somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধারাবাহিক ফ্যান ফিকশনঃ হিমু,মিসির আলী ও অন্যান্য...(দশম অংশ)

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের অংশ

১২.
বই হাতে চলে এলাম মিসির আলির বাসায়। মিসির আলি তখনো ফেরেন নাই। বাকের ভাই গান শুনছেন। রূপা নেই। শুভ্র বসে বসে রুবিক্স কিউব মিলাচ্ছে। আমি "How to think like sherlock holmes" বইটা তার কাছে দিয়ে চেয়ারে বসলাম। মাথায় শুধু ধাঁধা ঘুরছে।

শুভ্র বইটা নেড়েচেড়ে বলল, এই বইটা তো আমি আগে পড়েছি। আবার পড়ব?

'হুম, পড়। ওখানে একটা ধাঁধা লুকানো আছে। খুঁজে বের কর।

শুভ্র বিছানায় শুয়ে শুয়ে পড়তে লাগলো। আমি বাকের ভাইকে বললাম, 'একটা কৌতুক শুনবেন?

'এটা কি কৌতুক শোনার মতো পরিবেশ?'

'তাহলে বাহিরে চলেন, কৌতুক শোনার পরিবেশ খুঁজি। বুড়িগঙ্গার পাড়ে বসে শুনলে কেমন হয়?'

'ফাজলামো না করে, বলে চুপ হউ। টেল, দেন কিপ সাইলেন্স।'

'এক ছেলে খুব বজ্জাদ। পাড়ার সবাই তার অত্যাচারে খুব অতিষ্ঠ। পারলে তাকে ধরে সবাই পিটায়। একদিন তার ক্যান্সার হল। সে মারা যাওয়ার আগে সবাইকে ডেকে বলল, আমি তো আপনাদের প্রতি অনেক অন্যায় করেছি, আপনাদের অনেক জ্বালিয়েছি। তাই আমার মৃত্যুর পর আমার মৃতদেহকে বাঁশে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখবেন। তাতে যদি আমার উপর আপনাদের রাগ কমে আমার আত্মা শান্তি পাবে।

ছেলেটা মারা যাওয়ার পর তার অন্তিম ইচ্ছা পূরণ করতে পাড়ার সবাই তার মৃতদেহকে বাঁশে ঝুলিয়ে রেখে দিল। দুইদিন পরই সেটা পচে গন্ধ বের হতে লাগল। পুলিশ এল। এসে পাড়ার সবাইকে ধরে নিয়ে গেল। পাড়ার লোকেরা বলতে লাগল, শালার ব্যাটা শালা। মরার পরও তোর শয়তানি শেষ হল না। বেঁচে থাকতেও জ্বালিয়েছিস, মরে গিয়েও জ্বালালি।'

আমি একটা বিকট হাসি দিলাম। কিন্তু বাকের ভাই নির্বাক। তিনি চুপ করে রইলেন। প্রিয়জন হারানোর শোক সবচেয়ে বড় শোক। এই শোকে মানুষ পাথর হয়ে যায়। বাকের ভাইও সেই পথে। হিমুদের তাই প্রিয়জন থাকতে নেই। হিমুরা একা।

শুভ্র চেঁচিয়ে উঠে বলল, ''ভাইয়া আমি ধাঁধাটা পেয়েছি।'

'কোথায়? কি ধাঁধা?'

শুভ্র শোয়া থেকে উঠে বসল। বইয়ের পেজ নাম্বারের কাছে কিছু ডট দেখিয়ে বলল, এগুলো ব্রেইল পদ্ধতিতে লেখা। আমি ব্রেইল পদ্ধতি জানি। ব্রেইল পদ্ধতিতে একটি চতুর্ভুজ আকৃতির বক্স-এ ছয়টি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র থাকবে ৩ x২ কলামে। অর্থাৎ নিচের দিকে তিনটি এবং পাশাপাশি ২ টি। প্রতিটি ছিদ্র এক একটি বর্ণমালা,সংখ্যা নির্দেশ করবে। এই ছয়টি খালি ছিদ্রের মধ্যে একটু উঁচু বা পূর্ণ যেগুলো থাকবে সেগুলোই হচ্ছে বর্নমালা বা সংখ্যা চেনার নির্দেশক।'

'এখানে তো উঁচু নিচু দেখছি না। শুধু পেন্সিলে ডট দাগ দেখছি।'

'আপনি অন্ধ নন বলেই হয়তো এভাবেই লিখেছে।'

'কি লিখেছে?'

'একেক পাতায় একেক অক্ষর লিখেছে।'

'সব অক্ষর মিলিয়ে বল।'

'C'

'হুম'

'O G X'

'হুম'

'A G D'

'হুম'

'S I E'

'সবমিলিয়ে তাহলে কি হল?'

'COGXAGDSIE'

'এটার মানে কি?'

'এটাকে তো মনে হচ্ছে কোন এনক্রিপ্ট কোড। এটাকে ডিক্রিপ্ট না করলে বোঝা যাবে না।'

'আমি তো করতে পারি না।'

'কে পারে?'

'মিসির আলি আংকেল করতে পারেন।'

'মিসির আলি তো বাইরে।'

ওহ! মিসির আলি, আপনি কোথায়?

বলতে বলতেই মিসির আলি দরজায় উকি দিলেন। বললেন, 'কি সমস্যা? কারো আসার কথা ছিল। এসেছে?'

শুভ্র বলল, না আংকেল, কেউ আসে নাই। আপনি একটা এনক্রিপ্ট কোড ডিক্রিপ্ট করতে পারবেন?'

'এনক্রিপ্ট কোডটা বল।'

'COGXAGDSIE'

মিসির আলি পেন্সিল আর খাতা নিয়ে বসতে বসতে বললেন, '১০ অক্ষরের শব্দ। একে সাজান যাবে ১৮১১৪৪০০ ভাবে। কিন্তু আমাদের দরকার এক বা একাধিক অর্থবোধক শব্দ। শুধু অর্থবোধক হলেই হবে না, যা চাচ্ছি তাই পেতে হবে।'

মিসির আলি চুপচাপ কাজ করতে লাগলেন। আমি আবার বেড়িয়ে পড়লাম। তীব্র রোদ উঠেছে। এই রোদে গা ভেজাতে হবে। আমাকে সবিতাকে খুঁজে পেতে হবে। আমি তার মুখ থেকেই সব জানতে চাই। একজন মৃত মানুষের কাছে থেকে। জানতে চাই, সে কি চায়?

২০.১১.১৪

(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:০৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কথা: দাদার কাছে—একজন বাবার কিছু প্রশ্ন

লিখেছেন সুম১৪৩২, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৫



দাদা,
কেমন আছেন? আশা করি খুবই ভালো আছেন। দিন দিন আপনার ভাই–ব্রাদারের সংখ্যা বাড়ছে—ভালো তো থাকারই কথা।
আমি একজন খুবই সাধারণ নাগরিক। ছোটখাটো একটা চাকরি করি, আর নিজের ছেলে–মেয়ে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×