১.
আমার বন্ধু হাসান মোরশেদ এবার একটা উপন্যাস লেখার সিদ্ধান্ত নিল । সেই উপন্যাস লেখা হল , প্রকাশকের কাছে গেল , প্রুফ দেখা হল , কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই উপন্যাসটি আর প্রকাশিত হলো না ।
কারন কয়েকজন শুভানুধ্যায়ী জানালেন এই উপন্যাসটি " বর্তমান সময়ে "প্রকাশ করাটা ঝুকিপূর্ণ । উপন্যাসে কী ছিল , সেটা হয়তো একদিন সময়ে প্রকাশিত হবে , কিন্তু বাস্তবতা এটাই যে সেই উপন্যাস প্রকাশের পরে দেশে থেকে যাওয়া হাসান মোরশেদের নির্দোষ পরিবার যে কোন গঞ্জনার মুখোমুখি হবেন না , বহু জনের সাথে বহু আলোচনা করেও এর কোন সিদ্ধান্ত নেয়া গেল না ।
২.
আমার একটা মোটরসাইকেল আছে । যারা আমাকে ঢাকা শহরে অনেক আগে থেকেই জানেন , তারা জানেন যে সেই ছোট্ট মোটরসাইকেল দাপিয়ে আমি তুরাগ থেকে শীতলক্ষা আর বুড়িগঙ্গার মাঝ খানের পুরো ঢাকা শহরে আড্ডা মেরে বেড়াতাম ।
একদিন বনানীর রাস্তায় দেখলাম হেলমেট না পরার কারনে এক বয়স্ক ভদ্রলোককে কানে ধরে উঠবস করাচ্ছে যৌথবাহিনী ।
সেই দিনের পরে আমি আর মোটরসাইকেল ব্যবহার করিনি ।
আমি হেলমেট পরি , কিন্তু কে জানে কী পরি না । হয়তো দেখা যাবে আমি বামহাতে ঘড়ি পরি না এই অপরাধেই আমাকে কান ধরে উঠবস করানো হবে রাস্তার মাঝখানে ।
এই ভীতি নিয়ে আমি ঢাকা শহরে ঘুরে বেড়াতে অক্ষম
৩.
তাসনিম খলিল আমাদের ডিপার্টমেন্টের ছাত্র হিসেবে ছাত্র জীবন থেকেই পরিচিত । সেই নিরীহ পড়ুয়া ধরনের ছাত্রটি চাকুরি করছিল ডেইলিস্টার-এ । একই সাথে নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়াচ্ছিল অনেকগুলো । আদিবাসী নেতা চলেশ রিছিল হত্যার অন্ধকার কাহিনী নিয়ে সে গবেষনা করছিল আর সেই তথ্য উপাত্তগুলো প্রকাশ করছিল নিজের ব্লগ সহ দেশী বিদেশী অনেকগুলো মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানের কাছে
এক অন্ধকার রাতে তাসনিম খলিলকে তুলে নেয়া হল তার বাড়ি থেকে । নেয়া হলো ডিজিএফআই'র সদরদপ্তরে ।
তাসনিমের উপর নির্যাতনের সেই চিত্র ইন্টারনেটের কল্যানে অনেকেই দেখেছেন । ছাড়া পাওয়ার পর প্রানভয়ে তাকে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছিল ছোট্ট শিশু আর স্ত্রীকে নিয়ে । আন্তর্জাতিক যোগাযোগের পরে সুইডেন তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছে । তাসনিম খলিলের সেই অত্যাচারের দাগ হয়তো তার শরীর থেকে মুছে যাবে কোন একদিন , কিন্তু আমরা যারা তার ছবি দেখেছি , তাদের মন থেকে এই দাগ কি কোনদিন মুছে যাবে ?
৪.
ব্যরিস্টার রেজওয়ান বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন তার নিকাটাত্মীয়কে সি-অফ করতে ।
(পৃথিবীর এমন কোন বিমানবন্দর আমি দেখিনি যেখানে অনায়াসে এয়ারলাইনের কাউন্টার পর্যন্ত যাওয়া যায় না । ব্যতিক্রম আমাদের বাংলাদেশ । এখানে আপনি যদি ট্যাক্সিক্যাব নিয়ে যান , তাহলে আপনাকে ট্যাক্সি থেকে নামিয়ে পায়ে হেটে উপরে উঠতে বাধ্য করা হবে , ঠিক উপনিবেশ যুগের গোলামদের মতো । তবে দামী গাড়িতে গেলে কোন অসুবিধা নেই ।)
ধরে নিলাম যে উনি সেখানে খুব উদ্ধত আচরন করেছেন এবং আইন ভেঙ্গেছেন , তারপরও তার উপর যে নির্যাতন করা হয়েছে সেটা অমানবিক । ( এই নির্যাতনের কিছু ছবি আমি ইতিমধ্যেই দেখেছি , দেখলে গা গুলিয়ে ওঠে ।)
====================================
১/১১ এর তথাকথিত বিপ্লবের নামে আমাদের ট্যাক্সের টাকায় পোষা সেনাবাহিনী আমাদের উপর নিয়ন্ত্রন নেয়ার জন্য দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়েছে । সেই নিয়ন্ত্রন নেয়ার প্রক্রিয়াটি খুবই ভয়ংকর । তাদের আচার আচরন দেখে মনে হচ্ছে এটা উনাদের দেশ এবং আমরা এই দেশে তাদেরকে জিজিয়া ট্যাক্স দিয়ে বেঁচে থাকা দ্বিতীয় সারির নাগরিক ।
যখন যাকে ইচ্ছা যেখানে ইচ্ছা পেটানোর লাইসেন্স যে তাদের হাতে দেয়া হয় নি , এই বিষয়টি সম্ভবত: তাদেরকে কেউ স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে না ।
অবশ্য স্মরণ করিয়ে দেয়ার সবচাইতে ভালো যে উপায় সেটি হচ্ছে মিডিয়া , কিন্তু মিডিয়া এখানে নিশ্চুপ ।
আগামীকালের ইতিহাসবিদরা নিশ্চয়ই গবেষনায় এটা উল্লেখ করবেন যে , বাংলাদেশের ইতিহাসে এর চাইতে মেরুদন্ডহীন , এর চইতে ভন্ড আর সুবিধাবাদী কাপুরুষ মিডিয়া অতীতে কখনোই দেখা যায় নি । চিহ্নিত ধান্দাবাজদের মাঝে বেছে বেছে ধাগিগুলো এখন সবকটি সংবাদপত্রের সম্পাদক হয়ে বসে আছে ।
এই অসহনীয় পরিস্থিতে নাগরিক হিসেবে আমাদের সকলের উচিত কাউন্টার একটিভ থাকা । প্রত্যেকটি নির্যাতনের ঘটনাকে প্রকাশের জন্য কাজ করে যাওয়া , প্রত্যেকটি নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে নিজ নিজ সাধ্যানুযায়ী কাজ করা ।
আরেকটা উপায় হচ্ছে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিন চত্ত্বর দখলে নিয়ে জায়নামাজ পোড়ানো ।
সেটা যেহেতু বিবেক সম্পন্ন মানুষদের পক্ষে সম্ভব নয় , তাই আপাতত নিজ নিজ অবস্থান থেকে সোচ্চার হওয়াটাই প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে অগ্রাধিকার পাওয়া দরকার ।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৪:০৩