যাহোক লেখার বিষয়ে আসি, বর্তমান বাংলাদেশে কিশোর, তরুনদের মধ্যে মাশরাফির মতো জনপ্রিয় আর কেউ আছে কিনা আমার জানা নেই। তিনি কতটা জনপ্রিয় তা বলার দরকার আছে বলে মনে হয় না। বাংলাদেশে থাকলে, বা সোশ্যাল মিডিয়া ঘুরলে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন। এখন আসুন একটু বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করি মাশরাফির এতটা জনপ্রিয়তার কারণ কি?
★ শৈশবের নায়ক
বর্তমানে যারা কলেজ- ভার্সিটিতে পড়াশুনা করে বা পড়াশুনা শেষ তাদের শৈশব কৈশোরেই প্রথম বাংলাদেশ ক্রিকেটে একটু আধটু জয়ের দেখা পাওয়া শুরু করছে। হোক তা জিম্বাবুয়ে, কেনিয়ার সাথে। তখন ক্রিকেটও ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সেসময় তাদের নায়ক ছিল আশরাফুল, মাশরাফি, আফতাব, শাহরিয়ার নাফিসরা। সাকিব, তামিমরা তখন সবে এসেছেন, তারকা হয়ে উঠতে পারেননি। এই তখনকার নায়কদের মধ্যে এখনো টিকে আছেন কেবল মাশরাফিই। আর লক্ষ্য করলে দেখবেন এই প্রজন্মের মাঝেই মাশরাফির জনপ্রিয়তা বেশী। শৈশবে, কৈশোরে মনে যে ছাপটা পড়ে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
★ আবেগের বহিঃপ্রকাশ।
বাঙ্গালি আবেগপ্রবণ জাতি। তারা আবেগের প্রকাশ দেখতেই পছন্দ করে। আর মাশরাফি এটা খুবই ভাল করেন। তাসকিন নিষিদ্ধ হওয়ায় তার চোখে পানি চলে আসে, তিনি "শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও খেলে যাব" এ ধরণের আবেগী কথাগুলো আওড়ান, কখনো ভীষণ আবেগে চুমু খান মুস্তাফিজের কপালে। এই আবেগের প্রকাশগুলো মাশরাফির জনপ্রিয়তার ক্ষেত্রে বেশ বড়সড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। আর ঠিক একই কারণে মানে এই আবেগের বহিঃপ্রকাশ তেমন না করায় সাকিবকে অনেকে অপছন্দ করেন। বলেন "ও টাকার জন্য খেলে। দেশের প্রতি কোন টান নেই"
★ ইঞ্জুরি থেকে সিম্প্যাথি, ইন্সপাইরেশন।
মাশরাফির দুই হাঁটুতে একগাদা সার্জারি করতে হয়েছে। সঠিক সংখ্যাটা আমার জানা নেই কোথাও দেখি লেখা সাতটি কোথাও দশটি ইত্যাদি। প্রায়ই দেখা যায় ব্যাথায় তার নাক মুখ কুঁচকে যাচ্ছে তবুও তিনি বল নিয়ে ছুটছেন। এসব বিষয়গুলো বাঙ্গালিকে নাড়া দেয়। কারণ তারা একে প্রোফেশনাল দৃষ্টিকোন থেকে না দেখে আবেগের দৃষ্টিকোন থেকেই দেখেন। এর ফলে তাদের চোখ এড়িয়ে যায় যে মাশরাফি আসলে ভীষণ সাধারণ মানের একজন খেলোয়াড় যেকিনা এই ১৪০ কিমি.+ এর যুগে ১৩০ এর আশেপাশে বল করছে।
★ অধিনায়ক হিসেবে অভাবনীয় সাফল্য।
সাফল্য না থাকলে শুধু শুধু এইসব হামজাম ফ্যাক্টর গুলা কোন কাজই করতে পারতনা। এই ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেটের যখন ভরাডুবি অবস্থা তখনই মাশরাফি অধিনায়ক হিসেবে আসেন আর সব ভোজবাজির মতো বদলে যায়। দর্শকরা বিষয়গুলোকে এভাবেই দেখেন। বা সাংবাদিকরা এভাবেই দেখান। তারা ভুলে যায় এসময় বাংলাদেশ পেয়েছে সাব্বির রহমান, সৌম্য সরকার, মুস্তাফিজদের মতো প্রতিভাবানদের। এসময় তাসকিন আরো ধারালো হয়েছে, মাহমুদুল্লাহ ছিল ক্যারিয়ার সেরা ফর্মে। বাংলাদেশের আর কোন অধিনায়ক এমন অসাধারণ একটা দল পায়নি। কিন্তু দর্শকরা মোটা দাগে দেখার সময় বেশীরভাগ কৃতিত্বটাই মাশরাফিকে দিয়ে ফেলেন।
★ সাংবাদিকদের সাথে সখ্যতা
এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। মাশরাফির মতো সাংবাদিকদের সাথে এতটা সখ্যতা সম্ভবত আর কোন খেলোয়াড়ের নেই। আর দর্শকদের মন মানসিকতা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের চেয়ে বড় ফ্যাক্টর ও নাই। মাশরাফিকে কিংবদন্তি বানিয়ে দিতে পারলে সাংবাদিকদেরই লাভ। এই যেমন কিছুদিন আগে সাংবাদিক দেবব্রত মুখোপাধ্যায় মাশরাফির জীবনী বের করল। এত দামী একটা বই হু হু করে বিক্রি হতে থাকলো। যেটা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অস্বাভাবিক বিষয়। তাই মাশরাফিকে জনপ্রিয় করা তাদের একটা মার্কেটিং পলিসিও। দেবব্রত এবং তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন সাংবাদিক আরো বছর খানেক আগ থেকে মাশরাফিকে নিয়ে নিয়মিত আবেগী সব লেখালেখি করে আসছেন। আপনি ওনাদের কোন খেলায় আতস কাঁচ দিয়েও মাশরাফির সমালোচনা খুঁজে পাবেন না। অথচ দর্শকদের চোখেই ওর কত বাজে সিদ্ধান্ত ধরা পড়ে। কিন্তু এসকল সাংবাদিকরা কিছু লেখেন না বলে কেউ সাহস করে বলতেও পারেনা। অনেকসময় ওনারা এসব ভুল সিদ্ধান্ত গুলো কোন একটা ব্যাখ্যা দিয়ে দেন। যার ফলে মাশরাফি এখন সব ভুলের উর্ধে উঠে গেছে। আর এতে সাংবাদিকদের লাভ তো আগেই বলছি। মাশরাফিকে নিয়ে কিছু লিখলেই হিট।
যাহোক এগুলো মোটামুটি প্রধান ফ্যাক্টর। এছাড়াও আরো কারণ আছে। যেগুলো সাংবাদিকরা দর্শককে জানিয়ে তার প্রতি সবাইকে মুগ্ধ করেন। যেমনঃ তার সাধারণ লাইফস্টাইল, আড্ডাবাজ আমুদে আচরণ ইত্যাদি।
সবশেষে আজ জন্মদিনে মাশরাফির জন্য অনেক শুভকামনা রইল।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:২৯