somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিসিরআলীর ভূত দর্শন এবং পালাইতে গিয়া হাঁটু ভাঙ্গন। :D

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমার সামনে কেউ ভুতের গল্প বললে আমার চোখ বড় হয়ে যায়। আর সেটা যদি হয় সত্যি ভুতের গল্প তাহলে গলা শুকিয়ে যায়।

গ্রামে গেলে ভূতের গল্প শুনা হয় বেশি। ভূত গুলো সব গ্রাম মুখী। শহরে ভুত টূত নাই। যদিও থাকে দুই একটা তাও বাসার ছাদে কিংবা টয়লেটের পাশে।

কিন্তু গ্রামের বিষয় আলাদা। পদে পদে ভূত, পেত্নী, শাকচুন্নী, জ্বীন আরো কত কি আছে কে জানে!!!

সেইদিন ছিলো শনিবার। শনিবার বলেই হয়তো একটা শনির দশা ছিলো। গ্রামের বাজারে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে গিয়ে এক পর্যায়ে ভূত প্রসঙ্গে ঢুকে যাই। যদিও আমি বারণ করেছিলাম। কারণ আমার বাড়ি পৌঁছাতে দুই দুইটা কবরস্থান পড়ে। এক একটা গাছ শত বছরের পুরোনো। কবরস্থানের পাশেই বিশাল দিঘী!!!

তবুও বলা শুরু করলো। এই ভুত সেই ভুত। কত ভুত!!! কত খানে, কত ভাবে আক্রমণ করছে। কার নানীরে, কার দাদীরে, কার দাদারে, কার নানারে ভুতে ধরছে সব বাহির হয়ে গেছিলো। আমি হাত পা সব সংকুচিত করে আরেকবন্ধুর গা ঘেসে বসলাম।

কাহিনী শেষ। সবাই যার যার বাড়িতে যাচ্ছে। রাত সাথে দশটা। গ্রামের গভীর রাত। চারদিকে শো শো শব্দ। দুর্ভাগ্য!!!! মোবাইলের চার্জ পাঁচ পার্সেন্ট।

বুক ধপধপ করছে। পিছনে একটা শব্দ শুনলেই কলিজায় মোছড় দিয়ে উঠে। এই বুঝি আমারে নিয়া গেলো!!! পিছনে তাকিয়ে দেখি কিচ্ছু নাই!!!

একটা করবস্থান পার করতেই চার পার্সেন্ট চার্জ শেষ। ততক্ষণ পর্যন্ত কিছু দেখি নাই। বিশুদ্ধ বাতাস। আকাশে মেঘে ঢাকা চাঁদ। ভয়ে প্রাণ যায় যায়।

তখনই আমার ভিতরে মিসিরআলী এসে হাজির। কিসের ভয়!!! হু!!

হাটা যাক। বড় বড় চোখ করে চার পাশে কি হচ্ছে সেটা পর্যবেক্ষণ করি। এর মাঝে নিজের সাথে কিছু কথোপকথন হলোঃ

আমি : মিসিরআলী সাহেব। আমার কিন্তু ভয় পাচ্ছে। যদি কিছু চাইপা ধরে!!!!

মিসিরআলী : হা হা হা!!! কিছু কখনো চেপে ধরে না। ভুত বলতে কিছু নেই। তুমি তোমার বন্ধুদের সাথে ভুতের গল্প শুনে এসেছো। সেজন্যই ভয় পাচ্ছে। তুমি এই রাস্তা দিয়ে হেঁটেই তোমার শৈশব পার করেছো। সুতরাং ভয় পাবার কিছু নেই।

আমি : হইছে!!! হইছে!!! আর জ্ঞান দিয়েন না। (মোবাইল টা গেল বন্ধ হয়ে। আমার অবস্থা পুরাই খারাপ) আপনি বুঝি ভয় পান না???

মিসিরআলী : ভয় পাই। তবে ভূতের ভয় পাই না।

আমি : ও কিসের ভয় পান??

মিসিরআলী : .............. ( নীরব!!! কথা বের হয় না।)

সামনেই কুকুরের অবয়ব!!!!! কান্নার শব্দ। এই সময় হার্ট এটাক ও হইতে পারে।। ঘেউ ঘেউ না করে!!!! কান্না করছ ক্যেরে!!!!

ভয়ে আমি চুপসে গেলাম। পা পাথরের মতো শক্ত হয়ে গেল। কুকুর টা যেন আমার দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। এমন কালো কুকুর আর কখনোই দেখি নাই। মোবাইলে চার্জ নাই। তাহলে প্লাস মেরে দেখতাম ছায়া আছে কিনা!!! শুনেছি ভুতের নাকি ছায়া হয় না।


ইটাৎ মনে হলো আমি সূরা কেরাত পড়ছি না কেন!!! পড়তে গেলাম মুখ দিয়ে বের হয় না!! চোখে দিয়ে জীবনের প্রথম ভয়ের অশ্রু বের হইছে। কুকুরটা আমার সামনে এসে চারপাশে ঘুরছিলো। আর ঘোঙানি মার্কা শব্দ করছিলো!!!

এত ভালো মানুষ যে, নিজের সাথে একটা সিগারেট, ম্যাচ কিছু নাই। জান টা বুঝি যায়!!!!

অসহায়ের মতো কাঁপুনি চলে এলো!!! একটা কুত্তা!!! আমার কাঁপুনি ধরিয়ে দিলো। মিসিরআলী ও বের হয় না।

যাইহোক!!! একটু পরেই আরেক টা কুকুর এলো!!! আসার পর তো আমি শেষ.!!!! এই বুঝি দুইটা মিলে আমাকে কামড় বসাবে।!!!

নাহ্!! দুইটাই হটাৎ কবরস্থানের দিকে ছুটে চলে গেল। এই সুযোগ!!! দিলাম দৌড়। পিচ্ছিল রাস্তা। আছাড় খাইলাম। উঠি একটু যাই, আবার আছাড় খাই। কোন রকমে অর্ধেক কবরস্থান পার হইলাম।

সামনে দেখি তারা আবার দাঁড়িয়ে আছে। এমনভাবে যেন আমাকে এখুনি ছিঁড়ে ছুঁড়ে খেয়ে ফেলবে। একটা চিৎকার দিমু সে শক্তি নাই।

এর মধ্যেই পিছনে কারো হেঁটে আসার শব্দ পাইলাম। শব্দের আগে পাইলাম আতরের সুঘ্রাণ। খুব ছোট বেলায় এইরকম ঘ্রাণ পেয়েছিলাম।

একই সাথে আশা!! এবং নিরাশা!! সাথে ভয় নিয়ে পিছনে তাকাইলাম। একটা লম্বা ধরনের মানুষ। সাদা পাঞ্জাবি পড়া। মাথায় লম্বা টুপি। আধোছায়াতে তাকে যেন আমি স্পষ্ট দেখছি!!!!!

সালাম দিলাম।" আসস্লামুয়ালাইকুম!!!! "

সাথে চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।। এত ভয় কখনো পাই নাই।

লোকটা এসে আমার পাশে দাঁড়াইলো। কুকুর দুইটা যেন রাগে জ্বলে যাইতেছে। এমন ভয়ার্ত সব শব্দ করছিলো!!! যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। কিছুক্ষণ পরই কুকুরগুলো চলে গেলো!!!

আমার একটু স্বস্তি এলো!! তবে ভয় কাটেনি পুরোপুরি!! লোকটার দিকে তাকালাম!!! আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে!!!!।

'আপনি কে??'
- কেউ না!! -_-
'আপনার বাড়ি কোথায়??'
- এত কথা বলো কেন!!! -_- সোজা নিজের বাসায় যাও। আর রাত বিরাইতে একা একা এখান দিয়া আসিস না।

" আমি মাথা নাড়ালাম। দাড়িয়ে আছি তার দিকে তাকিয়ে। "

- কি দেখছ!!! যাইতে বলছি না তোকে!! -_-
আমাকে একটু এগিয়ে দেন না :(
- ভয় নাই আর। আর যা এবার।


" আমি হাঁটা ধরলাম। সম্পূর্ণ কবরস্থান পার হইতে হইতে চারবার পিছনে তাকাইছি। লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো!!!!! পঞ্চম বার তাকিয়ে আর তাকে দেখতে পাই নাই!!! "

এক দৌড়ে নিজের বাসার সামনে এসে ধপাস করে পড়লাম। হাঁটুর যেন ভেঙ্গেই গেছে!! এমন ব্যথা পাইলাম!!

মা কইয়া ডাক দিলাম!!!! তারপর দশদিন জ্বরে বেহাল ছিলাম।।।।
.

সুস্থ হওয়ার পর থেকে এখন ও ভাবি!! কি বাঁচাটাই না বাঁইচা গেলাম!!!!!
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৭
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×