খেলায়। সবচেয়ে কম ২০টি ধাপেই এর সমাধান সম্ভব। কেউ সাড়ে পাঁচ সেকেন্ডে, কেউ বা আবার দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে চেষ্টা করে রুবিক্স কিউবের সমাধান করেছেন। আমি ইউটিউবে টিউটোরিয়াল দেখে আড়াই ঘণ্টায় শিখেছি।'

'তাই নাকি? তোমার চুলগুলো খুব সুন্দর।'

'হি হি হি। জানেন, ৮২৯ থেকে ৮৪২ সাল পর্যন্ত পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য শাসন করেন সম্রাট থিওফিলাস। ৮৪০ সালের দিকে মাথার সব চুল হারিয়ে একেবারে টাক হয়ে গেলেন সম্রাট। তারপরই তিনি তাঁর রাজ্যের সব পুরুষ, নারী আর বাচ্চাকে চুল ফেলে ন্যাড়া হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। এই আদেশ অমান্য করার শাস্তি কি ছিল জানেন! মৃত্যুদণ্ড। কি ভয়ংকর। তাই না ভাইয়া?'

'হুম।'

'জানেন ভাইয়া, ১৯৩৮ সালে টাইম ম্যাগাজিন অ্যাডলফ হিটলার কে “ম্যান অফ দা ইয়ার” নির্বাচন করে।'

'হুম'

'জানেন ভাইয়া...'

'হ্যাঁ রে ভাই, সব জানি। চুপ কর।'

শুভ্র চুপ হয়ে গেল। বেচারা কথা বলার মানুষই পায় না। আমাকে পেল, আমিও তাকে চুপ করে দিলাম। কিন্তু তাতে শুভ্র মন খারাপ করে নাই। মন খারাপ করলে মানুষের মুখাবয়বে যেসব পরিবর্তন হয় সেরকম কোন পরিবর্তন নেই। এরকম ঘটে কেবল শিশুদের বেলায়। তাদের কোন কিছুতেই মন খারাপ হয় না। তারা সবকিছুতেই আনন্দ খুঁজে পায়।

মানুষ যত বড় হয় সে তত বেশি মন খারাপ করা শিখে। সবচেয়ে বেশি মন খারাপ করা শেখে কিশোর বয়সে। এই মন খারাপকে বেগ দেয় আবেগ। এই আবেগের বাতাসে উড়ে তারা নানা কান্ড ঘটায়। যার বেশিরভাগই প্রেম বিষয়ক।

শুভ্র মনে হয় না কখনো বড় হবে। এই শিশুমন নিয়েই তার এই পৃথিবী একসময় অন্ধকার হয়ে যাবে। একজন অন্ধ মানুষের চেয়ে দুঃখী হয়তো কেউ নয়। আবার তার মতো সুখীও কেউ নয়। তাকে অন্যায় দেখে আমাদের অন্ধ সাঁজতে হয় না। সে এমনিতেই অন্ধ।

হাজার লোকের ভীড়ে আমি যেন কাউকে দেখলাম। এ হলো ঘুমিয়ে পড়ার আগে ময়ূরাক্ষীর তীরে দেখা সেই নারী। এবার আমি তাকে চিনেছি। এখন দ্রুত মিসির আলির কাছে যেতে হবে। একটা চাপ কমে যাওয়ায় আমার বেশ আনন্দ হতে লাগলো। আনন্দের চোটে আমি শুভ্রকে বললাম, 'তুমি আর কি কি জানো?'

শুভ্র শিশুর মতো উৎসাহ নিয়ে বলতে লাগলো, 'জানেন ভাইয়া...'

হ্যাঁ, আমি জানি। স্রষ্টা ভুল করে মাঝে মাঝে এঞ্জেল পাঠিয়ে দেয়। তুমি হলে সেই সুন্দর ভুল। শুভ্র বলেই চলেছে 'জানেন ভাইয়া...', আমিও 'হুম' বলেই চলেছি।

গন্তব্যে প্রায় এসে গিয়েছি।

১৭.১১.১৪
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:১৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কথা: দাদার কাছে—একজন বাবার কিছু প্রশ্ন

লিখেছেন সুম১৪৩২, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৫



দাদা,
কেমন আছেন? আশা করি খুবই ভালো আছেন। দিন দিন আপনার ভাই–ব্রাদারের সংখ্যা বাড়ছে—ভালো তো থাকারই কথা।
আমি একজন খুবই সাধারণ নাগরিক। ছোটখাটো একটা চাকরি করি, আর নিজের ছেলে–মেয়ে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×