কে এই ভবন মালিক ? সোহেল রানা। আগের দিন সে শ্রমিকদের বলেছিল, ফাটল-টাটল কিছু না। প্লাস্টার খসছে, বিল্ডিংয়ের কিছু হবে না। সাংবাদিকদের বলেছিল, শ্রমিকেরা শুধু শুধু আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে কারখানা থেকে বের হয়ে যান। ভবন ধসে পড়ার মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়নি।
স্মরণকালের ভয়াবহ ট্র্যাজেডি সাভারের রানা প্লাজার মালিক যুবলীগ নেতা সোহেল রানা। অবৈধভাবে নির্মিত এই ভবন ছিল একটি টর্চার সেল। আপন ভগ্নিপতি ও বন্ধুসহ বেশ কয়েকটি হত্যা মামলায় সম্পৃক্ত এই রানার উত্থান বিস্ময়কর। সাভারে অবৈধ দখল, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ হতো এই ভবন থেকেই। মঙ্গলবার ভবনটিতে বড় ধরনের ফাটল দেখা দিলে সাময়িকভাবে ভবনে থাকা তিনটি গার্মেন্ট ও ব্যাংক বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু যুবলীগ নেতার ভবন হওয়ায় প্রশাসন এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
সাভার পৌর যুবলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল রানার অপকর্মের আস্তানা ছিল ধসে পড়া ভবনটি। ক্ষমতার দাপটে অবৈধভাবে এক হিন্দু ব্যক্তির দুই একর জমি দখল করে গড়ে তোলা হয়েছিল রানা প্লাজা। আটতলা ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় ছিল মার্কেট এবং অন্য ফ্লোরগুলোতে ছিল পাঁচটি পোশাক কারখানা।
বিল্ডিং টাতে ফাটল ধরেছিল। সে কানেই তুলেনি যে রানা প্লাজা ভেঙ্গে পড়বে। আজ সেই বিল্ডিং টা ধ্বসে পড়েছে। অনেক মানুষ(আমার ধারনা সংখ্যাটা ১০০০ – ১৫০০ ছাড়িয়ে যাবে)। অনেক মানুষ আহত হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাভারের স্থানীয় সূত্রগুলো বলেছে, ভবনটি ধসে পড়ার সময় সোহেল রানা রানা প্লাজার নিচতলার অফিসে বসে ছিলেন। জনরোষ থেকে বাঁচতে আটকাবস্থায় তিনি খবর দেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ এমপি মুরাদ জংকে। এমপির সহায়তায় তিনি অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার পান। পরে দলীয় লোকজনের সহায়তায় সোহেল রানা এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখান থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নেয়ার পর তিনি গা ঢাকা দেন।
সোহেল রানার চাচাতো ভাই জাহাঙ্গীর হোসেন জানিয়েছেন,তিনি ঢাকার একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে কোন হাসপাতালে আছেন তা জানায়নি জাহাঙ্গীর।উল্লেখ্য, রানা প্লাজা মাত্র তিন বছর আগে নির্মাণ করা হয়। অভিযোগ উঠেছে, নির্মাণের নীতিমালা মানা হয়নি ভবনটির ক্ষেত্রে।
উপর তলার গার্মেন্টস গুলোঃ
ওয়েবসাইট ও বিজিএমইএর নথি ঘেঁটে দেখা যায়, ওই ভবনকে কারখানার ঠিকানা হিসেবে দেখিয়েছে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান। এগুলো হলো নিউ ওয়েভ বটমস লিমিটেড, নিউ ওয়েভ স্টাইল লিমিটেড, ফ্যানটম অ্যাপারেলস লিমিটেড, ফ্যানটম টেক লিমিটেড ও ঈথার টেক্স লিমিটেড। এ কারখানাগুলোর সবই বিজিএমইএর সদস্য প্রতিষ্ঠান। বিজিএমইএ দাবি করেছে, এগুলো সবই কমপ্লায়েন্ট ফ্যাক্টরি এবং তাদের কারখানা ওই ভবনে ছিল। সংগঠনটির তথ্য মতে, ঈথার টেক্স লিমিটেডে ৩৭৭ জন শ্রমিক কাজ করতেন। একইভাবে নিউ ওয়েভ বটমস লিমিটেডে ৫২৬ জন, নিউ ওয়েভ স্টাইল লিমিটেডে এক হাজার ৭৩ জন, ফ্যানটম অ্যাপারেলস লিমিটেডে ৭৩৯ জন এবং ফ্যানটম টেক লিমিটেডে ৪০৭ জন শ্রমিক কাজ করতেন।
নিউ ওয়েভ গ্রুপের তিনটি পোশাক কারখানা আছে। তাদের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, নিউ ওয়েভ বটমস্ (সদস্য নং-৪৫৭৯) ও নিউ ওয়েভ স্টাইলের (সদস্য নং-৩৬৭৯) কারখানা ছিল ধসে যাওয়া রানা প্লাজায়। তবে নিউ ওয়েভ অ্যাপারেলসের (সদস্য নং-১০৩১) কারখানার ঠিকানা লেখা আছে ৪৫, কল্যাণপুর, প্রধান সড়ক, ঢাকা। নিউ ওয়েভ বটমস প্রতিষ্ঠা করা হয় ২০০৮ সালে। এর আগে ২০০৩ সালে নিউ ওয়েভ স্টাইল প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ গ্রুপের প্রথম কারখানা নিউ ওয়েভ অ্যাপারেল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯২ সালে। বিজিএমইএর ডিরেক্টরিতে নিউ ওয়েভ বটমস লিমিটেডের চেয়ারম্যান হিসেবে বজলুস সামাদের নাম উল্লেখ আছে। অন্য দুটি কারখানার পরিচালক হিসেবে আছেন তিনি।
ফ্যানটম অ্যাপারেলস (সদস্য নং-১৮৯৬) ও ফ্যানটম টেকের (সদস্য নং-৪৬৩৩) চেয়ারম্যান হিসেবে আমিনুল ইসলামের নাম উল্লেখ আছে। এটির ওয়েবসাইটের তথ্য মতে, ফ্যানটম টেক বাংলাদেশের ফ্যানটম অ্যাপারেলস ও স্পেনের টেক্সটাইল অডিট কম্পানি এস এলের যৌথ মালিকানার প্রতিষ্ঠান। ঈথার টেক্স লিমিটেডের (সদস্য নং-৪৮৫৪) চেয়ারম্যান হিসেবে আনিসুর রহমানের নাম উল্লেখ আছে।
সময় এসেছে ভেবে দেখার, সময় এসেছে কথা বলার। স্বাধীন দেশে কেন পশুর জীবন ! ওরা ও মানুষ, ওদের ও বাবা মা অথবা স্বামী/স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে একটি পরিবার রয়েছে, ওদের ও রয়েছে কিছু স্বপ্ন, রয়েছে বেঁচে থাকার অধিকার। দেশের জিডিপিতে যাদের অবদান বেশি, তাদের আর কত জীবন দিলে দেশ আরো উন্নত হবে? লোভী গার্মেন্টস মালিকদের মত নব্য নীল করদের বিরুদ্ধে কথা বলার এখনি সময়।
এদের বিচার চাইঃ
১. সোহেল রানা ঃ রানা প্লাজার মালিক
২. বজলুস সামাদঃ নিউ ওয়েভ বটমস লিমিটেডের চেয়ারম্যান
৩. আমিনুল ইসলাম ঃ ফ্যানটম অ্যাপারেলস ও ফ্যানটম টেকের চেয়ারম্যান
৪. আনিসুর রহমানেরঃ ঈথার টেক্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ২:৫৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




