খুব ছোট ছিলাম। প্রাইমারি শিক্ষার অনুপাতে ক্লাস ফাইভ কি সিক্সে। তখন থেকেই ইন্টারনেটের প্রতি অসাধারণ আগ্রহ আর উৎসাহটা টের পাই। বড় ভাইয়ার কাছে ইন্টারনেটে খুঁটিনাটি শিখেছিলাম।
প্রথম দিকে (এখনও) সাইবার ক্যাফে থেকেই কম্পিউটার ব্যবহার করতাম। তখন ব্রাউজার খুললেই গুগলের হোমপেজ ওপেন হত। তখন অবশ্য বুঝতাম না যে এটাও একটা ওয়েবসাইট। আর তখন আমি গুগলকে গুগলি বলে উচ্চারণ করতাম।
খুব শীঘ্রি বিষয়টা ধরতে পারলাম। টেবিলের ইংরেজী বানান আর গুগলের ইংরেজী বানানে সুন্দর একটা মিল আছে। টেবিলের উচ্চারণ যদি টেবলি না হয়ে টেবিল হয়, তাহলে গুগলের উচ্চারণও গুগলি না হয়ে গুগল-ই হবে। এইভাবে ভুলটার সংশোধন করলাম।
ছোটবেলা থেকেই ওয়েবসাইট তৈরীর প্রতি প্রচন্ড নেশা ছিল। এ পর্যন্ত কয়টা পঙ্গু ওয়েবসাইট বানিয়েছি তার কোন ঠিক ঠিকানা নেই। তবে শেষ পর্যন্ত গুগলপেজ আর ওয়ার্ডপ্রেস এবং ব্লগস্পটকে আঁকড়ে ধরেছি। তারা এখনো আমার সাথেই আছে। গুগলের খুব কম সার্ভিসই আছে যেগুলো আমি ব্যবহার করিনি। একসময় গুগল গ্রুপস নিয়ে প্রচুর সময় ও অর্থ ব্যয় করেছি। একসময় বুঝলাম ওটা আমার জন্য না। তারপর গ্রুপস ছেড়ে হাই ফাইভ ইত্যাদিতে আগ্রহ দেখালাম। কিছুদিন ভালই গেল। তবে আমার বুঝতে দেরি হলো না যে ওগুলো মানুষের মূল্যবান সময়টাকে পিটিয়ে হত্যা করা ছাড়া আর কিছুই না। উপলব্ধি করলাম ওটাও আমার কাজে আসবে না। সেই থেকে সোশ্যাল নেটওয়ার্ক নামের শব্দটাকে আমি অপছন্দ করি। বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, আজ পর্যন্ত আমি অরকুট বা ফেসবুকে কোন রেজিষ্ট্রেশনই করিনি। হাইফাইভে যেটা ছিল ওটা আপাতত বন্ধ।
বড় ভাইয়া ওয়েবসাইট বানাতে এক্সপার্ট। ওনার সাটে দেখতাম গুগল বস্ বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন। দেখে খুবই ভাল লাগত। কারণ সময়ের সাথে সাথে আমিও বুঝতে পেরেছি যে, গুগলের লোগো যতই হাস্যকর হোকনা কেন, গুগলকে ছাড়া ইন্টারনেট একপ্রকার অচল হয়ে পড়বে। ঠিক তাই, ইন্টারনেটের প্রসারে গুগলের ভূমিকা অনস্বীকার্য। যাই হোক, আমি ছোটখাট ওয়েবসাইট বানাতাম। একসময় সব ছেড়ে বাংলা ব্লগে ঢুকলাম। ভালই যাচ্ছিল। এখনও ভালই যাচ্ছে। তবে আমার চিন্তাধারার পরিধি একটু বড়ই ছিল। তাই ইংরেজীতে ব্লগি শুরু করলাম এখানে (http://aminulislam333.wordpress.com & http://aminulislam333.blogspot.com)। ইংরেজী ব্লগিংটাকে আমি ইংরেজী চর্চার অন্যতম একটি স্থান হিসেবে ধরে নিয়েছিলাম।
যাই হোক, কথা বলছিলাম জনপ্রিয় গুগলের অন্যতম সার্ভিস গুগল এডসেন্স নিয়ে। আজকাল কমবেশী সবাই এ সম্বন্ধে জানেন। আমি যখনই জানতে পারলাম যে ব্লগসাইটেও এডসেন্স ব্যবহার করা যায়, বিন্দুমাত্র দেরি না করে সাইন আপ করলাম। চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে গুগল আমার রেজিষ্ট্রেশন গ্রহণ করে একটিভ করে দিল। আর আমিও মহানন্দে বিজ্ঞাপন শো করতে থাকলাম। খুব বেশিদিন হয়নি গুগল এডসেন্স ব্যবহার করছি। অথচ গুগল এডসেন্স সম্পর্কে জানতাম আরো তিন চার বছর আগেই। (এতদিনে মাথার কিছুটা উন্নতি হয়েছে তো, তাই মাতব্বরিও বেড়েছে।)
নিয়মমাফিক একাউন্ট দশ ডলার পেরুলে ট্যাক্স ইনফরমেশন চাইল মহোদয় গুগল। দিলাম। ইমেইলের মাধ্যমে গুগল জানাল,
"আপনার পোস্টাল ঠিকানায় (বাসায়) একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে যা আপনার পিন কোড বহন করছে। আমরা আশা করছি আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যেই এটা আপনার কাছে পৌঁছে যাবে। অনুগ্রহ করে পৌঁছা মাত্রই আপনার পিন প্রয়োগ করে পেমেন্ট রিলিজ করবেন। ধন্যবাদ।"
ত্রিভূজ ভাইয়ার একটি পোস্টে পড়েছিলাম যে, এই কার্ডটা সহজে হাতে আসেনা। আমাদের পোস্ট অফিসের গুণধর ও কাজের প্রতি অতিশয় যত্নশীলতার (!) কারণে তা পোস্ট অফিসেই পড়ে থাকে। সেক্ষেত্রে অনেক ঝক্কি-ঝামেলা পোহাবার পর পেমেন্ট রিলিজ করা হয়ে থাকে। তবুও আশায় বুক বেঁধে রইলাম। তিন সপ্তাহ শেষ হবে এই মাসের ২০ তারিখে।
আশ্চর্যজনকভাবে, ১৮ তারিখে পিওন চিঠি নিয়ে হাজির! আমার মা তো অবাক। এমনিতে ইন্টারনেট সম্পন্ধে ততটা জ্ঞান রাখেননা, তবে গুগল যে বিশাল একটি কোম্পানী, তা আমাদের দুই ভাইয়ের কাছ থেকে বহুবারই শুনেছেন। সেই গুগল থেকে প্রেরিত চিঠি যা আমেরিকা থেকে এসেছে, গ্রহণ করতে মায়ের কেমন লাগবে সেটা বর্ণনা করতে যাওয়াটা বোকামী। (বর্ণনা করা যায় না।)
যাই হোক, আমিও খুবই উত্তেজিত (এক্সাইটেড) ছিলাম। গুগলের অফিস থেকে স্ট্যান্ডার্ড মেইল। যদিও খুব সাধারণ ব্যাপার। তবে পনেরো বছর বয়সে আনন্দ করার জন্য এটি একটি যথেষ্ট খোরাক।
--------
তবে একটি প্রশ্ন এখনো রয়ে গেছে। গুগল চেক পাঠালে, সেই চেক কিভাবে ভাঙ্গাবো? কেউ জানলে অনুগ্রহ করে বিস্তারিত জানাবেন।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১১ রাত ৯:৪৮