somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চীনের টাইমবম্ব টিক টিক করছে।

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে চীন বেশ উদ্বেলিত। ট্রাম্প লোকটা প্রোটেকশনিস্ট ,আমেরিকায় ইমপোর্ট কমিয়ে দেশেই উৎপাদন বাড়াতে চায় ,আমেরিকান জন্য জব ক্রিয়েট করতে চায় --বক বক করার সাথে সাথে ইত্যাদি প্রভৃতি আরো অনেক কিছু করতে চায়। এখন আমেরিকায় সবথেকে বেশী এক্সপোর্ট করে চীন। চীনের অর্থনীতির এক বিরাট অংশ দাঁড়িয়ে আছে এক্সপোর্ট ওরিয়েন্টেড ইন্ডাস্ট্রির ওপর ,কয়েক কোটি চাইনিজ এই এক্সপোর্ট এই সেক্টরে কাজ করে। চীনের অন্য বৃহত্তম এক্সপোর্ট মার্কেট গুলো হলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন , মিডল ইস্ট ,জাপান এবং ভারত।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর দেশগুলো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ঠান্ডা ,গ্রোথ সেরকম নেই। তেলের দাম কমে যাওয়ায় মিডল ইস্ট এর রমরমা অনেক কমে গেছে। চীন ঝগড়া করছে জাপান ,ভিয়েতনাম ,ফিলিপাইনস এবং আরো অনেক দেশের সাথে সাউথ চায়না সমুদ্র নিয়ে। নরেন্দ্র মোদী আসার পর ভারত তার ম্যানুফ্যাকচারিং বেস শক্ত করার চেষ্টা করছে। চীন তাহলে ট্রিলিয়নস অফ ডলার এর উৎপাদিত পণ্য রপ্তানী করবে কোন দেশে? মানে যদি আগের থেকে ২০-২৫% কম রপ্তানীও হয় সেটা চীনের অর্থনীতিতে এক বিরাট ধাক্কা দেবে--জব লস হবে এবং আনুষঙ্গিক অনেক সমস্যা দেখা দেবে।
কিন্তু চীনের প্রধান সমস্যা এটা নয়। তাদের টাইমবম্ব টিক টিক করছে অন্য জায়গায়। মরগ্যান স্ট্যানলির এক সম্প্রতি রিসার্চ রিপোর্ট জানাচ্ছে গত ১৫-২০ বছরে চীন এক ভয়ংকর ঋণগ্রস্ত দেশে পরিণত হয়েছে। কোন দেশ ঋণ গ্রহণ করে দুই স্তরে --সরকারী (দেশের সরকার এবং সরকার নিয়ন্ত্রিত বানিজ্য সংস্থা গুলি ) এবং বেসরকারি সংস্থা গুলি। এখন ঋণ নেওয়া বিদেশ থেকে হতে পারে অথবা দেশের জনগণের থেকে। যার থেকেই নেয়া হোক না কেন সেটাকে সুদ সহ পরিশোধ করতে হয়।
ঋণ অভ্যন্তরীন হোক অথবা বিদেশ থেকে ,সরকারী হোক অথবা বেসরকারী --সেটাকে সুদ সহ পরিশোধ করতে হয়। চীনের ক্ষেত্রে এই অভ্যন্তরীন ঋণ এক ভয়ংকর জায়গায় পৌছে গেছে। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। অর্থনীতিবিদরা একটি দেশ কতটা ঋণগ্রস্থ এটা পরিমাপ করতে একটা অনুপাত বা রেশিও ব্যবহার করেন -সেটা হচ্ছে প্রতি ডলার জিডিপি তৈরী করতে কত ডলার debt বা ঋণ ব্যবহার করা হচ্ছে। ২০০৮ সালে অত্যধিক ঋণগ্রস্থ আমেরিকান অর্থনীতি যখন সাব -প্রাইম ক্রাইসিস এর কারণে আমেরিকা সহ সারা বিশ্ব কে নিয়ে অর্থনৈতিক মন্দায় পড়ে তখন সেখানে প্রতি ডলার জিডিপি তৈরী করতে ঋণ ব্যবহার হতো ৩ ডলার। এটা একটা ভয়ংকর অনুপাত --৩ ডলার ঋণ তৈরী করছে মাত্র ১ ডলার জিডিপি। এটা sustainable নয় । বিশ্বের অধিকাংশ বড় অর্থনীতির দেশগুলোর ক্ষেত্রে এই অনুপাত ১:১ অর্থাৎ প্রতি এক ডলার জিডিপি তৈরী করতে ঋণ ব্যবহার হয় এক ডলার। ইউরোপের কিছু দেশে এই অনুপাত ১: ১.৫--এই পর্যন্ত অনুপাত ঠিক আছে --এটা ম্যানেজ করা যায়। ঋণ -জিডিপি অনুপাত যদি ২ বা তার বেশি হয় তাহলে সেটা ডেঞ্জার জোন , মানে নদী বিপদ সীমার ওপর দিয়ে বইছে। ২০১৬ সালের শেষে চীনের ক্ষেত্রে এই অনুপাত পৌঁছেছে ৪.৫ এ। অর্থাৎ চীনের এখন প্রতি ডলার জিডিপি তৈরী করতে ঋণ লাগছে ৪.৫ ডলার। এটা এক ভয়ংকর অবস্থা। চীনের বর্তমান নমিনাল জিডিপি প্রায় ১২ ট্রিলিয়ন ডলার --এখন গণনা করে নিন তার ঋণ কত --১২ ট্রিলিয়ন ডলারের ৪.৫ গুন। আজ পর্যন্ত পৃথিবীর কোন দেশ এই বিশাল পরিমান ঋণ নিয়ে সারভাইভ করে নি --না আমেরিকা না ইউরোপের কোন দেশ। চীন কি পারবে? বিশ্বের জন্য এটা একটা বিরাট ইভেন্ট রিস্ক।

অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন এটা চীনের সমস্যা অন্যদের কি? ঘটনা হচ্ছে পৃথিবীর দেশগুলো এখন ইন্টার -ডিপেন্ডেন্ট। ২০০৮ সালে আমেরিকান সাব -প্রাইম ক্রাইসিস এর সময় আমেরিকার সাথে সাথে বিশ্বের বাকী দেশগুলোর কী হাল হয়েছিল সবাই দেখেছেন। মাত্র কয়েক বছর আগে অত্যধিক ঋণের কারণে গ্রীসের মত ছোট্ট দেশের অর্থনৈতিক সমস্যা পুরো বিশ্বের অর্থনীতিকে কাঁপিয়ে দিয়েছিলো। চীন এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। চীনের অর্থনীতির পতন হওয়া জঙ্গলে মহীরুহের পতনের মতো হবে। জঙ্গলে বিশাল মহীরুহ যখন ভূপতিত হয় তখন তার আশেপাশের গাছেরা রক্ষা পায় না।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:১২
১৯টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×