somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৭৪ সাল মনে পরে গেলঃ লবণের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে ৭০০ কোটি টাকা লোপাট!

১৫ ই অক্টোবর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মিল মালিক ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে আবার আমদানিনির্ভর হলো লবণ শিল্প

কিছু মিল মালিক ও সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী লবণ উৎপাদন অর্ধেক কমিয়ে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করেছে। লবণের দাম দ্বিগুণ বাড়িয়ে গত সাত মাসে ভোক্তাদের কাছ থেকে তারা প্রায় ৭০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ ছাড়া দেশে কৃত্রিম লবণ সঙ্কট সৃষ্টি করে ভারত থেকে লবণ আমদানির অবাধ সুযোগ করে নিয়েছে। এতে দেশের লাখ লাখ লবণচাষি বাম্পার লবণ উৎপাদনের পরও দাম পাননি। আগামী মওসুমেও এমনটা চলতে থাকলে দেশী কাঁচা লবণ উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কিছু ব্যবসায়ীর অতি লোভে লবণ শিল্প আবারো আমদানিনির্ভর হলো।

কক্সবাজার নোয়াখালীসহ উপকূল অঞ্চলে মাঘ-ফাল্গুন মাসে লবণের মাঠে কাঁচা লবণ দেড় টাকা থেকে দুই টাকা কেজি বিক্রি করেন লবণচাষিরা। ফরিয়ারা পানির দরে মাঠ থেকে কাঁচা লবণ কিনে মহাজনদের কাছে তিন-চার টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। মহাজনেরা এ লবণ গুদামজাত করেন। তারপর প্রথম পরিশোধন করে পাঁচ-ছয় টাকা কেজি দরে মিল মালিকদের কাছে বিক্রি করেন। চামড়া শিল্পের জন্য এই লবণ প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে সাত-আট টাকা। এই লবণের দাম বাড়িয়ে এখন বিক্রি করা হচ্ছে ১৪-১৬ টাকা কেজি। মিল মালিকেরা পাঁচ-ছয় টাকা কেজির লবণ পরিশোধন করে আয়োডিন মিশিয়ে প্যাকেট করে গত ছয়-সাত মাস আগে যে লবণ বাজারজাত করেছেন ১৬-২২ টাকায় এখন সেই আয়োডিন লবণ বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩৫ টাকা কেজি দরে। ক্যাব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং টিম ও জেলা মার্কেটিং অফিস সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

ক্যাবের বাজার অনুসন্ধান থেকে জানা গেছে গত সাত মাসে বিভিন্ন ধরনের লবণের দাম আট থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত কেজিতে বেড়েছে। এতে খুচরা পাইকারি বিক্রেতা মজুদদার মিল মালিক লাভবান হয়েছেন। লবণচাষিদের কোনো লাভ হয়নি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার মনিটরিং টিম গত কয়েক মাসের মনিটরিংয়ে দেখেছে ছয়-সাতটি বড় লবণ উৎপাদন মিল দৈনিক উৎপাদন অর্ধেক কমিয়েছে। এসব মিল মালিকেরা গ্যাস বিদ্যুৎ সঙ্কট ও কাঁচা লবণ সঙ্কটের কথা বলে দৈনিক ছয়-সাত হাজার মেট্রিক টন চাহিদার স্থলে তিন হাজার টন করে উৎপাদন করেছেন। প্রতি কেজিতে দাম বাড়িয়েছেন ১২-১৫ টাকা। জানা গেছে খুব ভালো পরিশোধন করে আয়োডিন মিশিয়ে প্যাকেট করলে এক কেজি লবণের দাম পড়ে ১২-১৪ টাকা। অথচ বাজারে সেই আয়োডিন লবণ বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকা কেজি দরে।

দেশে এ বছর কাঁচা লবণ উৎপাদন হয়েছে ১১-১৪ লাখ মেট্রিক টন। দেশে সব মিলিয়ে লবণের চাহিদা ২০-২১ লাখ টন। লবণচাষিদের প্রণোদনা দিলে চাহিদার পুরো লবণ দেশে উৎপাদন সম্ভব বলে লবণচাষিরা জানিয়েছেন।

মাথাপিছু লবণের চাহিদা ১৭ গ্রাম। দেশের মোট জনসংখ্যার জন্য খাবার লবণ (আয়োডিন লবণ) প্রয়োজন ৯-১০ লাখ টন। এ জন্য অপরিশোধিত লবণ লাগে ১৪-১৫ লাখ টন। গবাদিপশু ও চামড়া শিল্পের জন্য আরো আড়াই থেকে তিন লাখ টন নন-আয়োডাইজ অপরিশোধিত লবণ লাগে। সব মিলে দেশে অপরিশোধিত লবণের চাহিদা ১৫-১৮ লাখ টন।

গত ছয়-সাত মাসে খাবার আয়োডিন মিশ্রিত লবণ বিক্রি হয়েছে পাঁচ-ছয় লাখ টন। কমপে পাঁচ লাখ টন আয়োডিন লবণ বিক্রি হলে (পাঁচ লাখ টন সমান ৫০ কোটি কেজি)। প্রতি কেজিতে অতিরিক্ত ১০ টাকা বিক্রি করলে ৫০০ কোটি টাকা সাধারণ ভোক্তাপর্যায় থেকে নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া গবাদিপশু ও চামড়া শিল্পে আরো এক লাখ টন লবণ প্রয়োজন হয়েছে। এই এক লাখ টনে আরো ২০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত দামে বিক্রি করা হয়েছে। এভাবে দাম বাড়িয়ে ক্রেতাসাধারণের কাছ থেকে গত ছয়-সাত মাসে কমপে ৬০০-৭০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা।

লবণ মিল মালিকেরা মওসুমের শুরু ফাল্গুন মাস থেকেই লবণ উৎপাদন (কাঁচা লবণ) কম হয়েছে ধুয়া তুলে ভারত থেকে লবণ আমদানির চেষ্টা চালাতে থাকেন। জাতীয় লবণ নীতির কারণে ও লবণচাষিদের প্রতিরোধের মুখে ভারতীয় লবণ আমদানি করতে না পারায় মিল মালিকেরা লবণ সঙ্কটের ধুয়া তুলে পরিশোধিত আয়োডিন লবণ উৎপাদন অর্ধেক করেন এবং দাম প্রায় দ্বিগুণ করেন। এতে সরকার বাধ্য হয়ে অল্প কিছু লবণ আমদানির অনুমতি দেয়। এতে মিল মালিকেরা আরো আগ্রাসী হয়ে ওঠেন। প্রতিদিন লবণের দাম বাড়াতে থাকেন। শেষে মিল মালিকেরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে লবণ আমদানির অনুমতি দিতে বাধ্য করেন।

জাতীয় লবণনীতি উপো করে সরকার প্রত্যেক মিল মালিককে ১০ হাজার টন করে লবণ আমদানির অনুমতি দেয়। এ অনুমতি ১১ অক্টোবর পর্যন্ত অব্যাহত ছিল, যা বাড়িয়ে ৩০ নভেম্বর করা হয়েছে। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে আমদানিকৃত লবণ জাহাজীকরণ করতে হবে। আমদানিকারকেরা জানিয়েছেন, ভারত থেকে আমদানি করা লবণ তিন টাকা কেজি পড়ছে। ছোট মিল মালিকেরা লবণ আমদানি করে বড় মিল মালিকদের কাছে বিক্রি করছেন। বড় মিল মালিকেরা লবণ মজুদ করছেন। আগামী মওসুমে দেশে উৎপাদিত কাঁচা লবণ তারা পানির দরে কিনতে চান।

চামড়া ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত বছরেও তারা ৪০ কেজির প্রতি বস্তা লবণ ৪০০ টাকায় কিনেছিলেন। এবার তা কিনতে হচ্ছে ৯০০ টাকায়। ভারত থেকে প্রচুর লবণ আমদানি হলেও দাম কমছে না। সীমান্তে চোরাপথে লবণ আসছে। সীমান্তের জেলাগুলোয় চামড়ায় ব্যবহারের অপরিশোধিত লবণের দাম কিছুটা কম তার পরও প্রতি বস্তা ৭০০ টাকার কম নয়।

গরিবেরা লবণের দাম বেশি হওয়ার কারণে চামড়ায় ব্যবহৃত কম দামের লবণ খাচ্ছেন। আয়োডিন লবণ ৩০-৩৫ টাকা কেজি হওয়ায় গরিবেরা আয়োডিন ছাড়া লবণ ১৪-১৬ টাকা কেজি দরে কিনছেন।

রিপোর্টারঃ আতাউর রহমান মিলন বগুড়া অফিস

http://www.dailynayadiganta.com/new/?p=19332

***************

২০০৮ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনা বলেছিল তার দল আলীগ ক্ষমতায় গেলে দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখবে। সেই ২০০১ হতে ২০০৮ এর নির্বাচনের পূর্বে কথায় কথায় খালি তারেক রহমান ও হাওয়া ভবনকে দোষ দিত যে সিন্ডিকেটের জন্য নাকি আকাশচুম্বী দ্রব্যমূল্য। কিন্তু তথ্য ও পরিসংখ্যান সেটা বলে না। দাম বৃদ্ধি পেয়েছিল ঠিকই কিন্তু সেটা ন্যায্য। সে যাই হৌক হাসিনা গং বলেছিল তারা ক্ষমতায় গেলে সিন্ডিকেট থাকবে না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সিন্ডিকেটের কারণে দ্রব্যমূল্য দ্বিগুণ হতে তিন গুণ বেড়েছে বিগত জোট সরকারের তুলনায়। যে লবণ আমরা নিজেরাই উৎপাদন করতাম এখন একদল অসাধু ব্যাবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে এটার দাম বৃদ্ধি করে আমদানীর পথ খুলে দিল। একে তো দেশের ভোক্তাদের ঘাড়ে অস্বাভাবিক মূল্য তার উপর লবণ চাষীদেরও ক্ষতিগ্রস্থ করল। ১৯৭৪ সালেও যথেষ্ঠ লবণ মজুদ থাকা সত্ত্বেও শেখ নাসের সহ কয়েক জনের কারণে লবণের সের হয়েছিল ৮০ টাকা। এখন হাসিনার ডিজিটাল আমলে সরকারের খাদ্য, বাণিজ্য, অর্থ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা সবাই এই গোমর জানে। কিন্তু তাদের উপরে সরকারের মন্ত্রী, এমপিরা যদি ঘুষ খেয়ে বসে থাকে তখন সাধারণ মানুষকে উচ্চমূল্যে লবণ কেনা ছাড়া ভিন্ন পথ নেই। এই ৭০০ কোটি টাকা লুটপাটের মাধ্যমে পাব্লিককে শুধু লবণ খাওয়ায়নি বরং দামের চোটে সবার শরীরে যেন পুরাই "ছিল্লা কাইট্যা লবণ লাগায়া দিছে"। :D
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×