somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাঝিপাড়ার শিশুদের স্কুলের স্বপ্ন বাস্তবায়ন-১ (আপডেটেড)

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ দুপুর ২:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লক্ষ্মীপুর সদর থেকে প্রায় বার কিলোমিটার দক্ষিণে মজু চৌধুরীর হাট নামক একটি জায়গা আছে। চমৎকার একটি পর্যটন কেন্দ্র হতে পারে এটি। শহরের কোলাহল থেকে মুক্ত থাকার জন্য মোটর সাইকেল হাঁকিয়ে শহর থেকে অনেকেই স্বপরিবারে মেঘনা নদীর বুকে বেড়াতে চলে যায়। লক্ষ্মীপুর শহর ছাড়িয়ে দুইপাশে ঘন গাছের ছায়াশীতল পথ মাড়িয়ে মজু চৌধুরী হাট পৌঁছুতে মনটা আনন্দে ভরে যায়।

কিছুদিন আগেও এই স্থানটি তেমন পরিচিত ছিল না। এখান থেকে ভোলা যাওয়ার সহজ এবং সংক্ষিপ্ত একটি নদীপথ স্থানটিকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। এখান থেকে প্রতিদিন দুইটি ফেরি ছাড়ে ভোলাগামী বাস-ট্রাক নিয়ে। আগে যেখানে ঢাকা ঘুরে বরিশাল রোডে ভোলা যেতে হতো, সেখানে মাত্র তিন/চার ঘন্টার পথ- মজু চৌধুরী হাট থেকে।
মেঘনা নদীর একটি শাখাকে শাসন করার জন্য একটি স্লুইস গেট আছে। স্লুইস গেটের উপর দিয়েই একটি রাস্তা এগিয়ে গিয়ে বহুদূর বিস্তৃত চর অঞ্চলের দিকে চলে গেছে।

স্লুইস গেট পার হয়ে হাতের ডানদিকে একটি কাচা রাস্তা পশ্চিমে মেঘনা নদীর শাখাকে দুই ভাগ করে দাড়িয়ে আছে। রাস্তাটি দৈর্ঘ্যে আনুমানিক ৫০০ গজ হবে। কাচা রাস্তাটিকে ঘিরে দুই পাশে প্রায় ৬০/৭০টি মাঝি পরিবার থাকে। প্রায় ৭০/৮০ বৎসর ধরে এ স্থানটিকে কেন্দ্র করে এই জনপদটি গড়ে উঠেছে। এরা মেঘনার বুকে নৌকা নিয়ে সারা দিনমান ব্যাপী ইলিশ ধরে। মহাজনের নিকট বিক্রি করে যা পায় তা দিয়েই চাল,ডাল, তেল, নুন কিনে এনে নৌকায় বসেই রান্না করে। পরিবারের সবাই মিলে খায়। নৌকার মধ্যেই ঘুমায়।

৬০-৭০ টি পরিবারে গড়ে ৭-৮ জন করে সদস্য ধরলে মোট ৫০০ জনের একটি জনগোষ্ঠী। এরা বছরের পর বছর ধরে এখানে থাকছে। বড় হচ্ছে। বিয়ে শাদি করছে। পৃথক হয়ে আরেকটি নৌকার মালিক হচ্ছে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে এই মাঝিপাড়ার পুরো জনগোষ্ঠীতে মাত্র একজন কোনরকমে দাখিল পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন করতে পেরেছে কিন্তু পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি। ওর নাম মোঃ সোহরাব। মাঝিপাড়ায় শিক্ষিত ব্যাক্তি হিসেবে সোহরাবের খুব সম্মান। সোহরাব নৌকা ছেড়ে টেঁকে (নদীর পাশে গ্রামে) গিয়ে উঠেছে স্ত্রী সহ। সোহরাবের স্ত্রী ক্লাস সিক্স পর্যন্ত পড়েছে। বিয়ের পর কিছুদিন সোহরাব স্ত্রী সহ নৌকায় ছিল।
ওরা চলে যাবার পর এই জনপদে আর শিক্ষিত ব্যক্তি বলতে রইলো একই নামের আরেকজন, সোহরাব মাঝি। ক্লাস থ্রি পর্যন্ত পড়াশুনা। এই মাঝির বয়স ৩৮ বছর হবে। ৩ ছেলেমেয়ে সহ ৫ জনের সংসার তার। বাচ্চা তিনটির বয়স চার থেকে সাত পর্যন্ত।

প্রতি সংসারে গড়ে ৪ জন করে প্রায় ২৫০ জন শিশু-কিশোর। জনপদটির আশেপাশে কোন স্কুল নেই যে শিশুরা পড়বে। সারাদিন নৌকায় কাটিয়ে এরা মাছ ধরে। ছোট্ট ছোট্ট শিশুরা বৈঠা ধরে নৌকাকে সুদূর মেঘনার বুকে জেগে ওঠা চরে নিয়ে যায়। সূর্য যখন পশ্চিম পাটে অস্ত যায়, শিশুরা ঘরে ফিরে।
স্থল বলতে ৫০০ গজের রাস্তার এই শেষ মাথাটুকু। ওখানে মার্বেল খেলা, মাটির মধ্যে দাগ টেনে ঘুটি খেলা কিংবা ছোঁয়া-ছুয়ি খেলা এগুলোই শিশুদের বিনোদন।
চলতি বছর এখানকার বয়ষ্ক বাসিন্দাদের ভোটার করা হয়েছে। এলাকার মেম্বার, চেয়ারম্যান এসে ভোটারদের সাথে হাত মিলিয়ে ভোট চেয়ে গেছে- কিন্তু কেউ বাচ্চাদের একটি স্কুলের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেনি।

এই ২৫০টি বাচ্চার জন্য সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে একটি স্কুল গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত থেকে ১৪ জুলাই/০৮ তারিখে একটি পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়।
গত ২৬ আগষ্ট মাঝিপাড়ার অধিবাসীদের মধ্যে বিদ্যানুরাগী ৫ জনকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। সদস্যরা সবাই মিলে সুন্দর একটি স্কুলের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে তাদের ছোট ছোট বাচ্চারা সবাই সুর করে পড়বে অ-তে অজগর ঐ আসছে তেড়ে কিংবা আ-তে আমটি আমি খাব পেড়ে। মাঝিপাড়ার সেই মাঝিদের স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি একটি স্কুল ঘর করে দেওয়ার ।

প্রথমে ভেবেছিলাম শুধু বাঁশের পালা বসিয়ে উপরে ত্রিপল দিয়ে একটি পাঠশালা গড়ে তুলবো। কিন্তু বাতাসের তোড়ে এরকম একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৬ মাসও টিকবে না। মাঝিদের আবার স্বপ্নভঙ্গ হবে। তাই অন্তত টিনের চালা দিয়ে একটি স্থায়ী ঘর তুলে দিতে হবে।
মাঝিদের স্বপ্নের এই ঘরটুকুকে একটু ভালো করে তুলে দিতে পারলে ওরা নতুন স্বপ্ন দেখে বেঁচে থাকতে পারতো। বর্তমান এই দুর্মূল্যের বাজারে টিনের ছাউনি দেওয়া সামান্য একটু স্থাপনা গড়ে তুলতে বিশ/ত্রিশ হাজার টাকা চলে যায়। মাত্র ৬০ জন ব্যক্তি ৫০০ টাকা করে দিলেই মাঝিপাড়ার শিশুদের জন্য এরকম একটি স্বপ্নের বাস্তবায়ন সম্ভব।

মাত্র ৪ জন ব্যক্তি মাসপ্রতি ৫০০ টাকা করে দিলেই শিক্ষক সহ অন্যান্য ন্যূনতম সুবিধাগুলো দেওয়া সম্ভব।
মাঝিপাড়ার সেই রোস্তম আলী, চুন্নু মোল্লা, হানিফ বয়াতিরা অপেক্ষায় আছে তাদের একটি স্বপ্নের স্কুল ঘর থাকবে।
আসুন না আমরা সবাই মিলে মাঝিপাড়ার এই স্কুল ঘরটি নির্মানে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই। একটি স্বপ্ন বাস্তবায়নে অংশীদার হই।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৯:২৬
১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×