somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মালাউন : গালি না বুলি ?

০৩ রা মে, ২০১৫ রাত ২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা সনাতন ধর্মাবলম্বী। আমাদের হিন্দু বলা হয়। কেওবা ভালবেসে বা মন্দবেসে ‘মালাউন’ শব্দটা ব্যবহার করে থাকেন। ইসলাম ধর্মাবলম্বী কাওকে ‘নেড়ে’ বলে ডাকার অধিকার আর সাহস এই সোনার বাংলায় কেউ আমাদের দেয়নি সেটা ভালবেসে বা মন্দবেসে যাই হোকনা কেন। তাহলে আমাদের কি বাংলাদেশের মুসলমানরা একটু বেশিই ভালবাসে? পরিসংখ্যান, ঘটনাপ্রবাহ আর ইতিহাস তা বলেনা। একথা বলা হয়ে থাকে কিংবা বইয়ে লেখা থাকে বাংলাদেশে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খৃস্টানরা মিলিত ভবে বসবাস করে। একথা সত্যি, একটুও মিথ্যা নেই। তবে হিন্দুরা মিল দিয়ে থাকে বলেই মিলেমিশে থাকে।
১৯৭১ সালের কথাই ধরা যাক। অসংখ্য শহীদদের মাঝে একটাও কি আমাদের পূর্ব্পুরুষ মানে হিন্দু ছিলনা ? শুধু মুসলমানরাই দেশ স্বাধীন করেছে? আমার মনে হয় তা না। অসংখ্য শহীদের মাঝে আমাদের কারও না কারও বাবা, কাকা, দাদা কিংবা কোনও আত্মীয় সম্পর্কের কেউ না কেউ নিশ্চিত ছিল। তবে কোন কথা বলতে গেলে কেন আমাদের উপর প্রয়োগ করা হয় “মালাউনের বাচ্চা” শব্দটা ? আমরা কি সত্যিই অতটা ঘৃন্য যে আমাদের ইচ্ছেমত গালি দেওয়া যাবে। আমরাইবা এতটা দূর্বল কেন যে সেই গালি বিনা-প্রতিবাদে মেনে নেব?
ফেসবুকের কথাই ধরা যাক্। কোন ভারত বিষয়ক লেখা পোস্ট করলে তাতে যদি কোনও হিন্দু (আমরা) মন্তব্য করি আমাদের নির্দিষ্ট করে বলা হয় ‘মালাউন’ ও ‘রেন্ডিয়া’ প্রভৃতি। কেন বলা হয় ? আমাদের জন্ম কি ভারতে ? না আমাদের বাংলাদেশকে আমরা ভালবাসিনা। নাকি আমাদের সুন্নতে খৎনা হয়নি এজন্যেই। উত্তরাধীকারসূত্রে পুরুষাঙ্গে সামান্য ব্লেডের আঁচড় পড়লেই কি হিন্দুদের গালাগালি করার লাইসেন্স পাওয়া যায় ? কে দেয় সে লাইসেন্স? এক্ষেত্রে লাই( মিথ্যা) বলার সেন্স( জ্ঞান) –ই কি লাইসেন্স ? আপনারা যারা শ্রদ্ধেয় মুসলিম ভাই আছেন( সংস্কার বশঃত ‘নেড়ে’ বলার সাহস বা অধিকার নেই ,একবিন্দু অধিকার নেই আপনাদের ধর্ম্ বিশ্বাস ধরে নাড়া দেওয়ার) তারা কি বলতে পারবেন কখনও আপনাদের ধর্মকে আমরা গালাগালি করেছি? আপনারা অসংখ্য উদাহরন দেখাবেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসলামের উপর অমানবিক অত্যাচার করা হয়েছে। আমিও মানি কথাটা কারন কথা একবোরেই মিথ্যা নয়, পুরোপুরি সত্যি। এর মানে কি আপনারাও আমাদের উপর অত্যাচার করবেন ? ঝি কে মেরে কি বৌকে শিক্ষা দেবেন ? আমরা বর্তমান প্রজন্ম তো আজন্ম আপনাদের পাশে থেকেছি, একথালায় খাবার খেয়েছি, একসাথে উঠেছি বসেছি। তবু কেন আমাদের সন্মন্ধে আপনাদের বেশির ভাগের মনে কাঁটার মত‘ মালাউন’ কথাটা লেগে আছে ? আপনারা কি আমাদের শত্রু মনে করেন ? করলেও কেন করেন ? আমরা কি আদৌ শত্রু হয়েছি আপনাদের (সেটা ভয়েই হোক বা ইচ্ছাকৃত) কখনও হইনি তো ! তবে কেন আমাদের ভালবেসে মালাউনের বাচ্চা শব্দটা ব্যবহার করে অপমান করেন পদে পদে? আমাদের সীমাবদ্ধতাটা মনে করিয়ে দেওয়াটা কি খুবই জরুরী ?
আমাদের এক বন্ধু একদিন আমাকে বলেছিল, “তোরা মালাউনরা তো আবার ভীড়ের মাঝে যাস্ না, ভীড় দেখলেই ভারতে কেটে পড়িস।” আমার বন্ধুটি অবশ্যই খারাপভেবে কথাটা বলেনি, রসিকতা করেছিল। আমি তাতে কিছু মনেও করিনি। কিন্তু একথাটা ভাবল কেন আর কথাটা ব্যবহার করল কেন ? নিশ্চয়ই কোথাও থেকে শুনেছে। কিন্তু যে বলেছে, কেন বলেছে ? আমরা হিন্দুরা নিশ্চয়ই খুব বেশি খারাপ বা আগের জন্মে (পরজন্ম মানি বলেই বলছি) বৃহৎ পাপের ফল হিসাবেই আমরা বাংলাদেশের হিন্দু হয়ে জন্মেছি। বন্ধুর বলা কথাতে রাগে চোখ লাল না হলেও ইষৎ বেদনায় মুখের নীল হওয়ার অধিকার বিধাতা মালাউনদের কাছ থেকে এখনও কেড়ে নেননি।
ভারতীয় ক্রিকেট দলের সাথে বাংলাদেশের খেলার সময় আমরা বাংলাদেশের সাপোর্টাররা নাকি অলিখিতভাবে ভারতের সাপোর্টার। আদতে কি আমরা তাই ? আমাদের হিন্দুদের মাঝে অনেকেই তো ভারত-বাংলাদেশের ম্যাচ কারচুপির পরে অন্য দলের সাথে খেলা হলেও ভারতের সাপোর্ট্ করেন না। ভারতের খেলা দেখাও বন্ধ করে দিয়েছেন অনেকে। সেটা কি তাহলে অভিনয় ? আমরা কি আসলেই অনেক বড় অভিনেতা যে আমরা বাংলাদেশকে মনেপ্রানে ভালবাসি একথা বিশ্বাস না করেও বলি। আমরা জাতীয় সংগীত শুনে কেঁদে ফেলি সেটা কি আসলেই অনেক বড় অভিনয় ? এতবড় অভিনয়ের খবর কেও না জানলেও বাংলা্দেশের বেশকিছু সংখ্যক মুসলিমের অজানা নয়। কারও কারও কাছে আমরা মানুষ নই শুধুমাত্র “মালাউনের বাচ্চা”। আচ্চা, শুয়োরের বাচ্চার মত মালাউনের বাচ্চাও কি একটা অনেক বড় গালি ? একজন হিন্দুর কাছে কি তাই মনে হয়না ?
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মানুষ্ঠান ঈদ। সেটাতো আমাদেরও উৎসব মনে করি আমরা। আমরাও তো পাজ্ঞাবী পরে, মজার মজার খাবার খেয়ে মজা করে বেড়াই। তাহলে আমাদের “মালাউন” বলে কেন ? আমাদের পিঠে বা কপালে কি মালাউনের ছাপ মারা আছে ? আমাদের বন্ধুরাইবা কেন তাদের কথার প্রতিবাদ করেনা ? তাহলে তাদের মনেও কি গাঁথা আছে মালাউন কাঁটা। আমাদের ধর্মানুষ্ঠানে তোমরা এলে কি কোন খারাপ আচরন করি কখনও। ভেবে দেখ, আমাদের মায়ের হাতের নাড়ু আর মিষ্টিতে কোন অভিনয় লুকানো নেই। আমাদের মায়েরা মনে করেন, ওতে তোমাদেরও ভাগ আছে ঠিক তোমাদের মায়েরা যেমন মনে করেন। আর তোমাদের মায়ের মত আমাদের মায়েরাও তোমাদের ভাগ হিসাব করেই পরম মমতায় খাদ্যদ্রব্যগুলো তৈরী করেন। তোমাদের বাড়ীতে গেলে তোমাদের মা যেমন আপ্যায়ন করেন আমদের মায়েরাও করেন। আসলে মায়েরা মনে হয় একই রকম হয়। এদের কাছে জাত-পাত্ কোনওটাই প্রাধান্য পায় না। এত ভালবাসা আমাদের মাঝে তবুও তো আমরা মালাউন, তোমরা যেটা ভালবেসে বা মন্দবেসে বল।
ধর্মনিরপেক্ষ একটা দেশের নাগরিক হিসাবে আমাদের নিরন্তর শুনতে হচ্ছে “মালাউনের বাচ্চা” গালি । হ্যাঁ আমরা “মালাউনের বাচ্চা” কিন্তু মানুষ তো ! নাকি শুওরের বাচ্চার মত মনে হয় ! আমরা যদিও জানি আমরা মালাউন এবং মানুষ। কিন্তু তোমাদের ভালবেসে নিরন্তর মালাউনের বাচ্চা বলায় আমাদেরও মনে হচ্ছে আমরা শুওরের বাচ্চার মত কোন একটা জীব। আমাদের যে নিরন্তর ভারতীয়দের সাথে তুলনা কর আমাদের কেউ কেউ তো কখনও ভারতে যায়ওনি বা দেখেনি ভারতীয়দের। তাহলে আমাদের ভারতীয়দের জারজ সন্তায় হিসাবে কেন তুলনা কর? আমাদের কি ভারতে চলে যাওয়ার আকাঙ্খা সেটা কি খুবই অন্যায়? আমরা সেধে ভারতে যাইনা, কেউই নিজের পৃথিবী, বা দে|শকে ছেড়ে যেতে চায়না। তবু আমরা যাই কারন আমরা বৈষম্যের শিকার।
জীবনে চলার পথে কারও সাথে কারও গন্ডোগোল লাগতেই পারে|। সেটা যদি কোন হিন্দুর সাথে হয় তাহলে , “ও মালাউনদের মারামারি! ওর ভিতরে গিয়ে লাভ কি ?” এ কথাটাই তোমরা ব্যবহার কর আর তোমাদের সাথে বাঁধলে,“ শালা মালাউনের বাচ্চার এতবড় সাহস, মুসলমানের গায়ে হাত তুলল। মার ওটাকে।” আমাদের মারা যায়, অপমান করা যায়, আমাদের মন্দিরের বারান্দায় পায়খানা করা যায়, আরও অনেক কিছু করা যায় কারন বিচার হয় না। মালাউনের আবার বিচার কিসের? এভাবেই ভাবেতো তোমাদের ভেতরের অনেক লোকে। আমরা ইন্ডিয়াই যেতে চাই সেটা সাধ করে নয় বেঁচে থাকার সাধ্যের অভাবে।
আমরাও তো স্বপ্ন দেখি তোমাদের সাথে পথ চলার, খোলামাঠে ঘুড়ি ওড়ানোর, নদীতীরে বসে সূর্য্য দেখার, কিংবা ঈদের দিনে একসাথে দলবেঁধে ঘুরে বেড়ানোর, দূর্গাপূজা কিংবা হোলির দিনে একসাথে রং মাখার। আমরা এগুলো করিও তবু মনে বিঁধে থাকে অস্বস্তির কাঁটা, আমরা মালাউনের বাচ্চা, মানুষের মত হলেও শুওরের বাচ্চা জাতীয় কিছু।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জেনারেল রাও ফরমান আলী ছিল ইন্ডিয়ান 'র'-এর এজেন্ট

লিখেছেন ধূসর সন্ধ্যা, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২২



জেনারেল রাও ফরমান আলী ছিল ইন্ডিয়ান 'র'-এর একজন এজেন্ট। এই তথ্য কেউ জানতো না। তার ফ্যামিলিও জানতো না। ১৯৪১ সালে বর্ডার ক্রস করে সে ঢুকেছিল পাকিস্তান। তারপর আস্তে আস্তে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×