somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিনেমা কি ও কেন ?

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ ভোর ৪:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লেখাটা শুরু করার আগে একটা সাধারণ মাপের মানুষের বিষয়টির ওপর লেখার ধৃষ্টতার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিই। আসলে বিষয়টা এতটাই সুক্ষ যে এর ব্যাখ্যা প্রায় দূরুহ ব্যাপার। তবু শুরু যখন করেছি, শেষ তো করতেই হবে।

সিনেমা শব্দের উৎপত্তি গ্রীক শব্দ ‘kinema’ শব্দের থেকে। পুরো বিষয়টির নাম সিনেম্যাটিকস্‌। স্বাভাবিকভাবেই এর সূত্র পাই kinematics শব্দ হতে। Kinematics শব্দটির আভিধানিক অর্থ- a branch of dynamics that deals with aspects of motion apart from considerations of mass and force. অর্থাৎ বিষয়টি গতিবিদ্যা সমন্ধীয়। আরোও একটু ভেঙে বলতে গেলে বলা যায়- ভর ও বলকে ছাড়াও বেগটাকেও গুরুত্ত্ব আরোপ করা হয়েছে। এখানে বেগ অর্থে মানসিক অথবা শারীরবৃত্তীয় বেগ-এর কথাই বলা হয়েছে। দেখা যায়, রিদ্‌মিক মিউজিক শুনলে হাত, পা, বা শরীরের মুভমেন্ট। ঠিক একইভাবে সিনেমার বিভিন্ন অংশ মানসিক ও শারীরিক গতির সঞ্চালন করে।

একটা উদাহরণ বোধহয় বিষয়টিকে অনেক বেশি পরিস্কার করবে। ধরা যাক- বিশ্বকাপে মারাদোনার ইংল্যান্ড-এর বিরুদ্ধে করা বিখ্যাত গোলটার কথা। একটা ছোট্ট পাস, সেখান থেকে এক এক করে ছ’জন কে পাস কাটিয়ে জালে বল পৌঁছন পর্যন্ত দম বন্ধ করা উত্তেজনা এবং তা শেষ হয় জালে বলটা জড়ানোর পর। এই পুরো ঘটনাটার মধ্যে হয়ত বা গল্প নেই কিন্তু মানসিক ও শারীরিক পরিবর্তনের ঘটনা নিশ্চিত আছে তা যত কম সময়ের জন্যই হোক। ঠিক একইভাবে হেড-ফোন-এ যদি একটি গান মন দিয়ে শোনা যায়, প্রতিটি মিউজিক ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছে এবং তা শ্রোতার মানসিকতারও পরিবর্তন ঘটিয়ে চলেছে। এই পরিবর্তন যতই ভাললাগার দিকে এগোয়, গানটি ততই সফল বা হিট হয়। অনেক সময় সামান্য পরিবর্তনও শ্রোতাকে বিশেষ আনন্দ দিয়ে যায়।

সত্যি কথা বলতে সিনেমা দৃশ্য ও শব্দের মাধ্যমে নিজস্ব মতকে তুলে ধরার মাধ্যম। একজন চলচ্চিত্র পরিচালক তার জীবন দর্শন থেকে যা কিছু গ্রহন বা বর্জ্জণ করেন তাই এই মাধ্যমের সাহায্যে প্রকাশ করেন।

অনেকেরই জানা আছে পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীনতম ভাষা Hieroglyphic। এর মূলতঃ চারটি ভাগ আছে- Pictograph, Ideograph, Phonogram, ও Determinative। Pictograph-এ শুধু দৃশ্য বর্তমান। Ideograph-এ দৃশ্যের সাথে বস্তুটির ভাবটিও বিদ্যমান। Phonogram-এ শব্দের শুরু। তা হতে পারে একটি ধ্বনি, হতে পারে একটি গোটা শব্দ বা word। আর শেষ ধাপ অর্থাৎ Determinative একটি সংকেত যা উদ্ধার করা রীতিমত দূরুহ বিষয়।

অনেকে বলবেন সিনেমার আলোচনায় Hieroglyphic এল কেন? একটু ভেবে দেখবেন সিনেমাতেও কখনও বা দৃশ্য, কখনও শব্দ অথবা গোপন সংকেত-এর সাহায্যে সমগ্র থেকে খন্ড ও খন্ড হতে সমগ্রের রুপটি ধরা পড়ে। এটাই সিনেমার সাথে থিয়েটার-এর মূল তফাৎ ও Hieroglyphic-এর মিল। সিনেমা মূলতঃ অসংখ্য টুকরো ও সমগ্র দৃশ্যের কোলাজ। যেখানে একটি নিটোল গল্প থাকে। Hieroglyphic দাঁড়িয়ে আছে একটি মাত্র ফ্রেম বা ছবির ওপর। আর সিনেমা প্রতি সেকেন্ডে চব্বিশটি ফ্রেম-এর ওপর।

সিনেমার আলোচনা করতে গিয়ে ফ্রেম, শট্‌, সিন, সিকোয়েন্স ও প্রেজেন্টেসান্‌ শব্দগুলো পরিস্কার হওয়া জরুরি। একটা single frame অর্থ ছবি। তা হতে পারে abstract অর্থাৎ Ideogram। Shot সিনেমার ভাষায় Uninterrupted Camera অর্থাৎ Camera’র স্থান পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত। Camera’র স্থান পরিবর্তন হলেই শট্‌ পরিবর্তন হয়। কতকগুলো শট্‌ একই ঘটনাস্থলে মিলিত হয়ে তৈরি হয় সিন। ঠিক একইভাবে কতকগুলো সিন একত্রিত হয়ে তৈরি হয় সিকোয়েন্স। সিকোয়েন্স ঘটনাগুলোকে পরপর এগিয়ে নিয়ে যায়। এই পরিবর্তিত রুপগুলি একত্রিত হয়ে তৈরি করে একটা প্রেজেন্টেসান্‌। আসলে প্রেজেন্টেসান্‌টার একটা মূল কেন্দ্র বা দৃশ্য থাকে যাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় সমগ্র ঘটনাবলি অর্থাৎ হাসি, কান্না, রাগ, দূঃখ, মান, অভিমান, প্রাপ্তি, অপ্রাপ্তি ইত্যাদি। তাই সিনেমা বানানোর আগে ভেবে দেখা উচিত বিষয়টির সিনেম্যাটিক প্রেজেন্টেসান্‌ হতে পারে অথবা নয়। তাই শ্রদ্ধেয় সত্যজিত রায়-এর ‘নায়ক’, একটি ঘটনাস্থল হলেও সিনেম্যাটিক। কারণ তা নায়ককে কেন্দ্র করেই বিভিন্ন ঘটনার দ্বারা আবর্তিত হচ্ছে। সত্যি কথা বলতে সিনেমা একটি One liner যা বিভিন্ন ঘটনাবলির দ্বারা সাজানো হয়।

এবার আসি দর্শকদের পারিপার্শিকে। দর্শক মূলতঃ দুই প্রকার- একদল, যারা ভাবতে চায় বা বিষয়ের গভীরে পৌঁছতে চায়। অন্যদল, শুধু relaxation–এর রুপ হিসাবেই সিনেমা দেখতে চান। তাই সিনেমা মূলতঃ দুই প্রকারের- একদল বানান বুদ্ধি থেকে অর্থাৎ ক্যালকুলেটিভ সিনেমা। যেখানে নাচ, গান, প্রেম-প্রীতি, স্নেহ-ভালবাসা সবই হিসেবে। আর অপর দল বানান বোধ বা উপলব্ধি থেকে। এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নটা উঠে আসে relaxation কি? যা কিছু tension-এর বিপরীত তাই relaxation। তাই হালকা গল্প মাধ্যম হলেও চার্লি চ্যাপলিন্‌-এর গ্রহন যোগ্যতা অনেক বেশি। কারণ আজকের এই গতিশীল সমাজ ব্যাবস্থায় হাল্কা গল্পের ছলে বিভিন্ন অনুভূতির মেলবন্ধন ঘটানোটাই মূল। তা শুধু বানিজ্যিকভাবেই সফল হবে না দর্শক-কে ভাবাতেও সাহায্য করবে ও সৃজনশীলতা বজায় রাখবে। কথায় আছে- মানুষের শ্রেষ্ঠ বন্ধু বই। কারণ তা real world থেকে অন্য জগত বা কল্পনার জগৎ-এ নিয়ে যায়। সিনেমার যা কিছু প্রেজেন্টেশান্‌ মানুষকে দুই-আড়াই ঘন্টার জন্য অন্য জগৎ-এর সন্ধান দেয় ও হলের বাইরে এসে নতূনভাবে গঠনমূলক কাজে সাহায্য করে তাই চিরস্থায়ী হয়। এটাই পরিচালকের সেরা প্রাপ্তি।

শেষ করব একটা উদাহরণ দিয়ে- এক ভদ্রলোক আপনমনে নিজস্ব ভাবনা নিয়ে হেঁটে চলেছেন। হঠাৎ গা ঘেঁষে একটি গাড়ি পেরিয়ে যায়। গাড়ির ভেতর থেকে একটি বাচ্চা মিষ্টি হেসে হাতটা নাড়ে। ভদ্রলোকের মনটা এক অদ্ভূত আনন্দে ভরে ওঠে। এই মনের পরিবর্তন ও তাকে কেন্দ্র করে গোটা ঘটনাটাই সিনেম্যাটিক্স।

তাই সমকালীন সিনেমার পরিচালকদের কাছে আদর্শ সিনেমার রুপটির অপেক্ষায় রইলাম যা শুধু গল্প নয়; বিভিন্ন রঙ, দৃশ্য, শব্দ, ও ঘটনাবলীর সাহায্যে সৃজনাত্মক ও গঠনমূলক ভাব নিয়ে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ ভোর ৪:২০
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×