বাংলাদেশের কয়েকটা পাখি নিয়ে এই পোষ্টটা সাজালাম। এই পর্বে ১০ পরিচিত পাখির ছবি দিলাম। আশা আছে সব মিলিয়ে ৫০ থেকে ৬০ টি পাখির পরিচিতি তুলে ধরতে পারব...
দোয়েল...
ইংরেজী নামঃ Oriental Magpie Robin
বৈজ্ঞানিক নামঃ Copsychus saularis
দোয়েল পাখি চেনেন না এমন কেউ বাংলাদেশে নেই। দোয়েল আমাদের জাতীয় পাখি।
সাধারনত, ঘরের কার্নিসে বা গাছের ফোকরে বাসা বাধে...
গানের পাখি হিসেবে তার খ্যাতি আছে। ভোরের বেলা দোয়েলের শিষ শুনতে কার না ভালো লাগে। প্রজনন ঋতুতে পুরুষ দোয়েল গাছের ডালে নাচতে নাচতে স্ত্রী দোয়েলকে আকৃষ্ট করার জন্য হরেক রকম সুরে ডাকাডাকি করে। স্ত্রী দোয়েল তুলনামুলক কম ডাকাডাকি করে (মানুষের ঠিক বিপরীত)...
পুরুষ দোয়েল...
স্ত্রী দোয়েল...
চড়ুই...
ইংরেজি নামঃ House Sparrow
বৈজ্ঞানিক নামঃ Passer domesticus
চড়ুই আরেকটা কমন পাখি। শহরে গ্রামে সর্বত্রই এর সমান বিচরন। সাধারনত দল বেধে থাকে।
ডাকাডাকি করার আগে সব চড়ুই একত্রিত হয়। তারপর শুরু করে কিচিরমিচির ডাক। গ্রামে দেখা যায়, উঠোনে ধান ছিটিয়ে দিলে দল বেধে চড়ুই এসে উঠোনে বসে খুটিয়ে খুটিয়ে ধান খায় আর কিচির মিচির করতে থাকে...
পুরুষ চড়ুই...
স্ত্রী চড়ুই...
ফিঙ্গে...
ইংরেজি নামঃ Black Drongo
বৈজ্ঞানিক নামঃ Dicrurus macrocercus
ফিঙ্গে গ্রামাঞ্চলে খুব পরিচিত একটি পাখি। শহরেও দেখা যায়। এটি রাজকীয় কাক নামেও পরিচিত। ফিঙের গায়ের কালো রঙ আর দু'ভাগ করা লেজ দিয়ে একে সহজেই চেনা যায়। প্রায় সময়ই কোন গরু বা মহিষের পিঠের উপর লম্বা লেজ ঝুলিয়ে বসে থাকতে দেখা যায়।
পুরুষ ও স্ত্রী ফিঙ্গে সহজে আলাদা করা যায় না।
ফিঙ্গে...
ঘুঘু...
ইংরেজি নামঃ Dove
বৈজ্ঞানিক নামঃ Streptopelia chinesis
ঘুঘু পায়রা জাতের পাখী। এদের বাগানে, মাঠে ,ঘাটে অবিরত দেখা যায়। ডাকের আওয়াজ থেকে নাম "ঘুঘু"।
বাংলাদেশে বেশ কয়েক প্রজাতির ঘুঘু দেখা যায়।
ঘুঘু
মৌটুসী...
ইংরেজি নামঃ sunbird
বৈজ্ঞানিক নামঃ Aethopyga siparaja
বাংলাদেশের ছোট পাখিগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মোটুসী। এদেশে ১১ ধরনের মৌটুসি পাখি দেখা যায়।
আকার আকৃতিতে খুবই ছোট। সাধারনত ফুলের মধু খেয়ে থাকে। স্ত্রী পাখির গায়ের রঙ ফ্যাকাসে হয়...
পুরুষ মৌটুসী...
স্ত্রী মৌটুসী...
কানাকোকা
ইংরেজি নামঃ Crow-Pheasant
বৈজ্ঞানিক নামঃ Centropus sinensis
কানাকোকা পাখিটি দেখতে অনেকটা কাকের মত। তবে আকার কাকের থেকে বড়। কানাকোকার চোখের মণি ও ডানা দুটি বাদামি। শরীরের বাকি অংশ কুচকুচে কালো।
বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। সাপ, বেজি ও গুইসাপ দেখলে লেজে ঠোকর দিয়ে পালিয়ে যায়। পিছু নেয়। কিছুদূর গিয়ে আবার ঠোকর দেয়। এভাবে প্রাণীগুলোকে বিরক্তকরে মজা পায়। এই স্বভাবের কারণে কানাকোকাকে রসিক পাখি নামে ডাকে অনেকে। তবে অন্য পাখির বাসায় হানা দিয়ে বাচ্চা ও ডিম খাওয়ার অভ্যাস থাকায় কেউ কেউ কানাকোকাকে 'ডাকাত' পাখি নামেও ডাকে। সাপ-ব্যাঙ ও কীটপতঙ্গের সংখ্যা বেড়ে গেলে তা খেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক করে বলে একে 'পরিবেশবান্ধব পাখি'ও বলা হয়।
খঞ্জনা...
ইংরেজি নামঃ White Wagtail
বৈজ্ঞানিক নামঃ Motacilla alba
পাখিটি খঞ্জন বা মোহক নামেও পরিচিত। মাথার উপরের দিকে কালো, পিঠ ছাই বর্ণ। চোখ, ঠোঁট, পা এবং গলার নিচ থেকে বুকের দিকটা অনেকটা ইউ শেপের মত করে কালো, মুখ এবং বুকের নিচের বাকি অংশ সাদা ও লেজ কালো। একটা র্নিদিষ্ট ছন্দে এটি প্রায় সবসময়ই লেজ নাড়তে থাকে।
শীতকালেই আমাদের দেশে দেখা যায়। সাধারনত জলাশয়ের আশপাশে ঘুরে বেড়ায়...
হলদে পাখি...
ইংরেজি নামঃ Black-hooded Oriole
বৈজ্ঞানিক নামঃ Oriolus xanthornus
হলুদিয়া পাখি, সোনালী বরন,
পাখিটি ছাড়িলো কে...
এই সেই হলদে পাখি। কে যেন পাখিটিকে ছেড়ে দিয়েছে। তাই কবির এত আকুলতা।
পাখিটিকে বেনেবউ বা ইষ্টিকুটুম নামেও ডাকা হয়। গাঢ় হলদে শরীর। চোখ লাল, মাথা, গলা, লেজ ও ডানার কিছু পালক কালো বর্ণের ঠোট হালকা লাল। মেয়ে পাখি আর ছেলে পাখি দেখতে প্রায় একই রকম। তবে স্ত্রীর মাথার কালো রং অপেক্ষাকৃত ফ্যাকাসে। এই পাখি কর্কশ স্বরে ‘কোয়াক’ বোল তুলে ডাকে।
গাছের ডালে ঘুরে ঘুরে পোকা মাকড় আর ফল খায়।
পুরুষ হলদে পাখি...
স্ত্রী হলদে পাখি...
বাবুই...
ইংরেজি নামঃ Weaver Bird
বৈজ্ঞানিক নামঃ Ploceus philippinus
বাবুই পাখির নাম শুনলেই আমার চোখে তাল গাছের মাথায় ঝুলতে থাকা বাবুই পাখির বাসার ছবি ভেসে ওঠে...
বাবুই আমদের দেশে খুবই পরিচিত একটা পাখি। আমাদের দেশে বাংলা বাবুই, দাগী বাবুই ও দেশী বাবুই এই তিন ধরনের বাবুই দেখা যায়। তার মধ্যে বাংলা বাবুই ও দাগী বাবুই বিলুপ্তির পথে।
বাবুই পাখির বাসা দেখতে উলটানো কলসির মত। নিচের দিক দিয়ে বাসায় প্রবেশ করে। ডিম থাকে কই? কথিত আছে: রাতে বাসায় আলো জ্বালার জন্য বাবুই জোনাকী ধরে এনে গোঁজে।
বাবুই পাখির বাসা...
টুনটুনি...
ইংরেজি নামঃ Tailor Bird
বৈজ্ঞানিক নামঃ Orthotommus sutoriu
ছোট বেলায় একবার বাসার সামনের সেগুন গাছে একটা টুনটুনির বাসা পেয়েছিলাম। একটা সেগুন পাতার দুই পাশ গুটিয়ে এনে ছোট্ট একটা বাসা তৈরি করেছিল টোনা-টুনি। খুবই অবাক হয়েছিলাম।
পরিচিত একটা পাখি এই টুনটুনি। আকারে খুবই ছোট। টুনটুনি পাখি গাছের বড় পাতা ঠোট দিয়ে সেলাই করে বাসা তৈরি করে। তাই এদর বলা হয় ‘দর্জি পাখি’। টনটুনি পাখি বিশ্বের সর্বত্র ‘দর্জি পাখি’ নামে পরিচিত।
টুনটুনি...
আজ এইটুকুই। আগামীতে আরো ১০ পাখির পরিচয় তুলে ধরব...
সকল ছবি ও তথ্য ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত...
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ১২:৩৪