somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নির্বাণের আগে

১৮ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘূণপোকা আর ছাড়পোকাদের চলাচল শুনি ; ওরা অবসাদের মতন আসছে ;
আমি নিজেকে দেউলিয়া-পরবর্তী অবস্থায় জন্য প্রস্তুত করে নেই ;
আমার টেবিলের কাঠ থেকে পড়ছে ক্ষত আর ক্ষতির গুড়ো ,
একমাত্র নিশ্চিত সত্যি তথা আমার শরীরের প্রতিটি শিরায়
পরজীবিরা গড়ছে দালান ; বীজাণুর কবলে মগজ মরতে থাকে ;
আমি উদবাস্তু বস্তিবাসীর মতন কেবলি দৃশ্য দেখি ;

উড়ালসেতুর নক্সা বাস্তবায়নে মাঝরাতে হয়েছে জড়ো ক্রেন , বুলডোজার ;
আঁধারে চকচক করে হেসে ওঠে করাতের ধারালো হাসি এবং
আততায়ীর মতন মানুষেরা নির্মম টান দেয় চেইনশো এর লিভারে ;
বিনিদ্র চোখে বৃক্ষপ্রেমীরা রাস্তার দু ধারে সবুজের গণহত্যা দেখতে থাকে ;
বট , মেহগনি , সাইকাস , তাল প্রভৃতির অভিন্ন পতন শব্দে পৃথিবী কম্পিত হয় ;
নগর কর্মকর্তারা সিমেন্ট আর ইটের স্তুপ দিয়ে ঢেকে ফেলে উদ্ভিদহীন হাহাকার ;
আমি উল্লাসিত নই ; আমি শোকার্ত নই ; আমি কিরূপ ?

সযত্নে লালিত আনন্দ আর পুলকেরা করবেই প্রতারণা ;
নিরিবিলি ঘরের প্রেমময় কোণে বুকে জড়িয়ে ধরে ব্রা হতে ছুড়ি বের করে
হৃদয়কে এফোঁড়-ওফোঁড় করে রিজেক্টেড কাচামালের মতন ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলবেই ;
তবু আনন্দ , আশা , স্বপ্ন আর প্রতিশ্রুতি জীবনের জন্য অপরিহার্য নয় ;
বিষাদ , হতাশা , দুঃস্বপ্ন আর বেঈমানি দিয়েও বেশ সাজানো যায়
শূন্য জীবনের ঘর ; কংক্রিটের খোপগুলো বেশ সহজেই ভরে দেয়া যায়
কালো দেবতার অক্ষয় আশীর্বাদে ; তাই আমার যাবতীয় আত্মা যায় যদি চলে
পরজীবি আর ক্ষয়কারীর বেনামী দখলে এবং তৈরি হয় অসৃষ্টির ভাগাড় তবে
অসুখের সাথে নতুন সংসার করে হওয়া যাবে সুখী ; এই আশায় এই হতাশায়
আমি কৌতূহল ভরে প্রেয়সীর আকাঙ্খায় চরমতম ক্ষতিকে আহ্বান করি ;


মূলত পৃথিবীত এখন কোথাও আর নিখাদ বেদনা আর বিষাদ যায় না পাওয়া ;
নিঃসঙ্গের বিবর্ণ বিষাদ , লক্ষ্য - চেষ্টা - উদ্যমের মরণে জন্মানো হলুদ হতাশা
ক্ষণিকের অস্বস্তি , খন্ডকালীন অশ্রু আর নাটকীয় হাহাকার ছাড়া কিছু কি দেয় চিরস্থায়ী ?
অসুখের প্রবল পীড়নে নির্বাণের চরমতম সুখ কি দেয় এই দ্বিতীয় শ্রেণীর অপদেবতাগণ ?
একই দুঃস্বপ্ন দেখে দেখে আমি ক্লান্ত অসার ; হাসিতে ফেটে উঠি মাঝে মাঝে ঘুমের মাঝে
কথিত প্রেতাত্মাদের মনে হয় আনকোরা চার্লি চ্যাপ্লিন ; অন্ধকারে বিনোদন দেয় ভাঁড় ;
মানুষ এই বন্ধ্যা সময়ে ভুলে গেছে বেঈমানির নিপুণ শিল্প ; কথার উচ্চারণেই ,
মুখের হাসিতেই আর প্রতিশ্রুতির দলিলেই যদি বুঝে নেয়া যায় বেঈমানি
তবে প্রাপ্ত বেদনা হয়ে যায় সূর্যাস্তের মতন স্বাভাবিক ও ফক্কিকার ;
প্রকৃত অবস্থা এই যে , ঈশ্বর এই জমিনে আর খুজেন না কোনো বান্দা
শয়তান এই জমিনে আর খুজে না কোনো অধম অনুসারী!

জীবন যেন জীবনের সবচেয়ে বড় অসুখ।

নগরীতে এখন কোনো পাখি নেই ; কোনো বৃক্ষ নেই ; কোনো জলাধার নেই
কোনো পুষ্পোদ্যান নেই ; নেই কোনো কুকুর অথবা বিড়াল ধূসর রাস্তায় ;
ইট সুড়কিতে এখানে কোনো তেলাপোকা , ইদুর অথবা বেজি থাকে না লুকিয়ে ;
আনন্দঘন মূহুর্তে এবং বিষাদগর্ভ পরিস্থিতিতে মানুষেরা না হাসে না করে বিলাপ ;
দুই চোখের কালো উপড়ে নিয়ে সেখানে অন্তহীন কংক্রিট ভরে নাগরিকগণ
আধুনিক গৌতম বুদ্ধের মতন ধ্যানে হেটে চলে নির্বিকার ; ম্যাপজুড়ে ছেড়া স্নায়ুর তার ;
এমন সময়ে যখন কেউ বৃক্ষের জন্য কাদে না , না কাদে উড়ালসেতুর জন্য
এমন সময় যখন সবাই পেয়ে গেছে নির্বাণ ; সবাই বুঝে গেছে যা বুঝবার ;
আমি একমাত্র মানুষ হিসেবে এখনো জেগে আছি ;

আমি এখনো রাত হলে বেদনা অনুভর করি ; বেদনাহীন বেদনা
আমি এখনো রাতহলে আনন্দ অনুভর করি ; আনন্দহীন আনন্দ ;
এই ভেজাল আর দুই নম্বরের দুনিয়া ছেড়ে তাই এইখানে আসলাম ;
নগরের এই ঘর থেকেই সবাই পাচ্ছে নির্বাণ ; এইখানেই প্রলয়পল্লি ;
এই ক্ষয়িষ্ণু লাল আলোর ঘরের শীতল মেঝেতে স্তম্ভসম হাই হিল পরে
চরম ক্ষতি আর ধ্বংসের উপমা হয়ে ক্যাটওয়াল্ক করে পরম ডাকিনী ;
রক্তাভ উজ্জ্বল ঠোটে বিনাশ আর বর্ণহীন চোখে প্রলয় খেলা করে ;
তূরীয় দেহবল্লরী ঘিরে চতুর্দিকে ওড়ায় আর ঘোরায় নির্বাণের চাবুক ;
ওড়নার সাথে গ্রীবাতে ঝুলে হাস্যোজ্জ্বল আর শোকার্ত দুই মানুষের মুন্ডু ;
মুহর্তেই চুলের সর্পিল বিনুনি খসে পড়ে শুরু হয় অগ্নি উদগীরণ ;
দুর্ভিক্ষপীড়িতের মতন মানুষেরা সেই আগুনে লাফ দিতে থাকে ;
আমার চোখের সামনে দেখি জীবনগুলো কাবাবের মতন ঝলসে ওঠে
দেখি জীবনের আগুনগুলো এই কালীর আগুনে ক্রমে ক্রমে যায় নিভে
ক্ষয়কারী পচা জীবনের বিনাশে ঘর ভরে যায় নির্বাণের ধূসর ছাইয়ে ;
সময় নষ্ট না করে আমিও আমার বুক পেতে দেই ডাকিনীর পায়ের নিচে ;
চাবুকের মাংসল দাতে একে একে খসে পড়তে থাকে আমার মনুষ্যত্বের সিল ;
টের পাই শৈশব থেকে প্রৌঢ় অবধি জ্বলা অপচয়কারী জীবনের আগুন
ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছে ; আমি প্রলয়োল্লাসে দেবীর প্রতি করি মন্ত্র পাঠঃ
হে প্রলয়া , এই পোড়োজমিন থেকে আমাদের তুমি উপড়ে ফেলো
হে নির্দয়া , আমাদের অনুভূতি জ্বালা চোখ তুমি উপড়ে ফেলো
হে বিনাশী , আমাদের চোখে তুমি পুরে দাও আত্মাহীন ধূসর ছাই
হে ঘূর্ণী , আমাদের শিখাতে ফু দিয়ে দান করো নির্বাণ ।

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:২৩
৮টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×