
১ম পর্ব Click This Link
২য় পর্ব Click This Link
প্রার্থনাকারী যা থেকে দূরে থাকবেনঃ
এক. আল্লাহ ছাড়া অন্যের কাছে দুআ করাঃ
যখন স্পষ্ট হল দুআ হল সর্বোত্তম ইবাদত ও সর্বশ্রেষ্ঠ আনুগত্য এবং যা একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যেই নিবেদন করা মানুষের জন্য কর্তব্য। হোক তা প্রার্থনা অথবা আশ্রয় চাওয়া কিংবা বিপদ-মুক্তি, তা আল্লাহ ব্যতিত অন্য কারো কাছে পেশ করা বৈধ নয়। যে এটা আল্লাহ ব্যতিত অন্যের কাছে পেশ করবে সে কাফের হয়ে যাবে, বের হয়ে যাবে মুসলিম মিল্লাত থেকে। যে সকল বিষয় মানুষ সাহায্য করতে সামর্থ রাখে শুধু সে সকল বিষয় মানুষের কাছে চাওয়া বৈধ। আল্লাহ ব্যতিত অন্য কারো কাছে প্রার্থনা করা যাবে না হোক নবী বা অলী বা পীর বা গাউস-কুতুব অথবা ফিরিশ্তা বা জিন এক কথায় কোনো সৃষ্টিজীবের কাছে দুআ করা যাবে না। আল্লাহ বলেন :
“এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ডাকবে না, যা তোমার উপকার করে না, অপকারও করতে পারে না। কারণ এরূপ করলে তুমি অবশ্যই জালেমদের অন্তর্ভুক্ত হবে। এবং আল্লাহ তোমাকে ক্লেশ দিলে তিনি ব্যতীত তা মোচনকারী আর কেউ নেই এবং আল্লাহ যদি মঙ্গল চান তবে তার অনুগ্রহ রদ করার কেউ নেই। তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তিনি মঙ্গল দান করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।“ (ইউনুস : ১০৬-১০৭)
আল্লাহ তাআলা বলেন:
তুমি আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোনো ইলাহকে ডাকবে না, তিনি ব্যতীত অন্য কোনো ইলাহ নেই। আল্লাহর সত্বা ব্যতীত সমস্ত কিছুই ধ্বংসশীল। বিধান তারই এবং তারই নিকট তোমরা ফিরে যাবে। (আল কাসাস : ৮৮)
আল্লাহ আরো বলেন :
সে ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক বিভ্রান্ত কে, যে আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুকে ডাকে যা কিয়ামত দিবস পর্যন্তও উহাকে সাড়া দেবে না? এবং এগুলো তাদের প্রার্থনা সম্পর্কেও অবহিত নয়। যখন কিয়ামতের দিন মানুষকে একত্র করা হবে তখন এগুলো হবে তাদের শত্রু এবং এগুলো তাদের ইবাদত অস্বীকার করবে। (আল-আহকাফ : ৫-৬)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
এবং এ মসজিদসমূহ আল্লাহর জন্য। সুতরাং আল্লাহর সঙ্গে তোমরা অন্য কাউকে ডাকবে না। (আল-জিন : ১৮)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
যে আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক করা অবস্থায় মৃত্যু বরণ করল যে জাহান্নামে প্রবেশ করল। (বুখারী)
আল্লাহর প্রতি মানুষের সবচেয়ে বড় অবিচার ও সীমালংঘন হল আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো কাছে প্রার্থনা করা। এটা হল শিরক। আল্লাহ শিরকের অপরাধ কখনো ক্ষমা করবেন না।
আল্লাহ বলেন : নিশ্চয় শিরক চরম জুলুম। (লুকমান : ১৩)
আল্লাহ আরো বলেন : সুতরাং যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাত কামনা করে সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকে শরীক না করে। (আল-কাহাফ : ১১০)
মৃত ব্যক্তির কাছে দুআ করা, তার কাছে নিজের প্রয়োজন পেশ করা, বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য তাদের মাযারে ধর্না দেওয়া, তাদের কাছে তাওয়াজ্জুহ লাভের আশা করা, তাদের কবরে যেয়ে দুআ করা হল মারাত্মক শিরকের অন্তর্ভুক্ত।
যারা কবরে শায়িত, মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তাদের সকল আমল বন্ধ হয়ে গেছে। তারা এখন নিজেদের কোনো কল্যাণ বা অকল্যাণ করতে পারে না, তাহলে প্রার্থনাকারীর প্রয়োজন পূরণ করবে কিভাবে? যারা তাদের কাছে দুআ করে তাদের কোনো ধরনের উপকার বা ক্ষতি তারা কখনো করতে পারে না। অনেকে মনে করেন, তাদের মাযারে যেয়ে নিজেদের প্রয়োজন সম্পর্কে দুআ করলে কবরবাসী অলী বা পীর আল্লাহর কাছে দুআ কবুলের জন্য সুপারিশ করবেন। আমরাতো এ ধারণা করি না যে তারা নিজেরা আমাদের কোনো কিছু দিতে পারবেন।
ভাল কথা বটে, কিন্তু এ ধারণা করাই তো শিরক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে মুশরিকদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন তারাতো দেব-দেবীগুলোকে সৃষ্টিকর্তা বা মৃত্যু দাতা কিংবা রিযিকদাতা মনে করত না। এ সকল ব্যাপারে তারা আল্লাহকে প্রভু বলে স্বীকার করত। কিন্তু তারা মনে করত এ সকল দেবদেবী আল্লাহর কাছে তাদের জন্য সুপারিশ করবে, এবং এগুলোর মাধ্যমে তারা আল্লাহ নৈকট্য ও অনুগ্রহ লাভ করবে।
যেমন তাদের বক্তব্য সম্পর্কে আল্লাহ বলেন :
(তারা বলে) আমরা এদের উপাগণা এজন্য করি যে, তারা আমাদের আল্লাহর সান্নিধ্যে এনে দেবে। (যুমার : ০৩)
তাই এ ধারণা পোষণ করা যে নবী বা অলীর মাযারে গিয়ে আল্লাহর কাছে দুআ করলে তারা আমাদের দুআ কবুলের ব্যাপারে সুপারিশ করবেন- মস্তবড় শিরক। যদি নবী বা কোনো গাউস-কুতুব বা আওলিয়ার কবরে গিয়ে আল্লাহর কাছে দুআ করা শিরক হয় তাহলে তাদের কাছে দুআ করা কত বড় জঘন্য শিরক! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যুগের নিকৃষ্ট মুশরিকরাও এ ধরনের শিরক করত না। আল্লাহ সকল মুসলিমকে শিরক থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক দান করুন। তিনি যাকে সঠিক পথ দেখান সে সঠিক পথের দিশা পেয়ে থাকে।
দুই. দুআয় সীমালংঘন করাঃ
আল্লাহ তাআলা বলেন :
তোমরা বিনীতভাবে ও গোপনে তোমাদের প্রতিপালকের কাছে দুআ কর; তিনি সীমালংঘনকারীদের পছন্দ করেন না। (আল-আরাফ : ৫৫)
এ আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, তিনি সীমালংঘনকারীদের পছন্দ করেন না। তাই দুআর মধ্যে সীমালংঘন করলে আল্লাহ সে দুআ কবুল করবেন না।
দুআয় সীমালংঘন কী ? এ সম্পর্কে কয়েকটি বিষয় আলোচনা করা যেতে পারেঃ
(ক) উচ্চস্বরে বা চিৎকার করে দুআ করা
একদল সাহাবী উচ্চস্বরে প্রার্থনা করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের লক্ষ্য করে বললেন :
হে মানবসকল! তোমরা নিজেদের ব্যাপারে মার্জিত পন্থা অবলম্বন কর। তোমরা কোনো বধির বা অনুপস্থিত সত্তাকে আহবান করছ না। তোমরাতো ডাকছ এমন সত্তাকে যিনি সর্বশ্রোতা ও অতি নিকটে এবং তোমাদেরই সঙ্গে। (বুখারী ও মুসলিম)
(খ) দুআয় শিরক করা
আল্লাহ ব্যতীত কোনো নবী, অলী বা পীরদের মাজারে দুআ করা, গাছ, পাথর, পাহাড়. দেব-দেবী, প্রতিকৃতির সামনে দুআ করা শিরক। এমনিভাবে দুআতে এমন অসীলা দেওয়া, কুরআন বা সহীহ হাদীসে যার প্রমাণ নেই তাও শিরক।
(গ) বিদআতী পন্থায় দুআ করা
এমন পদ্ধতিতে দুআ করা যে পদ্ধতি কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়। যেমন পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পর প্রতিদিন জামাআতের সঙ্গে দুআ করা এবং এটাকে সুন্নাত মনে করা। এমনিভাবে জানাযার সালাতের ছালাম ফিরানোর পর পরই জামাতবদ্ধভাবে দুআ করা।
(ঘ) নিজের মৃত্যু কামনা করে দুআ করা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :
বিপদ-মুসীবতের কারণে তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে। যদি এ সম্পর্কে কোনো দুআ করতেই হয় তবে বলবে : হে আল্লাহ! যতক্ষণ আমার জীবন আমার জন্য কল্যাণকর হয় ততক্ষণ আমাকে জীবিত রাখুন। আর যখন মৃত্যু আমার জন্য কল্যাণকর হবে তখন আমাকে মৃত্যু দান করুন। (বুখারী)
হাদীসে আরো এসেছে :
কায়েস থেকে বর্ণিত যে, আমরা খাব্বাব ইবনুল আরতের অসুস্থতা দেখার জন্য গিয়েছিলাম। তাকে সাতটি ছেকা দেয়া হয়েছিল। তিনি বললেন, যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত্যুর জন্য প্রার্থনা করতে নিষেধ না করতেন তাহলে আমি মৃত্যু কামনা করে প্রার্থনা করতাম। (বুখারী ও মুসলিম)
(ঙ) আখিরাতের শাস্তি দুনিয়াতে কামনা করা
এমনভাবে দুআ করা যাবে না যে, হে আল্লাহ! তুমি আমার এ অপরাধের শাস্তি আখিরাতে না দিয়ে দুনিয়াতে দিয়ে দাও। হাদীসে এসেছে :
আনাস রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একজন মুসলমানের অসুস্থতা দেখার জন্য আসলেন। লোকটি খুবই দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি আল্লাহর কাছে কোনো দুআ করেছিলে বা কিছু চেয়েছিলে?’ সে বলল, হা, আমি দুআ করতাম হে আল্লাহ ! আপনি যদি আখেরাতে আমাকে ক্ষমা না করেন তাহলে দুনিয়াতেই আমাকে শাস্তি দিয়ে দেন। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সুবহানাল্লাহ! তুমি তা বরদাশ্ত করতে পারবে না বা সহ্য করতে পারবে না। বরং তুমি এ রকম প্রার্থনা কেন করলে না যে, হে আল্লাহ! দুনিয়াতে আমাদের কল্যাণ দাও এবং কল্যাণ দাও আখেরাতে। এবং জাহান্নামের আগুন থেকে আমাদের মুক্ত রাখো। এরপর সে আল্লাহর কাছে এ দুআ করল। ফলে আল্লাহ তাকে সুস্থ করে দিলেন। (মুসলিম)
তিন. আল্লাহর রহমতকে সীমিত করার প্রার্থনা :
এমন প্রার্থনা করা যে, হে আল্লাহ আমার শষ্যক্ষেত্রে আপনি বরকত দিন অন্য কাউকে নয়। আমার সন্তানদের মানুষ করেন অন্যদের নয়। আমাকে রিযিক দেন অন্যকে নয়। এমন ধরনের দুআ করা নিষেধ। যেমন হাদীসে এসেছে :
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সঙ্গে আমরা সালাতে দাঁড়ালাম। সালাতের মধ্যে এক গ্রাম্য ব্যক্তি এ বলে দুআ কর, হে আল্লাহ! আমার প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং মুহাম্মদ এর প্রতিও। আমাদের মধ্যে অন্য কাউকে অনুগ্রহ করবেন না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ছালাম ফিরালেন তখন ওই গ্রাম্য ব্যক্তিকে বললেন, যা ব্যাপক, তাকে তুমি সীমিত করে দিলে, (বুখারী)
চার. নিজের, পরিবারের বা সম্পদের বিরুদ্ধে দুআ করা :
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :
তোমরা নিজেদের বিরুদ্ধে দুআ করবে না, নিজেদের সন্তানদের বিরুদ্ধে দুআ করবে না, নিজেদের সম্পদের বিরুদ্ধে দুআ করবে না। (মুসলিম)
পাঁচ. ছন্দ ও সুর সহযোগে দুআ করা
ইবনু আব্বাস রা. ইকারামা রহ. কে নছীহত করতে গিয়ে বলেছেন :
দুআয় ছন্দ ও সুর-সঙ্গীত পরিহার করবে। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাহাবিদের যুগ পেয়েছি। তারা সকলে এটা পরিহার করেই চলতেন।’ (বুখারী)
চলবে, ইন শা’ আল্লাহ .................................
মূল: ফায়সাল বিন আলী আল-বা’দানী
অনুবাদ: আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
---- Preaching Authentic Islam in Bangla থেকে সংগৃহীত ।।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



