somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাসিনার দুয়ার খোলাঃ ভারতীয় কোম্পানির দাপটে বন্ধ হয়ে গেছে ৬০ হাজার পোলট্রি খামার!

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ভারতীয় পাঁচটিসহ সাত বিদেশী কোম্পানির দাপটে তিন বছরে বন্ধ হয়ে গেছে দেশের ৬০ হাজার পোলট্রি খামার। সর্বস্ব হারিয়ে কিংবা ঋণখেলাপি হয়ে পথে বসেছেন এসব খামারের উদ্যোক্তা। বেকার হয়ে পড়েছেন এ শিল্প খাতের ১০ লক্ষাধিক কর্মী। ফলে ২৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে গত ২০ বছরে গড়ে ওঠা সম্ভাবনাময় এ খাতে বিরাজ করছে অস্থিরতা। এমনই একটি পরিস্থিতিতে সরকার নতুন করে বাংলাদেশে ব্যবসায় করার অনুমতি দিতে যাচ্ছে আরো আটটি বিদেশী কোম্পানিকে। সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে ধ্বংসপ্রায় এ শিল্পের সমাধি রচিত হবে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সরকারের অনুমতি নিয়ে সাতটি বিদেশী কোম্পানি বর্তমানে এ দেশে ব্যবসায় করছে। এর মধ্যে রয়েছে ভারতের পাঁচটি এবং থাইল্যান্ড ও চীনের একটি করে কোম্পানি। ভারতীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে হলোÑ সেগুনা, ভিএইচ গ্র“প, গোদরেজ, টাটা ও অমৃত গ্র“প। এ ছাড়া রয়েছে থাইল্যান্ডের কোম্পানি সিপি ও চীনা কোম্পানি নিউ হোপ। পোলট্রি-সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, বাচ্চা উৎপাদনের অনুমতি নিয়ে দেশে ব্যবসায় শুরু করা এসব কোম্পানি নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে এখন সবই করছে। তারা জানান, এ ব্যবসায়ের ৩৫ থেকে ৪০ ভাগ বর্তমানে নিয়ন্ত্রণ করছে সাতটি কোম্পানি। সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, আরো আটটি বিদেশী কোম্পানি এ খাতে বিনিয়োগের অনুমতি পেলে এ শিল্পের ৭৫ থেকে ৮০ ভাগই চলে যাবে বিদেশীদের হাতে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দেশী খামারগুলোকে বসিয়ে দিতে প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করছে বিদেশী কোম্পানিগুলো। বিপুল পরিমাণ পুঁজির মালিক হওয়ার সুবাদে তারাই কখনো উৎপাদন কমিয়ে দিয়ে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে ডিম, মুরগি, বাচ্চার দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। আবার সুযোগ বুঝে উৎপাদন বাড়িয়ে বিপাকে ফেলছে দেশী খামারিদের। তাদের চাতুরির শিকার হয়ে দেশের এক লাখ ১৪ হাজার ৭৬৩টি খামারের মধ্যে গত তিন বছরে ৫৯ হাজার ৩০০ খামার বন্ধ হয়ে গেছে। বিদেশী ষড়যন্ত্রের কারণে বারবার বার্ড-ফুর শিকার হওয়া এসব খামারে বর্তমানে কোনো মুরগি নেই।

পর্যবেক্ষদের অভিমত, দিন যতই যাচ্ছে পোলট্রি সেক্টরে বিদেশী কোম্পানির দৌরাত্ম্য ততই বাড়ছে। সরকারের নিয়মনীতিকে অবজ্ঞা করা গোপনে নিষিদ্ধ ওষুধের ব্যবহার, পরিকল্পিতভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং দেশীয় খামারিদের এ ব্যবসায় থেকে সরিয়ে দেয়ার নীল নকশার অভিযোগ উঠেছে বিদেশী কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে। তারা বলেন, নতুন প্রযুক্তি সংযোজন কিংবা যে সেক্টরটি দেশীয় কোম্পানিগুলো ডেভেলপ করতে পারছে না এমন সেক্টরেই সাধারণত বিদেশী কোম্পানিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু পোলট্রির েেত্র ঘটেছে সম্পূর্ণ উল্টো ঘটনা। বছরের পর বছর ধরে দেশীয় খামারিরা নিজেদের পরিশ্রম, চেষ্টা আর অর্থ বিনিয়োগ করে পোলট্রি খাতকে যখন একটি শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে এসেছেন ঠিক তখনই সম্পূর্ণ রেডিমেড একটা মার্কেটকে বিদেশীদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।

চট্টগ্রামের বিখ্যাত নাহার এগ্রোর স্বত্বাধিকারী রকিবুর রহমান টুটুল অভিযোগ করেন, বিদেশী কোম্পানিগুলো বাচ্চা উৎপাদন থেকে শুরু করে কমার্শিয়াল লেয়ার পালন, ব্রয়লার মুরগি ও ডিম উৎপাদন, ফিড ইন্ডাস্ট্রি সব ধরনের ব্যবসায় গ্রাস করতে শুরু করেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই দেশীয় কোম্পানিগুলো বিদেশী কোম্পানির পেটের ভেতর চলে যাবে। তিনি বলেন, তারা কখনো চাহিদার চেয়ে বেশি ডিম উৎপাদন করে আবার কখনো মুরগির উৎপাদন বাড়িয়ে বাজার অস্বাভাবিক করে সাধারণ খামারিদের নিঃস্ব করে ফেলছে। প্রান্তিক খামারিরা বিভিন্ন সমিতি, এনজিও কিংবা মহাজনের কাছ থেকে দাদনে টাকা নিয়ে বিনিয়োগ করছেন। ফলে ব্যবসায় মার খেয়ে তারা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারছেন না। এভাবেই দেশীয় খামারিদের সরিয়ে দিয়ে তারা পোলট্রি সেক্টরে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের নীল নকশা করছে বলে অভিযোগ করেন এই তরুণ খামারি।

পোলট্রি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ বিদেশী কোম্পানিগুলো মাত্র তিন থেকে ৪ শতাংশ সুদে বিদেশী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এ দেশে বিনিয়োগ করছে। অথচ দেশীয় খামারিদের ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ সুদে ঋণ নিতে হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই বিদেশী কোম্পানিগুলোর উৎপাদন খরচ কমে যাচ্ছে ১০ থেকে ১১ শতাংশ। এ অসম প্রতিযোগিতা এবং বিদেশী কোম্পানিগুলোর অনৈতিক কার্যকলাপ বন্ধে সরকারের হস্তপে কামনা করেন তারা।

গাজীপুরের শ্রীপুর থানাধীন মাওনার সলিং মোড় এলাকার মাসুদ পোলট্রি ফার্মের স্বত্বাধিকারী ফজলুল হক ফরাজী জানান, সিপি নামে একটি বিদেশী কোম্পানি এক দিন বয়সী বাচ্চার পাশাপাশি কমার্শিয়াল মুরগি পালন করছে, ডিম ও ব্রয়লার মুরগিও উৎপাদন করছে। বাজার যখন ভালো থাকে তখন তারা বাচ্চা বিক্রি কমিয়ে নিজেদের খামারে উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। আর যখন বাজার কিছুটা মন্দা থাকে তখন অতিরিক্ত উৎপাদন করে দেশীয় খামারিদের পথে বসিয়ে দেয়। কমার্শিয়াল লেয়ার ও ব্রয়লার উৎপাদনে বিদেশী কোম্পানিগুলোর এখতিয়ার থাকা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন ফরাজী।

পোলট্রি শিল্প খাতের উদ্যোক্তা নেতৃবৃন্দ বলেন, বিদেশী কোম্পানিগুলো দেশীয় বাজার দখলে যেভাবে দাপটের সাথে এগোচ্ছে তাতে দেশীয় কোম্পানিগুলো ব্যবসায় বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে এবং আমাদের পোলট্রি শিল্প বিদেশী কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। যেসব বিদেশী কোম্পানি ইতোমধ্যে ব্যবসায় শুরু করেছেন তাদের বৈধতা এবং প্রয়োজনীয়তা যাচাইয়ের পাশাপাশি ব্যবসায়ের অনুমতি নিয়ে তারা কী ধরনের অনিয়ম করছেন, এক কাজের অনুমতি নিয়ে আরো কী কী ব্যবসায়ের সুযোগ নিচ্ছেনÑ সব খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানান তারা।

ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন নেতারা জানান, সুগুনা পোলট্রি ফার্ম লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি ইতোমধ্যেই ১৫টি দেশীয় কোম্পানি লিজ নিয়েছে। এ ছাড়া ভি এইচ গ্র“প, সিপি-বাংলাদেশ প্রভৃতি কোম্পানির বাজার দখলের নিত্য নতুন কৌশল দেশীয় বিনিয়োগকারীদের ভীষণ ভাবিয়ে তুলেছে। তারা বলেন, এভাবে চলতে থাকলে অল্প কিছু দিনের মধ্যে বিদেশী কোম্পানিগুলো যেকোনো সময় ওভার প্রডাকশনের মাধ্যমে দেশীয় কোম্পানিগুলোকে সম্পূর্ণ বিকল করে দেবে। সরকারের উদারনীতির সুযোগ নিয়ে বিদেশী কোম্পানিগুলো তাদের লভ্যাংশের প্রায় পুরোটাই নিজ দেশে নিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে তারা বিদেশী কোম্পানিগুলোর ওপর কিছু শর্ত আরোপ করা অত্যন্ত জরুরি বলে অভিমত দেন।

http://www.dailynayadiganta.com/new/?p=89059

**************

আমাদের দেশে কৃষিবিদ, পশু চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞের কমতি নেই। কিন্তু সরকারের উদ্যোগের অভাবে বেসরকারী পোল্ট্রি শিল্প হাসিনার আমলে ধ্বসে পড়েছে। ২০০৯ সাল হতেই যথাযথ উদ্যোগ নিলে মুরগীর খাদ্য তুলনামূলক সস্তা থাকত। সেইদিকে নজড়তো নাই উপরন্ত দেদারসে বিদেশী বিশেষ করে ভারতীয় পোল্ট্রি কোম্পানী গুলোকে ইচ্ছামত বাংলাদেশে ব্যাবসা করার অনুমতি দিয়ে দিচ্ছে। দেশীয় পোল্ট্রি মালিকরা যেন বানের পানিতে ভেসে আসা কেউ তাই তাদের আমলে নেওয়া হয়নি। বাংলাদেশ হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা। ঠিক যেমন নরটেল(গ্রামীণ), ওরস্(বাংলালিংক), একজিটা-এনটিটি ডকোমো(রবি) এবং এয়ারটেল মোবাইল কোম্পানী গুলোর সিংহভাগ শেয়ার হওয়ায় তাদের লভ্যাংশ মার্কিন ডলারে দেশের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। ১৯৯৬ সালে কোন প্রকার বাছ বিচার ছাড়া বিদেশী কোম্পানীদের ডেকে এনে দেশের আভ্যন্তরীন মোবাইল ফোনের বাজার ঢালাও ভাবে লিজ দেওয়া হয়েছে। হাসিনা বাহাদুরি দেখান যে তারা একাধিক কোম্পানীকে মোবাইল ফোনের ব্যাবসা দিছে। অথচ সিটিসেলের বাংলাদেশী প্যাসিফিক গ্রুপের শেয়ার হল ৫৫%। সম্পূর্ণ দেশী পুজির টেলিটকও ২০০৪ সালে বিগত জোট সরকারের আমলেই চালু হয়। এই সব ইচ্ছা করেই করা হয় কারণ কি মোবাইল কি পোল্ট্রি বিদেশী কোম্পানীদের কে লিজ দিলে হাসিনা গংদের ভালই ঘুষ বাণিজ্য হয়। তাতে দেশ ও জনগণের ক্ষতি হলে কিইবা হাসিনার আসে যায়!
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×