২০১২ সালের ডিসেম্বরের কনকনে শীতের রাত। ওপার বাংলার শিয়ালদহ স্টেশনে জন আহার রেস্টুরেন্টে বসে আছি, সম্ভবত এক কাপ চা ছিল টেবিলে। ভীষণ শীতের রাত। ন’টা সারে ন’টা বেজে থাকবে। রেস্টুরেন্টটিতে তখন ঠিক আমার পাশে- জানালা সংলগ্ন টেবিলের দু’প্রান্তে বসেছিল, ভারতীয় সেনাবাহিনী’র দুজন বা একজন তরুণ সদস্য (একজনের গা’য়ে ইউনিফর্ম দেখে নিশ্চিত হই, আরেকজনের ব্যাপারে ঠিক নিশ্চিত হতে পারছি না, তার গা’য়ে সৈনিকের পোশাক ছিল কিনা)। উভয়েরই বয়স সর্বোচ্চ পচিশ। ওরা জন আহার’র দশ টাকা (রুপী) মূল্যের পুরি সবজী খাচ্ছিল। ছয়টা সাতটা পুরি, আলুর তরকারি, চাটনি’র প্যাকেজ। মূল্য দশ টাকা ছিল তখন। এ সময় দেখলাম, আনুমানিক এগারো বারো বছর বয়সী নোংরা, আলুথালু, কুচকুচে কালো বর্ণের স্থানীয় জনৈক পথশিশু ঠিক জানালার পাশে জানালার শার্শিতে মুখ ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে, ধ্যান ধরে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে- পুরি সবজী খাওয়া দেখছে লোভাতুর চোখে।
এভাবে বেশ কিছুটা সময় অতিবাহিত হলো। পুরি সবজী খাওয়া তখন প্রায় শেষ প্রান্তে দুজনের। এ সময় দেখলাম, ইউনিফর্ম পরিহিত একজন তরুণ সৈনিক তার অবশিষ্ট দুটি বা তিনটি পুরি আর খানিকটা তরকারি নিয়ে যেয়ে দরজার কাছে শিশুটিকে ডেকে ওর হাতে তুলে দিলো। শিশুটির মুখ নিটোল হাসিতে ভরে উঠলো। হাসতে হাসতে সৈনিকের সেই উচ্ছিষ্ট অবশিষ্ট পুরি সবজী নিয়ে সে খুশিতে এক প্রকার নাচতে নাচতেই প্লাটফর্মের কোনও এক দিকে হেঁটে চলে গেল দ্রুত পা’য়ে। তারপর সেই তরুণ সৈনিকটি আবার ফিরে এসে বসলো তার আগের জায়গায়। আমি রেস্টুরেন্টের ভিতরে বসে বসে দৃশ্যগুলো দেখলাম সুখ ও দুঃখের মিশ্র অনুভূতি নিয়ে। সেই সৈনিকের প্রতি অপার শ্রদ্ধায় আমার মাথা নুয়ে এসেছিল উপস্থিত মুহূর্তে। যেমন ঠিক এখনও ঘটনাটি লিখতে যেয়ে একইরকম মিশ্র অনুভূতিতে ভরে উঠছে মন, একইভাবে শ্রদ্ধায় নতমস্তক হয়ে উঠছি।
আজ আমার এই অত্যন্ত ক্ষুদ্র লেখার মাধ্যমে গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি, ভারতীয় সেনাবাহিনীর সেই তরুণ সদস্যকে। বিশেষ একটি বিষয়ে তার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলবারও সৌভাগ্য হয়েছিল। বেঁচে থাকো হে প্রিয় সৈনিক। দীর্ঘজীবী হও। পৃথিবীর সকল সৈনিক তোমার মতো সুকুমার, আলোকিত মনের অধিকারী হয়ে উঠুক।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০১৮ রাত ১০:৫৪