somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুত্তার পেটে ঘি সয় নাঃ RABকে কি রক্ষীবাহিনী বানিয়েই ছাড়বে?

২৮ শে এপ্রিল, ২০১১ রাত ১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ঘটনা ২০০২ সালের অক্টোবর মাস। খালেদা জিয়ার কাছে বিএনপির দুই বড় নেতা মির্জা আব্বাস এবং সাদেক হোসেন খোকা। অনেক অনুরোধ ও মিনতি নিয়ে এসেছেন। তা হল এই ম্যাডাম অপারেশন ক্লিন হার্টের নামে যা শুরু হয়েছে তাতে তো বিএনপি টিকবে না। তখন খালেদা জিয়া জবাব দিলেন ২০০১ সালের নির্বাচনের বিজয়ের পর এই পর্যন্ত আপনারা কাজ করছেন আমি চুপচাপ দেখেছি। কিন্তু জনগণ এই এক বছরে বিক্ষুদ্ধ! তাই এবার আমি কাজ করব আপনারা দেখবেন। খালেদা জিয়া বললেন দুষ্টু গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভাল। উল্লেখ্য ঐ অপারেশন ক্লিন হার্ট তৎকালীন সেনাবাহিনী প্রধান লে. জেনারেল হাসান মশহুদের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়েছিল। নতুন সরকারের প্রায় এক বছরে মাথাচড়া দিয়ে উঠা সন্ত্রাস হঠাৎ উক্ত ক্লিন হার্ট অভিযানের কারণে পুরোপুরি উধাও। সেনাবাহিনীর দক্ষ ও কঠোর হাতে বহু সন্ত্রাসী গ্রেফতার, পিটুনীতে নিহত ও আহত হওয়ায় সব সন্ত্রাসী গা ঢাকা দেয়। এমনকি পুরোনো ঢাকার গড-ফাদার হোসেন মোল্লা সেই যে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আমেরিকা যান আজ পর্যন্ত ফেরেন নি। ঐ সেনা পরিচালিত অভিযানে প্রায় ৪০ জনের মত সন্ত্রাসী, চাদাবাজ-টেন্ডারবাজ পিটুনীতে নিহত হয়। তাদের মধ্যে ২৪ জন ছিল বিএনপির কর্মী, ৭-৮ জন আলীগের। তাতে হাসিনার প্রচন্ড জ্বালাময়ী বক্তব্যতো বটেই এমনকি বিএনপির কর্মীদের কেন মৃত্যু হল তার জন্যও সরকারের কড়া সমালোচনা। আরে আপনি আপনার দলের কর্মীদের জন্য মায়াকান্না দেখান (যদিও তারা সন্ত্রাসী) কিন্তু খালেদা জিয়া তার দলের সন্ত্রাসীদের মারলে আপনার গত্রদাহ কেন? সে যাই হৌক প্রায় ২ মাস চলার পর মার্কিনি, ইইউদের চাপে তৎকালীন জোট সরকার এই অপারেশন ক্লিন হার্ট প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। তারপর আবার সুযোগ পেয়ে ফাকে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চলতে থাকে। আবার দেশের সাধারণ জনগণ আর্মি নামানোর দাবী জানাতে থাকে। কিন্তু বার বার একটি গণতান্ত্রিক সরকারের পক্ষে সেনা নামানো ঠিক নয় বিধায় বিশেষ একটি সৎ, দক্ষ ও এলিট ফোর্স নামানোর চিন্তা ভাবনা শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৪ এ শুরু হয় Rapid Action Battalion তথা RAB। তারপর কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করতেই হয়। চট্টগ্রামে বিএনপির সন্ত্রাসী জানে আলম ও তার দলের ৯ জন সহ মোট ১০ জন RABএর সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়। নারায়ণগঞ্জের আরেক বিএনপির সন্ত্রাসী মমিনুল্লাহ ডেভিড সেও RABএর পাতা এক জালে নিহত হয়। দলীয় ছাড়াও বহু এলাকা ভিত্তিক খুনী, সন্ত্রাসী, চাদাবাজ, ত্রাস সৃষ্টিকারী, নারী উক্তত্যকারীদের অনেকেই ক্রস ফায়ারে নিহত হয়, কেউ পিটুনী খেয়ে আহত হয়, কেউ ভাল হয়ে যায় এবং বহু শীর্ষ সন্ত্রাসী দেশ ছেড়ে চিরতরে ভাগে। টপটেরর পিচ্চি হান্নান ক্রসফায়ারে নিহত হয় গ্রেফতার হয় কামাল পাশা ও কিলার আব্বাস(দুজনেই বর্তমানে ফাসীতে ঝুলার অপেক্ষায় আছে)। এদের বাইরেও আলীগের বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসীও RABএর ক্রস ফায়ারে নিহত হয়। হাসিনা এদের নিয়ে হৈ চৈ করলেও স্থানীয় জনতা জানত যে এরা সত্যিই সন্ত্রাসী। তাই আলীগের কুম্ভীরাশ্রু হালে পানি পায় নি। জোট সরকার আর যাই হৌক RABকে বিরোধী দলের রাজনৈতিক আন্দোলন দমানোর জন্য ব্যাবহার করেনি। জোট সরকার সন্ত্রাস দমনে ৯০-৯৫% সফল। কিন্তু মহাজোট সরকার এ কি করছে? সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি বিরোধী দলের আন্দোলন দমানোর কাজে, নিরীহ লোক হত্যা ও পঙ্গু করা ভয়ভীতি দেখানো নিত্য নৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। ২০০১ এ জোট সরকারের প্রথম ২ কি আড়াই বছরে আলীগ অর্ধশতাধিক হরতালের বিপরীতে মহাজোটের সময় বিএনপি ১০টি হরতালও ডাকেনি। কিন্তু আমরা কি দেখলাম বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাসায় যেয়ে RABএর নিষ্ঠুর আচরণ। এতটা বাড়াবাড়ি পুলিশও করে না। হরতাল ও বিরোধী দলের আন্দোলন সাধারণত পুলিশ দিয়েই নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কিন্তু হাসিনার মহাজোট সরকার শুরু হতেই RABকে দিয়ে বিরোধী দলকে ঠ্যাঙ্গানো এবং নিরীহ জনগণকেও অত্যাচার করাচ্ছে। আর নিজ দল ও অংগসংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগদের প্রতিপক্ষকে হত্যা, যখম, জমি দখল ইত্যাদিতো বটেই এমনকি নিজেদের মধ্যে হত্যা, যখম, টেন্ডারবাজির মত মারামারিতে RABকে দিয়ে এ্যাকশনতো দূরে থাকুক পুলিশকে দিয়েও কিছু করাচ্ছে না। কিছুদিন আগে প্রকাশ্য দিবালোকে নাটোরে বিএনপি নেতাকে হত্যা করা হলেও তারা কয়েকদিনের জন্য জেলে থেকে জামিন নিয়ে বীরদর্পে নিহতের পরিবারকে শাসিয়ে যাচ্ছে। এখানে RAB সম্পূর্ণ নির্বিকার। তারপর ঢাকায় বিএনপির ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলমকে সরকার RABএর মাধ্যমেই গুম করে দিয়েছে। আরো অনেকে এভাবে গুম হয়েছে। সর্বশেষ RAB এর ভয়াবহতার শিকার ঝালকাঠির এইচ.এস.সি পরিক্ষার্থী লিমন। বেচারা নিরীহ হওয়া সত্ত্বেও তাকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে তার পায়ে গুলি করলে সে আজ সেই পা হারিয়ে পঙ্গু। স্থানীয় এলাকাবাসী সহ বাংলাদেশের সকল পত্রপত্রিকা বলছে যে লিমন সন্ত্রাসী নয় সে ভাল ছেলে এবং সে RABএর কয়েকজন সদস্যের দ্বায়িত্বজ্ঞান হীনতার শিকার। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সাহারা খাতুন তা মানতে নারাজ। তিনি বললেন তদ্ন্ত হবে তবে সংসদীয় কোন কমিটি তদন্ত করতে পারবে না। আর এদিকে অনেক গড়িমসি, টালবাহানা ও ইদুর-বিড়াল খেলার পর তাও আদালতের আদেশে সংশ্লিষ্ট রাজাপুর থানা মামলা নিলেও এখন আবার দেখা যাচ্ছে যে RAB লিমনকে সন্ত্রাসী বানিয়ে অস্ত্র আইনে তার বিরুদ্ধে মামলায় অভিযোগ দাখিল করেছে;

Click This Link

এভাবে বিরোধী দলকে দমন, নিপীড়ন সহ সাধারণ মানুষ RAB দ্বারা যে জুলুম করে জীবন নষ্ট ও অর্থহীন করে দিচ্ছে তাতে এই এলিট ফোর্সের মূল সন্ত্রাস দমন এবং গণ-মানুষের স্বস্তির বিষয়টিকেই হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। জোট সরকারের সময় RABএর যে জনপ্রিয়তা ও প্রশংসা ছিল তা আজ অতীত হতে চলেছে। RABকে দিয়ে এভাবে বিরোধী দল ও নিরীহ মানুষকে অত্যাচার করাতে থাকলে এটা সেই ১৯৭২-৭৫ এর রক্ষীবাহিনীর মতই পরিণত হবে। সরকারের কোন অন্যায়ের প্রতিবাদে হরতাল করা দূরে থাকুক মিছিল মিটিংও করা যাবে না। আর অনেক সময় সন্ত্রাসী বা অপরাধী না পেলে এর ঝাল নিরীহ লোকের উপর মিটানো হবে। অন্তত লিমনের উপর পৈশাচিক আচরণ সেটাই বলে। অন্যদিকে যদি এ রকম হয় যে RAB এর দরকার নাই বিশেষ করে তথাকথিত সুশীল সমাজ ও মানবাধিকারের নামে পশ্চিমারা এই বলে যে এলিট ফোর্সটাকে বিলুপ্ত করা হউক, তখন বাংলাদেশ আবার সন্ত্রাসীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হবে। RABকে যখন গঠন করা হয় তখন শুধু পুলিশ নয় অন্যান্য বাহিনীর সদস্য এনে অস্থায়ী ভিত্তিতে বেশীর ভাগই ৬-৮ মাসের জন্য রাখা হত। আবার এমনও দেখা গেছে ৬-৮ মাস হলেও এক এলাকায় এক মাসের বেশী নয় এভাবে রাখা হত। যার দরুণ তাদের পক্ষে পুলিশের মত ব্যাপক হারে র্দূনীতি করা সম্ভব হতো না। কিছু র্দূনীতি হলেও সেটা খুব একটা প্রভাব ফেলে নি। এখন যদি RABকে বিলুপ্ত করা হয় তো পুলিশ ও অসৎ আইনজীবিদের জন্য তা হবে পোয়া বারো। বাংলাদেশের মানুষ তখন সর্বদা সন্ত্রাস ও আতংকের ভয়ে তটস্থ থাকবে। তাই RAB নিয়ে বর্তমান সরকার যে ভয়ংকর আচরণ করছে তাতে এভাবে অব্যাহত থাকলে এর ভবিষ্যত ভয়াবহ হবে তা নিশ্চিত। বাংলায় যে প্রবাদ আছে কুত্তার পেটে ঘি সয় না তা এই হাসিনার মহাজোট সরকারের ক্ষেত্রে চরম পরম ভাবে প্রযোজ্য। এর আরো জ্বলন্ত উদাহরণ হল শেয়ার বাজার। হাসিনার প্রথম আমলের তথা ১৯৯৬ এর আগে কোন সরকারের সময়ই এবং ২০০১-০৬ সালে জোট সরকারের সময় শেয়ার বাজারে কেলেংকারী হয় নি। কিন্তু মহা লুটপাটকারীদের কাছে বাংলাদেশের কোন ভাল কিছু সহ্য হয় না সব কিছু উজাড় হয়ে যায়।
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×