ছবিটা কয়েকদিন আগে তোলা। কী ভিড় যে ছিল সেদিন!
সদরঘাটে সুলতান ভাইয়ের চা'র দোকানে বেশ কিছুদিন পর চা খেলাম; দু' কাপ, যথাক্রমে লেবু ও গুড়। সুলতান ভাইয়ের চা'র দোকান নিয়ে কোনও একটি দৈনিক পত্রিকায় রিপোর্ট পড়েছিলাম। দূরদূরান্ত থেকে লোকজন তার চা'র টানে ছুটে আসে সদরঘাটে। এমনকি ঢাকার কাছের জেলা মুন্সিগঞ্জ নারায়ণগঞ্জ থেকেও। বিশেষ করে তার বিট লবণ দেয়া লেবু চা! চা-টা খেতে কেমন, তার আগে বরং বলি, কীভাবে মানুষ চা খায় তার দোকানে। মোটামুটি ছোটখাটো একটা জনসভার মতো ভিড় লেগে থাকে সন্ধ্যার পর থেকে প্রায় মাঝ রাত অব্দি। দেদার বিক্রি হয় চা। বিরতিহীন চা পরিবেশন করতে করতে ঘেমেনেয়ে একাকার বেচারা সুলতান ভাই। কয়েকদিন আগে একবার কারও উদ্দেশ্যে তাকে আফসোস করে এরকম বলতে শুনেছিলাম যে, বয়স হয়ে যাচ্ছে, এখন এসব আর সে আগের মতো সামলাতে পারে না।
তার দোকানে আমি প্রথম চা খেয়েছিলাম আজ থেকে প্রায় এক যুগ আগে। এ সময়ের একজন প্রতিষ্ঠিত প্রকাশক, মুক্তদেশ প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী জাবেদ ইমন মজুমদার প্রথম সুলতান ভাইয়ের চা'র সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো। এ লেখার মাধ্যমে তাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। পৃথিবীতে কতো কিছুই না বদলে গেছে ইত্যবসরে! এতো এতো সব বদল, পরিবর্তনের মাঝেও সুলতান ভাইয়ের চা'র আবেদন বা স্বাদ একটুও বদলায়নি, আজও তেমনি অটুট রয়ে গেছে। সেই সুস্বাদ, সুঘ্রাণ, সেই শরীর সতেজ করা লেবু বিট লবণ দিয়ে বানানো এক কাপ অমৃত চা। আহ, কী সুস্বাদু! শুধু চা'র স্বাদ, গন্ধ, শারীরিক উদ্দীপিত করাই নয়, এতোটুকু বদলায়নি পারিপার্শ্বিকতাও- সবকিছু অবিকল তেমনিই রয়ে গেছে। আজও সেই জনসমাগম, ধুপধাপ শব্দ, যানবাহনের অবিশ্রাম আনাগোনা, থেকে থেকে বিকট হর্ণ, বাসের হেল্পারের হাকডাক, কিশোর তরুণদের মজার আড্ডা, কয়েকটি দাঁড়ানো মটর সাইকেল, অনবরত সুলতান ভাইয়ের কাপ প্রিচ চামচের টুংটাং। জীবন চলছে জীবনের নিয়মে, জীবনের নিজস্ব গতিতে, আর সাথে সমানতালে চলছে সুলতান ভাইয়ের সুস্বাদু চা। আসলে এ এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা। যারা ঢাকায় থাকে অথচ কখনও সুলতান ভাইয়ের দোকানে চা পান করেননি, তাদের বলবো, শীঘ্রই সময় করে একবার পুরান ঢাকার সদরঘাটে সুলতান ভাইয়ের দোকান থেকে এক কাপ লেবু চা পান করে আসতে। আশা করি কেউ হতাশ হবেন না। সদরঘাটে নেমে কাওকে জিজ্ঞেস করলেই দেখিয়ে দিবে সুলতানের চা'র দোকান। বিট লবণ দেয়া এক কাপ লেবু চা অবশ্যই পান করে যাবেন এখান থেকে। এছাড়া গুড়সহ আরও দুয়েক পদের চা পাওয়া যায়, কিন্তু সেসব লেবু চা'র মতো তেমন জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি। আমি সাধারণত ওখানে লেবু চা ছাড়া অন্য কোনও চা খাই না। এখন প্রতি কাপ চা'র মূল্য সাত টাকা। প্রথম যখন খেয়েছিলাম, তখন বোধহয় তিন কি চার টাকা ছিল! আগেই বলেছি, আজ থেকে প্রায় এক যুগ আগের কথা, আজ আর অতো বিস্তারিত মনে নেই!
যাই হোক, আমার চা পান শেষ। এখন আমি উঠবো। অনেকদিন পর আজ আবার গুড়ের চা খেলাম। নিতান্তই শখের বসে খাওয়া। জানি, অনেকেই আছে গুড়ের চা খুব পছন্দ করেন, কিন্তু আমি তাদের দলে নই। মনে হয় না কাছাকাছি সময়ে আর গুড়ের চা খাওয়া হবে। এখানে তো কিছুতেই নয়! আমি বিট লবণ দেয় লেবু চা-ই খাবো। বারবার খাবো। সুলতান ভাইয়ের মতো সুস্বাদু লেবু চা আর কে বনাতে পারবে!
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:১৪