somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নামজারী বা মিউটেশন

১৮ ই জুলাই, ২০০৯ সকাল ৯:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নামজারী বা মিউটেশন
নামজারী কি?
ভূমি ব্যবস্থাপনায় মিউটেশন বা নামজারী একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। জমি ক্রয় বা অন্য কোন উপায়ে জমির মালিক হয়ে থাকলে হাল নাগাদ রেকর্ড সংশোধন করার ক্ষেত্রে মিউটেশন একটি অপরিহার্য নাম। ইংরেজী মিউটেশন (Mutation) শব্দের বাংলা অর্থ হলো পরিবর্তন। আইনের ভাষায় এই মিউটেশন শব্দটির অর্থই হলো নামজারী। নামজারী বা নাম খারিজ বলতে নতুন মালিকের নামে জমি রেকর্ড করা বুঝায়। অর্থাৎ পুরনো মালিকের নাম বাদ দিয়ে নতুন মালিকের নামে জমি রেকর্ড করাকে নামজারী/নাম খারিজ বলে। ভূমি মালিকানার রেকর্ড বা খতিয়ান বা স্বত্বলিপি হালকরণের জন্য জরিপ কার্যক্রম চূড়ান্ত করতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হয়। যে সময়ের মধ্যে উত্তরাধিকার সূত্রে, এওয়াজ সূত্রে বিক্রয়, দান, খাস জমি বন্দোবস্ত ইত্যাদি ভূমি মালিকানার পরিবর্তন প্রতিনিয়ত ঘটতে থাকে। যে কারণে প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল ভূমি মালিকানার রেকর্ড হালকরণের সুবিধার্থে জমিদারী অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ এর ১৪৩ ধারায় কালেক্টরকে (জেলা প্রশাসক) ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই ক্ষমতা বলে জমা, খারিজ ও নামজারী এবং জমা একত্রিকরণের মাধ্যমে রেকর্ড হাল নাগাদ সংরক্ষণ করা হয়।
কমিশনার (ভূমি) ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়েল ১ঌঌ০ এর ২০ অনুচ্ছেদ বলে নামজারী বা মিউটেশনের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। পূর্বে নামজারীর বা মিউটেশনের দায়িত্ব উপজেলা রাজস্ব বা অফিসার বা সার্কেল অফিসার (রাজস্ব) পালন করতেন।
নামজারী বিষয়ক অধিকার:
নামজারীর মাধ্যমে নতুন মালিকানা তথা হোল্ডিং সৃষ্টি করার অধিকার।
(১৯৫০ সালের স্টেট একুইজিশন এন্ড টেনান্সি এক্টের ১৪৩ ধারা )
নির্ধারিত কোর্ট ফি দিয়ে সহকারী ভূমি কমিশনারের নিকট নাম জারীর জন্য আবেদন করার অধিকার।
(ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল ১৯৯০)
সংশোধিত খতিয়ান সংগ্রহের অধিকার
(ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল ১৯৯০)
ষড়যন্ত্র করে কিংবা ভুলক্রমে অন্যের নামে নামজারী হয়ে থাকলে তা সংশোধনের অধিকার।
(১৯৫০ সালের স্টেট একুইজিশন এন্ড টেনান্সি এক্টের ১৪৩ ধারা )
রাজস্ব অফিসারের আদেশে অসন্তুষ্ট হলে তার বিরুদ্ধে জেলা জজ কিংবা অতিরিক্ত জেলা জজ (রাজস্ব)-এর নিকট মামলা করার অধিকার। (১৯৫০ সালের স্টেট একুইজিশন এন্ড টেনান্সি এক্ট ১৪৭ ধারা)
আপীলের জন্য সময় পাবার অধিকার।
(১৯৫০ সালের স্টেট একুইজিশন এন্ড টেনান্সি এক্ট ১৪৮ ধারা)
রিভিশনের অধিকার (যদি আপীল করা না হয়ে থাকে)
(১৯৫০ সালের স্টেট একুইজিশন এন্ড টেনান্সি এক্ট ১৪৭ ধারা)
রিভিউ পুর্নবিবেচনার অধিকার
(১৯৫০ সালের স্টেট একুইজিশন এন্ড টেনান্সি এক্টের ১৪৯ ধারা।)
জমির ক্রেতা যদি সমবায় সমিতি বা হাউজিং কোম্পানী হয় তাহলে নামজারীর অধিকার।
(১৯৯০ সালের ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়ালের ৩২৭,৩২৮ অনুচ্ছেদ)
লংঘন:
নামজারীর মাধ্যমে জমির মালিকানা সৃষ্টি করতে না দেওয়া।
সংশোধিত খতিয়ানের কপি সংগ্রহ করতে চাইলে তা প্রদান না করা।
নামজারীর সংশোধনের জন্য সময় না দেওয়া।
আপিলের জন্য সময় ও সুযোগ না দেওয়া।
রিভিশনের জন্য সময় ও সুযোগ না দেওয়া।
রিভিউ এর জন্য সময় ও সুযোগ না দেওয়া।
সংশ্লিষ্ট প্রতিকার:
আপিল
রিভিশন
রিভিউ
প্রতিকারের জন্য কোথায় যেতে হবে?
থানা সেটেল্টমেন্ট অফিসে যেতে হবে।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর বরাবরে নামজারীর জন্য লিখিত দরখাস্ত দাখিল করতে হবে।
বড় এবং জটিল নামজারীর ক্ষেত্রে আইনজীবী নিয়োগ করলে ভালো হয়।
আপিলের সুযোগ আছে কি? '
আছে।
নামজারীর বিষয়ে কোন ব্যক্তি অসন্তুষ্ট হলে জেলা প্রশাসকের নিকট আপিল করা যাবে।
(১৯৫০ সালের স্টেট একুইজিশন এন্ড টেনান্সি এক্ট ১৪৮ ধারা)
কতদিনের মধ্যে?
আদেশ প্রদানের তারিখ হতে ৩০ দিনের মধ্যে।
ডি.সি কর্তৃক প্রদত্ত আদেশের বিরূদ্ধে বিভাগীয় কমিশনারের নিকট ৬০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হবে।
বিভাগীয় কমিশনার কর্তৃক প্রদত্ত আদেশের বিরূদ্ধে ৯০ দিনের মধ্যে আপিল দায়ের করতে হবে।
রিভিশনের সুযোগ আছে কি? '
আছে।(যদি আপিল করা না হয়)
অসন্তুষ্ট ব্যক্তির আবেদনের ভিত্তিতে অথবা জেলা প্রশাসক নিজে উক্ত আদেশটি পূর্ননীরিক্ষণ করতে পারবেন।
(১৯৫০ সালের স্টেট একুইজিশন এন্ড টেনান্সি এক্টের ১৪৯ ধারা)
কতদিনের মধ্যে?
প্রদত্ত আদেশের তারিখ হতে ১ (এক) মাসের মধ্যে।
প্রদত্ত আদেশের তারিখ হতে ৩ (তিন) মাসের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের নিকট রিভিশনের জন্য আবেদন করতে হবে।
প্রদত্ত আদেশের তারিখ হতে ৬ (ছয়) মাসের মধ্যে ভুমি প্রশাসন বোর্ড নিজের উদ্যোগে অথবা আবেদনের ভিত্তিতে।
রিভিউ করার অধিকার আছে কি?
'আছে।' (যদি আপিল বা রিভিশন করা না হয়)
(১৯৫০ সালের স্টেট একুইজিশন এন্ড টেনান্সি এক্ট ১৫০ ধারা।)
কতদিনের মধ্যে?
পূর্ববর্তী আদেশ প্রদানের তারিখ হতে ৩০ দিনের মধ্যে রিভিউ এর জন্য আবেদন করতে হবে।
সাহায্যকারী সংগঠন :
"জাতীয় আইন সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা"
(প্রত্যেক জেলার জেলা জজ সাহেবের অফিস)
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট ("ব্লাস্ট")
১৪১/১,সেগুন বাগিচা,ঢাকা-১০০০ ।
ফোন নম্বর- ৮৩১৭১৮৫,৯৩৪৯১২৬ ।
"মাদারীপুর লিগ্যাল এইড এসোসিয়েশন"
নোতাম সাহার, মাদারীপুর ।
ফোন নম্বর-০৬৬১-৫৫৫১৮, ৫৫৬১৮ ।
"নিজেরা করি"
৭/৮,ব্লক-সি,লালমাটিয়া,ঢাকা ।
ফোন নম্বর-৮১২২১৯৯, ৯১৪৪০৮৫ ।
এসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম এন্ড ডেভোলপমেন্ট ("এ.এল.আর.ডি.")
বাড়ী নং-৪০,রোড নং-৪/এ, ধানমন্ডি আ/ এ,ঢাকা-১২০৯ ।
ফোন নম্বর-৯৬৬২৫০৩,৯৬৭১১৭২ ।
নামজারী বা মিউটেশন সম্পর্কে বিস্তারিত:
নামজারীর গুরুত্ব বা আইনগত মূল্য
নামজারীর বিভিন্ন পদ্ধতি
নামজারীর জন্য আবেদনকারীর কি কি করণীয়
নামজারী সহ যে কোন ভূমি ও রাজস্ব বিষয় সংক্রান্ত আদেশে কেউ সংক্ষুদ্ধ হলে তার প্রতিকার
সমবায় বা হাউজিং কোম্পানীর নামজারী
স্থাবর সম্পত্তি বেনামীতে ক্রয় নিষিদ্ধকরণ আইন
নামজারীর গুরুত্ব ও আইনগত মূল্য:
জমিদারী অধিগ্রহণ এবং প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ এর ১৪৩ ধারা মতে -
নামজারী আদেশের ভিত্তিতে সংশোধিত খতিয়ানের সৃষ্টি হয়৷ সরকারী রেকর্ডের ভিত্তিতে মালিকের নাম প্রতিস্থাপিত হয় ৷সবচেয়ে বড় কথা হলো মালিকানা হালনাগাদ (নিশ্চিত) হয় ৷
নামজারীর আদেশ ভুক্ত জমিটুকু পূর্বের জোত জমা থেকে খারিজ বা কর্তন হয়ে আবেদনকারীর নামে নতুন হোল্ডিং এর সৃষ্টি হয় ৷ কোন ব্যক্তি জমি ক্রয় বা অন্য কোন ভাবে জমি প্রাপ্ত হওয়ার পর নামজারী না হওয়া পর্যন্ত তা পূর্বের মালিকের নামেই (হোল্ডিং) থেকে যায় ৷ এর ফলে পূর্বের মালিক ইচ্ছা করলে প্রতরণামূলক ভাবে জমিটি একাধিকবার বিক্রি/হস্তান্তরের সুযোগ নিতে পারে ৷
নামজারী আদেশ মূলে সৃষ্ট সংশোধিত খতিয়ান এর কপি সহকারী ভূমি কমিশনার এর মাধ্যমে বা ভূমি মালিকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সহকারী সেটেল্টমেন্ট অফিসার বা জরিপ কালে বুঝারত/তসদিক/আপত্তি/আপীল স্তরে জরিপ কর্তৃপক্ষের নিকট পেশ করা হলে ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়েল ১৯৯০ এর ৩২০ অনুচ্ছেদ অনুসারে জরিপ কর্তৃপক্ষ সংশোধিত খতিয়ানের ভিত্তিতে নতুন করে রেকর্ড সৃষ্টি করে থাকেন ৷
নিজের জমি নিজের নামে নামজারী না করলে অন্য কোন সহ শরীকে বা পাশ্বᐂবর্তী জমির কোন মালিক তার নামে জমি নামজারী করে নিতে পারে ৷
নামজারী মূলে পৃথক হোল্ডিং খুললে খাজনাদি পরিশোধ করা সহজ হয় ৷
ব্যাংক ঋণ, গৃহ নির্মান ইত্যাদি ঋণ নেয়ার জন্য নামজারী একান্ত প্রয়োজন ৷
তাই ভূমির মালিকানা অর্জনের সাথে সাথে তা নামজারীর মাধ্যমে নিজের নামে রেকর্ড সংশোধন করে হোল্ডিং খুলে জমি জমার রেকর্ড পত্র সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা উচিত ৷
নামজারীর বিভিন্ন পদ্ধতি:
ভূমির মালিকানা যেমন বিভিন্ন ভাবে অর্জিত হয় তেমনি নামজারীর ধরনও বিভিন্ন পদ্ধতিতে হয়ে থাকে।
যেমন:
হস্তান্তর দলিল (এল.টি নোটিশ) মূলে নামজারী
সার্টিফিকেট মূলে নামজারী
এল.এ মোকদ্দমার ভিত্তিতে নামজারী
আদালতের ডিক্রি মূলে নামজারী
উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির নামজারী
আবেদনের ভিত্তিতে নামজারী
হস্তান্তর দলিল (এল.টি.নোটিশ) মূলে নামজারী: দলিল রেজিস্ট্রির পর হস্তান্তর নোটিস (এল.টি. নোটিস) সহকারী ভূমি কমিশনারের অফিসে পাঠাতে হবে। উক্ত নোটিস পাবার পর সহকারী ভূমি কমিশনার তার অফিসে একটি নামজারী কেস নথি খুলে তা তদন্তের জন্য তহসিল অফিসে পাঠাবেন। তহসীলদার সরেজমিনে ও রেকর্ড যাচাই করে বাংলাদেশ ফরম নং ১০৭৮ এ প্রতিবেদন দিবেন।
সার্টিফিকেট মূলে নামজারী:সার্টিফিকেট মূলে কোন খবর সম্পত্তির নিলাম ক্রেতা নামজারীর আবেদন করলে নিলামের বায়না ও দখলনামার ভিত্তিতে নামজারী আবেদন মঞ্জুর করা যাবে। নিলাম ক্রেতা সরকার হলে, 'রেজিষ্ট্রার' (i) I (ii) সংশোধন করতে হবে এবং রেজিষ্ট্রার (Viii) এর খন্ড সংশোধন করতে হবে।
এল. এ. মোকদ্দমার ভিত্তিতে নামজারী: কোন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান ভূমি অধিগ্রহণ করে নামজারীর আবেদন না করলে কালেক্টরের এল.এ. শাখা হতে ভূমি অধিগ্রহণের (এল.এ) মোকদ্দমার নম্বর ও তফশিল সংগ্রহ করে ঐ সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকে তাদের নিজ নামে হোল্ডিং খোলার জন্য নোটিশ আবেদন পাওয়া গেলে পেশকৃত কাগজ পত্র যাচাইক্রমে সংশ্লিষ্ট সংস্থার নামে হোল্ডিং খুলে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করতে হবে।
আদালতের ডিক্রিমূলে নামজারী: আদালতের ডিক্রি মূলে সরকারী খাস জমি এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির নামজারী করা যায় এরূপ ডিক্রির (একতরফা/দোতরফা) এরপর উক্ত জমি পুনরায় রেজিস্ট্রির প্রয়োজন ন।(ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়েল এর ৩২১ অনুচ্ছেদ)
তবে এরূপ ডিক্রি মূলে প্রাপ্ত খাস জমির নাম জারীর আবেদন পাওয়া গেলে একটি নামজারী মোকদ্দমা চালু করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র মতামতের জন্য তা কালেক্টরের (ডি.সি) এর নিকট প্রেরণ করতে হবে।
উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির নামজারী: কোন হোল্ডিং এর মালিকের মৃত্যুতে (যদি তিনি তার সম্পত্তি নিজ নামে আলাদা হোল্ডিং করে গিয়ে থাকেন) তার উত্তরাধিকারীগণ নিজেদের নাম ঐ হোল্ডিং ভূক্ত করার জন্য সহকারী ভূমি কমিশনারের নিকট দরখাস্ত করতে হবে এবং উক্ত দরখাস্তের সাথে সাকশেসন সার্টিফিকেট প্রদান করতে হবে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) গণের বরাবরে প্রেরিত ভূমি প্রশাসন বোর্ডের ১৮-৭-১৯৮৪ ইং তারিখের ২০-এ.এস-১৭/৮৪ (১৪০) নং স্মারকের ৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দরখাস্তকারীকে ম্যাজিষ্ট্রেট/প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা/ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান/সংসদ সদস্যের মত জন প্রতিনিধি কর্তৃক প্রদত্ত সাকশেসন সার্টিফিকেট প্রদান করতে হবে।
উত্তরাধিকারী আবেদনকারী সাকশেসন সার্টিফিকেট সহ নামজারীর জন্য সহকারী ভূমি কমিশনারের নিকট দরখাস্ত দাখিল করলে ভূমি সহকারী কমিশনার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই করে নামজারীর আদেশ দিবেন। এক্ষেত্রে নতুন কোন হোল্ডিং না খুলে মৃত ব্যক্তির নাম কর্তন করে, ফারায়েজ অনুযায়ী হিস্যা/জমির ভাগ বন্টন করে উত্তরাধিকারীদের নাম পূর্বের হোল্ডিং এর জায়গায় হোল্ডিংভুক্ত করলেই চলবে।
(ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল ১৯৯০ এর ৩২১ অনুচ্ছেদ)।
নামজারীর জন্য আবেদনকারীর কি কি করনীয়:
জমি ক্রয়ের পর ক্রেতার প্রাথমিক ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো নিজ নামে কেনা জমির নামজারী করে রেকর্ড সংশোধন করা৷ এজন্য যা যা করনীয় তা হলো:
নির্ধারিত কোর্ট ফি দিয়ে (বর্তমানে ২৫ টাকা) সহকারী ভূমি কমিশনারের বরাবরে আবেদন করতে হবে
আবেদনের সাথে জমির মালিকানা সংক্রান্ত যাবতীয় রেকর্ড পত্রের সত্যায়িত কপি/নকল সংযুক্ত করে দিতে হবে ৷
নামজারীর জন্য কমপক্ষে ২ মাস সময় হাতে নিয়ে নামজারীর আবেদন করতে হবে ৷
আবেদনকারীকে উক্ত জমির ভূমি উন্নয়ন কর বাকী থাকলে তা পরিশোধ করতে হবে ৷
তহসীলদার কর্তৃক আবেদনের উপর তদন্তকালে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সরবরাহ করতে হবে ৷
সহকারী ভূমি কমিশনার কর্তৃক নামজারীর উপর শুনানী কালে জমির মূল কাগজপত্র নিয়ে হাজির হয়ে শুনানীতে অংশ গ্রহণ করতে হবে ৷
বড় এবং জটিল নামজারীর ক্ষেত্রে আইনজীবী নিয়োগ করলে ভালো হয় ৷
নামজারীর আবেদন মঞ্জুর হলে ডি.সি. আর এবং সংশোধিত খতিয়ান সংগ্রহ করে ৯নং রেজিস্টারে নিজ নামে খোলা হোল্ডিং এর নম্বর জেনে নিতে হবে ৷
নামজারীর খতিয়ান ডি. সি. আর. দাখিলা যত্ন সহকারে সংরক্ষণ করতে হবে প্রয়োজন বোধে লেমিনেটিং করে রাখতে হবে ৷
নামজারী সহ যে কোন ভূমি ও রাজস্ব বিষয় সংক্রান্ত আদেশে কোন ব্যক্তি অসন্তুষ্ট হলে তার প্রতিকার:
নামজারী, জমাভাগ বা জমা একত্রীকরণ একটি বিচারিক কার্যক্রম ৷ তাই উক্ত বিষয় সংক্রান্ত মামলার আদেশ/রায়ে কোনো ব্যক্তি সন্তুষ্ট না হলে তিনি প্রতিকারের জন্য উক্ত আদেশ/রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন ৷
১৯৫০ সালের স্টেট একুইজিশন এন্ড টেনান্সি এক্টের ৫ম অংশের ১৪৭ ধারায় রাজস্ব অফিসার কর্তৃক প্রদত্ত প্রতিটি আদি(Original) বা আপিলের আদেশের বিরুদ্ধে সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তিকে আপিল করার অধিকার প্রদান করা হয়েছে ৷
আপীলের সময় সীমা: ১৯৫০ সালের স্টেট একুইজিশন এন্ড টেনান্সি এক্ট এর ১৪৮ ধারায় বলা আছে-
নামজারী মোকদ্দমার কোন আদেশ বা রায়ের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার তারিখ হতে ৩০ দিনের মধ্যে জেলা প্রশাসক (ডি.সি) অথবা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এর বরাবরে সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি আপিল দায়ের করতে পারবে ৷
যদি কোন ব্যক্তি, কালেক্টর বা জেলা প্রশাসক বা ডি.সি কর্তৃক প্রদত্ত রায়ে সন্তুষ্ট না হন তাহলে তিনি রায়ের দিন হতে ৬০ দিনের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনার এর নিকট আপিল দায়ের করতে পারবেন ৷
যদি কোন ব্যক্তি বিভাগীয় কমিশনারের রায়েও সন্তুষ্ট না হন তাহলে তিনি বিভাগীয় কমিশনার কর্তৃক প্রদত্ত রায়ের তারিখ হতে ৯০ দিনের মধ্যে ভূমি আপিল বোর্ডে পুনরায়, আপিল করতে পারবেন ৷ তবে ভূমি আপিল বোর্ডের রায়ই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে ৷
রিভিশনের সময় সীমা: যদি নামজারী সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো রাজস্ব কর্মকর্তার রায়ের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বা কালেক্টর বা ডি.সি এর বরাবরে কোনো আপিল করা না হয় কেবলমাত্র সেক্ষেত্রেই জেলা প্রশাসক বা কালেক্টর বা ডি.সি. সাহেব স্ব উদ্যোগে কিংবা কোনো সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তির আবেদনের ভিত্তিতে উক্ত প্রদত্ত রায় বা আদেশ প্রদানের তারিখ হতে ১ মাসের মধ্যে ঐ আদেশটি পুনঃনিরীক্ষন বা পরিমার্জন বা সংশোধন করতে পারেন ৷ জেলা প্রশাসক বা কালেক্টর কর্তৃক প্রদত্ত আদেশ প্রদানের তারিখ হতে ৩ মাসের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনার তার নিজ উদ্যোগে বা কোন আবেদনের ভিত্তিতে কালেক্টরের আদেশ পরিমার্জন বা সংশোধন করতে পারবেন ৷ (১৯৫০ সালের স্টেট একুইজিশন এন্ড টেনান্সি এক্ট এর অত্র আইনের ১৪৯ ধারা মতে)
এমনকি ভূমি প্রশাসন বোর্ড তার নিজ উদ্যোগে বা কোন আবেদনের ভিত্তিতে বিভাগীয় কমিশনার কর্তৃক প্রদত্ত আদেশের তারিখ হতে ৬ মাসের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনার কর্তৃক প্রদত্ত আদেশ পরিবর্তন বা সংশোধন করতে পারবেন ৷
রিভিউ বা পুনঃ বিবেচনা: ১৯৫০ সালের স্টেট একুইজিশন এন্ড টেনান্সি এক্টের ১৫০ ধারায় রিভিউ বা পুনঃ বিবেচনা বিষয়ে বলা হয়েছে ৷ উক্ত ধারায় বলা হয়েছে যে, কোনো রাজস্ব অফিসার কোনো স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দরখাস্তকারীর দরখাস্তের ভিত্তিতে অথবা নিজ উদ্যোগে তার পূর্ববর্তী রাজস্ব অফিসার কর্তৃক প্রদত্ত যে কোনো আদেশ রিভিউ বা পুনঃবিবেচনা করতে পারবেন এবং উক্ত আদেশটিকে সংশোধন বা পরিবর্তন বা বহাল রাখতে পারবেন ৷ তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই সময়ের সীমাবদ্ধতাকে বেশী গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তা হলো পূর্ববর্তী আদেশ প্রদানের তারিখ হতে ৩০ দিনের মধ্যেই রিভিউ পিটিশনের জন্য আবেদন পেশ করতে হবে ৷
তবে উল্লেখ্য যে, কোন আদেশের বিরুদ্ধে যদি পূর্বে আপিল বা রিভিশন করা হয়ে থাকে তাহলে রিভিউ বা পুনঃ বিবেচনার জন্য আবেদন করা যাবে না ৷
সমবায় বা হাউজিং কোম্পানীর নামজারী:
দ্রুত নগরায়নের প্রক্রিয়ার ফলে ঢাকা সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহর এলাকা বা নিকটবর্তী এলাকায় অনেক সমবায় সমিতি জমি ক্রয় ও উন্নয়ন করে ব্যক্তি বা সংখ্যার নিকট আবাসিক ও অন্যান্য কাজে ব্যবহারের জন্য বরাদ্দ বা বিক্রয় করছে।
১৯১০ সালের ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়েল এর ৩২৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে সমবায় বা হাউজিং কোম্পানী জমি কিনলে তা প্রথমে সমিতি বা কোম্পানীর নামে নাম জারী করতে হবে। সমিতি বা কোম্পানী জমি কেনার পর নাম জারীর জন্য আবেদন করলে নাম জারী কারক কর্তৃপক্ষ জমি মালিকানার প্রচলিত উর্দ্ধসীমা, অতিক্রম হয়েছে কিনা এবং কৃষি জমি কেনার ক্ষেত্রে উপযুক্ত ভূমি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন গ্রহণ করা হয়েছে কিনা পরীক্ষা নিরিক্ষা করে নামজারী করবেন।
উক্ত ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়েলের ৩২৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যেক্ষেত্রে সমবায় সমিতি বা কোম্পানীর নামে নাম জারী হবে, কেবলমাত্র সেক্ষেত্রে সমিতি বা কেম্পানীর নামে নামজারী হওয়ার পর বরাদ্দ প্রাপ্ত ব্যক্তির নাম নামজারীর আবেদনের প্রেক্ষিতে নামজারীর আবেদন গ্রহণ ও কার্যক্রম শুরু করা যাবে।
স্থাবর সম্পত্তি বেনামীতে ক্রয় নিষিদ্ধকরণ আইন:
ভূমি সংস্কার অধ্যাদেশ ১৯৮৪ অধ্যাদেশ নং ১০/১৯৯৮৪, এর ৫ ধারায় বলা হয়েছে কোন ব্যক্তি তার নিজ স্বার্থে বা উপকারার্থে অন্য কোন ব্যক্তির নামে কোন স্থাবর সম্পত্তি ক্রয় করতে পারবেন না।
তাছাড়াও ২০০৪ সালের ডিসেম্বর মাসে ১৯০৮ সালের রেজিস্ট্রেশন আইন সংশোধিত হয়েছে যা ২০০৫ সালের ১লা জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে উক্ত সংশোধনীতে বলা হয়েছে যে জমি ক্রয়ের সময় ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়ের ছবি লাগবে সুতরাং এখন থেকে আর বেনামীতে জমি ক্রয় করা যাবে না।




সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০০৯ সকাল ৯:৫৪
৭টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×