আমরা তথ্য-প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষতার যুগে বাস করছি। বর্তমানে আমরা ত্রি-ডি টিভিতে যেমন জীবন্ত ছবি উপভোগ করছি তেমনি টাচ-স্ক্রীন মুঠোফোন পুরো বিশ্বের তথ্য-উপাত্ত কিংবা বিনোদন হাতের আঙ্গুলের স্পর্শের নীচে এনে দিয়েছে। সকালে উঠা থেকে গভীর রাতে ঘুমানো পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে আমরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি। প্রতিটি আধুনিক আবিস্কার আমাদের জীবনকে করেছে বিলাসবহুল, সহজ এবং গতিময়। এ গতিময়তার সাথে চলতে গিয়ে আমরা দিনদিন যন্ত্রনির্ভর হয়ে পড়েছি। আরো সহজ করে বললে বলতে হয় আমাদের জীবন হয়ে গেছে যান্ত্রিক। আর এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে, আমরা যতই যান্ত্রিক জীবন-যাপন করছি ততই আমাদের প্রিয় বন্ধনগুলো আস্তে আস্তে গৌন হয়ে উঠছে। আমরা অনেকে কর্মক্ষেত্রে থাকি কম্পিউটারের সাথে । বাসায় অবসরে থাকলে আমাদের পাশে থাকা প্রিয়জনদের সময় দেয়া তো দুরের আন্তরিকতার সাথে দুয়েকটা কথা পর্যন্ত বলিনা । কারণ বাসার অবসরে আমাদের হাতে থাকে রিমোট যা দিয়ে আমরা স্যাটেলাইট চ্যানেল পরিবর্তনে ব্যস্ত থাকি। আর এক সময় স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো চরম বিরক্ত লাগলে কম্পিউটার নিয়ে বসি ।এর পর শুরু হয় ঘন্টার পর ঘন্টা অপ্রযোজনীয় টুইটারিং, ফেইসবুকিং বা উদ্দেশ্যবিহীন নেট সার্ফিং। আসলে আমরা নিজেরাই জানিনা কোথায় আমরা বিনোদন পাই। এভাবে দিনের পর দিনের পর দিন বিনোদন নামক মরিচিকার পেছনে আমরা প্রচুর সময় ব্যয় করছি। আমরা অনেকে শিক্ষামূলক সাইটের তুলনায় পর্ণো সাইটগুলোতে বেশী ভিজিট করি। এতে আমাদের অনেকের চরিত্র যেমন চুলোয় যাচ্ছে তেমনি নৈতিকতা তলানিতে গিয়ে ঠেকছে। অনেকে সামাজিক সাইটে অসামাজিক সর্ম্পক গড়ে তোলে সর্গীয় সংসারকে নরকে পরিনত করছি। এ ভাবে মানবতার সর্বশেষ বিন্দুটা হারিয়ে যন্ত্র-মানবে পরিণত হয়ে যাচ্ছি।
এমতাবন্থায় মানবতাকে রক্ষা করতে প্রযুক্তি ছেড়ে দিয়ে পিছনে আসা সম্ভব নয়। কারণ আমাদের সবকিছু বর্তমানে ই-মেইল বা ইন্টারনেট বেইজ্ড হয় গেছে। নেটে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে বাকি সময় উদ্দেশ্যবিহীন সাফিং এর পরিবর্তে সাহিত্য তথা মননশীল প্রবন্ধ, গল্প কিংবা কবিতা পড়ার এবং লেখার অভ্যাস গড়ে তোলতে পারি। এতে আমরা বিনোদনের পাশাপাশি মানবিক মূল্যাবোধগুলোকে আরো শক্তিশালী করতে সক্ষম হব। পত্রিকায় যেহেতু পড়ার সুযোগ সবার আছে ঠিকই কিন্তু নিজেদের মননশীল লেখা ছাপানোর সুযোগ পান না। এক্ষেত্রে সৃজনশীল লেখকদের প্রতিভা বিকাশে বড় অবদান রাখতে পারে সুস্থ বাংলা ব্লগ।আবার আরেক দিকে চিন্তা করলে বাংলা ব্লগে এক সাথে প্রবন্ধ, ছড়া, গল্প, উপন্যাস, কবিতা, রাজনীতি,সমাজ, অনুবাদ সহ সবধরনের লেখার চলমান লেখার অপূর্ব সমাহার যা একটি দৈনিক বা সাপ্তাহিকের পক্ষেও দেয়া প্রায় অসম্ভব। সবচেয়ে মজার দিকটি হল ব্লগে একজন আগ্রহী পাঠক সহজেই হয়ে উঠতে পারেন একজন লেখক । আর যখন সাধারণ পাঠক বা লেখকের (ব্লগার) লেখা যখন ব্লগে প্রকাশিত হয় তখন যে আনন্দ পাওয়া যায় তা টাকা দিয়ে কেনা যায় না। আর সহ-ব্লগাররা যখন মন্তব্য করেন তখন ব্লগ-লেখকের আনন্দ বহুগুনে বেড়ে যায়। এভাবে একজন ব্লগার আরো ভালো লেখার জন্য উৎসাহিত হন। স্বাভাবিকভাবে পরবর্তী লেখার প্রস্তুতি নেয়ার জন্য ব্লগারকে প্রচুর পড়তে হয়। এ ভাবে একজন ব্লগার হয়ে উঠেন একজন ভাল পাঠক,সৃজনশীল লেখক এবং মননশীল মন্তব্যকারী। এটা নিশ্চিত করে বলা যায়, সুস্থ-ব্লগ এ একজন ব্লগার যতক্ষন থাকেন ততক্ষনই তিনি হয় পাঠক না হয় লেখক অর্থাৎ পুরো সময়টাই তিনি পড়ে বা লিখে কাটালেন। একজন ব্লগার যখন সাইন-আউট করেন তখন তিনি একটি নতুন অনুভূতি নিয়ে উঠেন যা মনকে যেমন সতেজ করে তেমনি দৃষ্টিভঙ্গিকে করে ইতিবাচক করে তোলে। এভাবে একজন সুস্থ ব্লগের ব্লগারের মধ্যে সৃষ্টি হয় মনুষ্যত্ববোধ, সহানুভূতি, পরমত সহমর্মিতা, আবেগ কিংবা শ্রদ্ধাবোধের মত অমূল্য সব মানবিক গুনাবলী।
আজ আমাদের সমাজে এগুনগুলো বড়ই প্রয়োজন।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:২৫