somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

||যে জাতি হারায়েছে দিক||

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেশে যখন একটা গণজাগরণ হয়েছিল আমি সত্যিই অনেক খুশি হয়েছিলাম। মনে হয়েছিল এবার বুঝি দেশের শাসকবর্গের টনক নড়বে। স্বাধীনতার পর থেকে হওয়া একচেটিয়া অন্যায়গুলোর অবসান হবে, গণতন্ত্র মুক্তি পাবে। "গণজাগরণ মঞ্চ কখনো ঘুমিয়ে যাবে না" - এমন তেজস্বী বক্তব্যে আমার বিশ্বাসটা আরও দৃঢ় হয়েছিলো কিন্তু বছর ন্স ঘুরতেই সেই বিশ্বাসটা যেভাবে ভাঙল সেটা আর প্রকাশ করলাম না।
দেশের গণতন্ত্র যখন জিম্মি তখন এই গণজাগরণ ঘুমিয়ে ছিল। যখন চলন্ত বাসে আগুন দিয়ে জীবিত পুড়িয়ে মানুষ হত্যার মহোৎসব চলছিল তখনো এই গণজাগরণের কোন সাড়া মেলেনি। প্রকাশ্যে মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ করতে দেখিনি। তবে এটা কোন জাগরণ?? এর থেকে ঘুমিয়ে দুঃস্বপ্ন দেখাটাও শ্রেয় বলে গণ্য।
আগামীর মানুষ যাদের দিকে তাকাবে তারাই আজ আলো ছেড়ে আঁধারের দিকে ধাবমান। তারপরও সবাই চুপ।

দিনে দুপুরে প্রকাশ্যে ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছে, বাচ্চাদের পাঠ্যপুস্তকও ক্ষমা পাচ্ছেনা। মায়ের কোল থেকে সন্তানকে কেড়ে নিয়ে গুম করা হচ্ছে, নতুন বউকে লাল শাড়ি থেকে রাতের আধাঁরে সাদা শাড়ি পড়িয়ে দিচ্ছে অথচ সবাই চুপ। প্রশাসন থাকছে চোখ বন্ধ করে।

অসহায় লোকটি পেনশনের জন্য টেবিল থেকে টেবিলে ঘুরে মরছে শেষে অর্ধেক টাকা ঘুষ দিয়ে নিজের সন্তানদের স্বপ্নের মৃত্যু ঘটাচ্ছে , রাস্তায় লোক না খেয়ে মরছে অথচ আমরা কেবল মূর্তিমান দর্শক। হাততালি দেওয়া আমাদের কাজ।

ধর্মের নামে ব্যবসা করে আমাদের মা বোনদের ছোট করা হচ্ছে আর আমরা আমজনতা তাদের হাততালি দিয়ে উৎসাহিত করছি।
চোখের সামনে একটি মানুষকে জীবিত থেকে মৃত করে দেয়া হচ্ছে আর আমরা তা থেকে মজা নিচ্ছি ভাবছি সিনেমার দৃশ্য বাস্তবে দেখছি, মজাই তো হচ্ছে। একটি মানুষও তার প্রতিবাদ করছেনা কারণ এটা ৭১ না ২০১৪।

এটা ভাবলে ভুল ভাববেন যে আমাদের পুতুল বানিয়ে রাখা হয়েছে। আসলে আমরা নিজেরাই পুতুল হয়ে বেঁচে আছি কারণ আমরা তো আগেই দিক হারিয়েছি। অনেক আগেই আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে গঙ্গাঘাটে স্নান করেছি। এখনতো কেবল দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রোদ পোহাচ্ছি । আমাদের মাকে অর্থলোভে বিক্রি করে দেবার সামর্থ্য অর্জন করেছি। দুচোখ থাকা সত্ত্বেও হাতে ছড়ি নিয়ে ঘুরছি আর কোন একটা ইস্যু পেলে তাকে চর্বচোষ্য বানিয়ে টকশো করছি অথচ মাঠে নেমে কথা বলতে সবারই কলজে কেঁপে ওঠে কারণ একটাই ওইযে গঙ্গাঘাটের স্নান।

যখন দেশের স্বাধীনতার জন্য আজন্ম লড়ে যাওয়া লোকটির নৃশংস হত্যাকাণ্ডে এ জাতি উৎসব করে মিষ্টিমুখ করেছিল তখনই বাঙালি তার আত্মমর্যাদা বিসর্জন দিয়েছে, বাঙালি তখনই দিক হারিয়েছে। গঙ্গাঘাটের স্নান তখনই সম্পন্ন হয়ে গিয়েছিল। জাতিকে তখনই বোকা বানিয়ে দেয়া হয়েছিল। আজকে যাদের দেখছেন এরা ওই বোকাদেরই উত্তরসূরি এদের থেকে এর চেয়ে ভাল আর কি আশা করা যায়??

গণতন্ত্র জনগণের শাসন মেনে চলে আর আমরা সেই শাসন তুলে দিয়েছি কতিপয় গোষ্ঠির হাতে। এরপরও আপনি বলবেন এ জাতি আপন পায়ে কুড়াল মারেনি??
মন্ত্রী আর সভাসদেরা প্রকাশ্যে অন্যায় অবিচার করে গেলেও দেখার কেউ নেই কিংবা জবাব চাইবার কেউ নেই যদিও পূর্ণ অধিকার আছে আমাদের জবাব চাইবার। ভবন ধ্বসে মানুষ মরে কিছুদিন সেটা নিয়ে মিডিয়া আলোড়ন তোলে তারপর প্রকাশ্যে শুণ্যে মিলিয়ে যায়। কোনদিন দেখিনি কাউকে এর জবাব চাইতে অথচ সুশিল সেজে বক্তৃতা দিয়ে মিডিয়াকে ব্যস্ত রাখার দৃশ্য হরহামেশাই চোখে পড়ে।

আমরা শুধু বোকা হইনি ব্যক্তিত্বহীন মানুষে পরিণত হয়েছি যার কাজ শুধু হাততালি দিয়ে যাওয়া। আমরা শুধু আঁধারে হারাতে শিখেছি আলোতে যাবার রাস্তা খুঁজিইনি। আমরা জড় হতে হতে লোহাতে পরিণত হয়েছি আর চোখ থাকতেও অন্ধের পথকে আপন করে নিয়েছি।
কবিগুরুর দুটি চরণ উল্লেখ করছি।
"সাড়ে সাতকোটি বাঙ্গালীর
হে বঙ্গজননী,
রেখেছো বাঙ্গালী করে মানুষ করনি।"

অনেক তো হলো আর কত?? এখনও কি মনে হয়না বদলাবার সময় এসে গেছে, চোখ মেলে তাকাবার সময় এসে গেছে, মানুষ হবার সময় এসে গেছে, কন্ঠ উঁচু করার সময় এসে গেছে। যদি তাই মনে হয় তবে জাগুন। দেখুন বাইরে কি সুন্দর একটা সূর্য উঠেছে।

অনিক মাহফুজ
২৫/৪/১৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×