somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারায়নগন্জের ঘটনার প্রেক্ষিতে কিছু কথা

১৭ ই মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শিক্ষকের অবস্থান মাতা পিতারও ওপরে। জীবনভর এটাই জেনে এসেছি। একজন শিক্ষক যখন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যায় তখন দরিদ্র দিনমজুর থেকে শুরু করে, সমাজের উচ্চ শ্রেণির মানুষও তাকে ভক্তি ভরে সালাম দেয়, শ্রদ্ধা জানায়। নারায়নগঞ্জে শিক্ষক লান্ছনার ঘটনাটি টিভিতে দেখে আমি বিস্মিত, স্তব্ধ। সত্যি ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না, কীভাবে আমার অভিব্যক্তি প্রকাশ করব! বুঝতে পারছি না, কতোটা অসভ্য, অসুস্থ একটি সমাজ হলে এ ধরণের একটি ঘটনা ঘটানো সম্ভব! প্রধান শিক্ষক তো দূরের কথা, নিতান্তই গুজবের ওপর ভিত্তি করে একজন মানুষকে এভাবে লান্ছিত করা যেতে পারে না। ভীষণ অবাক হয়েছি আমাদের মিডিয়া কর্মী বন্ধুদের উক্ত শিক্ষকের এই নাজুক অবস্থায় তার প্রতিযোগিতামূলক এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউ গ্রহনের প্রবণতা দেখে! অনেকের ভাবভঙ্গি দেখে তো মনে হচ্ছিল পুরো ঘটনাটা রীতিমতো যেন উপভোগ করছে তারা। মোটেও অবাক হতাম না, যদি তাদের কাওকে আনন্দের অতিশয্যে হাততালি দিতে দেখতাম। সেটাই বরং স্বাভাবিক হতো তাদের জন্য। আর একটি বিষয় আমাকে ভাবাচ্ছে বেশ। উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে সেখানকার সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের ভূমিকা। ঘটনার সত্য মিথ্যা আমি জানি না, যতটুকু দেখেছি ভিসুয়াল মিডিয়ায়, তার প্রেক্ষিতেই আমার এ ক্ষুদ্র উপস্থাপনা। ভিডিওতে দৃশ্যমান উত্তেজিত জনতার আক্রমনাত্বক শোরগোলের মাঝে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান কানে ধরে সেই শিক্ষককে ওঠবস করাচ্ছে এবং তারপর এক পর্যায়ে জনতাকে বলছে, 'ও এখন থানায় যাবে। পথে যেন কেউ কোনরকম বাঁধা না দেয়।' সাদা চোখে পুরো ঘটনায় সেলিম ওসমানের ভূমিকায় আমি দোষের কিছু তো দেখছিই না বরং সেদিন উত্তেজিত জনতার রোষানল থেকে সেই শিক্ষককে মুক্ত করার জন্য তাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। মুখে বড় বড় কথা অনেক বলা যায়, কিন্তু যদি ভিড়ের মানুষগুলো সেই শিক্ষককে সেদিন পিটিয়ে মেরে ফেলত, তাহলে কারও কিছু করার থাকতো না। এর কোনও বিচারও হতো না। আমি আপনি উক্ত ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত থাকলে পুরো দৃশ্য অবলোকন করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারতাম না। উত্তেজিত জনতার প্রহারে সেদিন সেই শিক্ষককে নিশ্চিত মৃত্যু থেকে বাঁচাতে, যদি কানে ধরে ওঠবস করানো লাগে, তবে তাই ঠিক। একটা বিষয় পরিষ্কার, সেদিন সেই আক্রমনাত্বক, উত্তেজিত জনতা উক্ত শিক্ষককে ধর্ম অবমাননার দায়ে শাস্তি দেবার সিদ্ধান্ত নিয়ে এসেছিল। ঘটনাটা এর থেকেও ভয়াবহ কিছু হতে পারতো, এবং তা হলে আমাদের কারও কিছু করার থাকতো না। এর কোনও বিচারও হতো না। পুরো ঘটনাটা অত্যন্ত দুঃখজনক। এতে আমাদের সমাজের মূল্যবোধের অবক্ষয়ের চিত্র ফুটে ওঠে। আসলে প্রকৃত সত্যের মুখোমুখি আমাদের সবাইকে আজ দাঁড়াতে হবে, এই একবিংশ শতাব্দিতে এসেও আসলে মধ্যযুগ আজও বিরাজ করছে আমাদের সমাজে; কোনও মানবতাবোধ নেই, সংবেদনশীলতা নেই। জানি না আমাদের সমাজের এই মধ্যযুগ থেকে বেরোতে আমাদের আরও কতো যুগ লাগবে! কমবেশি সারা দেশেরই চিত্র এরকম। এজন্য আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাও কম দায়ী নয়। মাদ্রাসা শিক্ষা তো দূরের কথা, আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থাতেও গলদ রয়ে গেছে, এখানে স্বধর্মকে শ্রেষ্ঠ দেখানোর পাশাপাশি অন্য ধর্মের বিরুদ্ধে বিষোদাগার করা হয়েছে। অন্য ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষকে ঘৃণিত, নীচ বলে প্রচার করা হয়েছে। মানুষ যা শেখে তারই চর্চা করে। আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে আছে ঘৃণা ও মিথ্যে শ্রেষ্ঠত্বের অহংকার। তাই আমাদের দেশ কখনোই অন্য ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতি সহনশীল তো ছিলই না, বরং সব সময় তাদের ঘৃণা ও অবজ্ঞার চোখে দেখা হয়েছে। শুরু করেছিলাম নাায়নগঞ্জের সংখ্যালঘূ সম্প্রদায়ের এক শিক্ষক নির্যাতনের ঘটনা দিয়ে, সেই সূত্রে অনেক এলোমেলো কথা বলা হলো; কারও বিরক্তির উদ্রেক হয়ে থাকলে আমি দুঃখিত।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১১:২০
১৯টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×